দেশের প্রত্যেক রাজ্যে মাতৃভাষায় একেকটি মেডিক্যাল কলেজ ও আইটি প্রতিষ্ঠান গড়া হবে : প্ৰধানমন্ত্ৰী

দেশের প্রত্যেক রাজ্যে স্থানীয় আঞ্চলিক তথা মাতৃভাষায় একেকটি মেডিক্যাল কলেজ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি (আইটি) প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্নে বিভোর। স্বাধীনতার ৭৫ বছর সম্পূৰ্ণ হওয়ার আগেই দেশে মাতৃভাষায় মেডিক্যাল কলেজ এবং আইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হবে। এরই অঙ্গ হিসেবে অসমে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পর অসমিয়া ভাষায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হবে। অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ রবিবার মধ্য অসমের শোণিতপুর জেলার শহিদনগর ঢেকিয়াজুলির ভোটপাড়া ময়দানে কয়েকটি প্ৰকল্পের শিলন্যাস উপলক্ষ্যে প্রায় চার লক্ষাধিক জনতার উপস্থিতিতে আয়োজিত সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন প্ৰধানমন্ত্ৰী। প্রদত্ত ভাষণে তিনি অসমের চায়ের ছবিকে বদনাম করার গভীর ষড়যন্ত্ৰ চলছে বলে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। তবে এই ষড়যন্ত্ৰের বিরুদ্ধে আমাদের চা শ্ৰমিকরা যুদ্ধ করে জয়ী হবেন বলেও দাবি করেছেন তিনি। 
সমাবেশ মঞ্চ থেকে বিশ্বনাথে একটি এবং উজান অসমের চড়াইদেওয়ে আরেকটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিলান্যাস করে পাঁচ হাজার কোটি টাকার অসম মালা প্রকল্পের সূচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ্বর তেলি, অৰ্থ সহ বহু দফতরের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, শরিকদল অগপ সভাপতি তথা মন্ত্রী অতুল বরা, মন্ত্রী কেশব মহন্ত, মন্ত্রী রঞ্জিত দত্ত, মন্ত্রী নবকুমার দলে, বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ শইকিয়া, বিজেপির প্রদেশ সভপতি রঞ্জিতকুমার দাস, বিটিআর-প্রধান প্রমোদ বড়ো, সাংসদ তপন গগৈ, কয়েকজন বিধায়ক এবং সরকারি শীর্ষ আধাকারিক প্রমুখ বহুজনের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, যাবতীয় হিংসা-ভেদভাবের ঊৰ্ধ্বে উঠে অসমের পাশাপাশি উত্তর-পূৰ্বাঞ্চল এখন দ্ৰত বিকাশের পথে এগিয়ে চলেছে। তবে এই বিকাশের ধারা প্ৰবাহিত করতে অগ্ৰণী ভূমিকা নিয়্ছে অসম। 
ভাষণে আজ কয়েকটি গুরুত্বপূৰ্ণ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণ দিতে উঠে প্রথমেই অসমিয়া ভাষায় উপস্থিত লক্ষাধিক জনতাকে সম্বোধন করে প্ৰধানমন্ত্ৰী বলেন, ‘অসমের জনতার চরণে আমি প্ৰণাম জানাই। আমার মন অসমিয়া গৌরবে পরিপূর্ণ। অসম আমাকে বার বার টেনে আনে। এই কয়দিন আগেও এসে গেছি।… বিকাশের জন্য পূৰ্বোত্তরকে বহুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এখন দীৰ্ঘ প্ৰতীক্ষার অবসান ঘটছে। দ্রুত এগিয়ে চলেছে পূৰ্বোত্তর। অসমের বিকাশের যাত্ৰা আজ উল্লেখযোগ্য দিন। বিশেষ এই দিনে আমি অসমবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’ 
বোতাম টিপে দুটি মেডিক্যাল কলেজ এবং অসম মালা প্রকল্পের উদ্বোধন করে অসমবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্ৰধানমন্ত্ৰী বলেন, অসম মালা প্রকল্প রাজ্যের বাণিজ্যক্ষেত্রকে সম্প্ৰসারিত করবে। নাম না ধরে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেন, গত ৭০ বছরে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অসমে মাত্র ছয়টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন হয়েছে। অথচ গত ৫ বছরে এই একই অসমে নতুন আরও ৬-টি মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে। আজ বিশ্বনাথ এবং চড়াইদেও মেডিক্যাল কলেজের শিলান্যাস হল। এর ফলে বছরে ১,৬০০ জন করে চিকিৎসক পাবেন অসমের জনতা, বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরই তাঁর এক স্বপ্নের বিষয়ে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, তাঁর ইচ্ছে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির আগে দেশের প্রত্যেক রাজ্যে স্থানীয় আঞ্চলিক তথা মাতৃভাষায় একেকটি মেডিক্যাল কলেজ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি (আইটি) প্রতিষ্ঠান গড়া। এরই অঙ্গ হিসেবে অসমে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পর অসমিয়া ভাষায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হবে। অসমিয়া ভাষায় অধ্যয়ন করলে একজন ছাত্ৰ ভালো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন না? নিশ্চয়ই পারবেন। 
তিনি বলেন, অসমের মানুষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আর বাইরে যেতে হবে না। অসমেই সবধরনের উন্নত চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যাবে, বলেন মোদী। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অধীনে অসমে এক লক্ষের বেশি রোগী চিকিৎসার সুবিধা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুয়াহাটিকে উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের চিকিৎসা খণ্ডের অভিকেন্দ্ৰ হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার প্ৰচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া করোনা থেকে দেশ যে শিক্ষা অর্জন করেছে ভবিষ্যতে তা সকলকে সহায়তা করবে বলেও আশা ব্যক্ত করেছেন মোদী। 
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে অসমের চায়ের উচ্চ প্ৰশংসা করেছেন। শোণিতপুরের লাল চায়ের প্ৰশংসা করে প্ৰধানমন্ত্ৰী বলেন, চা শ্ৰমিকদের উন্নয়নের জন্য এক হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে তাঁর সরকার। তবে ভারতের বদনাম করতে গিয়ে অসমের চা-কেও ছাড়া হচ্ছে না। অসমের চায়ের ছবিকে বিশ্বের বুকে বদনাম করার গভীর ষড়যন্ত্ৰ চলছে। এর পেছনে তৃতীয় শক্তি জড়িত। ইতিমধ্যে কেন্দ্ৰীয় সরকার এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্ৰমাণ পেয়েছে।
 প্ৰধানমন্ত্ৰীর মতে, অসমের চায়ের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্ৰ সম্পূৰ্ণ পরিকল্পিত। বিদেশে বসে এই ষড়যন্ত্ৰ করছে একটি চক্র। এর বিরুদ্ধে সকল চা বাগানের শ্রমিক কর্মচারীকে সংগ্রাম করতে হবে। কেন্দ্ৰীয় সরকার এই ষড়যন্ত্ৰকে কখনও সফল হতে দেবে না, দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন প্ৰধানমন্ত্ৰী। তবে এই ষড়যন্ত্ৰের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমাদের চা শ্ৰমিকরা বিজয়ী হবেন বলেও আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা বাগানের শ্ৰমিকদের জীবনধারনের মান উন্নত করতে তাঁর সরকার বহু পদক্ষেপ গ্ৰহণ করেছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.