শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে পরিকল্পনা করে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পাক সেনাদের বিরুদ্ধে বাংলদেশের মুক্তিকামী জনতার চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে ঘটে এক মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ। তারা বেছে বেছে অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে ও মদতে এক শ্রেণির দালাল এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার এই নীলনকশা প্রণয়ন করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। পাকবাহিনীর অস্ত্র সহায়তা নিয়ে তাদেরই ছত্রচ্ছায়ায় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরের ক্যাডাররা এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী।
এই দিনে জাতিকে মেধাশূন্য করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এ এন এম মুনীর চৌধুরী, ড. জিসি দেব, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, আবদুল মুকতাদির, এস এম রাশীদুল হাসান, ড. এন এম ফয়জুল মাহী, ফজলুর রহমান খান, এ এন এম মুনীরুজ্জামান, ড. সিরাজুল হক খান, ড. শাহাদাত আলী, ড. এম এ খায়ের, এ আর খান খাদিম, মো. সাদেক, শরাফত আলী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুম, হবিবর রহমান, সুখরঞ্জন সমাদ্দার, ড. আবুল কালাম আজাদ।
সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, খোন্দকার আবু তালেব, নিজামুদ্দীন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, শেখ আবদুল মান্নান (লাডু), সৈয়দ নজমুল হক, এম আখতার, আবুল বাসার, চিশতী হেলালুর রহমান, শিবসদন চক্রবর্তী, সেলিনা পারভীন। এছাড়া শিল্পী আলতাফ মাহমুদ, সাহিত্যিক পূর্ণেন্দু দস্তিদার, মেহেরুন্নেসা, দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহাসহ আরও অনেককে হত্যা করে পাক বাহিনী।
এদিকে, রাত ১২টা এক মিনিটে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে ও পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশ তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছে।