২০ শে মে : নারদ জয়ন্তী উপলক্ষে

সাংবাদিকতার আদি পুরুষ নারদ। বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পটভূমিতে এ বিষয়ের অবতারনা খুবই প্রাসঙ্গিক, বিশেষত এ রাজ্যে, পশ্চিমবঙ্গে। এই কারনে যে, এ রাজ্যে সাধারন মানুষ ও রাজনৈতিকতা মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও এরাজ্যের পুলিশ – প্রশাসন, আইন – আদালত, সমাজ – সংস্কৃতি, হাট – বাজার – সবই গ্রাস করে ফেলেছে রাজনীতি। এক ভিন্ন পটভূমি রচিত হয়েছে। ফলে এই আগ্রাসন থেকে বাদ যায় নি সাংবাদ মাধ্যম ও।

কারও কারও মতে রাজনীতির খবর ছাড়া কোনও খবরের চ্যানেল বা সংবাদপত্র হতে পারে না – এটা ঠিক। কিন্ত রাজনীতির প্রভাব খবরের জগতে যে ভাবে মাথা চাডা দিয়েছে তাতে আদর্শ জলাঞ্জলি যাচ্ছে বারবার। নিজেদের রাজনৈতিক নীতি নির্দেশ মানুষের কাছে তুলে ধরতে গোটা দেশ জুড়েই এখন খবরের চ্যানেল বা সংবাদপত্র গুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রন করছে রাজনৈতিক দল গুলি। অনেক সময় আবার কোন ও বিশেষ রাজনৈতিক দলের মদত পুষ্ট খবরের চ্যানেলকে প্রত্যাঘাত দিতে তৈরি হয়েছে নতুন খবরের চ্যানেল।

আর সেখানে আদি পুরুষ নারদ এর জীবন চরিত একটা দৃষ্টান্ত। নারদ একজন বার্তা বাহক। আধুনিক কালের পরিভাষায় “সাংবাদিক”। সমাজ কল্যানের স্বার্থে জনমত গঠনই সাংবাদিকের লক্ষ্য। সত্যের প্রকাশই সাংবাদিকের কাজ। একালে যখন তার মুহুর্তে মুহূর্তে বিচ্যুতি হতে থাকে, নারদ কিন্তু এই উদ্দেশ্য সাধনে ছিলেন অবিচল। দেবলোক নিবাসী হলেও নারদ দেবতা নন, ঋষি। মানবীয় কিছু দুর্বলতা সত্বেও পরিপূর্ণ এক মানুষ। যিনি নিরন্তর কর্মশীল কিন্ত নিরাসক্ত। জগৎ কল্যানই ছিল ভক্ত নারদের জীবন ব্রত। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত শুভ শক্তি গুলির সমন্বয় করাই তার সব সময় প্রয়াস ছিল। যথাযোগ্য স্থানে বার্তা সঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়া ছিল তার ব্রত। এদিক থেকে নারদ প্রথম পত্রকার। সাংবাদিকতার আদি পুরুষ।

কিন্ত বর্তমান সময়ে এই মহান কর্ম ধারায় আদর্শের বিচ্যুতি ঘটছে সবচেয়ে বেশী। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, সমাজ – সংস্কৃতি রক্ষা করা, মানুষের চেতনা বৃদ্ধি করা, গনতন্ত্র রক্ষা করা – – রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে ও সাংবাদিক দের দায়িত্বশীলতা অনেক বেশি। রাজনৈতিক নেতারা শুধু নিজের আর তার দলের চিন্তা করে, সাংবাদিক দের চিন্তা করে গোটা দেশ ও সামাজ নিয়ে। কোন খবর শুধু মাত্র ব্যক্তির স্বার্থে আসে সমাজের স্বার্থে আসে না দেশের উপকারে আসে না তা খবর হিসাবে প্রকাশিত হওয়া অনভিপ্রেত। সাংবাদিক দের এই বোধ থাকা দরকার। সাংবাদিক দের এই বোধ থাকা দরকার আমি যা খবর করছি তা ব্যাক্তি স্বার্থে উপরে উঠে দেশ ও সমাজের কাজে লাগে।

সাংবাদিক দের তাই সর্বজনীন, আইনানুগ, নিরপেক্ষ ও খোলা – মনা হওয়া উচিত। সঙ্গে থাকা উচিত দেশ, দেশের মানুষ দেশের সমাজ সংস্কৃতি ও পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে অগাধ সংবেদনশীল। যা সাংবাদিক দের সাধারন মানুষ থেকে উন্নীত করবে। এটা ঠিকই সাংবাদিক সবাই হয় না। কেউ কেউ হয়।

তিলক সেনগুপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.