… স্বামী বিবেকানন্দ সম্ভবত প্রথম ভারতীয় যিনি বলেছিলেন,
‘‘আমরা এখন ভারতবর্ষে যে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারলাভের জন্য সচেষ্ট, সেগুলি ইউরোপে যুগ যুগ ধরে ধরে রয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে তা পরীক্ষিত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে যে, সামাজিক প্রয়োজন সাধনে এই ব্যবস্থা অসমর্থ। ইউরোপ অশান্তি সাগরে ভাসছে। জড় সভ্যতার অত্যাচার প্রচণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের সব ধন, সব ক্ষমতা অল্পসংখ্যক লোকের করায়ত্ত। পাশ্চাত্য জগৎ এখন মুষ্টিমেয় শাইলকের শাসনে পরিচালিত। শাইলকের অত্যাচারে পাশ্চাত্য দেশ আর্তনাদ করছে। প্রণালীবদ্ধ শাসন, স্বাধীনতা প্রভৃতি ফাঁকা ব্যাপার। পার্লামেণ্ট, ভোট, মেজরিটি— সবই তাই। যাদের হাতে টাকা তারা রাজ্যশাসন নিজের মুঠোর মধ্যে রেখেছে, প্রজাদের লুঠছে, শুষছে। তারপর সেপাইদের দেশ দেশান্তরে মরতে পাঠাচ্ছে। জিত হলে শাসকদের ঘর ভরে ধনধান্য আসবে।’’
আজ থেকে প্রায় ১২০ বছর পূর্বে ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে লেখা ইউরোপ প্রসঙ্গে স্বামীজীর কথাগুলি বর্তমান ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে কতটা প্রসঙ্গিক তা সহজেই অনুমান করা যায় ।
কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দের মতো মানুষ তো আর সমস্যা বলে ছেড়ে দেবেন না। তিনি এর থেকে উদ্ধারের পথও নির্দেশ করেছেন। তিনি বলছেন, “ শিক্ষা সর্বরোগহর।” অর্থাৎ এমন কোনও সমস্যা নেই শিক্ষার দ্বারা যার সমাধান সম্ভব নয় । তিনি লিখছেন, ‘আগে সমগ্র জাতিকে শিক্ষা দাও। ব্যবস্থা প্রণয়নে সমর্থ একটি দল গঠন কর। তা হলেই ‘বিধান’ আপনি আসবে। এখন রাজারা নেই। সুতরাং যে নতুন সম্প্রদায়ের সম্মতিতে নতুন ব্যবস্থা প্রণীত হবে সে লোকশক্তি কোথায়? লোকশিক্ষার দ্বারা প্রথমে সেই লোকশক্তি গঠন কর’।
(লেখক দশগ্রাম সতীশচন্দ্র সর্বার্থসাধক শিক্ষাসদনের প্রধান শিক্ষক)
সৌজন্যে আনন্দবাজার