গল্প : ন ড় ব ড়ে দ র জা – কৌশিক কুমার দাস

বৈশাখের মধ্যরাত্রী, অনামিকা বালিশে মাথা গুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করছে – রাত পেরোলেই মর্নিং-ডিউটি। বীরভূমের এই গণ্ডগ্রামে, বিচ্ছিন্ন হেলথ সেন্টারটিতে নার্সিং স্টাফের কাজ করছে বছর খানেক হল। বাড়ি প্রায় কুড়ি কিমি দূর, তাই মেস ভাড়া নিয়েছে – ও আর কবিতা দুজনে মিলে। আজ কবিতার নাইট শিফট, তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়েছে অনামিকা – কিন্তু ঘুম আসছেনা।

তারই মধ্যে উঠেছে প্রবল ঝড়, পাল্লা দিয়ে বজ্রপাত আর বৃষ্টি। যেটুকু ঘুম এসেছিল, সেটুকুও চটকে গেলে জানালা-দরজার ধুপধাপের ঠেলায়। একগাদা বিরক্তি নিয়ে কোনোরকমে   দুই জোড়া জানালা বন্ধ করলো, দরজার ছিটকিনিটা ভালো করে লাগিয়ে আবার বালিশে মাথা দিল। কিন্তু সে দরজা তো আর সেরকম মজবুত নয়, ঝড়ের ঠেলায় অনবরত আওয়াজ করতে থাকল।

সপ্তাহ খানেক আগেই মালতিদি-কে দরজার নড়বড়ে অবস্থা নিয়ে অভিযোগ করেছিলো, কিন্তু গ্রামের দিকে কি আর কথা বলতেই মেস – এর দরজা সারাই হয়ে যায়?! ওইটুকু অ্যাডজাস্ট করতেই হয়।

বালিশে মাথা চেপে প্রচন্ড রাগ উঠল মালতিদির উপর, মাস গেলে ভাড়াটা দিতে তো কার্পণ্য করেনা সে – তবে মেন্টেনেন্স নিয়ে এত গা এলানো ভাব কেন! সারারাত ধুপধাপ চলতে থাকে দরজায়, রাগে – বিরক্তিতে মাথা বালিশে চেপে শুয়ে থাকে অনামিকা।

দিনটাই যেন অশুভ; সকালে হেলথ সেন্টারে পেশেন্ট পার্টির গালিগালাজ, সন্ধ্যায় মৈনাকের  সাথে ঝগড়া, আর এখন এই মাঝরাতে ঝড়ের তান্ডব-দরজার শোরগোল। বিয়ের কথা উঠতেই কেমন যেন রেগে গেছিল মৈনাক, “বললেই হল!! বিয়ে করে নিয়ে চলো কলকাতা?!”

ঘণ্টা দুইয়ের তান্ডবের পর দরজাও স্তব্ধ হয়, তবুও সারারাত ঘুমোতে পারেনা অনামিকা। সকালে উঠে কোনোরকমে নিজের পরিশ্রান্ত দেহমন নিয়ে রেডি হল। স্যুইচ অফ করা মুঠোফোনটা অন করলো অনামিকা, বাজ পড়লে বন্ধই রাখে ওটাকে। সব কাজ সেরে বেরোতে যাবে, এমন সময় মালতিদি হাজির; মাসের তিন তারিখ – ভাড়া চাই তার।

অনামিকা তো রেগে খুন—“দিদি! তুমি দয়া করে এবার দরজাটার একটা ব্যাবস্থা করো! কাল রাতে একফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি”।

–“দরজা যে পরশুদিনই ঠিক করায়া দিসি, আওয়াজ কেমনে হইল?”

অনামিকা তো অবাক! সারারাত তবে কিসের আওয়াজ শুনলো সে! দরজাটার কাছে গিয়ে নেড়ে দেখলো, সত্যিই তো! দরজা যে রিপেয়ারড! তবে কাল রাতে…………

          মুঠোফোনের নোটিফিকেশন টোনটা এদিকে বেজেই চলেছে; ফোনটা হাতে নিয়ে Whatsapp – খুলতেই মৈনাকের শেষ মেসেজ – 1:30 am – ‘দরজা খোলো অনামিকা, প্লিজ!’

        মৈনাক কলকাতাগামী ট্রেনের দুটো টিকিট আর একটা ট্রলি ব্যাগ নিয়ে সকাল ছটার ট্রেনে রওনা দিল, অনামিকা দরজা বন্ধ করে হেলথ সেন্টারে মর্নিং-ডিউটি জয়েন করলো।

********

অনামিকার রুমের দরজা সারাই করে দিয়েছে মালতিদি, কিন্তু দরজা যে আজও নড়বড়ে………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.