নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক জঙ্গিদের ঠেকাতে নতুন স্ট্র্যাটেজি ভারতীয় সেনার, সীমান্ত পেরোবার চেষ্টা করলেই ফুঁড়ে দেবে গুলি

শীতের আগে নিয়ন্ত্রণরেখা তথা এলওসি পার করিয়ে জঙ্গি ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ভারতে ঢোকানোর মরিয়া চেষ্টা করছেন পাকিস্তান। কিন্তু ভারতীয় সেনার নতুন স্ট্র্যাটেজিতে জঙ্গি অনুপ্রবেশে লাগাম পরানো গেছে। গত কয়েক মাসে নতুন করে জঙ্গি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। পাক জঙ্গিদের সমস্ত প্রয়াসও বানচাল করে দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। ফের যদি নিয়ন্ত্রণরেখায় অস্ত্র পাচারের চেষ্টা করে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা তাহলে ছেড়ে কথা বলবে না ভারতীয় জওয়ানরা, এমনটাই জানিয়েছেন সেনার ১৫ নম্বর কোরের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল বি এস রাজু।

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২৭ জন জঙ্গি এলওসি পেরিয়ে উপত্যকায় ঢুকেছে। গত বছর এই সংখ্যাই ছিল ১৩০। ২০১৮ সালে ১২৯। লেফটেন্যান্ট জেনারেল বি এস রাজু বলছেন, গত দু’বছরে ধীরে ধীরে জঙ্গি অনুপ্রবেশের ঘটনা অনেকটাই কমানো গেছে। ৭০ শতাংশেরও বেশি জঙ্গি অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়া গেছে। জঙ্গিরা জম্মু-কাশ্মীরে ঢোকার চেষ্টা চালালে যোগ্য জবাব দেবে ভারতীয় বাহিনী। সীমান্তে দিন-রাত কড়া পাহারা দিচ্ছে জওয়ানরা।

J&K: India deploys 3,000 additional troops along LoC to combat Pakistan's  infiltration

কী নতুন স্ট্র্যাটেজি নেওয়া হয়েছে সীমান্তে? জিওসি রাজু জানাচ্ছেন, প্রথমত, নিরাপত্তা আরও মজবুত করতে নতুন করে সেনা পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ৩৪৩.৯ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে সেনার সংখ্যা প্রায় তিনগুণ করা হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর তিনটি ব্যাটেলিয়ন দিবারাত্র সীমান্তে নজর রেখে বসে আছে। সেনাদের হাতেও রয়েছে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র।

দ্বিতীয়ত, রাতের অন্ধকারে চোরাগোপ্তা পথে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে উন্নতমানের ক্যামেরা ও সেন্সর বসানো হয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গেই টের পেয়ে যাবেন সেনা জওয়ানরা।

তৃতীয়ত, একাধিক আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে ভারতীয় বাহিনীর। কোনওভাবে জঙ্গিরা সীমান্ত পেরোবার চেষ্টা করলেই এফোঁড় ওফোঁড় করে দেবে গুলি।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল বলছেন, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নতুন করে ৩৯টি জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প সক্রিয় হয়েছে। ২২ টি লঞ্চপ্যাড তৈরি হয়েছে। ভারতে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছে প্রায় ৩০০ জঙ্গি। কিছুদিন আগেই উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। জওয়ানরা জানান, তিন-চারজন লোক দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি টিউব কিষেনগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই টিউবের ভেতর থেকে উদ্ধার হয় ৪টি একে-৪৭ রাইফেল, ৮টি ম্যাগাজিন ও ২৪০টি কার্তুজ।

জিওসি বিএস রাজু বলেছেন, পাকিস্তানকে সংঘর্ষবিরতি বন্ধ করার জন্য বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তারা শুধরাবে না কখনও। জানুয়ারি থেকে অগস্টের মধ্যে অন্তত ২৪২ বার গোলাগুলি চলেছে নিয়ন্ত্রণরেখায়। পয়লা জানুয়ারি থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ১৮৬ বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করা হয়েছে সীমান্তে। সীমান্ত উত্তেজনায় শহিদ হয়েছেন আটজন ভারতীয় জওয়ান। পাক গোলায় নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে বহু বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে বহু মানুষের। সাধারণ গ্রামবাসীদের উপর হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখায় অশান্তি জিইয়ে রাখতে চাইছে পাকিস্তান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.