গোপীনাথ কবিরাজ সংস্কৃত- তন্ত্র পন্ডিত ও দার্শনিক ছিলেন । তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা গ্রামে ১৮৮৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কাশীর কুইন্স কলেজ থেকে সংস্কৃতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। এরপর কাশীর কুইন্স কলেজে অধ্যাপক ও গ্রন্থগারিক হন তিনি। ১৯১৪ সালে গ্রন্থাগারিক হিসাবে নিযুক্ত হবার পর তিনি ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত সরকারি সংস্কৃত কলেজ, বারাণসীর অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি সেই সময়কালে সরস্বতী ভাবনা গ্রন্থমালার (সরস্বতী ভাবনা পাঠ্য) সম্পাদকও ছিলেন ।
১৯৬৪ সালে তিনি সাহিত্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন , ১৯৭১ সালে তাকে সাহিত্য একাডেমি ফেলোশিপ প্রদান করা হয়, ভারতের সাহিত্য একাডেমি, ভারতের জাতীয় একাডেমি অফ লেটারস কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ সাহিত্যের সম্মান।তিনি বিখ্যাত তান্ত্রিক ও দার্শনিকযোগী বিশুদ্ধানন্দের কাছে দীক্ষা নেন (১৯১৮)। ভারত সরকার তাঁকে মহামহোপাধ্যায় (১৯৬৪), এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ডি.লিট. (১৯৪৭), পদ্মভূষণ (১৯৬৪), উত্তর প্রদেশ সরকার সাহিত্য বাচস্পতি (১৯৬৫), বিশ্বভারতী তাকে ‘দেশীকোত্তম’ উপাধি দেন (১৯৭৬)। তিনি ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর লেখা গ্রন্থগুলি হলো শ্রী শ্রী বিশুদ্ধানন্দ প্রসঙ্গ (৫খন্ড), ভারতীয় সাধনার ধারা, শ্রী কৃষ্ণ প্রসঙ্গ,তান্ত্রিক সাধনা, মৃত্যু বিজ্ঞান ও কর্ম রহস্য, ত্রিপুরা রহস্য, গোরখ সিদ্ধান্ত ।
বেনারসে থাকাকালে তিনি প্রাচীন তান্ত্রিক দর্শন নিয়ে পড়াশুনা করেন। কিছু বছর পর কাশীবাসী যোগী পরমহংস বিশুদ্ধানন্দের মাধ্যমে যোগশক্তির সঙ্গে পরিচিত হন। এরপরে তাঁর নামের সঙ্গে কবিরাজ উপাধী যোগ হয়। ১৯২৪ সালে সরকারি সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন। এ ছাড়া সরস্বতী ভবনের প্রণীত পুস্তকের প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু গবেষণা ও আধ্যাত্মিক পথ অনুসন্ধানের কারণে এ পদ থেকে অবসর নেন।
গোপীনাথ বেনারসকে এতই পছন্দ করতেন যে, কখনও এ স্থান ছেড়ে যাননি। শুধুমাত্র পদ্ম বিভূষণ গ্রহণ করার জন্য একবার কাশীর বাইরে যান। পরে পণ্ডিত শ্রী অনির্বাণের সঙ্গে কাশ্মীর শৈববাদ নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেন। কাশ্মীর শৈববাদকে ভারতীয় শৈবদর্শনের উৎস মনে করতেন তিনি। কিছু বছর পর আধ্যাত্মিক সাধিকা মা আনন্দময়ীর গভীর অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তাঁকে মনে করতেন দেহধারী দেবী। এ ছাড়া আরেক আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু দাদাজীর সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিল।
গোপীনাথ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- মহাপাধ্যায় (১৯৩৪), পদ্ম বিভূষণ (১৯৬৪), এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট (১৯৪৭), উত্তর প্রদেশ সরকারের সাহিত্য বচস্পতি (১৯৬৫), বিশ্ব-ভারতীর দেশিকোত্তম (১৯৭৬), বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট (১৯৫৬), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট (১৯৬৫) এবং সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার (১৯৬৫)।
©সুমন কুমার দত্ত