খবর পেয়েই খাতুনগঞ্জ থেকে পেঁয়াজ উধাও

পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। আর এ খবর চট্টগ্রামে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে ‘উধাও’ হয়ে গেছে পেঁয়াজ। বিকেলেও আড়তগুলো কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ টাকায় বিক্রি করলেও সন্ধ্যায় দেশের সবচেয়ে বড় এই পাইকারি আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি (দেশি ও আমদানি) পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকায় উঠেছে। তবে ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশের বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। কারণ ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে মিয়ানমার, চীন, মিসর, তুরস্কসহ আরো কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই মধ্যে কিছু কিছু ব্যবসায়ী মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির পদক্ষেপ নিয়েছেন।

ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রপ্তানির ওপর অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার। গতকাল রবিবার দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। দেশটির ডিরেক্টর অব ফরেন ট্রেড তাদের নির্দেশনায় জানিয়েছে, ‘পেঁয়াজ রপ্তানি নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হলো।’

আমদানিকারকরা জানান, গতকাল হিলিতে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। আগে তা ছিল ৬০-৬২ টাকা। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার আগে মাত্র ১৪ ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে। এর পর থেকে আর কোনো এলসি খোলা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুনর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু আমরা আজ (গতকাল) সারা দিনে নতুন কোনো এলসি খুলতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মিয়ানমার, মিসর, চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা চলছে। তবে তা কিছুটা সময়সাপেক্ষ।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্য কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলেও তাতে কিছুদিন সময় লাগবে। মিয়ানমার থেকে জাহাজে করে পেঁয়াজ আনতে হলেও অন্তত ১০ দিন সময়ের প্রয়োজন।

এদিকে কারওয়ান বাজারের আড়তদাররা জানান, গতকাল প্রতি কেজি এলসির পেঁয়াজ ৬০-৬৫ ও দেশি পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ৪৩ নম্বর আড়তের বিক্রেতা লোকমান হোসেন সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগের দামেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। নতুন করে দাম বাড়েনি।’

পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে খোলাবাজারে। তবে তা সীমিত আকারে হওয়ায় বাজারে এর খুব একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না।

এদিকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার খবর গতকাল চট্টগ্রামে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে পেঁয়াজ উধাও হয়ে গেছে। অথচ বিকেলেও আড়তগুলো ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬৫ টাকায় বিক্রি করেছে। নিষেধাজ্ঞার খবর পৌঁছার পর আড়তে থাকা পেঁয়াজ যে যার ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করে। এরপর সন্ধ্যা নাগাদ পেঁয়াজ উধাও হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় বিক্রিও।

জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ কাঁচা পণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আতঙ্কে সন্ধ্যার পর বাজার থেকে পেঁয়াজ উধাও হয়ে গেছে। স্থলবন্দরগুলোতে খোঁজখবর নিয়ে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছে অনেকেই। সকালে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা কেমন দাম নির্ধারণ করেন সেই অপেক্ষা করেই গুদামে পেঁয়াজ থাকলেও অনেকেই ছাড়ছেন না। ফলে বিক্রি কার্যত বন্ধই রয়েছে। তিনি বলেন, দাম আরো বাড়ার শঙ্কায় খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতা দিয়ে খাতুনগঞ্জ থেকে পেঁয়াজ নিয়ে গেছেন। এ জন্য যার আড়তে পেঁয়াজ আছে সে দাম ধরে বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার অনেকে বিক্রি না করে ধরে রাখছে।’

এদিকে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞায় আজ সোমবার সকাল থেকে বাড়তি দামে বিক্রির আশায় গতকাল সন্ধ্যা থেকেই খুচরা ব্যবসায়ীরাও পেঁয়াজ লুকিয়ে ফেলেন।

বাড়তি মুনাফা করতে কাজীর দেউড়ির এক খুচরা ব্যবসায়ী সন্ধ্যায় খাতুনগঞ্জে গিয়ে দশ বস্তা পেঁয়াজ কিনেছেন ৭০ টাকা কেজি দরে। নাম প্রকাশ না করে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আড়তে অনেক গুদামেই পেঁয়াজ আছে। কিন্তু সকালে দাম বাড়ার আশায় তারা বিক্রি বন্ধ রেখেছে।’

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সাধারণত ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করেন না। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে বা রপ্তানি মূল্য বাড়ালে বিকল্প দেশ থেকে তাঁরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করেন। আর স্থলবন্দর দিয়ে আসা পেঁয়াজ তাঁরা শুধু কমিশনে বিক্রি করেন। তবে বিকল্প দেশ হিসেবে এখন মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল হয়েও আসেনি পেঁয়াজবাহী কোনো ট্রাক

বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার ফলে গতকাল সকাল থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজবাহী কোনো ট্রাক আসেনি। তবে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে পেঁয়াজ বোঝাই বেশ কিছু ট্রাক।

আমদানিকারক হামিদ এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল হামিদ জানান, ভারতের রপ্তানিকারকের কাছে আমাদের অনেক এলসি পড়ে আছে। রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় এখন বাধ্য হয়ে এলসি বাতিল করতে হচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা জানান, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় গতকাল সকাল থেকে পেঁয়াজবাহী কোনো ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। এর আগে শনিবার পর্যন্ত ভারত থেকে প্রতি টন পেঁয়াজ ৮৫৫ ডলারে রপ্তানি হয়ে আসছিল।

এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেনাপোলসহ সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শনিবার বেনাপোল বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল সকাল থেকেইে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.