চীন নেতা শি জিনপিংয়ের পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে প্রতিবেদন লেখায় দেশ থেকে বহিষ্কৃত হলেন সাংবাদিক : “মাও ভক্ত”দের প্রতিক্রিয়া জানার অপেক্ষা

সমাজতান্ত্রিক চীন, যাকে নিয়ে তামাম বিশ্ব কমিউনিস্টগন অবসেশনে ভোগেন, সেই সমাজতান্ত্রিক চীন এক #ওয়ালস্ট্রিটজার্নাল_সাংবাদিককে কার্যকরভাবে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে, এক মাস পূর্বে পত্রিকাটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তাতে বিশিষ্ট ও বহিষ্কৃত সাংবাদিক অস্ট্রেলিয়ায় চীন নেতা শি জিনপিংয়ের এক খুঁড়তুতো ভাইকে জুয়া খেলতে এবং সম্ভাব্য অর্থ পাচারে জড়িত বলে অভিযোগ করেছিল।

চীনা কর্তৃপক্ষ শুক্রবার জার্নালকে জানিয়েছে যে সিঙ্গাপুরের নাগরিক চুন হান ওংয়ের জন্য প্রকাশনা বা পত্রিকা সংক্রান্ত শংসাপত্রগুলি নবায়ন করা হবে না। উল্লেখ্য চুন হান ওংয়ে ২০১৪ সাল থেকে চীনা রাজনীতিকে কাগজের বেইজিং ব্যুরো থেকে কভার করতেন। এই শংসাপত্রগুলি শুক্রবার শেষ হয়ে গেছে।
চীন কখনও কখনও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলিকে শাস্তি দিতে ভিসা আটকে দেয় বা প্রত্যাখ্যান করে এবং যে পত্রিকাগুলো ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিকূল হয়ে ওঠে তাদেরই উক্ত ভাবে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়। চীনা সরকার জার্নালের কোনও প্রতিবেদককে কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ করেছিল সিদ্ধান্তটি প্রথমবারের মতো হয়েছিল। বিষয়টি সাধারণত দেশের উদ্বেগজনক হলেও , অপরিচিত নয়।

৩০ জুলাই অস্ট্রেলিয়াসুদূরপ্রসারী অস্ট্রেলিয়ান আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা তদন্ত বিভাগের তথ্যের ভিত্তিতে চীনের শি এর খুঁড়তুতো ভ্রাতা ও তার সঙ্গে জড়িত অপর এক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের কুকর্মে র পর্দা ফাঁস করেন দুজন সাংবাদিক। তাঁর মধ্যে একজন হলেন ওং ছিলেন।

এই প্রতিবেদন অস্ট্রেলিয়া র সমস্ত ক্যাসিনোর অফিসিয়াল তথ্যের উপরও ভিত্তি করে করা হয়েছে। শি এর খুঁড়তুতো ভাই মিং চাই ও তার সহযোগী জেমস প্যাকার বহু ক্যাসিনো জুয়ার ঠেক, মোগুল , রিসোর্ট গুলির মালিক ছিল ও সেখানে অর্থ পাচার সহ বিভিন্ন অনৈতিক ও অসামাজিক কার্য হত।অস্ট্রেলিয়ান আধিকারিকরা মেলবোর্নে অর্থ-লন্ডারিং ফ্রন্ট বলে বিবেচিত তার সাথে চাই যোগসূত্র পেয়েছে।

বলা হয়েছে শি খুড়তুতো ভাইয়ের কীর্তির কথা না জানলেও, তাঁর নাম ভাঙিয়েই মিং অবৈধ লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন ওই সাংবাদিক। ওই প্রতিবেদনে চিনফিংয়ের ভাবমূর্তি নিয়ে যদিও কোনও প্রশ্নই তোলা হয়নি, তাঁর পরিবারের সদস্যের গায়ে কালি ছিটানো হয়েছে বলে মত বেজিংয়ের। তাই ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেই মতো শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়যে, ভবিষ্যতে আর কখনও চিনে ঢুকে কাজ করতে পারবেন না চুন হান ওং।

এ ব্যাপারে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘চুন হান ওংকে কাজের ছাড়পত্র দিতে অস্বীকার করেছে বেজিং। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’

তবে কোনও ভাবেইতারা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে চিনা বিদেশ মন্ত্রক। তাদের দাবি, কিছু বিদেশি সাংবাদিক ইচ্ছাকৃত ভাবে চিনের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই ধরনের সাংবাদিকদের জন্য এ দেশে কোনও জায়গা নেই। আগেও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে সতর্ক করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছে তারা। তবে চুন হান ওং-ই প্রথম নন,এই নিয়ে ২০১৩ থেকে এখনও পর্যন্ত ছ’জন বিদেশি সাংবাদিককে চিন দেশছাড়া করেছে বলে দাবি সে দেশের ‘ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব’-এর।

এর আগেও, শি সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের শ্বাসরোধ করার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তরফে জানা গিয়েছে, শি চিনফিংয়ের আমলে বাক স্বাধীনতা খর্ব হতে বসেছে চিনে। ভিন্নমত পোষণকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপকরা হচ্ছে সেখানে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নাগরিকদের গতিবিধির উপর নজরদারিও চলছে সর্বদা।

ভারতে বাকস্বাধীনতার অভাব সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন এমন “মাও ভক্ত”দের প্রতিক্রিয়া জানার অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.