তবলার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব জানান তিনিই, চলে গেলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রাণোচ্ছ্বল তালপুরুষ জ়াকির হুসেন

তবলা বাদ্যযন্ত্রটি সাধারণত সঙ্গত করতে ব্যবহৃত হয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আদি কাল থেকে তেমনই হয়ে আসছে। সঙ্গতকারী যন্ত্রটিকে মূল ধারায় এনে ফেলা, শুধুমাত্র এক শিল্পীর তবলা বাজানো শুনতে, তাঁকে দেখতে হাজার হাজার মানুষ লাইন দিচ্ছেন— এই বিষয়গুলি সম্ভব করেছিলেন যিনি, তিনি জ়াকির হুসেন। তাঁর একক বাজনা শুনতে মানুষ টিকিট কাটছেন, টিকিট না পেয়ে নজরুল মঞ্চের মূল প্রেক্ষাগৃহের বাইরে লাগানো বড় জায়ান্ট স্ক্রিনে শীতের রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন, পুরো বাজনা শুনছেন— এই দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

ইনা পুরীর লেখা ‘শিবকুমার শর্মা: দ্য ম্যান অ্যান্ড হিজ মিউজিক’ বইতে জ়াকিরকে নিয়ে একটি কথালাপ রয়েছে, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে যা অনেক সময় দৃষ্টান্ত হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে প্রধান শিল্পী এবং সহকারী শিল্পীর মধ্যে যে সূক্ষ্ম হাইফেনটি স্পষ্ট বিদ্যমান থাকে, সেই ছক ভাঙতে চেয়েছিলেন শিবকুমারও, যাঁর সঙ্গে জ়াকিরের ছিল বিশেষ সখ্য। যিনি প্রয়াত হওয়ার পর সব কাজ ফেলে বিদেশ থেকে ছুটে এসেছিলেন জ়াকির। মৃতদেহ বহন করা থেকে চিরপ্রণম্য অগ্নির রথে সওয়ার হওয়ার সময়ও যিনি নিষ্পলক দাঁড়িয়ে ছিলেন। একাকী। ইনা পুরীর বইতে রয়েছে, পুণের এক অনুষ্ঠানে প্রথম পোস্টার দিয়ে জানানো হয় ‘শিবকুমার শর্মা-জ়াকির হুসেন’-এর যুগলবন্দি হতে চলেছে। যেখানে শিবকুমারের সঙ্গে পোস্টারে ছিল জ়াকিরের একই রকম ছবি। সাধারণত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানের পোস্টারে যা সচরাচর দেখা যায় না। সেখানে মূল শিল্পী অধিক স্থান দখল করে থাকেন। সহযোগী শিল্পীর জন্য বরাদ্দ থাকে তুলনামূলক কম স্থান। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানো হয় শিবকুমারের। শিবকুমার সেই ‘যুগলবন্দি’র তত্ত্বকে সমর্থন করেছিলেন। পরে বলেছিলেন, ‘‘এ নিয়ে বহু জটিলতা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ‘ইগো’ বা ‘অহং’ হল আত্মবিশ্বাসের একমাত্র আধার। কিন্তু আমি তেমন মনে করি না। সমর্পণ থেকে আসে আত্মবিশ্বাস। সেই সমর্পণ থেকেই আসে শক্তি। ‘অহং’ আসলে ‘আমিত্ব’-এর জন্ম দেয়। শিল্পীর কাজ সাধনা করা এবং ভাবা। তিনি নিজে একটি মাধ্যম মাত্র।’’

অর্থাৎ, সহযোগী শিল্পীও যে আসলে মূল শিল্পীর মতোই গুরুত্বপূর্ণ, তা তিনি স্পষ্ট করেছিলেন চিরকাল। যে কারণেই হয়তো তাঁর একাধিক বাজনায় জ়াকির সঙ্গত করলে তাঁর জন্য বরাদ্দ থাকত পৃথক সময়। উদাহরণ স্বরূপ কিরবাণী রাগটি স্মর্তব্য। দু’জনেরই যুবক বয়সের বাজানো অনুষ্ঠান। সাধারণ কিরবাণীর মতো রাগ ঘণ্টাখানেক ধরে বাজানো হয় না। কিন্তু শিবকুমার বাজিয়েছিলেন। সঙ্গে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন জ়াকির। বাজনাটি এখনও ইউটিউবে পাওয়া যায়। শুনলে বোঝা যায়, গুণী শিল্পীকে কী ভাবে জায়গা করে দিচ্ছেন অন্য জন। সহশিল্পীর জন্য দরজা বন্ধ করে নয়, তাঁকে অন্তর্ভুক্তির মধ্যে দিয়েই পৃথক এক শৈলী তৈরি করতে চেয়েছিলেন শিবকুমার। যে ধারার সওয়ারি ছিলেন আর এক জন। তিনি হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। তিনিও সুযোগ দেন সহকারীকে তাঁর শিক্ষা-বিদ্যা তুলে ধরার।

ভাই তৌফিক কুরেশি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “জ়াকিরভাইয়ের নাম রেখেছিলেন উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁ-সাহিব। সে সময় বাবা ওঁর সঙ্গে সঙ্গত করতেন। জ়াকিরভাই হওয়ার পর বাবা ওঁকে বলেছিলেন, ‘খাঁ-সাহিব, আপনি ওর নাম রাখবেন?’ ‘জ়াকির’ নামটা ওঁর রাখা। আমার নামও তিনিই রেখেছিলেন।”

তিন বছর বয়স থেকে শিক্ষা শুরু। তবে নিজে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি এমন বাড়িতে জন্মেছিলাম, যেখানে জন্মানোর পর থেকেই তবলা শুনছি। একজন শিল্পীর বাড়িতে আমার জন্ম। ফলে নার্সিং হোম থেকে আসা ইস্তক আমার শিক্ষা শুরু। আমার কাছে তো কোনও বিকল্প ছিল না। ফলে আমার শিক্ষা শুরু হয়েছিল কথা বলতে পারার আগে থেকেই।” জন্মানোর পর দ্বিতীয় দিনে বাড়ি ফিরে শিশু জ়াকিরকে তার বাবা উস্তাদ আল্লা রাখার কোলে দেওয়া হয়। শিশুপুত্রের কানে প্রার্থনাসূচক কিছু কথা বলার জন্য। সেটাই ছিল রীতি। আল্লা রাখা পুত্রকে কোলে নিয়ে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, “ধাগে তেটে, ধাগে তেটে, ক্রিধা তেটে…।” জ়াকিরের মা সেই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে জ়াকিরের বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এ তিনি কী করছেন, তাঁর তো প্রার্থনা করার কথা! উত্তরে আল্লা রাখা বলেছিলেন, “এটাই আমার প্রার্থনা। আমি এ ভাবেই প্রার্থনা করি। আমি দেবী সরস্বতী, গণেশের পূজরী। আমি এই বিদ্যা আমার গুরুর কাছ থেকে শিখেছি। এই শিক্ষা পুত্রকে দিয়ে যেতে চাই। ও বড় হয়ে এটাই করবে। যে কারণেই আমি শুরু থেকেই ওর কানে ওই বোল আওড়ালাম।” এ ভাবেই জ়াকিরের শিক্ষা শুরু। সেই ছোট থেকে প্রত্যেক দিন নিয়ম করে প্রায় ঘণ্টাখানেক শিশুপুত্রের কানে তবলার বোল বলতেন আল্লা রাখা। এর পর তিন বছর বয়সে যখন বসে তবলায় হাত রাখতে পারল ছোট্ট জ়াকির, তখন তার বাবা আড়ালে চলে যেতেন। দেখতেন, সে তবলা নিয়ে কী করে। তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত এই কৌশল অবলম্বন করেছিলেন আল্লা রাখা। তত দিনে জ়াকিরের মনের অন্দরে তাল প্রবেশ করেছে। অলক্ষে থেকে বাবা দেখতেন, পুত্র চেষ্টা করছে। আল্লা রাখার কিছু ছাত্র মাঝেমধ্যে জ়াকিরকে কিছু কিছু জিনিস দেখিয়ে দিতেন।

সত্যি কথা বলতে, উস্তাদ আল্লা রাখা খাঁ-সাহিব এক দিকে জ়াকিরের বাবা ছিলেন, অন্য দিকে তিনি ছিলেন তাঁর গুরু। বাবা হিসাবে তিনি খুবই স্নেহপ্রবণ ছিলেন। কিন্তু গুরু হিসাবে তিনি ছিলেন খুব কঠোর প্রকৃতির। ছেলে বলে জ়াকিরকে কখনও বাড়তি সুযোগ দেননি। জ়াকির যখন ওঁর সামনে বসে শিখেছেন অন্য ছাত্রদের সঙ্গে, তখন তাঁর একমাত্র পরিচয় ছিল তিনিও অন্যদের মতো ওঁর ছাত্র। আল্লা রাখা বলতেন, “ছাত্র হিসাবে যখন তুমি আমার সামনে বসবে, তখন তুমি আমার সন্তান নও।” তবে গুরু হিসাবে কখনওই তিনি মারধর করেননি। শাসন করার দায়িত্ব ছিল মায়ের উপর। আল্লা রাখা ছাত্রদের শুরুতেই কিছু লিখতে দিতেন না। বলতেন, শুনে মনে রাখতে। বলতেন, মঞ্চে বসে অনুষ্ঠানের সময় কি খাতা দেখে তবলা বাজাবে? এই যে মনে রাখা, আত্মীকরণ করতে শেখানো— এটা ওঁর শিক্ষার একটা মস্ত বড় দিক। তিনি তো শুধু তবলাবাদক ছিলেন না। ছিলেন মস্ত শিক্ষক। না হলে জ়াকিরের মতো ছাত্র তৈরি হয়!

তখন জ়াকির সবে সাত। স্কুলে তবলার অনুষ্ঠান। শুনতে গিয়েছেন আল্লা রাখা। অনুষ্ঠানের পর কোনও কথা বলেননি। রাতে খেতে বসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “তুমি কি সত্যি সত্যিই তবলা শিখতে চাও?” অপ্রস্তুত জ়াকির উত্তর দেন, “অবশ্যই।” তখন আল্লা রাখা বলেছিলেন, “তা হলে আগামী কাল থেকেই শুরু করব।” পরের দিন রাত তিনটেতে পুত্রকে ডেকে দেন। তিনটে থেকে ছ’টা পর্যন্ত চলত শিক্ষা। গুরুদের কথা। তাঁদের শিক্ষার কথা, পঞ্জাব ঘরানার বৈশিষ্ট্য, তবলার উৎস, কী ভাবে তার বিবর্তন হল, দেবী সরস্বতীর কথা। এর পর সাতটা নাগাদ প্রাতরাশ সেরে স্কুলে যাওয়া, সেই পথে একটি মাদ্রাসা পড়ত, সেখানে কোরান পড়া, সেখান থেকে সেন্ট মাইকেল হাই স্কুলের চার্চে সহপাঠীদের সঙ্গে জড়ো হওয়া, প্রার্থনা করা, স্কুল সেরে বাড়ি ফিরে দুপুরের খাওয়া সেরে রিয়াজে বসা। এটাই ছিল ছোট থেকে তাঁর রুটিন। নিজে বলেছেন, “এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান কোনও কিছু আমার উপর চাপিয়ে দেয়নি। বাড়িতে দেবী সরস্বতী, কৃষ্ণের কথা শোনা, মাদ্রাসায় গিয়ে কোরান পাঠ তার অব্যবহিত পরই চার্চে গিয়ে প্রার্থনা— এই সবই আমার কাছে ছিল স্বাভাবিক এবং দৈনন্দিনের অঙ্গ।” সাধে কি জ়াকির বিশ্বনাগরিক হতে পেরেছেন, তবলাকে ভারত তথা উপমহাদেশের গণ্ডি পার করে বিশ্বজনিন করতে সমর্থ হয়েছেন! জ়াকিরের প্রয়াণের অর্থ তবলা যন্ত্রটিকে যিনি বিশ্বের দরবারে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর প্রয়াসের সমাপ্তি— সম-ফাঁকের নিখুঁত হিসাব গুলিয়ে যাওয়া।

জ়াকিরের আগে কিংবদন্তি তবলিয়া ছিলেন আহমেদ জান থিরাকোয়া কিংবা কণ্ঠে মহারাজ, সমসাময়িকদের মধ্যে রয়েছেন স্বপন চৌধুরী। কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকের থেকে স্বতন্ত্র জ়াকিরের স্থান। তাঁর স্বাতন্ত্র্য তবলাকে বিশ্বের দরবারে পৃথক আসনে প্রতিষ্ঠা দেওয়া। সেই সঙ্গে তবলা নামের উপমহাদেশীয় বাদ্যযন্ত্রটিকে আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের বিশেষ এক ধারায় যুক্ত করা।

যে কোনও শিল্পেই পরিবেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। জ়াকির ছিলেন সেই শিল্পের এক অর্থে সর্বোত্তম শিল্পী। একটা আবর্তন পূর্ণ করে কোনও কায়দা বা টুকরা সমে পড়লে যে ভাবে তিনি তা প্রকাশ করতেন, তা ছিল যেমন নান্দনিক, তেমনই সম্মোহনী। একই সঙ্গে, যিনি ততটা ধ্রুপদী তবলা শুনতে সচ্ছন্দ নন, তাঁদের জন্য থাকত নানা উপকরণ। ইরান-ইরাক যুদ্ধের আবহে সাদ্দাম হোসেনের তোপ কিংবা ঘোড়ার খুরের শব্দ বা বিমানের উড়ান— সবই তিনি তবলায় আনতে পারতেন।

আন্তর্জাতিক সঙ্গীতেও নিজস্ব স্বাক্ষর রেখেছিলেন জাকির। ১৯৭৩ সালে ব্রিটিশ জ্যাজ গিটারবাদক জন ম্যাকলক্‌লিন, বেহালাবাদক এল শঙ্কর, ঘটম-বাদক টিএইচ বিনায়ক্কমের সঙ্গে তবলা নিয়ে মঞ্চে ওঠেন জাকির। জন্ম হয় ফিউশন ব্যান্ড ‘শক্তি’র। হিন্দুস্তানি ও কর্নাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে মিশে যায় আমেরিকান কনটেম্পোরারি জ্যাজ। ‘শক্তি’র বাদন পশ্চিমী সঙ্গীতের জগতেও এক অশ্রতপূর্ব অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। রবিশঙ্কর, আলী আকবর প্রমুখ তত দিনে তাঁদের পশ্চিম জয় সেরে ফেলেছেন। কিন্তু ইন্দো-জ্যাজ ফিউশনের শ্রুতির বিষয়টি সত্তর দশকের গোড়ায় একেবারেই নতুন। ১৯৭৬-এ প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ পায় ‘শক্তি’র। ২০২৩-এ চতুর্থ তথা শেষটি। ম্যাকলকলিন তাঁদের দলকে ‘লাইভ ব্যান্ড’ হিসাবেই উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু পরে ২০২৩-এ জ়াকিরের হাত ধরেন গায়ক শঙ্কর মহাদেবন। ‘শক্তি’ যেন অন্য মাত্রা পেল। জ়াকির ও তাঁর দিকপাল সঙ্গীদের বাদনের সঙ্গে যুক্ত হয় শঙ্করের কণ্ঠসম্পদ। ২০২৪-এ ‘দিস মোমেন্ট’ নামের সেই অ্যালবামই ‘বেস্ট গ্লোবাল মিউজিক অ্যালবাম’ হিসাবে গ্র্যামি জিতে নেয়।

জ়াকিরের আর এক পরিচয় অভিনেতা হিসাবে। ১৯৮৩ সালে মার্চেন্ট- আইভরির ছবি ‘হিট অ্যান্ড ডাস্ট’-এ তিনি প্রথম অভিনয় করেন। তার পরে কয়েকটি ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করলেও ১৯৯৮-এ সাই পরাঞ্জপে পরিচালিত ‘সাজ’ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় দেখা যায় জ়াকিরকে। উল্লেখ্য, ‘সাজ’ ছিল রাহুল দেব বর্মনের জীবনের একটি বিশেষ পর্বের উপর আধারিত। জ়াকির পর্দায় রাহুলের চরিত্রটিতেই অবতীর্ণ হন। এই ছবির অন্যতম সুরকারও ছিলেন তিনিই। চলতি বছরেও পর্দায় দেখা গিয়েছে জ়াকিরকে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পরিচালক দেব পটেলের প্রথম ছবি ‘মাংকি ম্যান’-এ নিজের ভূমিকাতেই অবতীর্ণ হয়েছিলেন জ়াকির। শুধু অভিনয় নয়, বেশ কিছু ছবির সঙ্গীতকার হিসেবেও কাজ করেছিলেন জ়াকির। যার মধ্যে ‘সাজ’ তো রয়েইছে, সেই সঙ্গে রয়েছে অপর্ণা সেন পরিচালিত ২০০২-এর ছবি ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’-ও। অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনেও জ়াকির বহু বার মুখ দেখিয়েছেন। এক বিশেষ ব্র্যান্ডের চায়ের বিজ্ঞাপনে তাঁর উপস্থিতি প্রায় বৈগ্রহিক পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এক সময় জিন্‌সের বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবেও দেখা গিয়েছিল সুদর্শন যুবক জ়াকিরকে।

জ়াকির বিয়ে করেন আন্তোনিয়া মিনেকোলা নামের এক কত্থক নৃত্যশিল্পীকে। আন্তোনিয়া জ়াকিরের ম্যানেজারও ছিলেন। তাঁদের দুই কন্যাসন্তান আনিশা কুরেশি ও ইসাবেলা কুরেসি। আনিশা ফিল্ম জগতের সঙ্গে যুক্ত, ইসাবেলা ম্যানহাটনে নৃত্যকলা নিয়ে পড়াশোনা করছেন। জ়াকিরের দুই ভাই তৌফিক কুরেশি এবং ফজল কুরেশি। তৌফিক বিভিন্ন প্রকার তালবাদ্য বাজান, ফজল বাজান তবলা।

রবিশঙ্কর, আলি আকবর, শিবকুমার, হরিপ্রসাদ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বৈগ্রহিক শিল্পীর সঙ্গে অনুষ্ঠান করেছেন। গ্র্যামি পেয়েছেন। পেয়েছেন বহু সম্মাননা। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে তবলা যন্ত্রটিকে বিশ্বজনীন করার প্রয়াস।

৭৩ বছরে চলে যাওয়ায় সেই সম-ফাঁকের হিসাব মিলল না। এই এক বারই তাল কাটল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.