Winter Session: তিন কৃষি আইনের জট রেখেই এ বার কেন্দ্র আনছে ব্যাঙ্ক বিল, দোসর হতে পারে বিদ্যুৎ বিল-ও

তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের পরেও কৃষক আন্দোলনে ইতি টানা যায়নি। কৃষকেরা এখন ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-র নিশ্চয়তা চেয়ে আইনের দাবি করছেন। সেই জটিলতা কাটার আগেই আসন্ন সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিল আনতে চলেছে মোদী সরকার। কৃষক সংগঠনগুলি বিদ্যুৎ আইনের যে সংশোধনী বিলটি হিমঘরে পাঠানোর দাবি তুলেছে, সেটিও সরকারের সংসদীয় কার্যসূচির তালিকায় রয়েছে।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেটেই ঘোষণা করেছিলেন, চলতি বছরে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে। আজ কেন্দ্রীয় সরকার ২৯ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলা শীতকালীন অধিবেশনে পাশের জন্য ২৬টি বিলের তালিকা প্রকাশ করেছে। তার মধ্যে ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের দরজা খুলতে ব্যাঙ্ক আইন সংশোধনী বিলও রয়েছে। এই একটি বিলের মাধ্যমেই ১৯৭০ ও ১৯৮০ সালের ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের দু’টি আইন এবং ১৯৪৯-এর ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ আইনে সংশোধন করা হবে। এ দিকে ব্যাঙ্কের কর্মী, অফিসারদের সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই ‘ব্যাঙ্ক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’-এর ডাক দিয়ে কলকাতা থেকে দিল্লি যাত্রার ঘোষণা করেছে। দিল্লিতে ৩০ নভেম্বর যাত্রা শেষ হবে। যন্তর মন্তরে সমাবেশের পরিকল্পনাও রয়েছে। এক বছর ধরে চলা আন্দোলনের চাপে কেন্দ্র তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের পরে ব্যাঙ্কের অফিসার-কর্মীরা জানান, তাঁরাও কৃষকদের সাফল্যে উজ্জীবিত। ব্যাঙ্কের ইউনিয়নগুলি তাদের আন্দোলনের
কথা জানিয়ে সংযুক্ত কিসান মোর্চাকে চিঠি পাঠিয়েছে।

সরকারি সূত্রের বক্তব্য, সংসদের অধিবেশনেই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিল পেশ হবে। বুধবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই বিলে সিলমোহর পড়তে পারে। তবে কৃষকদের দাবি মেনে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি গ্যারান্টি দেওয়া কঠিন বলেই কৃষি মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, কৃষক সংগঠনগুলির দাবি বিবেচনা করে সরকার-নির্ধারিত এমএসপি নিশ্চিত করতে নির্দেশিকা জারি করা যেতে পারে। কিংবা আইনের বিধির মধ্যে বিষয়টিকে আনা যেতে পারে। কিন্তু আইনি গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ সে ক্ষেত্রে বাজারে এমএসপি-র থেকে কম দামে ফসল বিক্রি হলে সরকারকে সব ফসল কিনতে হবে। অথবা চাষিদের ভর্তুকি দিতে হবে। তাতে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার দেউলিয়া হয়ে যাবে।

কৃষি আইন নিয়ে আপত্তি খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টের তৈরি কমিটির প্রধান অনিল ঘনওয়টেরও একই মত। কমিটি আগেই সুপ্রিম কোর্টে নিজেদের রিপোর্ট জমা করেছিল। ঘনওয়ট আজ ফের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে আবেদন করেছেন, ওই রিপোর্ট জনসমক্ষে আনা হোক। তা হলে সাধারণ মানুষ কৃষিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবেন।

বিরোধীদের বক্তব্য, মোদী সরকার এক বছর পরে একটি জনবিরোধী নীতির ভুল বুঝতে পেরে কৃষি আইন প্রত্যাহার করেছে। এখন ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের রাস্তা খুলে আরেকটি জনবিরোধী নীতি নিতে চলেছে। মুখে দু’টি ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের কথা বলা হলেও এই বিল এনে ভবিষ্যতে সব ব্যাঙ্কই বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার রাস্তা তৈরি হচ্ছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আগেই দাবি তুলেছিলেন, মোদী সরকারকে ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলির দাবি মেনে ‘মুনাফাখোর’ শিল্পপতিদের হাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।

আজ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, দেশের মানুষের আমানত লুট করার রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। তৃণমূল সর্বশক্তি দিয়ে তা আটকাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.