কেন Facebook-এর নাম বদলে ‘Meta’ দিলেন জুকারবার্গ?

নাম বদলে গেল Facebook Inc-এর। শুক্রবার সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মার্ক জুকারবার্গ জানান, তার কোম্পানি এখন থেকে ‘Meta Platforms Inc’ বা সংক্ষেপে ‘Meta’ নামে পরিচিত হবে। লোগো নীল রঙের, কিছুটা ‘ইনফিনিটি’ চিহ্নের মতো। ‘মেটাভার্স’-এর লক্ষ্য থেকেই এই নয়া নামকরণ সংস্থার।

জুকারবার্গ এদিন লাইভ-স্ট্রিমড ভার্চুয়াল এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘নতুন নামটি সোশ্যাল মিডিয়া পরিষেবার পরিবর্তে মেটাভার্সে বিনিয়োগের লক্ষ্যকে প্রতিফলিত করে।’ তিনি জানান, সামাজিক সমস্যাগুলির সঙ্গে লড়াই করা এবং ক্লোজড প্ল্যাটফর্মের অধীনে থাকা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এখন সময় এসেছে সেই শিক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী অধ্যায় তৈরিতে সহায়তা করার।

‘আমি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে আজ থেকে আমাদের সংস্থা মেটা। আমাদের লক্ষ্য একই আছে। এখনও সকলকে একত্রিত করার বিষয়ে, আমাদের অ্যাপস এবং ব্র্যান্ডগুলি এগিয়ে চলবে। তাদের পরিবর্তন হচ্ছে না,’ তিনি যোগ করেন।

জুকারবার্গ বলেন, ফেসবুক নামটি আর সংস্থার সবকিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে না। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আজকে আমাদের একটি সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ডিএনএ-তে আমরা এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যারা মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য প্রযুক্তি তৈরি করে।’

তাহলে কি এবার Facebook সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের নাম বদলে যাবে?

না। ফেসবুক অ্যাপের নাম পরিবর্তন হচ্ছে না। ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জারেও পরিবর্তন হচ্ছে না। সংস্থার প্রধান নির্বাহী এবং সিনিয়র আধিকারিকদের কর্পোরেট কাঠামোরও পরিবর্তন হবে না। কিন্তু ১ ডিসেম্বর থেকে, সংস্থার শেয়ার একটি নতুন টিকার সিম্বল, MVRS নামে ট্রেডিং শুরু করবে।

ফেসবুক অ্যাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া পরিষেবার ব্র্যান্ডিং অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি পেরেন্ট সংস্থার অধীনে রয়েছে। এই একই সংস্থার পোর্টফোলিওতে ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো অন্যান্য বহুল ব্যবহারকারী ব্র্যান্ড রয়েছে। যেমন গুগল অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেড প্যারেন্ট সংস্থার অধীনস্থ একটি ব্র্যান্ড।

কিন্তু ‘মেটা’ মানেটা কী?

মেটাভার্স শব্দটি নিল স্টিফেনসন তাঁর ১৯৯২ সালের ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস ‘স্নো ক্র্যাশ’-এ প্রথম উল্লেখ করেছিলেন। সেই কল্পবিজ্ঞানে সকলে গেমের মতো ডিজিটাল বিশ্বের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট ব্যবহার করে।

জুকারবার্গ মেটাভার্সকে একটি ‘ভার্চুয়াল পরিবেশ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অর্থাত্ 

আমাদের ইউনিভার্সের বাইরে এক দ্বিতীয় বিশ্ব। সেই কারণেই মেটা শব্দটির ব্যবহার। এই কৃত্রিম পরিবেশ স্ক্রিনে দেখার পরিবর্তে কার্যত তার ভিতরে ঢুকে যেতে পারবেন। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট, অগুমেন্টেড রিয়েলিটি গ্লাস, স্মার্টফোন অ্যাপ বা অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহার করে এই কৃত্রিম এক অন্য জগতে সকলের সঙ্গে দেখা করতে, কাজ করতে এবং খেলতে পারবেন।

অর্থাত্ বাড়ি বসেই একটি হেডসেট পরে দ্বিতীয় জগতে প্রবেশ করা যাবে। সেই কৃত্রিম জগত্ তৈরি করাই এখন মূল লক্ষ্য মার্ক জুকারবার্গের। ভবিষ্যতে এটাই জনপ্রিয় হবে বলে ধারণা তাঁর।

মার্ক জুকারবার্গ ২০০৪ সালে এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি একাধিক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছিলেন যে, ফেসবুকের ভবিষ্যতে সাফল্যের চাবিকাঠি মেটাভার্স ধারণার মধ্যে নিহিত। মেটাভার্স ধারণাকে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে এই রিব্র্যান্ডিং আরও কার্যকর হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

বদলে গেল ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে ফেসবুকের সদর দফতরের বাইরের বহু পরিচিত আইকনিক থাম্বস-আপ সাইনটিও। তার বদলে এখন সেখানে একটি নীল, প্রেটজেল-আকৃতির লোগো। এই লোগোই ফেসবুক, থুড়ি মেটার নয়া পথ চলার প্রতীক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.