কালো টাকা সাদা করার ‘শাহজাহানি’ ছক প্রকাশ্যে! কোটি কোটির লেনদেন, অথচ ঘর বদলাত না টাকা

মাছের ব্যবসা ছিল আড়াল। আদতে সেই ব্যবসাকে পর্দা হিসাবে ব্যবহার করতেন শাহজাহান শেখ। ওই পর্দার আড়ালে শাহজাহানের নানা কুকর্মের মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা সাদা হয়ে যেত। সন্দেশখালির তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে টাকার রং বদলের সেই প্রক্রিয়ার কথা জানতে পেরেছেন ইডির গোয়েন্দারা।

ইডি সূত্রের খবর, এক হাতে নিজের টাকা দিয়ে অন্য হাতে সেই টাকাই আবার ফেরত নিতেন শাহজাহান। আরও একটু ব্যাখ্যা করে বললে, শাহজাহান প্রথমে নগদ অর্থ তুলে দিতেন কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার হাতে। তার পর সেই টাকাই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করাতে বলতেন। আর এ কাজে শাহজাহানকে সাহায্য করতেন ‘মেজার্স ম্যাগনাম এক্সপোর্ট’ নামে এক ভুয়ো সংস্থার মালিক।

ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহজাহানের নির্দেশানুসারে প্রায় ১০০ কোটির কাছাকাছি বেআইনি অর্থ এ ভাবেই শাহজাহানের সংস্থার অ্যাকাউন্টে জমা করিয়েছিল ম্যাগনাম এক্সপোর্ট।

ইডি তদন্তে জানতে পেরেছে, এই কোটি কোটি টাকা আসলে শাহজাহানের নানা কুকর্মের মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা। এর মধ্যে যেমন খুন, তোলাবাজি, প্রাণে মারার চেষ্টা বা হুমকির মতো ঘটনা আছে, তেমনই আছে জমি, মাছের ভেড়ি জবরদখলের টাকাও। যদিও লেনদেনের সময় সমস্তটাই শাহজাহান খাতায়কলমে তাঁর সংস্থার চিংড়ির ব্যবসার টাকা হিসাবে দেখাতেন।

ইডি সূত্রে খবর, নগদ যে টাকা ম্যাগনাম এক্সপোর্টকে দিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করাতেন শাহজাহান, সেই লেনদেনের হিসাবেও স্পষ্ট লেখা থাকত, চিংড়ি রফতানির প্রাপ্য অর্থ হিসাবেই জমা করানো হচ্ছে এই টাকা। যদিও এই ব্যবসায়িক সম্পর্কের আর কোনও প্রমাণ নেই দুই তরফের কাছে। সূত্রের খবর, শাহজাহানের কাছে ম্যাগনাম এক্সপোর্টের সঙ্গে মাছ ব্যবসার অন্যান্য তথ্য বা নথি দেখতে চাওয়া হলে এই লেনদেনের বাইরে আর কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি।

শাহজাহানের ওই মাছের ব্যবসার সংস্থার নাম ‘মেজার্স শেখ সাবিনা ফিশ সাপ্লাই ওনলি’। মেয়ের নামে ওই মাছের ব্যবসার সংস্থা যে আসলে একটি চালু ব্যবসা তা প্রমাণ করতে যদিও অন্য পদ্ধতি নিয়েছিলেন শাহজাহান। ওই ব্যবসায়ী সংস্থার মাধ্যমে তাঁর গ্রামের সমস্ত মাছ ব্যবসায়ীর মাছ বিক্রি করতে বাধ্য করতেন তিনি। ২০১৯ সালে একটি মিটিং করে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছিলেন সন্দেশখালির শেখ। সঙ্গে দিয়েছিলেন হুমকিও। ইডি সূত্রে খবর, শাহজাহান সরবেরিয়া বাজারের ব্যবসায়ীদের বলেছিলেন, এই সংস্থার মাধ্যমে ব্যবসা না করলে তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করার ব্যবস্থা করবেন। সেই ‘হুমকি’ উপেক্ষা করার সাহস হয়নি কারও। ফলে মাছের ব্যবসার পর্দা সরিয়ে দেখার চেষ্টাও করেনি কেউ।

তবে শেষ পর্যন্ত কালো টাকা সাদা করার এই শাহজাহানি ফন্দি আড়ালে থাকল না। ইডি ইতিমধ্যেই শাহজাহানের বিরুদ্ধে এই সমস্ত তথ্যপ্রমাণ আদালতেও জমা করেছে বলে সূত্রের খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.