মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ে এ বার মামলা দায়ের হল সুপ্রিম কোর্টে। মামলাকারী আইনজীবীর আর্জি, বিশেষ দল গঠন করে শীর্ষ আদালতেরই নজরদারিতে মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনার তদন্ত করা হোক।
আদালত সূত্রে খবর, আইনজীবী শশাঙ্কশেখর ঝা মামলাটি করেছেন শীর্ষ আদালতে। তাঁর আর্জি, মুর্শিদাবাদে অশান্তিতে যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার তদন্ত হওয়া জরুরি। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতেই একটি বিশেষ দল সেই তদন্ত করুক। আইনজীবী একটি ভিডিয়োবার্তায় বলেন, ‘‘ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকলে হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া যেতে পারত। মুর্শিদাবাদে যেটা হচ্ছে, তা ঠিক। অবিলম্বে এটা বন্ধ হওয়া জরুরি। সুপ্রিম কোর্টকে আমি অনুরোধ করব যাতে দ্রুত বিষয়টিতে তারা হস্তক্ষেপ করে।’’
ওয়াকফ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ। নানা জায়গায় অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। বেসরকারি সূত্রে দাবি, মৃত্যুও হয়েছে অন্তত তিন জনের। মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগেই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। তারা জেলার উপদ্রুত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। এর পর শনিবার রাত থেকে মুর্শিদাবাদের উপদ্রুত অঞ্চলগুলিতে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ অভিযান চলছে। এ বার মামলা হল সুপ্রিম কোর্টেও।
রাজ্য পুলিশের অবশ্য বক্তব্য, গত ৩৬ ঘণ্টায় মুর্শিদাবাদে কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। উপদ্রুত এলাকা শান্তই রয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক। তবে স্বাভাবিকের দিকে এগোচ্ছে। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানালেন রাজ্য পুলিশের এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘অপরাধীরা ছাড় পাবে না।’’ জনসাধারণকে গুজবে কান না দেওয়ারও বার্তা দিয়েছেন এডিজি আইনশৃঙ্খলা।
জাভেদ বলেন, ‘‘গত ৩৬ ঘণ্টায় সেই ভাবে কোথাও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। এখনও পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ এডিজি আইনশৃঙ্খলার দাবি, কোনও ঘটনা না জেনে বাইরের রাজ্য থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজব বন্ধ করতেই উপদ্রুত এলাকাগুলিতে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে তিনি জানান, মুর্শিদাবাদ-মালদহের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। দোকানপাটও খুলছে। শান্তি বজায় রয়েছে জঙ্গিপুরে। পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘শান্তি ফেরাতে স্থানীয়দের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাহিনীর রুটমার্চ চলছে। এলাকায় যাচ্ছেন উচ্চপদস্থ আইপিএস অফিসারেরা।’’
মুর্শিদাবাদে অশান্তির আবহে সুতি, সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ানের অনেক বাসিন্দাই গঙ্গা পেরিয়ে ও পারে মালদহের বৈষ্ণবনগরে আশ্রয়ে নিয়েছিলেন। জাভেদ জানান, ঘরছাড়াদের এলাকায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেউ কেউ ফিরেওছেন। এডিজি আইনশৃঙ্খলা বলেন, ‘‘আস্থা ফিরলেই মানুষ এলাকায় ফিরে আসবেন।’’