শুক্রবার মোদী-পুতিন বৈঠক, নজরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বাণিজ্যচুক্তি! আর কোন কোন বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে?

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লির পালমে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁদের করমর্দন এবং উষ্ণ আলিঙ্গনের দৃশ্য ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্র হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। তার পর একই লিমুজিনে সওয়ার হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ৩০ ঘণ্টার ভারত সফরে এসে রাতে প্রধানমন্ত্রীর ৭ লোককল্যাণ মার্গের বাসভবনে পুতিন তাঁর সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দিয়েছেন। শুক্রবার সকালে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্যসাক্ষাৎ এবং রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দিনভর নানা কর্মসূচি রয়েছে তাঁর।

এ বারের সফরে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষবৈঠকে যোগদান করবেন পুতিন। পাশাপাশি, শুক্রবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি সই হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম, রাশিয়া থেকে আরও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা। এ ছাড়া মস্কোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পন্টসায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) নির্মাণের বিষয়েও সমঝোতা হতে পারে মোদী-পুতিন বৈঠকে। পাশাপাশি পুতিনের প্রস্তাব মেনে যৌথ উদ্যোগে পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান ‘সুখোই এসইউ-৫৭’ (‘ফেলন’) নির্মাণের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও সরকারি সূত্রের খবর।

মোদী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে নয়াদিল্লি-মস্কো বাণিজ্য ঘাটতিতে কিছুটা ভারসাম্য আনা। রাশিয়া থেকে ভারত বিপুল পরিমাণ তেল এবং সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করলেও পুতিনের দেশে রফতানি করা ভারতীয় পণ্যের মূল্য তুলনায় অনেক কম। ভারত থেকে রাশিয়া বছরে ৫০০ কোটি ডলারেরও (প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা) কম মূল্যের পণ্য আমদানি করে। তাই নয়াদিল্লির লক্ষ্য মস্কোয় সমুদ্রজাত পণ্য, আলু, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ওষুধের মতো দ্রব্যের রফতানি বাড়ানো। এ ছাড়া রাশিয়ার শিল্প ও কর্পোরেট ক্ষেত্রে ভারতীয় দক্ষ এবং আংশিক দক্ষ কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করাও মোদী সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে।

বিশ্ববাণিজ্যে আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের প্রাধান্যের মোকাবিলায় ২০১৫ সালে পুতিনের উদ্যোগে তৈরি হয় ‘ইউরেশিয়ান ইকনমিক ইউনিয়ন’। রাশিয়া ছাড়া সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজ়াখস্তান ও কিরঘিজ়স্তান রয়েছে এই জোটে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক সংঘাতের আবহেই পুতিনের নেতৃত্বাধীন ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছে নয়াদিল্লির। পুতিনের এ বারের সফরে এ নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়ে যেতে পারে। ট্রাম্পের চাপ এড়িয়ে মস্কো থেকে তেলের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার বিষয়েও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে। সন্ত্রাস দমনে যৌথ পদক্ষেপ এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিষয়ও আসার সম্ভবনা মোদী-পুতিন আলোচনায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার পুতিন বলেন, বলেন, “মহাকাশ গবেষণা, পরমাণুশক্তি, জাহাজ নির্মাণ, বিমান নির্মাণ-সহ একাধিক ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের স্বার্থে ভারত এবং রাশিয়া একসঙ্গে কাজ করছে।” তিনি জানিয়েছেন, ভারত এবং রাশিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার নিয়েও আলোচনা করবে। বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর, ভারত-রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক নিবিড় করার লক্ষ্যে ইয়েকাতিরিনবার্গে ভারতীয় কনস্যুলেট খোলার কথা ঘোষণা করতে পারেন মোদী। ওই সাক্ষাৎকারে মোদীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে পুতিন বলেন, “ভারত দারুণ দেশ। সে দেশের অর্থনীতি ৭.৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বের একটি সাফল্য।’’ মোদী চাপের কাছে নতি স্বীকারের পাত্র নয় বলেও জানান পুতিন। ‘হাউডি মোদী’-‘নমস্তে ট্রাম্প’ অধ্যায়ের পরে কি মোদীর নেতৃত্বে ভারত আবার নেহরু-ইন্দিরা জমানার কূটনীতির পথে? পুতিনের সফরেই হয়ত এর ইঙ্গিত মিলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.