ইডেনে জসই বস্! শেষ বলে হার কলকাতার, ম্লান সুনীল নারাইনের শতরান, ২ উইকেটে জিতে শীর্ষে সঞ্জুরা

ব্যর্থ হল সুনীল নারাইনের শতরান। ইডেনে ২২৩ রান করেও জিততে পারল না কেকেআর। জস বাটলার শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে রাজস্থান রয়্যালসকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। আরও একটি শতরান করলেন তিনি। ব্যাটারেরা দাপট দেখালেও কেকেআরের বোলারেরা হতাশ করলেন। এই হারের ফলে পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেই থেকে থাকল কেকেআর। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে নিজেদের জায়গা আরও পাকা করল রাজস্থান।

টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন রাজস্থানের অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। এই ম্যাচে রান পাননি আগের ম্যাচের নায়ক ফিল সল্ট। আবেশ খানের দুরন্ত ক্যাচে ১০ রানে ফেরেন তিনি। সল্ট রান না পেলেও আর এক ওপেনার নারাইন এই ম্যাচ শুরু থেকেই বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন। তিন নম্বরে নামা অঙ্গকৃশ রঘুবংশীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ৮৫ রান যোগ করেন তাঁরা।

আইপিএলে নতুন হলেও প্রতি ম্যাচে ম্যানেজমেন্টকে ভরসা দিচ্ছেন রঘুবংশী। এই ম্যাচেও দেখালেন তিনি কতটা প্রতিভাবান। উইকেটের সব দিকে শট খেললেন। নারাইনের উপর থেকে চাপ কিছুটা কমিয়ে দেন তিনি। তাতে লাভ হয় কেকেআরের। কারণ, নারাইন যে দিন চাপ ছাড়া খেলবেন সে দিন তাঁকে রোখা মুশকিল। এই ম্যাচেও সেটা দেখা গেল। ১৮ বলে ৩০ রান করে থার্ড ম্যান অঞ্চলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন রঘুবংশী।

আগের ম্যাচে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেও এই ম্যাচে রান পাননি কেকেআর অধিনায়ক শ্রেয়স। ১১ রান করে আউট হন তিনি। রাসেল করেন ১৩ রান। অন্য প্রান্তে রান না এলেও এক দিকে নিজের কাজ করে যাচ্ছিলেন নারাইন। রাজস্থানের দুই সেরা অস্ত্র যুজবেন্দ্র চহাল ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের পিছনে গেলেন তিনি। দুই স্পিনার রান দেওয়ায় সমস্যা হল রাজস্থানের। মাত্র ৪৯ বলে শতরান করলেন নারাইন। ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কা মারলেন তিনি। পেসার, স্পিনার কোনও বোলারকে রেয়াত করলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের এই ক্রিকেটার। কেকেআরের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসাবে আইপিএলে শতরান করলেন নারাইন। শেষ পর্যন্ত ৫৬ বলে ১০৯ রান করে ট্রেন্ট বোল্টের বলে আউট হন তিনি।

শেষ দিকে কেকেআরের রানকে টেনে নিয়ে গেলেন রিঙ্কু সিংহ। ৯ বলে ২০ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২২৩ রান করে কেকেআর। ইডেনে চলতি মরসুমে এটি কেকেআরের সর্বাধিক রান।

জবাবে রান তাড়া করতে নেমে প্রথম থেকেই বড় শট খেলা শুরু করেন যশস্বী জয়সওয়াল। কিন্তু বড় রান করতে পারেননি তিনি। ৯ বলে ১৯ রান করে বৈভব অরোরার বলে আউট হন তিনি। অধিনায়ক সঞ্জুও এই ম্যাচে রান পাননি। ১২ রান করে হর্ষিত রানার বলে ফেরেন তিনি। জরুরি রানরেট বেশি হওয়ায় হাত খুলে খেলা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না রাজস্থানের ব্যাটারদের। সেটাই করছিলেন জস বাটলার ও রিয়ান পরাগ। চলতি মরসুমে ভয়ঙ্কর ব্যাট করছেন পরাগ। এই ম্যাচেও পেসারদের বিরুদ্ধে বড় শট মারছিলেন তিনি। সাত ওভারেই ১০০-র কাছে পৌঁছে যায় রাজস্থান।

কলকাতাকে খেলায় ফেরান হর্ষিত। তাঁর বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন পরাগ। ভাল ক্যাচ ধরেন রাসেল। ১৪ বলে ৩৪ রান করেন পরাগ। উইকেট পড়ায় রান তোলার গতিও কমে যায় রাজস্থানের। ব্যাট হাতে শতরানের পাশাপাশি বল হাতেও নিজের কাজ করেন নারাইন। ধ্রুব জুরেলকে ২ রানের মাথায় আউট করেন। প্রথমে আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেন শ্রেয়স। ১০০ রানে ৪ উইকেট পড়ে যায় রাজস্থানের।

ছ’নম্বরে অশ্বিন ব্যাট করতে নামেন। তিনিও রান করতে পারেননি। ১১ বলে খেলে মাত্র ৮ রান করে বরুণ চক্রবর্তীর বলে আউট হন তিনি। পরের বলেই শূন্য রানের মাথায় শিমরন হেটমায়ারকে আউট করে রাজস্থানকে বড় ধাক্কা দেন বরুণ।

১৫ ওভারের পর থেকে মারা শুরু করে রাজস্থান। বাটলার তখনও ক্রিজ়ে ছিলেন। বরুণের পরের ওভারে ১৭ রান নিয়ে রাজস্থানকে লড়াইয়ে রাখেন তিনি। বাটলারকে সঙ্গ দেন রভম্যান পাওয়েল। রাসেলের এক ওভারে আসে ১৭ রান। পরের ওভারে নারাইনকে দু’টি ছক্কা ও একটি চার মারেন পাওয়েল। দেখে মনে হচ্ছিল, ম্যাচ বার করে দেবেন দুই ব্যাটার। যদিও সেই ওভারেই ২৬ রানের মাথায় পাওয়েলকে আউট করেন তিনি। ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন নারাইন।

শেষ তিন ওভারে রাজস্থানের জিততে দরকার ছিল ৪৬ রান। বাটলারের উপরেই সব নির্ভর করছিল। স্টার্কের শেষ ওভারে ভুল করে বসেন সল্ট। একটি বল ধরতে পারেননি তিনি। ওয়াইড বল বাউন্ডারিতে চলে যায়। সেই ওভারে আসে ১৮ রান। আরও এক বার হতাশ করলেন স্টার্ক। ৪ ওভারে ৫০ রান দিলেন ২৫ কোটির পেসার।

১৯তম ওভারে ১৯ রান নিলেন বাটলার। তিনি একাই খেলা কেকেআরের হাত থেকে নিয়ে গেলেন। শেষ ওভারে ম্যাচ জিততে ৯ রান দরকার ছিল রাজস্থানের। সেটা করে দেখালেন বাটলার। আরও এক বার ছক্কা মেরে শতরান করে শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে রাজস্থানের সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটালেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.