আজকের দিনটিতেই কেন শহিদ দিবস পালন করা হয়, জেনে নিন

১৯৪৮ সালের আজকের দিনেই জাতির জনক মহাত্মা গান্ধিকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন নাথুরাম গডসে। গান্ধি-মৃত্যুর এই দিনটি তারপর থেকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি বছর এই দিনটি মহাত্মা গান্ধী ও দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ বীর যোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই দিনটি পালন করা হয়। ৩০ জানুয়ারি এই দিনটি জাতীয় পর্যায়ে পালিত হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়ে থাকে বিশেষ এই দিনটিতে।

শহিদ দিবসে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, এবং তিন বাহিনী প্রধান দিল্লির রাজ ঘাট স্মৃতিসৌধের সমাধিতে জড়ো হন। ফুল দিয়ে সজ্জিত পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সকাল ১১টায় শহিদদের স্মরণে দেশজুড়ে দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা সর্ব-ধর্মের প্রার্থনা করার পর শ্রদ্ধা জানান। গান্ধীজির হত্যাকারী নাথুরাম গডসের সঙ্গে চরমপন্থী হিন্দু মহাসভার যোগাযোগ ছিল। গডসেকে গান্ধিজিকে হত্য়ার কাজে সহায়তা করেছিলেন নারায়ণ আপতে নামে আরও একজন৷ দুজনকেই গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১৪ নভেম্বর তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়।

উইকিপিডিয়া থেকে জানা গিয়েছে, গান্ধীজির মৃত্যুর পর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। রেডিওতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, ‘‘বন্ধু ও সহযোদ্ধারা আমাদের জীবন থেকে আলো হারিয়ে গেছে, এবং সেখানে শুধুই অন্ধকার এবং আমি ঠিক জানি না আপনাদের কী বলব কেমন করে বলব। আমাদের প্রেমময় নেতা যাকে আমরা বাপু বলে থাকি, আমাদের জাতির পিতা আর নেই। হয়ত এ ভাবে বলায় আমার ভুল হচ্ছে তবে আমরা আর তাঁকে দেখতে পাব না যাঁকে আমরা বহুদিন ধরে দেখেছি, আমরা আর উপদেশ কিংবা স্বান্ত্বনার জন্য তাঁর কাছে ছুটে যাব না, এবং এটি এক ভয়াবহ আঘাত, শুধু আমার জন্যই নয়, এই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য।’’

গান্ধীজি ও দেশের বীর যোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ৩০ জানুযারি দিনটি শহিদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে৷ আজ মহাত্মা গাঁধীর ৭৩-তম প্রয়াণ দিবসে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘শহিদ দিবস’। ৭৮ বছর বয়সে তিনি গডসের গুলিতে মৃত্য়ু হয় গান্ধীজির৷ ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারী, গান্ধী নয়া দিল্লির বিড়লা হাউজ থেকে বেরিয়ে হাউজের পিছনে একটি প্রার্থনা সভায় যাচ্ছিলেন উঁচু লন ধরে৷ গান্ধীর মঞ্চে ওঠার আগেই গডসে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়ায়। তিনি গান্ধীর বুকে তিনটি গুলি চালিয়েছিলেন। তৎক্ষনাত পড়ে যান গান্ধীজি৷ এরপর গান্ধীজিকে ফের বিড়লা হাউসে তাঁর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

শহিদ দিবসে টুইটে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী৷ এদিন টুইটে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ লিখেছেন,‘‘একজন কৃতজ্ঞ জাতির পক্ষ থেকে, জাতির পিতা, মহাত্মা গান্ধীর প্রতি আমার বিনীত শ্রদ্ধা যারা এই দিনটি শাহাদাতকে গ্রহণ করেছিলেন। আমাদের উচিত তার আদর্শের শান্তি, অহিংসা, সরলতা, মাধ্যমের বিশুদ্ধতা এবং নম্রতা অনুসরণ করা। আসুন আমরা তাঁর সত্য ও প্রেমের পথে চলার সংকল্প করি’’৷

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটে লিখেছেন, ‘‘পুণ্য তিথিতে মহান বাপুকে শ্রদ্ধা নিবেদন। তাঁর আদর্শ লক্ষ লক্ষকে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে’’৷ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এদিন টুইটে লিখেছেন, ‘‘শহীদ দিবসে, মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানান। তাঁর মান ও আদর্শ সর্বদা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করবে৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.