স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে দু’মাসেই ৩৮০ কোটির চিকিৎসা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ৬৫ লক্ষ পরিবার

বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: প্রথম ইনিংস শুরু ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল। তখনই বোঝা গিয়েছিল লম্বা রেসের ঘোড়া হবে স্বাস্থ্যসাথী। ১ ডিসেম্বর, ২০২০-তে দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি। আর এই দ্বিতীয় ইনিংসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন-প্রকল্প বুঝিয়ে দিল, কেন বিরোধীরা এত বেশি ডরাচ্ছে সরকারের স্বাস্থ্যবিমাকে! কারণ, শুধু গত দু’মাসেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ৩৮০ কোটি টাকার চিকিৎসা পেয়েছেন রাজ্যবাসী। প্রতিদিন কমবেশি ৩ হাজার ৬০০ জন মানুষ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন। অর্থাৎ, মাসে লক্ষেরও বেশি!
সোমবার ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির পঞ্চম পর্ব শেষ হল। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, ১ ডিসেম্বর থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি—এই সময়ে স্বাস্থ্যসাথীর জন্য আবেদন করেছে রাজ্যের এক কোটিরও বেশি পরিবার। খুব কম সময়ে কার্ড প্রাপ্তির সংখ্যা ৬৫ লক্ষ। তথ্য বলছে, ২০১৭ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ২ কোটিরও বেশি পরিবার এই স্বাস্থ্যবিমায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গড়ে পাঁচজন ধরলে প্রকল্পের সুবিধা পাবেন ১০ কোটি উপভোক্তা। সম্প্রতি সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়ও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছেন।
এদিন এই প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্যসাথী শুধুমাত্র একটি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প নয়। এটি মহিলাদের ক্ষমতায়ন, নিজের বাবা-মা এবং শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে বৃহত্তর পরিবারের প্রকল্প। সারা দেশে এমন প্রকল্প দ্বিতীয়টি মিলবে না।’
দপ্তর সূত্রে দাবি, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড থাকা সত্ত্বেও কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর কানে এসেছে। তারপর তাঁর কড়া হুঁশিয়ারিতে মোক্ষম কাজ হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে রাজ্যের আরও প্রায় ৩৫০টি বেসরকারি হাসপাতাল যুক্ত হয় এই প্রকল্পে। এদিন পর্যন্ত সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪২৫। এই পর্বে তালিকাভুক্তদের মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার চিকিৎসায় পূর্ব ভারতের সর্ববৃহৎ কেন্দ্র চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের (সিএনসিআই) রাজারহাটের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সহ ১০টি সরকারি হাসপাতালও। এই মুহূর্তে ১ হাজার ৫৩৫টি বেসরকারি ও ৫১০টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতাল এই পাঁচ লাখি বিমা প্রকল্পের আওতায়।
সূত্রের খবর, বাইপাস লাগোয়া একটি বড় বেসরকারি হাসপাতাল বাদে এখন কলকাতার প্রায় সব বড় কর্পোরেট হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথীর অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘ভেলোর, এইমস আগেই সরকারের এই স্বাস্থ্যবিমায় যুক্ত হয়েছে। চিকিৎসা করাতে ভিন রাজ্যে যাওয়া বাঙালিদের অন্যতম পছন্দের হাসপাতাল চেন্নাই অ্যাপোলোও আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’ চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাঙালি কেন দক্ষিণ ভারতে যাচ্ছে, সেই পুরনো ক্ষোভের জায়গা থেকে সরে এসেছে রাজ্য। পাশাপাশি, নিজেদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বাড়ানোর উপরেও জোর দিচ্ছে সরকার। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.