করোনার চেয়ে বিষধর

সমস্ত দেশটা জ্বলছিলই। কেন্দ্র সরকার কেন গত ২০১৯-এর ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধিতার নামে ধ্বংসলীলা, অরাজকতা দেখেও সেনা নামায়নি সে নিয়ে প্রশ্ন সরকারকে করা হবে বা বিরোধীদের, নির্ধারণ করা খুব মুশকিল। তবে এটা ঠিক, সেনা বা আধাসেনা নামিয়ে শাহীনবাগি বিপ্লবীদের তুলে দিলে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দিল্লী রাস্তায় রক্তযমুনা বইত না। যথারীতি হিন্দু নির্মূলীকরণ দ্বারা ‘গজ়বা-এ-হিন্দ’-এর স্বপ্ন দেখা বেপরোয়া ‘শঙ্কিত সম্প্রদায়’ উদ্দেশ্য পূরণের বদলে প্রতিরোধের সম্মুখীন হতেই ভিকটিম প্লে শুরু করে এবং পেট্রোডলার পুষ্ট মিডিয়াও সারা বিশ্বে তার এমন প্রচার করে, যে ভারতের সত্তর শতাংশ জনতাই কার্যত আসামির কাঠগোড়ায় দাঁড়িয়ে। বেচারা শঙ্কিত খুনে দাঙ্গাবাজরা অপপ্রচারের ঢক্কানিনাদে নিজেদের সাম্প্রদায়িক কর্মসূচীতে বিরতি দেওয়ার বদলে প্রবল উৎসাহে দেশের প্রতিটি শহরে একেকটা শাহীনবাগ তৈরির মহান ব্রতে প্রস্তুত হতে লাগল। আমাদের রাজ্যে একটা পার্কাসের কথা খবরে এসেছে। গ্রামেগঞ্জে কতগুলো শাহীনবাগ পার্কসার্কাস গড়ে উঠেছে সেই তদন্তে আর ঢুকছি না।

এই মস্ত মোটা গোদের জ্বালায় সারা দেশ যখন জেরবার, তখন অকস্মাৎ আবির্ভাব এক বিষফোঁড়ার – করোনা ভাইরাসের বিষধরতম সংস্করণ কোভিড-১৯ (Covid-19)। জন্ম চীনের উহান শহরে, এবং দাপট সারা বিশ্ব জুড়ে; অবশ্যই চীনের অন্যান্য শহর বা গ্রামাঞ্চলগুলিকে পাশ কাটিয়ে। মারাত্মক সংক্রামক এই কোভিড-১৯ (Covid-19) -এর মানব শরীরে ঘাঁটি গাড়া ইঁদুর বাদুড় ইত্যাদি চৈনিক খাদ্যরুচির ফলশ্রুতি, নাকি চীনের জীবাণু যুদ্ধের সাফল্য, সে নিয়ে অনেক গবেষণা ও তদন্ত ইতিমধ্যেই হয়েছে। যে ভাবে চীন অবিশ্বাস্য দ্রততায় এত বড় সংকট সামলে নিল, নিজের কাছাকাছি জনপদগুলোকে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত হতে না দিয়ে, এবং সেরে ওঠার পরেই যেভাবে তেড়েফুঁড়ে বিশ্বের বাজারে মারণ ভাইরাসের চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহের একচেটিয়া বরাত বাগিয়ে নিল, তাতে জীবাণুযুদ্ধের মারফৎ বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ হাতিয়ে নেওয়ার তত্ত্ব যাদের অবিশ্বাস্য লাগে লাগুক, আমার তো লাগছে না। জানি অধিকাংশ মানুষেরই লাগছে না। তাই এ ব্যাপারে আমার নতুন কিছু সংযোজন করার নেই।

বরং নজরটা নিজের দেশবাসীর দিকে ফেরানো যাক। বাতাসে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে, এমনকি সামান্য স্পর্শের মাধ্যমে যে প্রাণঘাতী বস্তুটি বিস্তার লাভ করতে পারে, যার নির্ভরযোগ্য ওষুধ অপ্রতুল এবং প্রতিষেধক টীকা এখনও অনাবিষ্কৃত বা সফলভাবে পরীক্ষিত নয়, এই অবস্থায় তার সংক্রমণ প্রতিরোধ করার একমাত্র কার্যকরী উপায় যেসামাজিক দূরত্ব’ (social distancing), একক বিচ্ছেদ (isolation) বা পৃথকীকরণ (quarantine), আর চরম সতর্কতা হিসাবে কার্ফিউ বা লকডাউন – অর্থাৎ পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা তথা পারস্পরিক আদানপ্রদান বন্ধ রাখা, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত নেই। তাই এই তাগিদ থেকে প্রশাসকের ভূমিকা পালন করতে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার নামক দুই অহি ও নকুলের মধ্যেও আপৎকালীন সহযোগিতার ভঙ্গিও দেখা গিয়েছে। আমাদের জাতীয় বিদুষক পাপ্পু গান্ধীও মামাবাড়ি ইটালির পরিণতি দেখে আন্তর্জাতিক বিমান বন্ধ করার ও করোনাকে (Corona) গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলার আবেদন বা দাবি রেখেছিলেন। সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে যখন করোনার প্রকোপ মূলত চীন, ইটালি ও ইরানে সীমাবদ্ধ ছিল, ভারতে দু-একটির বেশি সংক্রমণের খবর শোনা যায়নি, তখন রাহুল গান্ধীর দাবি অনুযায়ী হুট করে সব বন্ধ না করে সরকার যাতায়াত পরিষেবা ও বাণিজ্য অক্ষুন্ন রেখেই একদিন ১৪ ঘণ্টার জন্য ‘জনতা কার্ফিু’ (Janata Curfew) জারি করে কেন্দ্র সরকার। তখন জনতা ও প্রদেশ সরকারগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সাড়া দেয়, যদিও সন্ধ্যাবেলা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে থালা বাটি শাঁখ বাজাতে গিয়ে যে বাড়াবাড়ি ও আহাম্মকি করে ফেলেছিল আমাদের অতি উৎসাহী জনতা, তাতে কার্ফিউর উদ্দেশ্যটাই মাঠে মারা যায়

সেই সময় শুধু দুটি শিবির ছিল নাখুশ। এক, যারা দেশের আইন-কানুন অমান্যকেই নিজেদের ধর্মীয় স্বাধীনতা মনে করে তারা; আর দুই, যারা স্বদেশকে গালাগাল, বিদেশের প্রশস্তি ও সব ইতিবাচক উদ্যোগকে বানচাল করাটাই ব্যক্তিস্বাধীনতা গণতন্ত্র ও প্রগতিশীলতা মনে করে। প্রথম পক্ষের কথা নতুন করে বলার নেই, একটু পরে তাদের কথায় ফিরতেই হবে। আর দ্বিতীয় পক্ষ মানে বামপন্থী শিবির সংকট মোকাবিলার বিপরীত মেরুতে গিয়ে শ্রমজীবী মানুষের একদিনের রোজ নষ্ট করার প্রতিবাদে ‘মানব বন্ধন’-এর আহ্বান করে হাঁকডাক শুরু হল। অবশ্য তাতে গোলমাল কিছু হয়নি, কারণ কমরেডরা নিজেরাই সংক্রমণের ভয়ে ঘরে সেঁধিয়ে বসেছিল – যা হওয়ার উস্কানিতে বাইরে আসা গোরু ছাগলদের হোক। আর জনতাও মানববন্ধনে হালাল হওয়ার বদলে সারাদিন ছুটি কাটিয়ে সন্ধ্যায় করতালি থালা কাঁসর ঢাকঢোলসহ শোভাযাত্রায় বেশি উৎসাহিত বোধ করেছিল।

যাই হোক, মোটের ওপর জনতা কার্ফিউ পুরোপুরি সফল হল না। আর আংশিক সাফল্য দিয়ে সুবিস্তীর্ণ সংক্রমণ জালকে সাময়িক কয়েকটা ছিদ্র করা গেলেও ঠিকমতো ছেঁড়া যায় না। অগত্যা রাজ্যে রাজ্যে বড় শহরগুলোতে লকডাউন চালু হল। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীও এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি, যদিও পশ্চিমবঙ্গে তখনও পর্যন্ত সংক্রমণের ও মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক ছিল না। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় প্রধানমন্ত্রী প্রায় বিনা পূর্বাভাষে ঘোষণা করলেন সম্পূর্ণ লকডাউন।

TOPSHOT – In this photo taken on December 19, 2019 police beat protesters with sticks during a demonstration against India’s new citizenship law in Lucknow. – Indians defied bans on assembly on December 19 in cities nationwide as anger swells against a citizenship law seen as discriminatory against Muslims, following days of protests, clashes and riots that have left six dead. (Photo by STR / AFP) (Photo by STR/AFP via Getty Images)

ব্যাস্‌! দেশময় ত্রাহী ত্রাহী রব উঠল। ওঠা অস্বাভাবিকও নয়। বহু মানুষ দৈনিক রোজের ভিত্তিতে অস্থায়ী কাজ করে। তাদের ভিন রাজ্যে গিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইও জোটেনি, কিংবা একটি ঘরে গাদাগাদি করে রাত কাটানোর ব্যবস্থা আছে মাত্র। আইসোলেশন, হোম কোয়ারেন্টাইন শব্দগুলো এদের কথা ভাবলে উপহাসই শোনাবে। উপরন্তু সংক্রমণের আশঙ্কায় ও আর্থিক কারণে তাদের কাছ থেকে সেই ছাদ বা খোলা আকাশের নীচে খাটিয়াটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তার ওপর আছে পুলিসের নরম জমিতে আঁচড় কাটার অভ্যাস। পশ্চিমবঙ্গে বেশিরকম, বহির্বঙ্গেও কমবেশি। এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর হ্যাপা অনেক; তাদের ওপর হম্বিতম্বি করা করাটা বরং সবচেয়ে নিরাপদ। তাছাড়া অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ও পণ্যের বিপণন চালু রাখার কথা বললেও সেগুলির উপলভ্যতা নিয়ে সংশয় তৈরি হল। বস্তুত বাড়ি থেকে ওষুধ, দুধ, গোলদারি বা আনাজপাতি ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় জিনিষ কিনতে বেরিয়েও নির্বিরোধ একা মানুষ প্রহৃত হয়েছে, এমনকি লাঠির ঘায়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে বলে খবর

পোস্ট ও কুরিয়ার সার্ভিস খোলা থাকবে কিনা, সে নিয়ে প্রথমদিকে স্পষ্টতা ছিল না। বাড়ির বাইরে বেরোনো বন্ধ করার জন্য অনলাইন পেমেন্ট ও অর্ডারকে উৎসাহিত করা হলেও পুলিস টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ডেলিভারি বয়রাও মার খেয়েছে, নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার লিটার দুধ, যার ফলে ই-ট্রেডাররা ব্যবসা চালু রাখতে দ্বিধা করছে। অধিকাংশ ওষুধ তো উপলব্ধই নয়, আর বরাত দিলেও নানারকম তানানানার পর তা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। দোষ দিই কী করে? জিনিস পৌঁছতে গিয়ে বেমক্কা লগুড়াঘাত কার উপাদেয় মনে হবে? অথচ এই লকডাউনে পেট গোলমাল বা হাঁচি হলে কি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন খুঁজতে বেরোব না নিজেরা গিয়ে ওষুধ কিনে আনব? ওষুধ কিনে বেরোনোর পথে যদি মনে পড়ে সামান্য কিছু বাজার করে ফিরি, তাহলে কি প্রমাণ দেখানোর জন্য আগে থলে নিয়ে আসতে হবে নাকি ঝটপট কেনা সেরে বাড়ি ঢুকতে হবে? ECL-এর একটি কোলিয়ারির কিছু শ্রমিক এই অতি সক্রিয়তার জেরে মার খেয়ে কয়লা উত্তোলন না করার হুমকিও দিয়েছিল। আমাদের সৌভাগ্য তারা তেমন চরম পদক্ষেপ নেয়নি। নতুবা কয়লার অভাবে বিদ্যুৎ ছাড়া স্বাস্থ্য পরিষেবার কী হাল হত ভাবলেও ভয়।

তাছাড়া সরকারি সব নির্দেশিকা সবচেয়ে দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যায় সোশাল মিডিয়া মারফত। কিন্তু দেশের দারিদ্রসীমার নীচে থাকা বিপুল জনসাধারণের সবাই যে সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে সংযুক্ত বা সবার যে থাকার সঙ্গতি আছে, সেটাও ধরে নেওয়া যায় না। অভূতপূর্ব এই পরিস্থিতিতে তাই প্রথমদিকে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ স্বভাবতই তৈরি হয়েছিল।  

তবে পশ্চিমবঙ্গে এবং হয়তো বা অন্যান্য প্রদেশেও ক্যা (CAA) ছি সমাবেশে সোশাল ডিস্টেন্সিং কিন্তু প্রতিবাদীদের সদিচ্ছার ওপর ছেড়ে রাখা আছে। লকডাউনের নির্দেশ অমান্য করে মসজিদে নমাজ় পড়ার হার দু এক জায়গায় সামান্য হ্রাস পেলেও অব্যাহত আছে। কারণ কোরান অনুযায়ী নমাজ়ের জোরে করোনা ভাইরাস (Corona virus) নাকি ইবাদতকারীদের স্পর্শ না করে শুধু কাফের ধ্বংসের জন্যই ধাবিত হবে। এ সমস্তই চলছে প্রশাসন নামক ভাঁড় ও মিডিয়া নামক নির্লজ্জ চামচাদের নাকের ডগায়। আর প্রশাসনিক কোটাল প্রহরীরা নির্বিরোধ মানুষকে পিটিয়ে কর্তব্য সেরেছে।

ওদিকে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে সাত বছরের কম সাজাপ্রাপ্ত ও জেলে ভালো ব্যবহার প্রদর্শনকারীদের প্যারোলে ছাড়ার কথা। এই প্যারোলে থাকার জন্য দমদম জেলের মধ্যেও অশান্তি হাতাহাতির খবর পাওয়া গেছে। পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কায় বা তা লাভ করার জন্য সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু যেখানে খুনি অপরাধীদেরও জেলের মধ্যে সংক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে নিরপরাধ মানুষ বাড়ির বাইরে জরুরি জিনিস কিনতে বেরিয়েও পুলিস ও তার অবৈধ সংস্করণ সিভিক ভলান্টিয়ারের কাছে মার খাচ্ছে! এই দণ্ড-চিকিৎসাবিধি কতটা জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে, আর কতটা নিজেদের হেফাজতে মালপত্র মজুত করা বা কাটমানির তাগিদে, সে নিয়ে প্রশ্ন না হয় এখন নাই তুললাম। মোটের ওপর হোম কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, লকডাউন ইত্যাদি শব্দগুলোর সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও  প্রশাসনিক কর্মী বা ভাড়াটে স্বেচ্ছাসেবকদের পূর্ব পরিচয়ের অভাবে ও কিছুটা স্বভাবে বিস্তর গোলমাল হয়েছে। কেন্দ্র রাজ্য সব মিলিয়ে অভিযোগ অনেক।

এর মধ্যে একটি যুক্তিগ্রাহ্য প্রশ্ন হল, যেখানে চোদ্দ ঘণ্টার জনতা কার্ফিউ জারির তিন দিন আগে থেকে ঘোষণা করে লোকজনের মধ্যে প্রায় করোনা বিরোধী যুদ্ধযাত্রার হুজুগ তৈরি করা হয়েছিল, সেখানে মাত্র তিন ঘণ্টার নোটিসে পুরোপুরি দেশজোড়া লকডাউন করাটা হঠকারিতা নয় কি? অবশ্য পরিস্থিতির চাপ সব সময় প্রস্তুতির সময় দেয় না। জনতা কার্ফিউ মহামিলন উৎসবে পরিণত না হলে নিশ্চয়ই খানিকটা সময় পাওয়া যেত। শুধু নিজেদের সান্ত্বনা দেওয়া যায় এই অনুমান করে, যে এই দুর্দিনে বধূহত্যা ও বধূ শিশু নিগ্রহ ছাড়া আর কোনও সংগঠিত অপরাধের সুযোগ কম

এ তো গেল আপাত অব্যবস্থার ছবি যা এই পরিস্থিতিতে ভারতের মতো সুবিশাল যা খুশি করা ও বলার দেশে অবশ্যম্ভাবী। এই দুঃসময়ে সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সবার কাছে সহযোগিতা আশা করাই বাতুলতা। কিছু মানুষ গুরুত্ব না বুঝে যে ভুল করে ফেলছে, তা সংশোধনের উপায় আছে। কিন্তু যারা ইচ্ছাকৃত সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং যারা সব জেনেবুঝে এদের আড়াল করছে ও মদত দিচ্ছে, তাদের মানসিক ব্যাধি সারাতে না পারলে তো সব চেষ্টায় থুথু পড়তে বাধ্য। এবার আসি অন্য গল্পে।

২৩ মার্চ ধরা পড়ল বিহারের পাটনার একটি মসজিদে ১২ জন চীনাসহ বিদেশী মুসলিম ধর্ম প্রচারক মৌলবি এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এড়িয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে। তার কিছুদিন পরে ২৬ মার্চ ঝাড়খণ্ডের বুণ্ডু তামাড় অঞ্চলের একটি মসজিদেও ধরা পড়ল চীন, ইন্দোনেশিয়া, কিরগিস্তান থেকে আগত ১১ জন ধর্মশিক্ষক। তার দু দিনের মধ্যে তামিলনাড়ুর অম্বুরে আবিস্কৃত হল ২০জন বিদেশী মৌলবি যাদের ১২জন ইন্দোনেশিয়ান ও ৮জন রোহিঙ্গা। আর ৩০ মার্চ দিল্লীর বাংলাওয়ালী মসজিদের সমাবেশ থেকে ৩০০ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। প্রায় ১৮০০ ধর্মান্ধর ‘তালিবাগি’ সমাবেশে বিদেশ থেকে আগত কম করে ২৫০ জন। এর জেরে দিল্লীর নিজ়ামুদ্দিন এলাকার মোট ২০০০ জনকে ধরে বেঁধে স্ক্রীনিং ও অনেককেই কোয়ারেন্টানইনে পাঠানো হয়েছে। এরা ছাড়াও বেশ কিছুদিন ধরে জমা হওয়া এই রোগ বাহকরা অনেকেই ইতিমধ্যে দেশের অন্যত্র গিয়ে করোনার প্রসাদ বিতরণের মহৎ কাজটি সেরে ফেলেছে। তাদের মধ্যে মারা গিয়েছে এখনও পর্যন্ত ১০ জন। এই আলেখ্য লিখতে লিখতে খবর পেলাম মীরাটেও দুটি মসজিদ থেকে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এরা এসেছে সুদান, কেনিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। এসব থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কি আদৌ কষ্টকল্পিত যে, এই মহাপুরুষরা নিছক ধর্মচর্চার জন্য নয়, রোগ সংক্রমণের ব্রত নিয়েই ভারতে এসেছে এবং ভারতীয় ভাইজানদের সহযোগিতাতেই কাজটা করে চলেছে। যে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এরা দাবি করে, করোনা আল্লার দান, ওদের কিছু হবে না, তাতে এই ধারণা করাটাও ভিত্তিহীন নয়, যে ওরা এমন কোনও প্রতিষেধক পাচ্ছে বা পেয়েছে, যাতে করে ওরা বাহক হলেও নিজেরা অসুস্থ হয়ে মরণাপন্ন হবে না; আর সেইসব ওষুধ অ্যান্টিডোটের আদানপ্রদানের জন্যই চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশ থেকে ধর্মযোদ্ধা মৌলবিদের আগমণ। যাদের ধর্মান্ধ মূর্খ ভাবি, তারা কি সত্যিই অজ্ঞ? নাকি ‘ফিদায়েঁ’? আত্মঘাতী বোমারুরা স্বর্গে ৭২ হুর লাভের বাসনায় নিজেরাও মারা যায়। কিন্তু করোনা মহামারীর অনুঘটকদের হয়তো সেই ভয়টাও কম, কিংবা তাদের ভাঁওতা দিয়ে তেমন কিছু বোঝানো হয়েছে। তাই তারা চীনা ভাইরাসকে অস্ত্র ও নিজেদের দেহগুলোকেই জলজ্যান্ত অস্ত্রাগার বা বিষকুম্ভ বানিয়ে ঘুরেফিরে বিষ ছড়াতে চাইছে।

আমার কথাগুলো গাঁজায় দম টেনে লেখা মনে হলে বামপন্থীদের ফেসবুক পোস্টগুলোর সঙ্গে একটু মিলিয়ে নিতে পারেন। বিশ্বময় এই করোনা মহামারীর জন্য সন্দেহের তীর চীনের দিকে দেখে তাদের গাত্র ও অন্তর্দাহ স্বাভাবিক। একজনের যুক্তির ঝাঁঝে পেলাম দুটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এতদিন হিন্দুত্বাদীরা যুদ্ধবাজ ইওরোপ আমেরিকার দাদাগিরি সহ্য করেছে, আজ চীনের দাদাগিরিতে আপত্তি কীসের? আর দুই, ২৫ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে আজ চিকিৎসা বিজ্ঞানে চীনের এই সাফল্য। পথে এসো কমরেড। অর্থাৎ সাম্প্রতিক মহামারীতে চীন প্রকৃতই দাদাগিরির জায়গায় পৌঁছেছে। চীনের এত দ্রুত সামলে ওঠা ও একটি শহর ছাড়া অন্য কোথাও রোগ ছড়াতে না দেওয়া, রাতারাতি সাময়িক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বানিয়ে আবার সেগুলো তুলে দেওয়া, নিজেদের সংকটমুক্ত ঘোষণা করে সারা বিশ্বের চিকিৎসা সহযোগিতার মানবিক মুখ ও ব্যবসায়িক কেন্দ্র হয়ে ওঠার পেছনে যে একটা পূর্বপরিকল্পিত প্রস্তুতি ছিল, তা সাধারণ বুদ্ধিতেই অনুমান করা যাচ্ছিল। কিন্তু এই প্রস্তুতি ঠিক কত বছরের, সেটা তোমার লেখাতেই আভাস দিয়ে ফেলেছ। ইনফোসিস কোম্পানির এক সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের ভিড়ে গিয়ে হাঁচার পরামর্শও আমার সন্দেহের বৈধতাই প্রমাণ করছে। চীনা ভাইরাস নামকরণে যাদের ভীষণ মর্মপীড়া, ‘করোনা জেহাদ’ নামটা কিন্তু তারাই আমন্ত্রণ করে এনেছে।  

যেভাবে করোনাকে কাফির নিধনের আল্লা প্রেরিত ‘গজল’ বলে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে, তাতে দেশ জুড়ে একের পর মসজিদ থেকে বিদেশী করোনা পজ়িটিভদের ধরা পড়ার সঙ্গে চীনের সুদীর্ঘ কালীন প্রস্তুতির যোগসূত্র প্রমাণ হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। যদি এই অনুমান ভুল হয়, তাহলে কোভিড-১৯-এর হামলায় সবচেয়ে বেশি প্রাণ কিন্তু মুমিনদেরই যাওয়ার কথা। তাতেও চীনের ক্ষতি নেই। ছাই ফেলা শেষ হলে ভাঙা কুলোর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

কিছুদিন আগে যখন শহরগুলোকে লকডাউন করা হচ্ছিল, তাই দেখে আমার মনে হয়েছিল গ্রামাঞ্চল বাদ কেন? ভিন রাজ্য থেকে শ্রমিকরা তো গ্রামেই ফেরে বেশি। তাছাড়া বাংলার সীমান্তবর্তী গ্রামে ‘অনুপ্রেরিত’ অনুপ্রবেশ দ্বারাও সংক্রমণের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। এই পথটা আটকাতে পারলে রাজনৈতিক দলদাসত্ব শৃঙ্খলও খানিটা চোট পেত। প্রকৃত ধর্মান্ধ ও ধর্মান্ধদের ব্যবহার করা শিক্ষিত শয়তানদের মধ্যে পেট্রোডলারের শৃঙ্খলাও ছিঁড়ে যেত। মসজিদে মসজিদে কোভিড-১৯-এর চাষাবাদ ও সংরক্ষণের খবর প্রকাশ্যে আসতে বুঝতে পারছি আমার আশঙ্কা ভুল ছিল না। এতদিন শুধু গাল দিয়েছি প্রথম বিশ্বের দেশগুলো থেকে আগত ধনী বিমান যাত্রীদের। এখন তো মনে হচ্ছে যতটুকু আবিস্কৃত হয়েছে, বিমান ছাড়াও স্থলপথে বেআইনি অনুপ্রবেশের মাধ্যমে জীবাণু জালক ভারতে চারিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি।

দিন কয়েক আগে ২৩ মার্চ জনতা কার্ফিউয়ের পর শহরগুলোকে লকডাউন করার সময় আমাদের বাংলার সাম্প্রতিক জনৈক ‘জাত’ কবির হঠাৎ দেশাত্মবোধ জেগে উঠল। আসলে গরজ বড় বালাই। তবে উনি লিখেছেন পাড়ায় পাড়ায় চায়ের দোকানে আড্ডা থেকে ফুটবল খেলা সবই নাকি অব্যাহত। মানুষের নির্বুদ্ধিতা ও সচেতনতার অভাবে তিনি দারুণ হতাশ। আসল দেশদ্রোহ ও ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন এদের মধ্যে।

আমি তাঁকে অংশত সমর্থন করেও নিজের পর্যবেক্ষণ জানাতে চাই। দোকান বাজারে জরুরি জিনিসের জন্য ক্রেতা ছাড়া দেখেছি কলকাতা শহরের রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাঁকামৃতের সৎকার ও শেষকৃত্যের উপকরণ থেকে বাচ্চার দুধ এসব জোটাতে গিয়েও মানুষকে পুলিস ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের হাতে থুড়ি লাঠিতে হ্যানস্থা হতে হচ্ছে। চায়ের দোকানে নয়, জনতা কার্ফিউয়ের পরের দু দিন শেষ কিছু মরিয়া জটলা দেখেছি মদের দোকানের সামনে। ক্রমশ তারাও ভোঁভাঁ। ফুটবল তো দূর টেবল টেনিস খেলতেও বেরোচ্ছিল না কেউ। স্বাস্থ্য সেবকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করেই যা আহাম্মকির পরিচয় রেখেছে কিছু দেশবাসী, যারা মনেপ্রাণে দেশের অমঙ্গল চায় না। সচেতনতার অভাবে কিছুটা অসাবধানতা যে চোখে পড়নি, তা নয়। তবে জানি না, সেই মহাকবি গীতিকার নিজের স্যানিটাইজ়ড অলিন্দ থেকে এত কিছু কখন দেখলেন। তা এতকিছু চোখে পড়ল, আর শাহীনবাগ পার্ক সার্কাসের অবাধ্য শতাধিক বিপ্লবীর (জেহাদি) অবরোধ, কিংবা শুক্রবার করে মসজিদে মসজিদে শত সহস্র ধর্মোন্মাদ মানুষের জমায়েতের খবর দেখতে পেলেন না? মন্দির মঠ গুরুদ্বার তো দর্শনার্থীদের জন্য দ্বার বন্ধ রেখেছে। রবিবার গীর্জাতে যাওয়ার জেদ করার খবরও নেই। ব্যতিক্রম শুধু একটি সম্প্রদায়ের উপাসনালয়। পাটনার একটি মসজিদে ১২ জন চীন থেকে আগত ধর্মপ্রাণের করোনা পরীক্ষা এড়িয়ে লুকিয়ে থাকার খবর তখন প্রকাশিত। ধর্মান্ধতার সঙ্গে নাশকতার মিশ্রিত অভিলাষ দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হলেও দু চারজন মানুষের অসচেতনতা নিয়ে সেলিব্রিটি কবির অধিক শীরোপীড়া। ঠিকই বলেছেন, রাস্তায় ভিড় করে সত্যিই ক্রিকেট করতে, দুয়া করতে দেখা গেছে। কিন্তু কোথায় দেখেছেন, সেটা বলার বা ইঙ্গিতও দেওয়ারও যদি হিম্মত না থাকে, তাহলে নিজের ভাইরাস ডিটেকশন বন্ধ রাখুন। আসল ভাইরাস তো এই জাতীয় একচোখো সুবিধাবাদীদের নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে। পট পরিবর্তনে যদি দৈবাৎ কাস্তে দিয়ে ঘাস কাটার দরকার হয়ও, তাহলেও যাতে নিজের হাত পরিষ্কার থাকে, তাই এই পাল্টিবাজরা শতাধিক মানুষের জমায়েত ছেড়ে আট দশজনের জটলা বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্রেতাদের নিয়ে বেশি উদ্বেগ দেখাচ্ছেন।

ABP আনন্দে করোনার কনক্লেভে বিশিষ্ট ডাক্তারদের পাশে জনৈক সবজান্তা সেন মহাশয়। জানা গেল কীভাবে CAA NPR এর কারণে করোনা ভারতে এসেছে। এছাড়াও অভিনয় থেকে এই মুমুর্ষ সময়ে রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নানা বিষয়ে বক্তৃতা শুনতে শুনতে উদ্গত আবেগে চোখ নাক গলা এমন রুদ্ধ হয়ে এল, যে ভয় হল করোনার কড়া নাড়া কিনা। একটা জিনিস বুঝিনা এই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বিজ্ঞানীদের মাঝে এই অশিক্ষিত বা বলা ভালো কুশিক্ষিত কবি নাটকবাজ ভাঁড়েদের এত গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে?

খেউড় ছেড়ে এবার কতগুলো সহজ হিসাব মিলিয়ে নেওয়া যাক। ইটালি স্পেনসহ ইওরোপে করোনার প্রকোপ বাড়তেই ভারতে রাহুল গান্ধী সত্যিই সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলেন। জানি না সেই বলা গভীরতর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার আগে দোষে খালাস থাকার চেষ্টা কিনা। সঙ্গে সঙ্গে বিদেশী উড়ান বন্ধ করা যায়নি বা হয়নি। যারা বিদেশে পড়াশুনো করতে বা জব ভিসা নিয়ে গেছে তাদের থাকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাদের দেশে ফিরতেই হত, কারণ অন্যান্য দেশগুলো ভারতের মতো অপ্রয়োজনীয় মানুষ প্রতিপালনের ঠিকা নিয়ে রাখেনি। WHO-র নির্দেশিকা না মেনে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বিমান বন্ধ করা যেত না। আর করলে ইরান থেকে শতখানেক জেহাদ ট্যুরিস্টদের ফিরিয়েও আনা যেত না। তারা সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে জেনেও ফেরানো হয়েছে এবং বহুমূল্য কিট খরচ করে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়েছে। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বামপন্থী শিবির লকডঅউন তো সমর্থন করেইনি, উল্টে সামান্য ১৪ ঘণ্টার জনতা কার্ফিউ ঘোষিত হতেই বিজ্ঞানমনস্কতার পেটেন্ট নেওয়া মানবতাবাদীরা ‘মানব বন্ধন’-এর ডাক দিয়েছিল। অবশ্য অথচ তারাই এখন সরব, সময় থাকতে রাহুলের কথা মেনে কেন সব বন্ধ করা হয়নি। আর দিল্লী থেকে শ্রমিকরা কেন লকডাউন ভেঙে বিহার উত্তরপ্রদেশ অভিমুখে যাত্রা করল পায়ে হেঁটে কিংবা বাসে, সে জন্যও কেন্দ্র সরকারকে তোপ দেগে চলেছে যদিও তাদের ঘরছাড়া করেছে কারা এরা ভালো করেই জানে।

এই সুবিশাল দেশে ১৩৫ কোটির বেশি মানুষ। তাতে দিন আনি দিন খাই, নিরক্ষর মানুষের সংখ্যাই বেশি। তারপরেও কেন্দ্রীয় সরকার ও বেশ কিছু রাজ্য সরকারের অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপে কিছু ধর্মান্ধ মানুষের জেদ ছাড়া লকডাউন মোটের ওপর সফল হচ্ছিল। এটা ঠিক আইন রক্ষকরা কোথাও কোথাও অজ্ঞতা বা কোথাও কোথাও অতি সক্রিয়তা কিংবা স্থানকালপাত্র ভেদে নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়ে ফেলেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তাও চেষ্টা করেছেন নিজেদের মতো করে মানুষকে বুঝিয়ে সাধ্যমতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে। এটাও ঠিক, নিশ্চিত মাইনের জীবিকা যাদের নয়, তাদের কঠিন জীবন কঠিনতর হয়ে উঠেছে লকডাউনে। তাই ১,৭০,০০০ হাজার কোটি টাকার অর্থ সাহায্য ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী এই প্রান্তিক মানুষগুলোর কথা ভেবে। রাজ্য সরকারগুলোও (দিল্লী ছাড়া) নিজেদের প্রশাসনিক ভাবমূর্তি বজায় রাখতে একই চেষ্টা করছে। থাকার সংকট — তাও মানুষ সহযোগিতা করলে ধীরে ধীরে কিছুটা সমাধানের দিকে যেত। একুশ দিন বই তো নয়। গরীব মানুষরাও পরিব্রজী মানুষের পাশে সাধ্যমতো এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। দেশ জুড়ে একটা অভূতপূর্ব একতার পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল। বিভিন্ন মন্দির মঠ ও স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ মানুষের সেবা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। উপরন্তু বিপর্যয় মোকাবিলায় চীন থেকে ১০,০০০ ভেন্টিলেটরসহ দেশ বিদেশ থেকে সরঞ্জাম কিনতে বা বরাত দিতে হলেও (বামপন্থীদের প্রচারে শুধু চীন থেকে আমদানির খবর), দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পরের সাহায্য না নিয়ে অবিশ্বাস্য কম সময়ে টেস্ট কিট তৈরি করে ফেলেছেন, অ্যান্টিডোটও নির্মাণের মুখে। এই বিশ্রী পুরুষতান্ত্রিকতার মধ্যেও দুই নারী শ্রীমতী মিনাল দাকাভে ভোঁসলে ও ডাঃ সীমা মিশ্রের গবেষণায় ভারতবাসী বাঁচার পথ দেখছিল।

ভাবুন দেখি, ভারতের এই সুস্থিতি কার পছন্দ হবে না? একদম ঠিক। যে রাষ্ট্র ভাইরাস ছড়িয়ে ভ্যাকসিন ও যাবতীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবসা করতে চায়, তার। তাহলে এবার ভেবে দেখুন দেশবাসীদের মধ্যে কারা এই সুস্থিতি বিগড়ানোর দায়িত্ব পেতে পারে? এটাও একদম ঠিক ধরেছেন। এই লোকগুলো এই দুর্দিনেও লাগাতার সরকারের সবকটি পদক্ষেপ নিয়ে কটাক্ষ করে গেছে, টেস্ট কিট সরবরাহের বরাত দেওয়া নিয়ে জলঘোলা করার চেষ্টা করেছে; করোনা পরীক্ষা যেখানে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এবং অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতালেও যাতে ৪৫০০ টাকার বেশি না নেওয়া হয়, সেই সার্কুলারকে বিবৃত করে প্রচার করছে প্রতিবেশী দেশে যে পরীক্ষা বিনামূল্যে তা ভারতে নাকি ৪৫০০ টাকার। এর আগে ভাঙড়ে ভুলভাল বুঝিয়ে পাওয়ার গ্রীডের গ্রীড স্টেশন নির্মাণ ভণ্ডুল করেছিল এরাই।

স্বভাবতই এই ইতিবাচক ছবি কিছু দ্বিপদ চীনা ভাইরাসের সহ্য হল না। কিন্তু তারা দিল্লীর শ্রমিক বস্তিগুলিতে কী এমন বোঝাল, যে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ একই দিনে বাড়ি ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে দিল্লী উত্তরপ্রদেশের সীমান্তে অনন্তবিহার বাস স্ট্যান্ডে একেবারে জন জোয়ার বইয়ে দিল? ভুল বোঝানো শুরু হয় ২৭ তারিখে। কেজরির বিধায়ক রাঘব চাড্ডা টুইট করে দলে দলে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের শ্রমিককে দিল্লী ছাড়তে প্ররোচনা দেয়। কিন্তু ভীত অসহায় মানুষগুলোকে কেন্দ্রীয় প্রশাসন ভুল ভাঙিয়ে যার যার ডেরায় ফিরিয়ে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার পরামর্শ দেয়। রটনা ও মগজধোলাইয়ে কাজ হল না দেখে ২৯ মার্চ রাতে পাক-চীনা ভাইরাসদের প্রতিভূ দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ও তাঁর মন্ত্রী বিধায়করা প্রায় লাখ খানেক মূলত হিন্দু পরিযায়ী শ্রমিকদের তাদের ডেরার সুরক্ষা বলয় থেকে বার করে মহা সংক্রমণের দিকে ঠেলে দিল ও সারা দেশে তা সংবাহিত করার জন্য রওনা করিয়ে দিল। কেজরি বাহিনী বেছে বেছে হিন্দু শ্রমিক বস্তিতে জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে এবং ক্রমাগত মাইকে ঘোষণা করে, ইউপি সীমান্তে ঘরে ফেরার বাস তৈরি আছে এই মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে তাদের উত্তরপ্রদেশ সীমান্তের দিকে রওনা হতে বাধ্য করে। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়ার টুইটে ভিনরাজ্যের প্রবাসী মজুরদের দিল্লী ছাড়া করার জন্য সরকারি পরিবহণ ডিটিসি-র বাস ব্যবহার করার কথাও স্বীকার করা আছে। ফ্রীলান্সার নিতীন শুক্লার নেওয়া ভুক্তভোগীদের ভিডিও সাক্ষাৎকারে দেখা যাচ্ছে, এই বাসে করে যমের বাড়ি পাঠানোর জন্যও দশ টাকার টিকিট একশো টাকা দিয়ে ব্ল্যাক করা হয়েছে।

আর এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার পরেও কাস্তে হাতুড়ি তারার দল ও তাদের তৃণ সহযোগীরা হাতে হাত মিলিয়ে লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে মোদী ও যোগীকে রাক্ষস ও কেজরিওয়ালকে রক্ষক প্রতিপন্ন করতে। অথচ অসহায় মানুষকে আশ্রয় ও খাদ্য পানীয় দিতেই যোগীজীকে বাধ্য হয়ে একশো বাসের আয়োজন করেন, এটা স্পষ্ট করেই যে বাসগুলো কারও বাড়ি বা গ্রাম নয়, সরকারি ত্রাণ শিবিরগামী। জীবানুনাশক দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে স্যানিটাইজ় করা হল প্রাথমিক সাবধনতার একটি প্রচলিত পদক্ষেপ। কিছুদিন আগে কেরালায় ও দিল্লীতেও একইভাবে করা হয়েছে। কিন্তু সব জেনেও বা অনেকে না জেনেই দিল্লী থেকে তাড়া খাওয়া মানুষগুলোর শরীর জীনাণুনাশক জল দিয়ে ধুইয়ে দেওয়ার মধ্যে খুনের ষড়যন্ত্র পর্যন্ত আবিষ্কার করে ফেলেছে। এদের অপপ্রচারে সাধারণ মানুষেরও মনে হয়েছে, কী অমানবিক!

কিন্তু কেন করছে এসব? এটাও তো এতদিনে সবার কাছে পরিষ্কার। নিজের পোস্টে চাড্ডি সরকারকে তুলোধোনা করতে গিয়ে এক কমরেড তো লিখেই ফেলেছে, চীন ২৫ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে আজ দাদাগিরি করার সামর্থ্য অর্জন করেছে। সুতরাং এই দুর্দিনে স্বদেশের যাত্রা ভঙ্গ করার জন্য নিজেদের নাকটাও কাটতে হচ্ছে বলে মনে হয় না, বরং নিজেরাই ঐ সুদীর্ঘ প্রস্তুতির অংশীদার। ‘ইয়ে আজ়াদি ঝুটা হ্যায়’ যাদের স্লোগান ছিল, তারা দেশের সর্বত্র ক্ষমতাচ্যুত অবান্তর হওয়ার পর আজ়াদির নতুন সংজ্ঞা নির্মাণ করে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ করে তুলেছে। আর এখন মারণ ভাইরাসকে হাতিয়ার করে পুরো দেশটার আজ়াদি নষ্ট করে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দিতে চাইছে।

একটু ভেবে দেখুন কিছুদিন আগে ইটালিতে যখন করোনা মহামারীর আকার নেয়নি, তখন সেখানকার বামপন্থী নেতা মন্ত্রীদের নেতৃত্বেই শুরু হয়েছিল hug a Chinese” আন্দোলন যার পরিণতি আমরা দেখছি। ঐ নেতারাও অজ্ঞতাবশত কাজটা করেছিল ভাবার কোনও কারণ নেই; করেছিল চীনের স্বার্থে নিজের দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্থনীতিসহ সমূহ সর্বনাশ করার উদ্দেশ্যে। এটা এখন সামনে চলে এসেছে। সেটা করে নিজেরা ঠিক কী কী প্যাকেজ দ্বারা পুরস্কৃত হয়েছে বা হবে, তার কোনও প্রমাণ দাখিল করা সম্ভব এখনই না হলেও, উত্তর কালে তার বিচার ঠিকই হবে।

দিল্লী অনন্তবিহার আসলে একটি অপূর্ণ অ্যাজেন্ডার পূর্ণতা দানের প্রয়াস। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর এই ব্যর্থতা নিয়ে মিচকের মতো চুপ করে থাকা কিছুদিন আগের দিল্লি দাঙ্গার ভয়াবহ ছবিটার কথাই মনে পড়িয়ে দিচ্ছে। ফোকটে বিদ্যুত জল শিক্ষা এমনকি যাতায়াতের টোপ দিয়ে ভোট শিকার করার অব্যবহিত পরে ভোটারদেরই হিংস্র দানবদের মুখে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। কিছুদিন আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু করা হিন্দু গণহত্যার চেষ্টা প্রত্যাক্রমণের ফলে দাঙ্গার রূপ পেয়ে যেতে হিন্দু বিনাশের ব্লু-প্রিন্ট প্রার্থিত ফল দেয়নি। অঙ্কিত শর্মাদের কুপিয়ে, পুড়িয়ে, অ্যাসিডে গলিয়েও গায়ের সব জ্বালা মেটেনি। সেই অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার সুযোগ এনে দিল করোনা। হয়তো পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্যায়ে জীবাণু যুদ্ধের হাতিয়ারটা তুলেই রাখা ছিল, যথাসময়ে প্রযুক্ত হল।

এই যুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দেবে কে বা কারা? তালিকাটা দিচ্ছি: করোনা দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ডের জন্য সাঁইবাবা ট্রাস্ট (৫১ কোটি), মহালক্ষ্মী মন্দির (২ কোটি), সোমনাথ মন্দির (১ কোটি), পাটনা হনুমান মন্দির (১ কোটি), কোলাপুর মন্দির (১ কোটি)। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সিরডি সাঁইবাবা, সিদ্ধি বিনায়ক মন্দির, ছোটবড় মাঝারি অগুনতি মন্দির ও মঠ অকাতরে দান ও সেবা করছেভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ (ভারতসেবাশ্রম) ও  রামকৃষ্ণ মিশন (রামকৃষ্ণ_মিশন) সারা ভারত জুড়ে,  তিরুপতি মন্দির (তিরুপতি_মন্দির) দৈনিক ১ লক্ষ মানুষকে খাওয়াচ্ছে। আর বহু নিন্দিত চাড্ডি দল অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘও (RSS) ২০০টির মতো সেবাকেন্দ্র খুলে খাদ্য ও সেবা বিলি করছে, যেমনটা তারা বরাবার দুর্যোগের সময় করে থাকে। অবশ্য বিপুল ত্রাণ কার্যে সোশাল ডিস্টেন্সিং বজায় থাকছে কিনা তাই নিয়ে একটা উদ্বেগ থেকেই যায়। এছাড়াও সরকারি কর্মচারীদের এক দিনের মাইনে ও আমাদের মতো কিছু নির্বোধের যৎসামান্য করে অনুদানে গড়ে ওঠা পাহাড় তো আছেই।

কারা পাবে? মনে রাখা দরকার সুবিধাভোগীদের তালিকায় সর্বোচ্চ স্থান দখল করে থাকে অসুবিধা সৃষ্টিকারীরাই। জেহাদি ভেক্টর বাহিত চীনা ভাইরাস হানার অর্থনৈতিক ক্ষতির বিশদে যেতে চাই না, কিন্তু এই দিকটায় একেবারেই আলোকপাত করা হয়নি। যারা নিজের হাঁচি কশি কফ থুথুর মাধ্যমে বাতাস তো বটেই মানুষের খাদ্য পানীয়কে পর্যন্ত কলুষিত করে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, আমাদের দান ও করের টাকায় তাদেরকেই আইসোলেশন, ভেন্টিলেশন, কোয়ারেন্টাইনে রাখার বন্দোবস্ত করতে হচ্ছে বেশি। সরকারের কাছে প্রার্থনা, যারা এই বিপর্যয়ের মধ্যে মসজিদে কোনও না কোনও অজুহাতে জটলা করছে, তাদের জোর করে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য ধরে নিয়ে যাওয়ার বদলে ঐ মসজিদগুলোকেই চিহ্নিত করে quarantine করে লকডাউন করা হোক এবং তাদের নমাজ় আদা করে সুস্থ থাকার সুযোগ দেওয়া হোক। কেন তাদের বকাঝকা করে বার করে সমগ্র সমাজের ঝুঁকি বাড়ানো হচ্ছে? কিছু খুনেকে জোর করে প্রেম ভালোবাসা দিয়ে বাকি সর্বসাধারণের নিরাপত্তা কেন বিঘ্নিত করা হচ্ছে? ওরা ওখানেই থাক; মসজিদগুলোকেই আইসোলেশন সেন্টার বানিয়ে সেখানে যাওয়া আসা বন্ধ করে দেওয়া হোক। সরকারি নির্দেশ না মানলে সরকারের কী দায়? আমাদের ডাক্তার নার্সদেরই বা কী দায়? কেন মসজিদগুলো থেকে মুমিনদের টেনে বার করে ব্যয়সাপেক্ষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে, যেখানে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ নিজের ও প্রতিবেশীর কথা ভেবে নিজেরাই পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েও অনুমতি পাচ্ছি না?

সরকার বা বেসকারি প্রতিষ্ঠানকে কানাকড়ি সাহায্য করেছে এমন একটি মসজিদ, মাজার বা মাদ্রাসার নাম পেলে জানাবেন। কাশ্মীরে যে বৃদ্ধা আরএসএস-এর শাখা সংগঠনের হাতে টাকা তুলে দিয়েছে, সে ব্যতিক্রম এবং জানে সেই ত্রাণ তার নিজের সম্প্রদায়ের স্বার্থেই ব্যয়িত হবে। ঐ কাহিনী ভাঁটিয়ে এতগুলো নিষ্ঠাবান সেবকদের ছোট করবেন না। মন্দির মঠ গুরুদ্বার সঙ্ঘ এরা যে লক্ষ কোটি টাকা দান করছে ও অক্লান্ত সেবা করছে, তা আমাদের কাছ থেকেই সংগৃহীত। সেই টাকায় মন্দির যারা ভাঙতে চায় তাদের চিকিৎসা হবেই বা কেন? যারা আমাদের রক্তপাত করতে চায়, আমাদের রক্ত জল করা পয়সায় তাদের সুস্থ করে তোলা হবে কি আবার হামলার সুযোগ করে দিতে?

এই মহামারীর মতো দুর্যোগের মধ্যেও কাবুলে গুরুদ্বারে নারী শিশুসহ ২৭ জনকে মেরে ফেলা হয়েছে কেরালা থেকে যোগ দেওয়া এক আইএসআই জঙ্গি নেতার পরিকল্পনায়। আহত ৫০-এর বেশি বলে শোনা যাচ্ছে। অথচ এই শিখরা কিছুদিন আগে শাহীনবাগি জেহাদি সাপেদের দুধকলা দিয়ে মানবতা দেখিয়েছিল। ভারত সরকার আর ভারতবাসী যদি জেনেও ন্যাকা সেজে থাকে, তাহলে জঙ্গিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ওরা নিজেদের ধর্ম পালন করছে। কিন্তু আমরা নিজেদের আত্মরক্ষার ধর্ম পালন করছি না। আমাদের রাজ্য পুলিসের একা বা দোকা ছেলেমেয়ে দেখলে লাঠিপেটা করে মাথা ফাটাতে বা কান ধরে উঠবোস করাতে ইচ্ছা করে, কিন্তু রাজাবাজার পার্কসার্কা, মেটিয়াবুরুজ বা বারুইপুরের মল্লিকবাজারের মতো মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মিনমিন করে ল্যাজ নাড়তে বা মার খেতে লজ্জা করে না। এমনকি করোনার চিকিৎসা করতে গিয়ে কী রকম অপ্রতুল আয়োজন ও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে জানানোর অপরাধে ডাঃ ইন্দ্রনীল খানকে (Dr. Indranil Khan) তাঁর সহযোগীসহ মিথ্যে ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার করতেও বাধে না, যেখানে দাগী অপরাধীদের ঘরে ফেরানোর প্রক্রিয়া চালু হয়ে গেছে। রাজ্য সরকার প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে যে প্রহসন করছে, সেটাও তার ধর্ম হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশিতই নয়। সব দেখেও যখন দ্বিতীয়বার এই দলটির হাতে রাজ্যের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে বা দিতে বাধ্য হয়েছে রাজ্যবাসী, তখন এই অনাচার তো সহ্য করতেই হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার যা উদারতা আর সেকুলারিজ়মের প্রদর্শনী করছে, যেমন– বাংলাদেশকে শতাধিক ambulance দান, ইরানে আটক জেহাদ ট্যুরিস্টদের কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফিরিয়ে আনা, এগুলো কিন্ত তার পক্ষে অধর্ম। কারণ ভোট তাকে জেহাদি বা বাংলাদেশীরা দেয়নি, দিয়েছিল অঙ্কিত শর্মা (Ankit Sharma) আর তার আপনজনেরা!

আশঙ্কা করা হয়েছিল লকডাউন ১৫ই এপ্রিলের পরেও প্রলম্বিত হবে। কিন্তু শোনা যাচ্ছে এই লকডাউন দীর্ঘায়িত করা হবে না। করে লাভও নেই। বরং দিল্লীর কেজরিওয়াল সরকার বাতিল করে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করাই রাষ্ট্রের আশু কর্তব্য। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রীসভার সবকটি সদস্যের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। শুধু দিল্লী কেন, সারা দেশেই যখন চীন ও পাকিস্তানি দালালদের বেছানো জালের সন্ধান পাওয়া গেছে, তখন স্বাস্থ্য সংকটকে সামনে রেখে সারা দেশেই ৩৫৬ ধারায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দরকারে সেনা নামানো উচিত। উহান থেকে যা পাওয়ার পেয়ে গেছি। এখন পালা তিয়ান আমেন স্কোয়ার থেকে শিক্ষা নেওয়ার। এই কোভিড-১৯ ভাইরাস কিছুদিন পরে, হয়তো বহু প্রাণে সঙ্গে নিয়ে নিজে থেকেই চলে যাবে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ যে ভাইরাসগুলো মোক্ষমতর প্রাণঘাতী প্রয়াস চালিয়েই যাচ্ছে ও যাবে, তাদের ওপর ওষুধ প্রয়োগের এই সুযোগের সদ্ব্যবহার না করলে আগামীদিন সমগ্র দেশ মহা বধ্যভূমি ও জেহাদি হারেমে পরিণত হবে, যেখানে হিন্দুরা ক্রমশ নিশ্চিহ্ন বা দাস হয়ে পড়বে। এই ভয়াবহতার দায় তখন আজকের কেন্দ্র সরকারও এড়াতে পারবে না।

আমার মায়ের কাছ থেকে এর মধ্যে একদিন ফোনালাপে শুনলাম এই বিশ্বব্যাপী সংকটের একটি ব্যাখ্যা– ম্যালথাস থিওরি। নতুন কিছু নয়, শুধু নিজের বুদ্ধি মেধা নিয়ে কুণ্ঠিত সত্তার এক চিরগৃহিণীর মুখে একটু অভিনব লাগল। এই তত্ত্ব অনুযায়ী জনসংখ্যা যেখানে লাফিয়ে লাফিয়ে (exponential) বাড়ছে, সেখানে খাদ্যোৎপাদনের বৃদ্ধি হচ্ছে সরল অনুপাতে (linear)। এর ফলে ভারসাম্যের অভাবে সংকট অবশ্যম্ভাবী। তাই খাদ্যের সঙ্গে জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য দু ধরণের নিয়ন্ত্রণ সমাজে আসে। এক হল, প্রতিরোধ মূলক (preventive checks) যেমন বিলম্বিত বিবাহ বা অর্থনৈতিক সাবলম্বনের শর্তসাপেক্ষে বিয়ে। যদিও ১৭৯৮ সালে লিখিত পুস্তকে গর্ভনিরোধকে সমর্থন না করে সংযমের কথা বলা হয়েছে, তবে সম্ভবত জন্ম নিয়ন্ত্রণ আইনকেও এই জাতীয় নিয়ন্ত্রণের আওতায় ফেলা যায়। আর দুই হল, স্বতঃস্ফূর্ত নিয়ন্ত্রণ (positive check) যা আসে অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবে; যেমন গর্ভপাত, অনাহারে মৃত্যু, মহামারী ও যুদ্ধ (মনুষ্যসৃষ্ট হলেও)। positive check শব্দটার বাংলা তর্জমা স্বতঃস্ফূর্ত নিয়ন্ত্রণ বলাই সঙ্গত, কারণ পজিটিভ কথাটা এখানে ইতিবাচক অর্থে প্রযোজ্য হতে পারে না। যাইহোক এই পজিটিভ চেকের আর এক নাম Malthusian Catastrophe (ম্যালথুসীয় বিপর্যয়/প্রলয়)। অঞ্জলি ব্যানার্জী মানে আমার মায়ের মতে বর্তমান কালে তেমন এক ম্যালথুসীয় বিপর্যয় চলছে, যা জনসংখ্যার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনবে। তাই যদি হয়, তবে ভারসাম্য রক্ষার তাগিদে কি হিন্দুদেরই পৃথিবীর মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হবে? ডারউইনের জৈব বিবর্তনবাদ (Organic Evolution Theory) কিন্তু বলেছে জীবন সংগ্রাম বা সোজা কথায় খেয়োখেয়িতে জয়ীকেই প্রকৃতি শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়ে অস্তিত্ব রক্ষার অনুমতি দেয়। এই অনুমতি কি লড়াই ছাড়া মিলবে?

প্রসঙ্গত ম্যালথাস যেহেতু গরিবগুর্বোদের দাক্ষিণ্য করার পক্ষপাতী ছিলেন না, তাই তাঁর তত্ত্বকে কমিউনিস্ট বিশ্ব মান্যতা দেয়নি। বস্তুত তত্ত্ব নির্ভুল নাও হতে পারে। বিজ্ঞানে তত্ত্ব নির্ভুল প্রমাণিত হলে তাকে law বা সূত্র বলা হয়। অর্থনীতি যেহেতু প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নয়, তাই এর তত্ত্বগুলো তত্ত্ব পর্যায়েই বহুল আলোচিত, এমনকি নোবেল পুরস্কৃত হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের পরিহাস, বিশ্বে তথাকথিত কমিউনিজ়মের পতাকাবাহী দেশটিই এই অ-কমিউনিস্ট সুলভ স্বতঃস্ফূর্ত বিপর্যয়ের তত্ত্ব ল্যাবরেটরিতে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিল। 

শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় (Sriparna Bandyopadhyay)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.