করোনা পরিস্থিতিকে সমানে রেখে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ একটি সুবিশাল কর্মকান্ড সূচিত করতে চলেছে। এই বিষয় কথা বলব বলেই আজকে আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। বিশ্বে সদাই নানা ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। তার চর্চাও হয়ে চলেছে। দেশমাতৃকাকে ভালবাসাই হল জাতীয়তাবাদ। বিদেশে জাতীয়তাবাদ শব্দের অর্থ পৃথক পৃথক হলেও ভারতে আমরা আমাদের সুপ্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের শিক্ষায় জাতীয়তাবাদ শব্দকে রাষ্ট্রীয়তা, রাষ্ট্রবাদ ইত্যাদি শব্দে সম্মান জানিয়ে থাকি।
রাষ্ট্র নিয়ে কথা বলছি যখন রাষ্ট্র কি তা জানা দরকার ?
পশ্চিমী মতে রাষ্ট্র কল্পনার থেকে পূর্বের রাষ্ট্র কল্পনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পশ্চিমে রাষ্ট্রের উত্থান পতন বিভিন্ন কারনে হয়েছে। ক্ষুধা, দাসত্ব , লড়াই , গৃহযুদ্ধ ইত্যাদি থেকে সেখানে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে । এবং সেসব কারনে তারা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নিজেদের ন্যাশনালিসমকে প্রচার করার চেষ্টা করেছে। সেখানের রাষ্ট্র কল্পনা ওখানের পরিস্থিতি আধারে নির্মিত। যেমন -জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর জার্মানি কার্যত চারটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। চারটি অংশের শাসনভার ন্যস্ত ছিল মিত্রশক্তির চার পরাশক্তি: যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর। বার্লিন শহরটি সোভিয়েত অংশের অন্তর্গত হলেও এটিও চার অংশে বিভক্ত করা হয়। দখলদার রাষ্ট্রগুলো উদ্দেশ্য জার্মানি শাসন হলেও শীতল যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র অধিকৃত অংশ নিয়ে গঠন করা হয় ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি। এর বিপরীতে সোভিয়েত অধিকৃত অংশে গঠিত হয় ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব জার্মানি।
সামাজিক বাজার ব্যবস্থায় পশ্চিম জার্মানি পরিণত হয় একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে। ৫০ এর দশক থেকে শুরু করে পরবর্তী ৩০ বছর দেশটি বিপুল প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। অন্যদিকে পূর্ব জার্মানির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল সোভিয়েত অনুকরণে সাজানো সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি। এর ফলে দেশটি সোভিয়েত ব্লকের অন্যান্য দেশের তুলনায় সম্পদশালী হয়ে উঠলেও, পশ্চিম জার্মানির চাইতে অনেক পিছিয়ে ছিল। পশ্চিম জার্মানির অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধায় আকৃষ্ট হয়ে অনেক পূর্ব জার্মান নাগরিক পশ্চিমাংশে চলে যেতে শুরু করে। বিপুল পরিমাণ অভিবাসন ঠেকাতে পূর্ব জার্মান সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বার্লিনের পশ্চিমাংশ ও পূর্বাংশের মাঝে একটি দেয়াল তুলে দেয়া হয়। সৃষ্টি হয় দুইজার্মানির । পরে নিজেদের ভুল নিজেরাই বোঝে, উভয় দিকের লোকেরা এক দেশ চায় , ফলে ১৩ই জুন, ১৯৯০ থেকে পূর্ব জার্মান সামরিক ইউনিটগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়াল ভেঙ্গে ফেলতে শুরু করে এবং ১৯৯১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত এটা চলতে থাকে। ১লা জুলাই, ১৯৯০ পূর্ব জার্মানিতে পশ্চিম জার্মানির মুদ্রা চালু হয়। এই ভাবেই বিভিন্ন কারনে রাষ্ট্রের জন্ম , ভাঙা ইত্যাদি চলেই থাকে।
প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বহু রাষ্ট্রের যেমন মৃত্যু হয়েছিল ,তেমনি বহু নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। অনেক রাষ্ট্র দুর্বলও হয়ে পড়েছিল। পশ্চিমের ইতিহাস পড়তে গেলেই এসব আমরা দেখতে পাবই।
এবার তাহলে তাদের রাষ্ট্রীয় অস্মিতা কি থাকে ? যেমন – কারুর জাতিতত্ত্বমূলক কারন আছে , কারুর আবার ভাষার প্রতি আছে অস্মিতা…ফ্রান্স , ব্রিটেন – এরা ভাষার আধারেই নিজের জাতি তত্ত্বকে ধরে রেখেছে। কখনো কখনো এরা নিজেদের অধিক সভ্য বলে প্রচার করতে থাকে। আবার ধর্মীয় আধারেও অস্মিতা আছে – যেমন – তুর্কিস্থান। এসব অস্মিতা পৃথক পৃথক মানসিক থেকে ধর্মে তার বিস্তার। কেউ তো আর্থিক আধারেও নিজের অস্মিতা প্রকাশ করে নিজেকে সবথেকে ধনী রাষ্ট্র বলে। এসব ওদের রাষ্ট্র ধারণা। ভারতের রাষ্ট্র ধারণা একে বারেই পৃথক।[17/04, 22:13] Sree.paul4: দুনিয়ার বাকি দেশ ও ভারত এক নয়। হিন্দুত্ব এবং ভারত একে অপরের পরিপূরক। ভারত একটি জীবন যাত্রা। একটি সনাতনী যাত্রা। পশ্চিমের দেশগুলি ভারতকে বুঝবে না।
গান্ধার হতে লঙ্কা অখন্ড ভারতের অংশ ছিল। এই অখন্ড ভারতের উপর বার বার বৈদেশিক আক্রমনঅখন্ড ভারতের উপর বিদেশি আক্রমন হয়েছে। শক, হুন , কুষান , দরদ , পারদ এমনকি গ্রিক সকলে এসে এই একদেহে লীন হয়েছে । পারে নি কেবল ম্লেচ্ছ যবন রা। তারা এসেছে অকথ্য অত্যাচার করেছে। মন্দির ধ্বংস করেছে । আমাদের স্বাভিমানে হাত দিয়েছে। তবুও আজকের বিক্রিত ঐতিহাসিকরা তাদেরই বন্দনা করে।
মুনি ঋষিদের এই সুপ্রাচীন ভারত ছিল সোনার পাখির দেশ। মরুদস্যু , ইংরেজ, ডাচ, ওলন্দাজ , পর্তুগিজ যে যেখান থেকে পেরেছে সেই সোনার পাখির লোভে ভারতকে আক্রমন করেছে। তার সঙ্গে অবশ্যই আক্রমন হয়েছে আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার উপর। এই সব পৃথিবীর প্রকৃতির প্রাচীন দেশ থেকে মানুষেদের পশুর মতো ধরে এনে ক্রীতদাস করে বিক্রি করেছে। কিন্তু আমরা সুপ্রাচীন জাতি কেন ক্রীতদাস হয়ে থাকব। তাই বার বার আমরা বিদ্রোহ করেছি। নিজেদের অধিকারের লড়াই ….
কিন্তু আমেরিকার ইতিহাস জানেন?মাত্র ৪০০ বছর পুরাতন। সাদা চামড়া সাদা চামড়া নিজেদের মধ্যে লড়াই করেছে। তার থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হল। ইতালির বয়স ১৫০ বছর। জার্মানে বয়স কালও তাই। ব্রিটিশদের প্রকৃত বয়স মাত্র হাজার বছর…যুদ্ধ ,যন্ত্রনা, স্বার্থ থেকে এদের উত্থান। এরা কি জানে ভারত কে ? এর সুপ্রাচীন ঐতিহ্য কি?
আমরা জানি ২০০ বছর ধরে ইংরেজরা ভারতকে পরাধীন করে রেখেছিল ।ভারত বিভাজন বা দেশভাগ হল ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক বিভাজন। যখন দেশ স্বাধীন হল তখন যেতে যেতে ব্রিটিশ ভারত ভেঙে হয়ে টুকরো করে দিয়ে গেল।
এর কোনো দরকার ছিল কি ? একটি সংখ্যালঘু অংশই এটা চেয়েছিল। তাদের কঠোর হাতে দমন করা যেত কিন্তু তা না করে সুবিশাল ভারতকে টুকরো করে ভারতকে দুর্বল করার বিশেষ প্রচেষ্টা করার প্রথম পদক্ষেপ তারাই নিয়েছিল।
পাকিস্তান নামক এক নাপাক দেশের জন্ম দিয়ে তারা পাপের সূচনা করে। ইংল্যান্ড বলে আমরা যে দেশকে চিনি তা স্কটল্যান্ড , আয়ারল্যান্ড ইত্যাদি মিলিয়ে ছিল। ইংল্যান্ড নিজের শাসক হবার দাপটে স্কট বা আয়ারদের দাবিয়ে রাখত। কিন্তু তারাও সেই দাপট সহ্য করে নি। আজ তো ব্রিটেনের অবস্থা দেখুন …অধিকাংশ ইউরোপ তার উপর অসন্তুষ্ট।
ভারত আগে দেশ। পরে প্রদেশ। এখানে সবাই ব্রহ্ম। প্রাচীন ভারতে বৈদিক মুনিঋষিরা তাই উদাত্ত কন্ঠে উচ্চারণ করতেন অহং ব্রহ্মাস্মি – “আমিই ব্রহ্ম”, বা “আমি দিব্য। এখানে দেহ পোশাক। বাকি সব পরমআত্মার অংশ। সবার মধ্যে পরমাত্মা রাম বাস করেন। জীবে প্রেম করেন যে সেজন শিব সেবা করেন। এখানে কেউ ছোট বা বড় নয়। সমাজ গড়ে উঠেছে কর্মের ভিত্তিতে। এখানে সবাই সবার মঙ্গল কামনা করেন।
সর্বে ভবন্তু সুখিন,সর্বে সন্তু নিরাময়া,সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু,মা কশ্চিদ দুঃখ মাপ্নুয়াত,ওম শান্তি শান্তি শান্তি।
অর্থাৎ সবাই যেন সুখী হয়, সকলে যেন নিরাময় হয়, সকল মানুষ পরম শান্তি লাভ করুক, কশ্মিনকালেও যেন কেহ দুঃখ বোধ না করেন। সকলের শান্তি লাভ করুন।
আমরাই বেদ মন্ত্র উচ্চারণ করে তাই বিশ্বের মঙ্গল কামনা করে বলতে পারি –
বসুধৈব কুটুম্বকম – অর্থাৎ গোটা বিশ্ব আমার আত্মীয়,আত্মীয়- অর্থাৎ আত্মার সাথে সম্পর্ক। একি কোন দেশের সার্বিক মন্ত্র??
গুরুগৃহে আমরা শিক্ষা পাই যে, ত্যাগ ও সেবাই জীবনের সূত্র। ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ থেকে এই রাষ্ট্র।
ধর্মে চ অর্থে চ কামে চ মোক্ষে চ ভরতর্ষভ|যদিহাস্তি তদন্যত্র যন্নেহাস্তি ন তত্ক্বচিত্ ||
ভারতে রাজ্য অনেক রাষ্ট্র এক। মানুষ এক। এক রাষ্ট্র ,এক জন , এক সংস্কৃতি….
রাষ্ট্র কে এক রাখার জন্য সৈন্যবল তো নিশ্চয় দরকার কিন্তু নিজেদের মধ্যে একতাও দরকার। ১০ জন মানুষের একতা ১০০ জন সৈন্যের বলের সমান। রাশিয়ার নিকটও তো বিশাল সৈন্য বাহিনী শক্তি ছিল। তথাপি রাশিয়া টুকরো হওয়া থেকে কি রক্ষা পেয়েছে ?
রাশিয়ায় একতা কেউ রক্ষা করে নি। রাশিয়া একসময় সাম্যবাদের নামে নিজেরই দেশের নানা প্রান্তের মানুষকে শোষণ করেছে , তাদের নরক দেখিয়েছে। ফল , স্বরূপ রাশিয়া ভেঙেছে। জার্মানিও তাই। একজন সাম্যবাদী অন্যজন পুঁজিবাদী হয়েছিল। তাই ভেঙে গেছিলতবে তাদের দেশের প্রতি ভালোবাসাকে কোনো প্রাচীর দিয়েই পৃথক করা যায় নি।
প্রাচীন ভারতে ঋগ্বেদ, সংহিতা, ব্রাহ্মণ, মহাভারত এবং বৌদ্ধদের পালি শাস্ত্রে রাজনীতিবিদদের কথকতা উল্লেখ আছে। তক্ষশীলায় অবস্থানকারী চাণক্য ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। তিনি অর্থশাস্ত্র রচনা করেন যাতে রাজনৈতিক চিন্তাধারা, অর্থনীতি এবং সামাজিক ভারসাম্যের কথা তুলে ধরেছেন। এতে মুদ্রা ব্যবস্থা ও আর্থিক নীতি, কল্যাণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যুদ্ধের আত্মরক্ষামূলক কলাকৌশল-সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। চাণক্য যুগের অবসানের দুই শতক পরবর্তীকালে রচিত মনুস্মৃতি গ্রন্থেও ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রামাণ্য বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। যদিও বহু পাশ্চাত্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন যে, প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চা স্বাধীনভাবে গড়ে ওঠে। প্রাচীন ভারতে ধর্ম কেবলমাত্র পূজাপার্বণ ছিলনা, বরং ধর্ম বলতে বোঝাত, একপ্রকার জীবনচর্যা, যা মানুষ এবং সমাজের উন্নতি সাধন করে। প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হল সপ্তাঙ্গ। কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে এবিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে, কোন রাষ্ট্রের মোট উপাদান হল সাতটি। যথাঃ- স্বামী, অমাত্য, জনপদ, কোষ, দুর্গ, দূরগ, মিত্র। কৌটিল্যর এই সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব বর্তমান কালের বহু চিন্তাবিদকেও বিস্মিত করে।
দুর্ভাগ্যজনক এটাই যে সনাতন ভারতীয় হিন্দুর বংশোদ্ভূত হয়েও রামের মাহাত্ম নিয়ে চর্চা করতে দ্বিধাবোধ করি ও নিজেদের পিছিয়ে পড়া হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির শরীক বলে ভাবি ! অথচ শ্রী রাম চরিত্র বা জীবনী শুধু যে ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক বা বাহক নয়, আপামর বিশ্বে মানবতার স্বার্থে, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে তার প্রভাব অনস্বীকার্য যার সীমারেখা উত্তরে অযোধ্যা থেকে সোনার লঙ্কা বা শ্রীলঙ্কার মধ্যে টানলে হয়তো ভূল হবে। প্রাসঙ্গিকভাবে এই লেখাটা তুলে ধরার প্রয়াস করছি সকলের মতামতের জন্য।বৈদিক যুগে আনুমানিক সাত হাজার বছর আগে ত্রেতা যুগে বাল্মীকি মুনি রচিত রামের ঐতিহাসিক অস্তিত্ত্ব নিয়ে যে গবেষণা চলছে সেটা চলুক। তবে আবহমানকাল ধরে সেই অযোধ্যা, বয়ে চলা সরয়ূ নদী, চিত্রকূট, দন্ডকারন্য, রামসেতুর ভৌগলিক অবস্থান ও অস্তিত্ত্ব, সেই সোনার দ্বীপ লঙ্কা আজও স্থানমাহাত্বে অপরিবর্তিত হয়ে রয়েছে। কোনো মহম্মদ, খিলজি, তুঘলক বা আরংজেব তার নাম পরিবর্তনে সফল হন নি। মহমেডান প্রভাবে বাবর যে রামমন্দির ধ্বংশ করেই সেই ভিতএর উপরেই মসজিদ গড়ে রাম মাহাত্বকে খর্ব করার অপপ্রয়াস করেছিলেন সেটা এখন পুরাতাত্ত্বিক খননে প্রতীয়মান হয়েছে যার পুরোধা ছিলেন বিশেষজ্ঞ কে কে মহম্মদ যিনি এই নিরীক্ষনে বহূসংখ্যক মুসলমান লেবার নিযুক্ত করেন ধর্মনিরপেক্ষতার স্বার্থে। খননে যে মন্দিরের কমপক্ষে চৌদ্দটি থাম পাওয়া গিয়েছে শুধুু তাই নয়, রাবন বধের কাহিনীর ফলকের পূনরুদ্ধার করা গিয়েছে। মন্দিরের মকরমূখী পয়ঃপ্রনালীর অবস্থান বাবরি মসজিদের মধ্যে নজর করা গিয়েছে।রামায়নের রচনাকার যে মহাকাব্য রচনা করেছিলেন সেটার প্রভাব যে পৃথিবীর অন্য দেশে বা মহাদেশে ছিল তার বহূ এমন অত্যাশ্চার্য নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে ভারতবর্ষের বাইরেও।সাহিত্যে, ধর্মে ও সংস্কৃতিতে রামায়নের প্রতিফলন পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে পাওয়া যাওয়াতে এর জনপ্রিয়তা সম্বন্ধে এক সম্যক ধারনা পাওয়া যায়। হয়তো তার মধ্যে কিছু প্রাদেশিক প্রভাব থাকলেও থাকবে, কিন্ত রামায়নের উদ্ধৃতি রয়েছে তিব্বত, নেপাল, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, ক্যাম্বোডিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, জাপান, সুমেরীয়, আজটেক, মায়া সভ্যতায়। রামায়ন থেকে কোথাও কোথাও কোনো বিশেষ ঘটনাবলী সেই দেশগুলোর কলা ও সংস্কৃতিতে পাওয়া গিয়েছে যেখানে রাম হল শ্রেষ্ঠ মানবাদর্শের প্রতীক। আসুন বিভিন্ন দেশের কিছু নিদর্শন নিয়ে আলোচনা করা যাক,শ্যামদেশ বা থাইল্যান্ডে রামায়নের প্রভাব :আজও থাইল্যান্ডের জাতীয় গ্রন্থ হল রামায়ন । আগে এই দেশকে শ্যামদেশ বলে জানা যেত এবং এই দেশের রাজধানীর নামও রাখা হয়েছিলো রামায়নুসারে ” আয়ুত্থায়া ” এবং রামায়নের দেশীয় অপভ্রংশ হল ” রামাকিন “। শ্যামদেশীয় রাজারা নিজেদের রামচন্দ্র বংশোদ্ভূত বলে গর্ববোধ করতেন। সেজন্য প্রায় সকল রাজন্যবর্গ নিজেদের নামের আগে বা পরে রাম শব্দটা জুড়ে দিতেন। জানি না এ তথ্য জানলে বাংলার পাঠ্যপুস্তকে রামধনু নামটা ফিরে আসবে কিনা। প্রসঙ্গত শ্যাম নামটাও তো রামের অন্য নাম তার গাত্রবর্ণের জন্য। এই দেশের শেষ রাজবংশের নামও রাম বংশ।১৯৩৯ সালে শ্যামের নাম হয় থাইল্যান্ড মানে স্বাধীন দেশ। শুধু এই দেশে কেন, আজও রামায়নের জনপ্রিয়তা এতটাই যে প্রতিবেশি লাওস, ক্যাম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াতেও রামায়নের খন্ড নিয়ে সাংস্কৃতিক ও নৃত্যানুষ্ঠান হয়ে থাকে।ব্রহ্মদেশ বা বার্মা বা মায়ানমারে রামায়নের প্রভাব :রামায়নের অপভ্রংশ ” য়ামায়না ” দেশের জাতীয় গ্রন্থ। য়ামা হল রামা আর মা সীতা হল “মে থীডা”। সাংস্কৃতিক প্রভাবে ভারতীয়তা বলতে রামায়ন আর বৌদ্ধপ্রভাব পরিলক্ষিত হয় ব্রহ্মদেশে। এখানে জাতকের অপভ্রংশ হয়েছে ” জাদাও” । রাজা কায়ানজিতা ( ১০৮৪-১১১২) নিজেকে রাজা রামের বংশজ বলে মানতেন। পনেরশো শতকে বর্মী ভাষায় রচিত কাব্য ” কাব্যাদর্শ ” ও ” শুভাষিত রতনিধি ” রামায়নের কাহিনীর উপরেই আধারিত।তারানাথের লেখা রামায়নের বিবৃতির সংগ্রহ ” ঝ্যাং ঝুঙ্গপা ” এর ম্যানুস্ক্রিপ্টটা পাওয়া যায় না আজ। বর্মাতে রামায়নের কান্ডের উপর নাটিকার প্রচলন যথেষ্ঠ।কম্বোজ বা ক্যাম্বোডিয়াতে রামের প্রভাব :কম্বোজ বা কাম্বোডিয়া দেশেও রামায়নের প্রভাব একই রকমের আর এদেশের সেই জাতীয় গ্রন্থ ” রামাকীর্তি” বা “রামকের” । হিন্দু সাহিত্যের সঙ্গে বৌদ্ধ জাতকের ধারনার সংমিশ্রনের ফলস্বরূপ এই গ্রন্থ জীবনধারনে শুভ শক্তির আনয়ন ও অশুভের বিনাশের বার্তাবাহক। আনুমানিক সাতশো খ্রীষ্টাব্দের বহূ পাথরে খোদাই করা চিত্র ও লিপি এদেশে ক্ষের অঞ্চলে পাওয়া গেছে যেগুলো রামায়নের কাহিনীগুলোকে তুলে ধরেছে । ক্ষের রাজত্বকালের মন্দিরের লিপিগুলোও একইরকম। আঙ্কোরভাট মন্দির গাত্রেও রামায়ন, মহাভারতের গল্প চিত্রিত রয়েছে যেটা আনুমানিক চারশো থেকে সাতশো খ্রীষ্টাব্দে তৈরি। হনুমানের ও বানরের খোদাই করা মূর্তিগুলো এদেশের ধার্মিক কারনে লেজবিহীন করে বানানো হয়েছিলো।মালয় বা মালেশিয়াতে রামের প্রভাবরামের মালয় সংস্করন হল ” হিকায়ত সেরি রামা ” যেটা ভারতীয় সংস্করনেরই পরিমার্জিত ও বর্ধিত রূপ যেটা চৌদ্দশ খ্রীষ্টাব্দে রচনা করা হয়। মালয়ের দালং সোসাইটি এর উপরে প্রায় দুশো, তিনশো নাটিকা আয়োজন করেছে যার শুরুতে রাম ও সীতার প্রতি সমবেত প্রার্থনাসঙ্গীত গাওয়া হয়েছে।যবদ্বীপ, বালি ও সুমাত্রা বা ইন্দোনেশিয়াতে রামায়নের প্রত্যক্ষ প্রভাব :পৃথিবীর বৃহত্তম ইসলাম অধ্যূষিত দেশ ইন্দোনেশিয়াতে শান্তি বিরাজমান হবার মূল কারন সম্ভবত দেশের ভারতীয় সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ প্রভাব ও রামায়ন, মহাভারতের প্রচলন। সংযোজনা হওয়া বিভিন্ন কান্ড বা পর্ব নিয়ে যাত্রা পালা ও নৃত্যনাটিকার চল এদেশে বহূল। ইন্দোনেশিয়ান সংস্করনটির নাম ” কাকাওইন রামায়না ” । এটি অন্য সংস্করন প্রম্বনন থেকে একটু ভিন্ন। প্রম্বনন মন্দিরে রামায়নের ব্যালেতে অংশগ্রহনকারী সকল মুসলমানরা তাদের হিন্দু সংস্কৃতির প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে চলেছেন। ইসলাম ধর্মাবলম্বী এই দেশে রামের এমন প্রভাব দেখে বাংলার হিন্দুরা যারা রামধনুকে রংধনু বানিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার ভন্ডামি করছেন, না জানি কি বলবেন ! তারা জানেন কি পৃথিবীতে রামায়নের উপর প্রথম আন্তর্জাতিক সমাবেশটি কিছু বছর আগে এই ইসলাম ধর্মাবলম্বী দেশটিতেই হয়ে গেছে ?এদেশে চন্ডী লোরো জোংগ্রোং নামে একটি মন্দিরে রামায়নের কাহিনী খোদিত রয়েছে সম্ভবত নবম শতকে তৈরি।নেপালে রামায়নের প্রভাব :হিন্দু রাষ্ট্র নেপালে স্বাভাবিকভাবে প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে ও রামায়নের ১০৭৫ সালে নেপালি ভাষার সংস্করনটি প্রচলিত।শ্রীলঙ্কাতে রামের প্রভাব :রাবনরাজার সোনার লঙ্কাতে ৬১৭ সনে কুমারদাসা বা নরেশ কুমার ধাতুসেনার সংস্কৃতে রচনা বই হল ” জানকীহরণ ” । পরবর্তীকালে সি ডনবোস্টীন ও জন ডিসিলভাও রামায়ন ভিত্তিক বই লেখেন। এই দ্বীপে সীতা এবং রাম আরাধ্য দেবদেবী ও এখানে প্রাচীন বহূ অত্যাশ্চর্য নিদর্শন রয়েছে যার পুরাতাত্ত্বিক গবেষণা চলছে যেগুলো রাম ও রাবনের অস্তিত্ত্বকে প্রমান করে ।জাপানে রামের প্রভাব :রামের জাপানী সংস্করন দুটি ” হোবাৎসুসু” এবং ” সাম্বোএকোতোবা”।ফিলিপিন বা ফিলিপাইনসে রামায়ন :রামায়ন এদেশে হয়েছে ” মহারাদিয়া লাওয়ানা ” । এদেশের বিখ্যাত নৃত্যানুষ্ঠান ” সিংকিল” সেও তো রামায়নের উপরই আধারিত । দেশের পারম্পরিক সংস্কৃতি, জীবনশৈলীতে রামায়নের প্রভাব প্রকট। প্রোফেসর জুওন আর ফ্রানসিস্কো লক্ষ্য করেছেন যে দেশের মেরিনিও মুসলমানদের মধ্যেও রামায়নের প্রত্যক্ষ প্রভাব যারা রামকে দেবতার অবতার বলেই মেনে থাকে ! মাজিন্দানাও বা সুলু গোষ্ঠীর মুসলমানরাও একই রকম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।চীন দেশেতে রামায়ন :বিভিন্ন জাতকের গল্প এদেশে বহূল প্রচলিত সেই ২৫১ সন থেকেই যার প্রথমটির রচয়িতা কাং শেং হূয়া । ৭৪২সনের রচনা রাম ও দশরথের বনবাস নির্বাসনের পূর্বের ঘটনাকে বিবৃত করে। ১৬০০ সনে হিস য়ি চি এর রচনা কপি ( বানর) হনুমানের পর্ব নিয়ে রচিত। প্রথম রামায়নের উল্লেখ পাওয়া যায় বৌদ্ধ সাহিত্য “লিউডু জি জিং” এ। প্রচলিত আঞ্চলিক উপকথা ” সান ঊকং” এর সেই বানররাজাও তো হনুমানের চৈনিক চরিত্রাঙ্কন !লাওসে রামায়নলাওসের ইতিহাস তো লাওয়া বা রাম পুত্র লবের দেশ, যেটা সেই দেশে মানুষ বিশ্বাস করে। ” ফ্রা লাক ফ্রা রাম” তো লাওসের জাতীয় গ্রন্থ যেটা বাল্মীকি রামায়নের এদেশীয় সংস্করন। লাওসের ভাট পা কেভ ও ভাট শি ফুম মন্দিরে রামায়নের গল্পচিত্র খুব মেলে। লাফঁ নামের ফরাসী পর্যটকের রচিত রামায়নের কাহিনী পা লাকা পা লামা এদেশে খুবই জনপ্রিয়।ইরানে রামায়নের প্রভাব :হায়দ্রাবাদের সালার জং মিউজিয়ামে রাখা বিশাল পাথর হাতে করা বানরটির পোট্রেট তো হনুমানেরই দ্রোনাগিরি উত্তোলনের প্রতিচ্ছবি। ঠিক তেমনই স্যর হেনরী য়্যুল অনূদিত মার্কো পোলোর বইএর ( দ্বিতীয় খন্ড ) তিনশো দুই পাতাতে আফগানিস্তান থেকে মরক্কো, আলজেরিয়ার মুসলমানদের এক অদ্ভুৎ বিশ্বাস যে ট্রেবিজোন্ড রাজপরিবারের সদস্যদের ল্যাজ ছিলো। মধ্যযুগে ইয়োরোপে এই বিশ্বাস ছিল যে ইসলাম বা ক্রীশ্চান ধর্মের আগে সেদেশে রামায়ন বা মহাভারতের বহূ নিদর্শন বিরাজ করতো যা বর্বরতার জন্য কালে কালে বিনষ্ট হয়ে যায়।রাশিয়া ও মঙ্গোলিয়াতে রামায়ন : রাশিয়ার কাল্মীক গোষ্ঠীর কাছে রামায়ন সবিশেষ জনপ্রিয় ।১৯৭২ সালে দ্য ডেকান হেরাল্ড তার প্রথম পাতাতে যে লেখাটি প্রকাশ করে সেটা এই বিশ্বাসের প্রমানস্বরূপ কাল্মীক গোষ্ঠীর গ্রন্থাগারের সংগ্রহে রাখা রামায়নের বহূ সংস্করনের কথা। কাল্মীকদের আদিনিবাস মঙ্গোলিয়াতে যেখানে একটি কাব্য বহূপ্রচলিত যার সাথে রামায়নের প্রচুর সামঞ্জস্য রয়েছে ।ডোমোডিন সুরেন নামে এক রাশিয়ান লেখকের রাময়নের বেশ কিছু বিশিষ্ট চরিত্রাঙ্কন কাল্মীক ও মঙ্গোলীয়দের কাছে সমান জনপ্রিয়। প্রোফেসর C. F. Glostunky এর ম্যানুস্ক্রিপ্ট “Academy of Sciences” রামায়ন সম্বন্ধে আলোকপাত করে যার অনেক চরিত্র ভোল্গা নদীর উপকূলবর্তীয় অাঞ্চলিক। লেলিনগ্রাডে রাশিয়ান ও মঙ্গোলীয় ভাষাতে বহূ বই উপলব্ধ আজও যা রামায়নের কাহিনীর উপর আধারিত।মধ্যপ্রাচ্যে রামের প্রভাব :মেসোপটেমিয়া বা ইরাকের সিলেমানি প্রভিন্স, কুর্দিস্তানে পাওয়া রামের গুহাচিত্রটি দেখলে কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যাবে। মিশরের ফ্যারাওরাও নিজেদের রাম বংশজ বলে ভাবতেন। রাম নাম নিজের নামের সাথে জুড়ে রামেসিস ১, ২, ৩ লেখার প্রচলন ছিল। ফ্যারাও রানী সিতাদেল নামটি মাতা সীতার অনুপ্রেরণাতে রাখা হয়েছিলো বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান ! প্রসঙ্গত কিছু চিত্রের ছবি দেওয়া হল যার মধ্যে ফ্যারাও আমূন বৈষ্ণব গোত্রীয়দের মতন চন্দন ও তিলকধারী ছিলেন সেটা বোঝা যায় আর একটি ছবি রাম, সীতা, লক্ষন ত্রযে়র প্রতীকী।ইয়োরোপে রামায়নের প্রভাব :ইতালিতে পুরাতাত্ত্বিক খননে প্রচুর ছবি পাওয়া গিয়েছে যা রামায়নের কান্ডের দৃশ্যাবলীর ওপর আধারিত। এমন প্রচুর ছবি দেখা যায় যেখানে দুজন তীর, ধনুক ধারী পুরুষ ও একজন মহিলার পাশে একজন মানুষ যার পশ্চাদ্দেশে লেজ বর্তমান ! দঃ আমেরিকা, ইয়োরোপ, মধ্য প্রাচ্যে এমন প্রচুর নমুনা পাওয়া গিয়েছে যা রামায়নেরই ইঙ্গিত বহন করে ।ইরাকে সিলেমানি প্রদেশে এমন পাথরে খোদিত চিত্রাবশেষ রাম ও হনুমানকেই সূচিত করে।দঃ ও মধ্য আমেরিকাতে রামের প্রভাব:এছাড়া রামায়নের ত্রিশূল যে পেরুতে খোদিত পাওয়া গিয়েছে সেটা যে হিন্দু প্রভাবে সেটা বলাই বাহূল্য। গোয়াতেমালার অরন্যের গভীরে প্রাপ্ত রাম রাজ্যসভার খোদিত চিত্র বা মেক্সিকোর মায়া সভ্যতায় প্রাপ্ত গদাধারী হনুমানের চিত্র যে রামের প্রভাব সেটা কি বলতে বাধা থাকে ?এহেন সর্বজন বিদিত ও গ্রাহ্য রাম আদর্শে যদি ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের ঘোরতর আপত্তি থাকে সেটা সম্পূর্ন তাদের সংকীর্ণ স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। কিন্ত দেশের একশো কোটির হিন্দু জনগোষ্ঠী যারা বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম, তাদেরকে এক ছত্রছায়ার তলে আনতে ও অশুভ যবনের আঘাত প্রতিরোধ করতে একটিই ধ্বনি আগামী দিনে প্রতিধ্বনি হয়ে সারা ভূভারতে ছড়িয়ে পড়বেই। কোনো অসৎ প্রয়াস হিন্দুর এই নবজাগরনকে আর ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে না।
পরাধীন ভারতে স্বামী বিবেকানন্দই ছিলেন জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রথম সেনাপতি।যুবসমাজের উদ্দেশে স্বামীজী বলেছিলেন ‘প্রথমে দুষ্ট পুরুতগুলোকে দূর করে দাও। নিজেদের সংকীর্ণ গত থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে গিয়ে দেখ, সব জাতি কেমন উন্নতির পথে চলেছে। প্রভু তোমাদের নড়নচড়নরহিত সভ্যতাকে ভাঙবার জন্য ইংরেজ গভর্নমেন্টকে প্রেরণ করেছেন। কজন লোকের লক্ষ লক্ষ অনাথের জন্য প্রাণ কাঁদে? হে ভগবান আমরা কি মানুষ! ওই যে পশুবৎ হাড়ি, ডোম তোমার বাড়ির চারিদিকে, তাদের উন্নতির জন্য তোমরা কী করেছ, তাদের মুখে অন্ন দেবার জন্য কি করেছ, বলতে পার? তোমরা তাদের ছোঁও না, ‘দূর দূর’কর, আমরা। কি মানুষ?’ ‘ভারতের দরিদ্র, পতিত, পাপীগণের সাহায্যকারী কোনো বন্ধু নেই। সে যতই চেষ্টা করুক, তার উঠবার আর উপায় নেই। তারা দিন দিন ডুবে যাচ্ছে। রাক্ষবৎ নৃশংস সমাজ তাদের উপর ক্রমাগত আঘাত করছে, কিন্তু তারা জানে না, কোথা থেকে ওই। আঘাত আসছে। তারাও যে মানুষ তা তারা ভুলে গেছে। এর ফল দাসত্ব ও পশুত্ব।”তাই, বলি এগিয়ে যাও বত্স, এগিয়ে যাও। পাশ্চাত্য সমাজ চিরকাল স্বাধীনতা। সম্ভোগ করে এসেছে।‘উন্নতির প্রধান উপায় স্বাধীনতা। ১৮৯৭ সালে বেলুড়মঠে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে স্বামীজী বলেছিলেন যে, “আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ভারত স্বাধীন হবে। কিন্তু। যেভাবে সাধারণত দেশ স্বাধীন হয়, সেভাবে নয়। হেমচন্দ্র ঘোষকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন : India should be freed politically first. ‘ভারতমাতার সেবা করতে চাও তো দেশমাতৃকার দুর্গতি দূর করার জন্য। প্রচণ্ড শক্তি ও সাহস সঞ্চয় করে অগ্রসর হও। জয় তোমাদের অনিবার্য। পরাধীন জাতির কোনো ধর্ম নেই, তোদের একমাত্র ধর্ম মানুষের শক্তিলাভ করে দেশ থেকে শত্রুকে বিতাড়িত করা।স্বামীজীর মুখে এই বাণী শুনে হেমচন্দ্র সেদিন সংকল্প করেছিলেন যে যতদিন না এই বাণী সার্থক করতে পারছেন ততদিন তাঁর বিরাম নেই। তাই কৈশোর থেকে জীবনে শেষ দিনটি পর্যন্ত বাধার পাহাড়কে তিনি ভয়। করেননি, ভয় করেননি দুর্দিনের রক্তচক্ষুকে। কখনো পিছন ফিরে তাকাননি।
স্বামীজী কন্যাকুমারী শীলায় ধ্যানে বসে ভারতমাতাকে দর্শন করেছিলেন।
বন্দে মাতরম্ (“বন্দনা করি মায়”) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক ১৮৮২ সালে রচিত আনন্দমঠ উপন্যাসের অন্তর্ভুক্ত একটি গান। সংস্কৃত-বাংলা মিশ্রভাষায় লিখিত এই গানটি দেবী ভারত মাতা বন্দনাগীতি এবং বাংলা মা তথা বঙ্গদেশের একটি জাতীয় মূর্তিকল্প। শ্রীঅরবিন্দ বন্দে মাতরম্ গানটিকে “বঙ্গদেশের জাতীয় সংগীত” (“National Anthem of Bengal”) বলে উল্লেখ করেন।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই গানটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
“বন্দেমাতরম” ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জাতীয় ধ্বনিতে পরিণত হয়। প্রথমে কলকাতা মহানগরীতে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক সমাবেশে “বন্দেমাতরম” ধ্বনি দেওয়া শুরু হয়। এই ধ্বনির তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ভীত হয়ে একবার ব্রিটিশ সরকার জনসমক্ষে এই ধ্বনি উচ্চারণ নিষিদ্ধ করে দেয়; এই সময় বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী “বন্দেমাতরম” ধ্বনি দেওয়ার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
এইগান আজও ভীষন গুরুত্বপূর্ণ । গানে প্রথমে দেশের বন্দনা , তারপর জাতির বর্ণনা , এবং তারপর ভারতে সংস্কৃতির বর্ণনা আসে –
বন্দে মাতরম্সুজলাং সুফলাংমলয়জশীতলাংশস্যশ্যামলাংমাতরম্।শুভ্র-জ্যোৎস্না-পুলকিত-যামিনীম্ফুল্লকুসুমিত-দ্রুমদলশোভিনীম্,সুহাসিনীং সুমধুরভাষিণীম্সুখদাং বরদাং মাতরম্।
এই ভাবে সুপ্রাচীন ভারতের মুনি ঋষি থেকে শুরু করে বহু লেখক , সাহিত্যিক , কবি , নাট্যকার অখন্ড ভারত রাষ্ট্র কি তা ব্যাখ্যা করেছেন।
আজ আমরা এক ভীষন কাল বেলায় দাঁড়িয়ে। এই সময় নব্য যুব এবং যুবদের এই সমাজের উন্নয়নের জন্য এই দেশের জন্য ভীষন প্রয়োজন।
বিশ্বের কাছে আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি , ঐতিহ্য কে কিভাবে প্রচার করতে হবে তা র দায়িত্ব তাদের। আমাদের ভারতের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্য মূল্য আজ পুরো বিশ্ব নানাভাবে গ্রহণ করেছে। ভারতের ভূমিকাকে বিশ্ব সাদর আবাহন করছে। বিশ্ব চীন বা আমেরিকাকে চায় না ,কারন তারা শোষণ করে। বিশ্ব ভারতকে চায়। কারন ভারত নিজে শান্তিকে প্রচার করে , সে নিজের ঐতিহ্যকে প্রচার করে ভালোবাসা দিয়ে।
সেই প্রচারকে আমাদের যুববাহিনীকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। একদিন ভারত জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেবে। স্বামীজী , ঋষি অরবিন্দ , লোকমান্য তিলক , নিবেদিতা, গান্ধীজী সকলে ভারতকে মা হিসাবে ডেকেছেন। সেই মায়ের সংস্কারে আমরা বড় হয়ে উঠেছি। তাঁর উপর আঙ্গুল তুললে আমরা হাত ভেঙে দিতে জানি। আবার তাঁকে শ্রদ্ধা করলে ভালোবেসে সেই সংস্কারও প্রদান করতে পারি। তাই যুবসমাজ এগিয়ে এস, ভারতকে শ্রেষ্ঠ কর।