এবার রাজ্যে বিজেপির জয়ের মূল কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের নানান দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মুসলিম তোষণ এবং পরিষ্কার ভাবে মোদী হাওয়া। পশ্চিমবঙ্গে আগামী বিধানসভার ভোট কিন্তু মোদিজীর নামে হবে না। জয়-আকাঙ্খিত-পার্টিকে পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা বজায় রাখতেই হবে, কারণ ওটা জনাদেশ।

নিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খলিত দলের হাতে ক্ষমতা যাক, মানুষের এই বোধকে ভুলে গেলে চলবে না। একেতেই একটি বৃহৎ ঋণ পশ্চিমবঙ্গের জন্য রেখে যাচ্ছে বর্তমান শাসকদল, সেই অভূতপূর্ব ঋণ শুরু করেছিল বাম সরকার। ঋণের ফাঁদ থেকে মুক্তির জন্য কেবল কেন্দ্রীয় সাহায্য পেলেই চলবে না, পরবর্তী রাজ্য সরকারকে নিজে থেকেও সচেষ্ট হতে হবে, এরজন্য এখনই দলীয় স্তরে কাজ শুরু হোক, নীতি প্রণয়ন করার কাজ, একদম নির্মোহদৃষ্টিতে এবং সঙ্ঘের বিচার-ধারায়; নির্ধারিত হোক তা কিভাবে রূপায়ণ করা হবে — তার কাজ। লুব্ধদৃষ্টি নিয়ে আসা ভীড়কে দিয়ে সে কাজ হতে পারে না। দলে নবাগতদের নিয়ন্ত্রণের কাজটি সামলানোতেই সময় বেশি চলে যাবে, আসল কাজের চাইতে। অনেক হঠকারী কাজ করে ফেলতে পারেন নবাগতরা, তার দায়ও বর্তাতে পারে বিজেপি নেতৃত্বকে।

কিন্তু অন্য দলত্যাগীকে দলে স্থান দেওয়া একটি রাজনৈতিক জটিলতা হলেও তা রাজনৈতিকভাবে সত্য। রাজনীতি একটি নির্দিষ্ট স্টাইলে চলে, কোথাও তার পথ অগম্য, কোথাও সহজাত, কোথাও “পরে পাওয়া চৌদ্দ আনা”-র মতো। তা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাজ, তা সত্ত্বেও রাজনীতির চালিকা শক্তি হওয়া উচিত সামাজিক – সাংস্কৃতিক- অর্থনৈতিক বিচার বোধ। রাজনীতি সমাজবিচ্ছিন্ন নয়।

যে তাত্ত্বিক সত্যের উপর বিজেপির এই রাজনৈতিক কাজ বলে কোনো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাছে শুনেছিলাম তা হল — ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর সেই বিখ্যাত উক্তি, “প্রতিবাদ করো, প্রতিরোধ করো, প্রয়োজনে নাও প্রতিশোধ।” তাদের মতে বিচার-ধারার প্রবুদ্ধ মানুষ রাষ্ট্রীয় বোধের ধারায় প্রতিবাদ করেছেন, গাঁয়ের-শহরের সাহসী মানুষ গড়ে তুলতে পেরেছেন প্রতিরোধ। কিন্তু তৃতীয় স্টেপটি এযাবৎ অধরাই ছিল, বা যা ছিল নেহাতই নগন্য তার আয়োজন। যে মানুষ দল-বিচ্ছিন্ন এবং অগত্যা নতুন দলে আসেন, যাদের “ফিরিবার পথ নাহি”, ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে তারাই, দেখা যায়, তৃতীয় কাজটি করতে পারেন সাহসে ভর করে, অকুতোভয়ে; আর সেখানেই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা কাজ করে। তবে এই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল জানা উচিত রাজনীতিবেত্তাদের, একদম দক্ষ সাপুড়ের মতই, নইলে ছোবল অনিবার্য। ভালোর পথে তাদের চালিত করা — এক রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।

এই নতুন ও অভূতপূর্ব কাজের দায় এখন বর্তালো রাষ্ট্রীয় বিচারবোধে জারিত সকল মানুষের। পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিজেপির জয় এলেও আগামী দিনগুলি খুব সুখের নাও হতে পারে — ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতিই তার প্রধান কারণ হবে, মানুষ প্রকৃত কারণ না জেনে বিজেপিকে দোষারোপ করবে। দ্বিতীয় কারণ হবে মুসলমানদের আগ্রাসন ও দেউলিয়া হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক দলগুলির শেষ অস্ত্রের ব্যবহার; তারা বোতল-ভূতকে ছেড়ে দিয়ে যাবেই! তাদের অপবিত্র কাজকে ঠেকানোর জন্য ড. শ্যামাপ্রসাদের তৃতীয় পদ্ধতি নিয়ে ভাবনার সময় হল বুঝি! কাদের দিয়ে? কীভাবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.