ভারতে ব্রিটেনের নতুন স্ট্রেন ছড়াতে পারে, করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের সতর্কবার্তা স্বাস্থ্যমন্ত্রকের

ব্রিটেনে করোনার যে নতুন স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে তা ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশে। এবার তা ছড়িয়েছে ভারতেও। ব্রিটেন ফেরত ছ’জনের মধ্যে এই নতুন স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে। আর তারপরেই ফের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাহলে কি ফের একবার করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের আশঙ্কা রয়েছে ভারতে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে আশঙ্কা অমূলক নয়। ভারতে ছড়িয়ে পড়তে পারে ব্রিটেন থেকে আসা এই নতুন স্ট্রেন। আর সেটা যাতে না হয় তার জন্য শুরুতেই এই স্ট্রেনের চেনকে ভেঙে দিতে হবে। তার জন্য একাধিক সতর্কবার্তা জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। সেইসঙ্গে প্রয়োজনে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে এই কথা জানানো হয়। সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রতিনিধি ছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর, নীতি আয়োগের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। সেখানে তাঁরা জানান, ভারতে একবার এই স্ট্রেন পাওয়া যাওয়ার মানে এই স্ট্রেন ভারতে এসে গিয়েছে। এবার তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর একবার ফের এই সংক্রমণ শুরু হলে তা আরও মারাত্মক হবে। কারণ এই স্ট্রেন আগের থেকেও ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। অর্থাৎ একবার সংক্রমণ শুরু হলে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হবে দেশে।

সেটা যাতে না হয় তার জন্যও প্রধান তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে। প্রথম হল বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ। অর্থাৎ কারও মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া গেলে সেই নমুনা ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে তার জেনম সিকুয়েন্সিং করা। একমাত্র তাহলেই তার ক্ষমতা বোঝা যাবে ও তার উপর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বোঝা যাবে। কারণ কোনও ভাইরাস প্রতিহত করতে গেলে আগে তার চরিত্র সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা দরকার। তার জন্যই এই জেনম সিকুয়েন্সিং।

দ্বিতীয় হল প্রশাসনিক পদক্ষেপ। অর্থাৎ টেস্টিং, ট্রেসিং ও ট্রিটমেন্ট, এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতেই হবে। কারও মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া গেলে তাকে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। তার উৎস অনুসন্ধান করতে হবে। কারা কারা তার সংস্পর্শে এসেছে তা খুঁজে বের করে তাদের আইসোলেশনে রাখতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

যাতে এই ভাইরাস বেশি ছড়াতে না পারে তার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি চাইলে কড়াকড়ি বাড়াতে পারে। অর্থাৎ নাইট কার্ফু জারি করা, কিংবা কোনও একটি বিশেষ এলাকায় সংক্রমণ বেশি হলে তাকে কন্টেইনমেন্ট জোন হিসেবেও চিহ্নিত করতে পারে তারা।

তৃতীয় ব্যবস্থা হল মানুষের নিজেদের সচেতনতা। নতুন বছর শুরুর আগে এই সচেতনতা আরও অনেক বেশি প্রয়োজন। কারণ, সবাইকে বুঝতে হবে এখনও ভাইরাসের প্রভাব সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। অনেকটা কমলেও তা এখনও আছে। তাই এখন যদি অন্য কোনও স্ট্রেনের ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে শুরু করে তাহলে তা আরও ভয়ানক হবে। এখন তা কমের মধ্যে রয়েছে। তাই এই সময়েই সেই ভাইরাসকে রুখতে হবে আমাদের।

স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, গত ২৫ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রিটেন থেকে ভারতে ফেরা প্রায় ৩৩ হাজার যাত্রীর তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখান থেকে ৬ জনের শরীরে এই ব্রিটেনের স্ট্রেন ধরা পড়েছে। তাদের নমুনা পাঠানো হয়েছে। সেই নমুনা থেকে জেনম সিকুয়েন্সিং করা হবে। এই মুহূর্তে একদম শুরুর পর্যায়ে রয়েছে এই নতুন স্ট্রেনের সংক্রমণ। তাই এই পর্যায়েই তা শেষ করে দিতে চাইছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.