‘ডিজিজ-এক্স’ মহামারী ছড়াতে পারে বিশ্বে! করোনার থেকেও মারাত্মক ভাইরাস, সতর্ক করলেন বিজ্ঞানী

করোনার নতুন স্ট্রেনের আতঙ্কের মাঝেই ‘ডিজিজ এক্স’ নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গেছে বিজ্ঞানী মহলে। প্রথম ইবোলা ভাইরাস চিহ্নিত করেছিলেন যে বিজ্ঞানী সেই জিন-জ্যাকাস মুয়েম্বি এই ডিজিজ-এক্সের কথা সামনে এনেছেন। বিজ্ঞানী বলেছেন, করোনার থেকেও মারাত্মক সংক্রামক ভাইরাল স্ট্রেন ডিজিজ-এক্স। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে আরও এক মহামারীর মুখোমুখি হতে হবে বিশ্বকে। গবেষক জিন প্রথম নন, ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ৯টি সংক্রামক ভাইরাসের মধ্যে এই ডিজিজ-এক্সের কথা উল্লেখ করেছিল। হু-র চিহ্নিত করা সংক্রামক রোগের তালিকায় বিশেষভাবে ডিজিজ-এক্সের কথা বলা হয়েছিল।

কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে এক মহিলার শরীরে এই ধরনের ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে। যদিও নিশ্চিত তথ্য এখনও দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এই সংক্রামক ভাইরাসের হানায় কী ধরনের রোগ হতে পারে তাও এখনও অজানা।

RDC : D'ici le 9 février, l'INRB sera en mesure de diagnostiquer  d'éventuels cas de Coronavirus (Muyembe) | Actualite.cd
জিন-জ্যাকাস মুয়েম্বি
কী এই ডিজিজ-এক্স?

গবেষক জিন-জ্যাকাস মুয়েম্বি বলছেন, ইবোলার মতোই ভাইরাল স্ট্রেন। মনে করা হচ্ছে, ইবোলা ভাইরাসের জিনের গঠন বদলে অর্থাৎ জেনেটিক মিউটেশনের কারণে এই নতুন ধরনের ভাইরাল স্ট্রেনের জন্ম হয়েছে। যদিও কী ধরনের ভাইরাস বা কোন পর্যায় অবধি সংক্রমণ ছড়াতে পারে তার বিস্তারিত তথ্য এখনও মেলেনি। জিন বলছেন ‘এক্স’ মানে হল অজানা কিছু। যেমন, অঙ্কের ফর্মুলায় এক্স অর্থে কোনও একটা অজানা মান ধরে নেওয়া হয়। যেহেতু এই ভাইরাসের ব্যাপারে এখনও তেমন কিছুই জানা নেই, তাই একে ডিজিজ-এক্স বলেই চিহ্নিত করছেন বিজ্ঞানীরা।

হু বলছে, পশুদের থেকে যে সমস্ত ভাইরাসনিত রোগের সংক্রমণ হয়েছে যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, রেবিস, ব্রুসেলোসিস, লাইম ডিজিজ ইত্যাদি, ডিজি-এক্সও তেমনই হতে পারে। ২০১৮ সালে হু-র রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্লু-প্রিন্টে কঙ্গো হেমোরজিক ফিভার, ইবোলা ভাইরাস, মারবার্গ ভাইরাস, লাসা জ্বর, মিডস-ইস্ট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম তথা মার্স, সার্স, নিপা ভাইরাসের সঙ্গে ডিজিজ-এক্সের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, ইবোলা ভাইরাস আফ্রিকায় নতুন রোগ নয়।  ১৯৭৬ সালে ইবোলা ভাইরাস প্রথম হানা দেয় আফ্রিকায়। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারীর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইবোলা ভাইরাস। গিনির জঙ্গলে এ রোগের কথা শোনা যায় ২০১৩ ডিসেম্বরেই। ক্রমশ লাইবেরিয়া, গিনি আর সিয়েরা লিওন, তিন দেশেই বিশেষ করে ছড়াতে থাকে অসুখ। মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে দিনে দিনে। ইবোলার মোট পাঁচটি প্রজাতি এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি প্রজাতি অত্যন্ত মারাত্মক। যাদের একটি ছোবলে মৃত্যু একেবারে নিশ্চিত। ভাইরাসটির মূল বাহক এক প্রজাতির ফল-খেকো বাদুড়- টেরোপডিডাই। তারা ভাইরাসটি বহন করে, তবে নিজেরা আক্রান্ত হয় না। পরে ওই বাদুড় থেকে বিভিন্ন প্রাণীর দেহে রোগ সংক্রামিত হয়। আর কোনও ভাবে আক্রান্ত প্রাণীদের মাংস খেয়ে ফেললে বা সংস্পর্শে এলেই ইবোলা ভাইরাসটি চুপিসাড়ে ঢুকে পড়ে মানবদেহে। তার পর সংক্রামিত মানুষের রক্ত বা দেহরস (যেমন হাঁচি, কাশি) থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে অন্য মানুষের দেহে।

এই ভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর, রক্তক্ষরণ দেখা যায় রোগীর। হেমোরজিক ফিভারের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। ডিজিজ-এক্সের সংক্রমণেও তেমনই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। কঙ্গোতেই এই সংক্রমণের কথা প্রথম শোনা গেছে। গবেষকরা বলছেন, এই ডিজিজ-এক্স ইবোলার থেকেও সংক্রামক বলেই মনে করা হচ্ছে। কোথা থেকে এই সংক্রমণ ছড়ালো, জেনেটিক মিউটেশন হচ্ছে কিনা, তার পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এই সংক্রমণের মধ্যবর্তী বাহক কোনও প্রাণী কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.