সমস্ত জীবনের একটা বড়ো অংশ মানুষ অতিবাহিত করে ইতিহাস অধ্যয়নের মাধ্যমে কিন্তু কিছু কিছু বিরল মুহূর্ত হঠাৎ আসে যখন মানুষ নিজের চোখের সামনে ইতিহাস সৃষ্টি হতে দেখে, সেরকমই এক ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিরল ঘটনা ঘটতে দেখল দেশবাসী গত ৫ আগস্ট। এদিন দেশের ভাগ্যাকাশে গত সাত দশক ধরে কালো মেঘের মতো জমে থাকা ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ঘটালেন বর্তমান সরকার।
আজ যখন মুক্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছেন আপামর কাশ্মীরবাসী তখন। বড়ো মনে পড়ে যাচ্ছে এই মুক্তির মন্দির সোপানতলে আত্মবলিদান দেওয়া এক মহামানবের কথা। বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখার্জির পুত্র ভারতকেশরী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির কথা। কলকাতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কনিষ্ঠতম উপাচার্য, প্রাক্-স্বাধীনতা যুগের যুক্তবঙ্গের সফলতম অর্থমন্ত্রী। স্বাধীন ভারতের প্রথম শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দেশের শিল্পনীতির নীতিনির্ধারণকারী সেই মহাপুরুষ ৩৭০ ধারার হাত থেকে। কাশ্মীরের ও কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। দেশজুড়ে ৩৭০ ধারার বিরুদ্ধে তিনি জনমত তৈরি করেন অবশেষে ৩৭০ ধারা অমান্য করে বিনা পারমিটেই কাশ্মীরে প্রবেশ করেন। সেখানে তাকে গ্রেপ্তার করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়। তার শরীর ভেঙে পড়ে অবশেষে চিকিৎসার নামে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কাশ্মীরে তাঁকে খুন হতে হয়। যখন তার মৃতদেহ ফিরে এসেছিল কলকাতায়, বিপুল জনপ্লাবনে ভেসে গিয়েছিল রাজপথ, তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রথিতযশা চিকিৎসক ড. বিধানচন্দ্র রায় তার চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্ট দেখে বলেছিলেন ভুল চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু ড. বিধানচন্দ্র রায়, ড. মেঘনাদ সাহা, শ্যামাপ্রসাদ জননী-আশুতোষ ঘরণী যোগমায়া দেবী এবং কোটি কোটি দেশবাসীর আকুল আবেদন সত্ত্বেও নেহরু শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর তদন্ত কমিটি গঠন করলেন না। ষড়যন্ত্রের অংশীদার কারা তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল দেশবাসীর কাছে সেইদিনই। দেশবাসী গর্জে উঠেছিল শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে। তৎকালীন ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী কলকাতায় পদযাত্রা হয়েছিল, তাতে পা মিলিয়েছিলেন স্বয়ং ড. বিধানচন্দ্র রায়, কিন্তু শ্যামাপ্রসাদের চূড়ান্ত আত্মত্যাগের কোনো বিচার পাওয়া যায়নি। বরং সেই দুঃখের স্মৃতিকে ভুলিয়ে দিয়েছিল কমিউনিস্টরা গণআন্দোলনের নামে দু’পয়সা ভাড়া বাড়ার বাহানায়। প্রচুর ট্রাম বাস পুড়িয়ে।
কী আত্মঘাতী বিষ সঞ্চিত ছিল এই ৩৭০ ধারার বুকে যা ভারতমাতার এমন মহান সুসন্তানকে এভাবে কেড়ে নিয়েছিল?
৩৭০ ধারার বলে ভারতের কোনো আইন কানুন এমনকী ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বা আদেশ জম্মু-কাশ্মীরে প্রযোজ্য হতো না।
জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের দুটি নাগরিকত্ব ছিল।
জম্মু-কাশ্মীরের রাষ্ট্রীয় পতাকা আলাদা ছিল।
জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভার কার্যকাল ৬ বছরের ছিল।
এমনকী জম্মু-কাশ্মীরের ভিতরে ভারতের রাষ্ট্রীয় পতাকার অপমান করা অপরাধ ছিল না।
জম্মু-কাশ্মীরের কোনো মহিলা ভারতের অন্য কোনো রাজ্যের কোনো পুরুষকে বিবাহ করলে ওই মহিলার জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকত্ব সমাপ্ত হয়ে যেতো।
এছাড়াও ৩৭০ ধারার বলে পাকিস্তানের কোনো নাগরিক জম্মু-কাশ্মীরে থাকলে তিনিও ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যেতেন এবং পাকিস্তানের কোনো নাগরিক জম্মু-কাশ্মীর কোনো মহিলাকে বিয়ে করলে ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যেতেন।
জম্মু-কাশ্মীরে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার আইন ছিল না। ৩৭০ ধারার বলে কাশ্মীরে আর.টি.আই., সি.এ.জি., আর.টি.ই. ও প্রযোজ্য ছিল না।
কাশ্মীরে থাকা হিন্দু এবং শিখদেরও ১৬ শতাংশ সংরক্ষণ ছিল না।
কাশ্মীরে মহিলাদের ওপর শরিয়ত আইন চালু ছিল।
জম্মু-কাশ্মীরে ভারতের অন্য কোনো রাজ্যের বাসিন্দা জমি কিনতে পারলেও জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা ভারতের অন্য কোনো রাজ্যে জমি কিনতে পারতেন।
জম্মু-কাশ্মীরের জন্য ছিল আলাদা সংবিধান।
এতদূর পড়ে মনে হতে পারে এই ভয়ংকর ধারা জম্মু-কাশ্মীরের জন্য চালু হয়েছিল কেন?
সেকথার উত্তর জানতে হলে ওলটাতে হবে অধুনা বিস্মৃত ইতিহাসের কিছু ধূলিমলিন পাতা।
১৯৪৭ সালে যখন দেশ দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় স্বাধীন হয় তখন গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সমস্ত দেশীয় রাজ্যগুলির জন্য প্রণীত হয়েছিল একটি নিয়ম। নিয়মটি হলো, যে দেশীয় রাজ্যের চতুর্পার্শ্বে ভারত আছে সেই দেশ ভারতে যোগদান করবে, যে দেশীয় রাজ্যের চতুর্পাশ্বে পাকিস্তান আছে সেই দেশ পাকিস্তানে যোগদান করবে, যে দেশীয় রাজ্যের চতুর্পার্শ্বে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই আছে সেই দেশ তার শাসনকর্তার ইচ্ছানুযায়ী ভারতে অথবা পাকিস্তানে যোগদান করবে। অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য এই নিয়ম মেনে ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগদান করলেও গোলমাল বাঁধলো তিনটে রাজ্যকে নিয়ে– জুনাগড়, হায়দরাবাদ ও কাশ্মীর। স্বাধীনতার পর জুনাগড়ের নবাব ঘোষণা করলেন তিনি পাকিস্তানে যোগদান করবেন, হায়দরাবাদের নিজাম আর কাশ্মীরের রাজা হরি সিংহ ঘোষণা করলেন যে তারা স্বাধীন থাকবেন। জুনাগড় ও হায়দরাবাদ এই দুই দেশীয় রাজ্যের চতুর্পাশ্বে ভারত ছিল তাই নিয়ম অনুযায়ী এই দুই দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগদান করতে বাধ্য ছিল। ভারত সরকার তাই আপন সৈন্যবাহিনীর দ্বারা এই দেশদুটিকে ভারতভুক্ত করলো কিন্তু কাশ্মীরের চতুর্পার্শ্বে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই ছিল তাই কাশ্মীরের মহারাজা ভারত-পাকিস্তান কোনও দেশে যোগ না দিয়ে পৃথক থাকার কথা ঘোষণা করলেও ভারত অথবা পাকিস্তান কোনও সরকারই আপন সৈন্যবাহিনীর দ্বারা কাশ্মীরকে নিজ রাষ্ট্রভুক্ত করতে পারলো না। নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি কাশ্মীরে সৈন্য পাঠাতে অপারগ হওয়ায় ভারত কাশ্মীরের স্বাধীনভাবে পৃথক থাকা মেনে নিল কিন্তু আগ্রাসী পাকিস্তানের তা ধাতে সইলো না। ভারতের মতো তারাও নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি কাশ্মীরে সৈন্য পাঠাতে অপারগ ছিল কিন্তু পাহাড়ি উপজাতীয় বিদ্রোহীদের ছদ্মবেশে তারা কাশ্মীরে সৈন্য পাঠালো। মহারাজের সেনা প্রতিরোধে অগ্রসর হলো কিন্তু মহারাজের সেনার একটা বড়ো অংশ ধর্মের দিক থেকে ছিল মুসলমান। তারা মহারাজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে যোগ দিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে। মহারাজের হিন্দু সেনাবাহিনী বীরত্বের সঙ্গে প্রতিরোধ করলো পাকিস্তানি হানাদারদের। কিন্তু অল্প সংখ্যক কাশ্মীরি সেনা হানাদারদের বিশাল বাহিনীর সামনে ঝড়ের মুখে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল। খুন, লুণ্ঠন, গণহত্যা করতে করতে মৃত্যুপাগল পাকিস্তানি সেনা ধেয়ে এল শ্রীনগরের দিকে। পথে মহুয়ায় তৎকালীন কাশ্মীরের একমাত্র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তারা ধ্বংস করে দিল। সম্পূর্ণ শ্রীনগর ডুবে গেল অন্ধকারে। কেরোসিনের আলোয় কাশ্মীরের মহারাজা নিঃশর্তে ভারতভুক্তির চুক্তিতে সই করলেন। মহারাজা সই করার সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীর ভারতের অংশ হয়ে গেল। নিজের দেশ রক্ষা করার জন্য কাশ্মীরে যাবার নৈতিক অধিকারপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা তখন কাশ্মীরে গিয়ে মুখোমুখি হলো পাকিস্তানি হানাদারদের। রণদক্ষ ভারতীয় বাহিনীর সামনে পিছু হাঁটতে শুরু করলো পাকিস্তানি সেনা। ধীরে ধীরে কাশ্মীরের একের পর এক অংশ আসতে লাগলো ভারতীয় বাহিনীর দখলে। সম্পূর্ণ কাশ্মীর ভারতের আয়ত্তে আসা তখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। এই সময় এক অগাধ বুদ্ধির খেলা খেললেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল। তিনি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেন, ৩৭০ ধারা জারি করলেন এবং বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য হাজির হলেন হলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের দরবারে। বিষয়টি কি রাষ্ট্রপুঞ্জে নিয়ে যাওয়া এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল? আন্তর্জাতিক আইন কী বলছে? উত্তরে বলা যায়, যে মুহূর্ত থেকে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল সেই মুহূর্ত থেকে আন্তর্জাতিক আইন বা রাষ্ট্রপুঞ্জ ভারতের অভ্যন্তরীণ কাশ্মীরের ব্যাপারে কোনও কথা বলতে পারে না, তাই ভারতের অংশ কাশ্মীর থেকে বিদেশী হানাদারদের বিতাড়িত করার সম্পূর্ণ অধিকার তখন ভারত সরকারের ছিল, সেই অধিকারের সদ্ব্যবহার না করে খাল কেটে রাষ্ট্রপুঞ্জের কুমির এনেছিলেন নেহরু আর আশা করেছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জ সমস্যার সমাধান করবে। অপেক্ষার সেই শুরু। আর মাত্র কয়েকদিনের যুদ্ধে যে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে যেত রাষ্ট্রপুঞ্জে যাবার পর সত্তর বছরেও সেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি।
এই সত্তর বছর ধরে কাশ্মীরে বেড়েছে পাকিস্তানের প্রভাব আর উগ্রপন্থা, অপরপক্ষে ক্রমাগত কোণঠাসা হয়েছেন কাশ্মীরের আদি বাসিন্দা সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দু পণ্ডিতরা। লক্ষ লক্ষ হিন্দু পণ্ডিত খুন হয়েছেন, হিন্দু মহিলারা ধর্ষিতা হয়েছেন জেহাদি মুসলমান আগ্রাসনকারীদের হাতে। দিনের পর দিন কাশ্মীরে স্লোগান উঠেছে কাশ্মীর মে রহে না হ্যায় তো আল্লাহো আকবর বোলনা হ্যায়। যে কাশ্মীর উপত্যকার স্বর্ণালী ইতিহাস নিজেদের মেধা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রম দিয়ে ৫০০০ বছর ধরে গড়ে তুলেছিলেন নিজেদের প্রাণাধিক প্রিয় সেই কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে, নিজেদের পূর্বপুরুষের জমি, বাড়ি, বাস্তুভিটে ফেলে রেখে তারা বাধ্য হলেন শরণার্থীর জীবনযাপন করতে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে জম্মু ও কাশ্মীরের কী এমন সম্পদ আছে যা অধিকার করার জন্য পাকিস্তানের এত চেষ্টা? রাজ্যটির মোট আয়তন মাত্র ১০১৩৮০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৫১৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে কাশ্মীর উপত্যকা (মোট এলাকার ১৫ শতাংশ), ২৬৩৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে জম্মু উপত্যকা (মোট এলাকার ২৬ শতাংশ), ৫৯৮৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে লাদাখ উপত্যকা (মোট এলাকার ৫৯ শতাংশ)।
জম্মু ও কাশ্মীরের মোট জনসংখ্যাও খুব কম, মাত্র ১ কোটি ২৫ লক্ষ, কাশ্মীর উপত্যকার মোট জনসংখ্যা ৬৯ লাখ (মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ), জম্মু উপত্যকার মোট জনসংখ্যা ৫৩ লাখ (মোট জনসংখ্যার ৪২.৫ শতাংশ), লাদাখ উপত্যকার মোট জনসংখ্যা ৩ লাখ (মোট জনসংখ্যার ২.৫ শতাংশ)। কৃষিজ বা খনিজ সম্পদেও প্রদেশটি সেরকম সমৃদ্ধ নয়।
ত সত্ত্বেও কাশ্মীরের ওপর পাকিস্তানের এত আকর্ষণ থাকার বেশ কিছু কারণ আছে। প্রথমত, কাশ্মীরের প্রকৃতি যেন ঈশ্বরের কাছ থেকে বিশেষ আশীর্বাদপ্রাপ্ত, তুলনারহিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অধিকারী কাশ্মীর যেন আক্ষরিক অর্থেই ভূস্বর্গ। স্মরণাতীতকাল থেকেই পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে এসেছে কাশ্মীর। কাশ্মীরের প্রতি পর্যটকদের এই আকর্ষণকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পে কাশ্মীরকে অনেক উন্নত করে তোলা যেত এবং প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যেত। সেই বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ কত দেখা যাক, ১৯৬০ সালে সুইজারল্যান্ডের পর্যটন খাতে আয় ছিল মাত্র ৯৫.২ লক্ষ ডলার বা ৪ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা, ২০১৪ সালে সুইজারল্যান্ডের পর্যটন খাতে আয় ছিল ৭০৯১৮ কোটি ডলার বা ৪৪২০৩১৮ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা। ১৯৬০ সালে কাশ্মীরের পর্যটন খাতে আয় ছিল ৩৭ কোটি ডলার বা ১৭৬ কোটি ১২ লক্ষ টাকা, ২০১৪ সালে কাশ্মীরের পর্যটন খাতে আয় ছিল মাত্র ২৫০০ কোটি ডলার বা ১৫৫৮২৫ কোটি টাকা। উপরোক্ত পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেল ১৯৬০ সালে কাশ্মীরের পর্যটন খাতে আয় সুইজারল্যান্ডের পর্যটন খাতে আয়ের ৩৯ গুণ ছিল কিন্তু ২০১৪ সালে সুইজারল্যান্ডের পর্যটন খাতে আয় কাশ্মীরের পর্যটন খাতে আয়ের ২৫ গুণ। ১৯৬০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত এই ৫৪ বছরে সুইজারল্যান্ডের আয় বৃদ্ধি হয়েছে ৭৪৫০০ গুণ একই সময়কালে কাশ্মীরের আয় বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭০ গুণ। এই সময়কালে কাশ্মীরের আয়বৃদ্ধি যদি সুইজারল্যান্ডের আয় বৃদ্ধির সমহারে হতো তাহলে। ২০১৪ সালে কাশ্মীরের পর্যটন খাতে আয় হতো ২৭৫৬২৭০ কোটি ডলার বা ১৭১৭৯৮১১০ কোটি টাকা যা গোটা ভারতের মোট জিডিপি-র ৮ গুণ (ভারতের জিডিপি বছরে কোটি ডলার বা ১৭১৭৯৮১১০ কোটি টাকা)। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীর ও সুইজারল্যান্ডের আয় বৃদ্ধির এই বিপরীতমুখী অবস্থানের একটাই কারণ সুইজারল্যান্ড পর্যটন শিল্পে যত উন্নতি করতে পেরেছে কাশ্মীর তা করতে পারেনি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে কাশ্মীরের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকা সুইজারল্যান্ড পর্যটন শিল্পে এত বেশি উন্নতি করলো অথচ কাশ্মীর গহন তিমিরে তলিয়ে গেল এর একটাই কারণ কাশ্মীরে উগ্রপন্থার জন্য পর্যটকদের স্বাভাবিক ভীতি। এই ভীতি সৃষ্টি করেছে পাকিস্তান, তাদের লক্ষ্য একটাই উগ্রপন্থার ক্রমবর্ধমান চাপে অতিষ্ঠ হয়ে ভারত যদি কাশ্মীরকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেয় তাহলে পর্যটন শিল্পে কাশ্মীরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান নিজেদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করবে। ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ’র বলে বলীয়ান। পাকিস্তান না থাকলে শুধু কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের সাহায্যেই ভারত আজ বছরে উপরোক্ত পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারতো যা ভারতের অর্থনীতিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারতো এবং পর্যটন শিল্পে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থানও হতে পারতো। ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ’র কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত কাশ্মীর আজ উগ্রপন্থার ভূতকে দূরীভূত করে পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে নিজ অর্থনীতির উন্নতি সাধন করবে।
আজ থেকে ৬৬ বছর আগে যেদিন প্রতিবাদহীন শক্তের অপরাধে বিচারের বাণী সত্যিই নীরবে নিভৃতে কেঁদেছিল সেদিন ষড়যন্ত্রকারীরা কেউ বোঝেনি যে শ্যামাপ্রসাদ এমন একটি প্রতিষ্ঠানিক বীজ বপন করে গিয়েছিলেন যেটি প্রতিষ্ঠাতার স্বপ্নপূরণে কোনোদিন পিছু হটবে না এবং যেদিনই সুযোগ পাবে সেইদিন তাঁর স্বপ্নকে সাকার করে ছাড়বে। আজ কাশ্মীর আর বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত রাজ্য নয়। ড. মুখার্জির স্বপ্নের এক বিধান এক নিশান এক প্রধান আজ বাস্তবায়িত, এর থেকে। বড়ো গুরুদক্ষিণা আর কীই বা হতে পারতো।
অম্লানকুসুম ঘোষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.