পলিটিশিয়ান ছিলেন না অরুণ জেটলি। তিনি ছিলেন স্টেটসম্যান। নিতান্ত পলিটিশিয়ান পরিচয়ের সীমানা ছাড়িয়ে তিনি উঠতে পেরেছিলেন অনেক ওপরে।

সদা হাস্যময়, সদা স্নেহময় মানুষটির কাছে কোনও ‘আমরা-ওরা’ ছিল না। যে ব্যবহার, যে আন্তরিকতার ছোঁয়া তাঁর দলের লোক তাঁর থেকে পেত, সেই আন্তরিকতার স্পর্শ থেকে বাদ যেত না অন্য দলের, অন্য রাজনৈতিক ধারার, ভিন্ন আদর্শের, ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শনের কোনও মানুষও। তিনি পিতৃহৃদয় সম্পন্ন একজন অগ্রজ। প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত, সুশীল, ভদ্র একটি মানুষ।

আজ লিখতে বসে আঙুল সরছে না। চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, গলা বুজে যাচ্ছে। তাঁর চলে যাওয়া বিজেপির কাছে অনেক বড় ক্ষতি। আর আমার নিজের কাছে… আমার নিজের কাছে নিদারুণ ব্যক্তিগত হারানো। এ এমন হারানো, যে হারানোর কোনও বিকল্প নেই। কোনও কিছু দিয়েই এর ক্ষতিপূরণ হবে না। লোকে বলে সমুদ্র সব ফিরিয়ে দেয়।

জীবন-সমুদ্র আর কোনও দিন অরুণজিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেবে না। রাজনীতির পথে চলতে গিয়ে বহু মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। শিখেছি। অরুণজির সান্নিধ্য আমাকে প্রবল ভাবে সমৃদ্ধ করেছে। দেখেছি একজন ডাকসাইটে আইনজীবী কী ভাবে অবলীলায় অর্থমন্ত্রীর চেয়ারকে দেশহিতে ব্যপক ভাবে অর্থময় করে তুলেছেন। সমালোচনা হয়েছে। হচ্ছে। তবে একথা নিশ্চিত মোদী-জেটলি মিলে দেশে যে অর্থনীতির নতুন দিশা এনেছেন, তা দিয়ে সুদূরপ্রসারী ও স্থায়ী সুফল পাবে ভারতবর্ষ।

আমার কাছে উনি ছিলেন অগ্রজ, পিতৃসম অগ্রজ।

জানি এই দুনিয়ায় ‘অমর কে কোথা কবে!’ এই ভেবে মনকে শক্ত করছি। অনেক কাজ বাকি। নতুন ভারত গড়ার কাজে আমিও একজন সামান্য সৈনিক। নয়াদিল্লিতে বসে অনেক কথা মনে পড়ছে আজ। অরুণজির সঙ্গে প্রথম আলাপের কথা। তাঁর সঙ্গে অনেক আড্ডার কথা। তাঁর সঙ্গে যে কোনও আড্ডাই শিক্ষনীয়।

জানি, সেই সব আড্ডা আর ফিরবে না। রবীন্দ্রনাথ উদ্ধৃত করে এইটুকু প্রার্থনা:

রাত্রিদিন ধুকধুক

তরঙ্গিত দুখসুখ

থামিয়াছে বুকে

বলো শান্তি বলো শান্তি

দেহ সাথে সব ক্লান্তি

হয়ে যাক ছাই।

ভালো থাকুন অরুণজি। খুব ভালো থাকুন।

মুকুল রায়ের বিশেষ প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.