মোদীকে বাংলায় আমন্ত্রণ মমতার, বললেন রাজনীতি নিয়ে কোনও কথাই হয়নি

আড়াই বছর পর মুখোমুখি হলেন দু’জন। এর মাঝে রাজনীতির মঞ্চে দু’জনের সংঘাত পৌঁছেছে চরমে। বুধবার উত্তাপের পারদ যেন পড়ে গেল ধপ করে!

বুধবার বিকেলে নয়াদিল্লির সাত নম্বর লোক কল্যাণ মার্গে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় আধ ঘন্টা বৈঠকের পর সেখান থেকে বেরিয়ে বলেন, রাজনীতি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। একটা সরকারের সঙ্গে আরেকটা সরকারের মিটিং হল। একই সঙ্গে মমতা জানান, বীরভূমের দেউচা-পাচামি কয়লাখনির উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাখনি হচ্ছে দেউচা-পাচামিতে। ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, পুজো-নবরাত্রি মিটে গেলে একটা দিন সময় দিলে, উদ্বোধনের কাজটা সেরে ফেলা যাবে।”

এ দিন মোদী-মমতা-র বৈঠক নিয়ে দিল্লি-কলকাতা দুই শহরেই প্রবল আগ্রহ ছিল। বৈঠকের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় বার উনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেখা করা হয়নি। তাই এলাম। রাজ্যের অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। বাংলা কেন্দ্রের থেকে সাড়ে তেরো হাজার কোটি টাকা পায়। তা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি।

রাজ্যের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়েও যে জোরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয়েছে তা-ও বলেন মমতা। তাঁর কথায়, “আমি বলেছি, আপনাদের যদি কিছু পরামর্শ থাকে দিন। আমরা গ্রহণ করব।” বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সময় দিলে তাঁর সঙ্গেও দেখা করতে পারেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেন, দিদি এনআরসি নিয়ে কোনও কথা হয়েছে?

জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “না এনআরসি নিয়ে কোনও কথা হয়নি। কতগুলো বিষয় একসঙ্গে বলব? আর এনআরসি তো শুধু অসমের বিষয়। বাংলায় তো এখন কিছু হচ্ছে না! এখানে রাজনৈতিক কোনও ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। গভর্মেন্ট টু গভর্মেন্ট।”

কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে যখন সিবিআই হন্যে হয়ে খুঁজছে, তখন মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি যাত্রা নিয়ে বিরোধীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতারাও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। এ দিন বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীর ‘রাজনীতি নিয়ে কথা হয়নি’ মন্তব্য নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না বিরোধীরা। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “ওই ঘরে তো দু’জন ছিলেন। কে জানে রাজনীতি নিয়ে কথা হয়নি। আসলে ম্যানেজ করতে দিল্লি গিয়েছেন। যাতে রাজীব কুমারে থেমে যায়। পিসি-ভাইপোর দিকে হাত না বাড়ায়। তাই এত সুর নরম।” লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “যেই রাজীব কুমারের রক্ষাকবচ উঠে গেল, ওমনি দিদি দিল্লি চলে গেলেন। তাঁর হঠাৎ করে উন্নয়নের কথা মনে পড়ে গেল। কিন্তু আগে নীতি আয়োগের বৈঠকে যাননি। কৌতুহল তো হবেই!” অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করার প্রসঙ্গে বহরমপুরের সাংসদ বলেন, “তাহলে কি মোদী রেফার করে দিলেন অমিত শাহের কাছে?”

যদিও তৃণমূল নেতারা বলছেন, “যাঁরা এ সব কটাক্ষ করছেন, তাঁদের সংসদীয় রাজনীতির ধারনাটাই নেই।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.