মনে তেমন ছাপ না ফেললেও চাপ পড়ল বিলকুল। ছবি জুড়ে ফেসবুক স্তরের বিদ্রূপ। চিরকালীন শিল্প নির্মানের মোহতে না গিয়ে সমকালীনে সচেতনভাবে স্থির থাকা। পরিচালকের বিশ্বাসের সঙ্গে কোথাও কোথাও অমিল থাকতে পারে, কোনও কোনও বিষয়ে গভীরে যাওয়ার প্রবণতা নেই মনে হতে পারে, তবে সাহস? কোটি কুর্ণিশও পরিচালকের জন্যে কম হবে।

যে সময়টা আমাদের হাত থেকে হঠাৎ ফস্কে গেছে, সেই সময়টা ফিরে পাবার আকুতি, ফিরে পাওয়া যাবে না, সে কথা জানার ক্ষোভ, আর বেলাগাম বিদ্রূপ, যদি ছবির শরীর হয় তাহলে উন্নততর, শিক্ষিততর, প্রকৃত অর্থে ও সর্বার্থে সৎ একটি সময়ে উন্নীত হওয়ার প্রবল তাড়না ছবিটির আত্মা।

বাজার বাজার বাজার। এই প্রবল আকার বাজার ধরতে অশিক্ষার সর্বাগ্রাসী বিস্তার, সত্যমূল্যের অপসারণ একজন নিষ্ঠাবান যাত্রাশিল্পিকে ঠেলে দেয় আত্মহত্যায়। টাইপিস্ট ও টাইপরাইটার সময়ের সঙ্গে পেরে না উঠে আত্মহত্যা করে…

ছবিতে স্বনামে না হলেও স্পষ্ট সঙ্কেতে উঠে এসেছেন অনুব্রত মণ্ডল, আরাবুল ইসলাম। সিন্ডিকেট নিয়ে সব্যসাচী দত্তের বক্তব্য ছবিতে স্থান পেয়েছে অম্বুবাচী নামক এক নেতার গলায়। পাতি তোলাবাজ ভোল বদলে ছবি আঁকতে বসেছে। শুধু এঁকে ক্ষান্ত হয়নি সে বিক্রি করতেও গেছে। ঠিক তোলা তোলার সুরে সে জনৈককে তার ছবি কিনতে বলছে। এই দৃশ্য নির্মাণ করতে এ যুগে ধক লাগে। বহুৎ ধক লাগে। পরিচালক সংবাদমাধ্যমকে আক্ষরিক অর্থে জুতো মারতে বাকি রেখেছেন। একটি লোক পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে, খালি গামছা পরে মাথায় তেল মাখছিল। হঠাৎ একটি বালক দৌড়ে এসে তার গামছাটি খুলে নিয়ে ভাগলবা হলে লোকটির যেমন অবস্থা হয়, পরিচালক বাংলা সংবাদমাধ্যমের সেই হাল করে ছেড়েছেন।

সিনেমার মধ্যেই সত্যজিৎ আর ঋত্বিকের পা ছুঁয়ে নেওয়ার ভঙ্গিমাটি ‘ভূতের ভবিষ্যতেও’ ছিল ‘ভবিষ্যতের ভূতেও’ আছে। কারনটা ঠিক কি তা পরিচালকরাই বলতে পারবেন। তবে মানিক ও ঋত্বিকের প্রণম্য হওয়া নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই তবে তাঁদের ছবির মাঝখানে ঢিপঢিপ প্রণাম করা নিয়ে দুইখান কথা আছে…
সে কথা থাক।

ছবিতে শ্যামাপ্রসাদের নাম না করে তাঁকে আলগোছে ছুঁয়ে যাওয়া আছে। ছোঁয়া বলতে ওপর ওপর। অনুধাবনের তেমন ছাপ নেই। চেষ্টাও সম্ভবত নেই। ইচ্ছা আছে বলেও মনে হয়নি। তবে স্বামী বিবেকানন্দের ভাবনার খণ্ডিত ব্যবহার আছে। আরএসএসের ইউনিফরমের হাফপ্যান্ট থেকে ফুলপ্যান্টে উত্তরণ হওয়া নিয়ে মস্করা করেছেন পরিচালক। সে মস্করাও বাজার চলতি। ফেসবুকীয়।

তবে নিজের কথা কোনও পাঁয়তাড়া না করে অনীক দত্ত যেভাবে বলেছেন তা থেকে স্পষ্ট বাংলা সিনেমায় তিনিই এখন ৫৬ ইঞ্চি।

ভোটের বাজারে ছবিটা দেখে ফেলুন। পুলিশ এখন নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোলে।
অধম এই রাজনৈতিক কলমচির এ হেন পাশ ফিরে শুতে চাওয়ার ইচ্ছেটুকু মার্জনা করে দেখে আসুন অনীক দত্তের ভবিষ্যতের ভূত।

জয়দেব বসুর একটি কবিতার পংক্তি স্মরণযোগ্য। কবিতা টবিতা নয়, সাদা সাপটা কথা আছে কিছু।

অনীকের ছবিটিও তাই, সিনেমা টিনেমা নয়, সোজা সাপটা কিছু কথা।
শুনে আসুন, দেখেও আসুন। ইন্টারভালে দরকারি কাজটা সেরেও আসুন চট করে!

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.