রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে ফের পাকিস্তান ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শিলিগুড়ির জনসভা থেকে বলেন, “সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে কেঁদে পাকিস্তানের হিরো হয়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” এদিন ফের সেই প্রসঙ্গ টেনে অমিত শাহর প্রশ্ন, “পাকিস্তান কি তৃণমূলের মাসতুতো ভাই?”

রাজ্যে প্রথম দফার ভোটের দিনেই কালিম্পঙে সভা করেন বিজেপি সভাপতি। আর সেখানে অমিত শাহর বক্তব্যের বড় অংশ জুড়ে ছিল পুলওয়ামার জঙ্গি হামলা ও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক প্রসঙ্গ। আর সেই সূত্রেই সেনা অভিযানের পরে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের সমালোচনা করেন অমিত। পুলওয়ামা হামলার জন্য বিশদে তদন্ত না করে পাকিস্তানকে দোষারোপ করা ঠিক নয় বলে মমতার মন্তব্য এবং পরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রমাণ চাওয়া নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। এদিন তারই নতুন নজির দেখালেন অমিত শাহ।

সম্প্রতি কাশ্মীরের জন্য পৃথক প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির দাবি জানিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওমর আবদুল্লার সুসম্পর্কের উল্লেখ করে অমিত শাহ বলেন, “এক দেশে কি দুই প্রধানমন্ত্রী থাকা সম্ভব! ওমর আবদুল্লা সেটাই চাইছেন। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে চাই, মমতাদি, ওমর আবদুল্লার বক্তব্যের সঙ্গে আপনি সহমত কি সহমত নন বলুন?” এর পরেই সমর্থকদের উদ্দেশে অমিত প্রশ্ন ছোঁড়েন, “এটা বলা দরকার কি দরকার নয়?” সমর্থকদের থেকে উত্তর আসে “হ্যাঁ, দরকার।” তার পরেই সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণের রাস্তায় চলে যান অমিত শাহ। তিনি বলেন, “মমতা দিদি যাই করুন আর না করুন, যতদিন ভারতীয় জনতা পার্টির সৈনিকদের প্রাণ আছে ততদিন কেউ কাশ্মীরকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না।”

এর পরেই জঙ্গী হামলা ও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক প্রসঙ্গ তোলেন অমিত শাহ। তিনি বলেন,
“রাজনীতি করতে গিয়ে দেশের সুরক্ষা নিয়ে খেলছে তৃণমূল কংগ্রেস। পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন জওয়ানের প্রাণ গিয়েছে। বাংলার চার জওয়ান শহিদ হয়েছেন। আর তার পরে নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে সেনা জবাব দিয়েছে, পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি তছনছ করে দিয়ে এসেছে।” অমিতের এই বক্তব্যের পরে, হাততালিতে ভরে ওঠে সমাবেশ। সেই করতালির জের ধরেই অমিত বলেন, “আপনারা হাততালি দিচ্ছেন, পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার পরে গোটা দেশে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, বাজি ফেটেছে, মিষ্টি বিলি হয়েছে। শহিদ জওয়ানদের ফুল মালা দেওয়া হয়েছে। দুই জায়াগায় শুধু শোকের পরিবেশ ছিল। এক তো পাকিস্তানে কান্নাকাটি চলছিল। সেটা তো হওয়াই উচিত। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে তৃণমূল কংগ্রেস ছাতি চাপড়ে চাপড়ে কাঁদতে শুরু করে। এখানেই প্রশ্ন ওঠে এরা কি পাকিস্তানের মাসতুতো ভাই নাকি!”

এদিন দার্জিলিং কেন্দ্রের প্রচারে আসেন অমিত শাহ। এই আসনে গত লোকসভা নির্বাচনে জয় পান বিজেপির সুন্দরসিংহ আলুওয়ালিয়া। এবারে প্রার্থী হয়েছেন রাজু বিস্ত। গোর্খা অধ্যুষিত দার্জিলিং আসনের ভোটারদের মধ্যে পাক-বিরোধিতা ও জওয়ান-আবেগ কাজে লাগাতে এদিন পুরোদস্তুর চেষ্টা চালিয়ে যান অমিত শাহ। তিনি তৃণমূলনেত্রীর নাম উল্লেখ করে বলেন, “আমি এটাই বলতে এসেছি যে, মমতা দিদি যতই কাঁদুন না কেন, নরেন্দ্র মোদীর সরকার, বিজেপির সরকার ক্ষমতায় থাকলে পাকিস্তানকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। ওদিকে থেকে গুলি এলে, এদিক থেকে গোলা যাবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.