বাংলায় সাত দফায় লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার আগেই কলকাতা ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার সহ চার জন পুলিশ কর্তাকে বদলির নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই বদলি করা হয়েছে ডায়মন্ডহারবার ও বীরভূমের পুলিশ সুপারকে।

তার পর চব্বিশ ঘন্টাও কাটেনি, একদা তৃণমূলের সেকেন্ডম্যান তথা বিজেপি নেতা মুকুল রায় জানিয়ে দিলেন, “ভোটের সময় জেলাস্তরে পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের আচরণে কোনওরকম পক্ষপাত দেখলে ফের দ্বারস্থ হবেন কমিশনের। তাঁর কথায়, “সব ছবি আছে আমার কাছে, দরকার পড়লেই বের করব”।

কী ছবি রয়েছে তাঁর কাছে? তা দিয়ে কী ই বা প্রমাণ করতে চাইবেন মুকুলবাবু?

সম্প্রতি এ ভাবেই একটি ছবি নির্বাচন কমিশনে পেশ করেছিল তৃণমূল। তার ফলে বাংলার জন্য নিযুক্ত বিশেষ কেন্দ্রীয় পুলিশ পর্যবেক্ষককে বদলে দিয়েছিল কমিশন। বিএসএফের প্রাক্তন ডিজি কে কে শর্মাকে বিশেষ কেন্দ্রীয় পুলিশ পর্যবেক্ষক হিসাবে তার আগের দিনই নিয়োগ করেছিল নির্বাচন সদন। কিন্তু তার বারো ঘন্টার মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক করে কে কে শর্মার একটি পুরনো ছবি দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাতে দেখা গিয়েছিল, আরএসএসের অনুগামী সংগঠনের আলোচনা সভায় গিয়েছিলেন তিনি। তৃণমূল কমিশনে অভিযোগ করেছিল, কে কে শর্মা বিজেপি ও আরএসএস ঘনিষ্ঠ, তাই ভোটে পক্ষপাত করতে পারেন।

মুকুলবাবু শনিবার বলেন, “কে কে শর্মা সীমান্তবর্তী এলাকায় মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একটি আলোচনা সভায় গিয়েছিলেন। তবে ছবিই যদি শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত হয়, তা হলে এ রকম গুচ্ছ ছবি আমার কাছে রয়েছে”। তাঁর কথায়, আমি আগেও বলেছি, বাংলায় পুলিশ রাজ চলছে। বহু জেলায় পুলিশ সুপাররা সব জেলা তৃণমূল সভাপতির মতো আচরণ করেন। থানার ওসিরা যেন ব্লক সভাপতি। তারাই সেখানে সংগঠন চালায়। এঁদের দিয়ে ভোট করালে তা যে অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না সে কথা কমিশনকে বহুবার জানিয়েছি। সে দিক থেকে চার পুলিশ কর্তাকে বদলি করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন তা ইতিবাচক। কিন্তু এতেই আহ্লাদিত হয়ে থাকার কোনও কারণ নেই। কেন না, প্রশাসন ও পুলিশ এমন আরও অনেকে রয়েছেন। কোনওরকম পক্ষপাত দেখলেই ফের কমিশনের কাছে যাব।

অতীতে বাংলায় যখন বাম সরকার চলছে, তখন তৃণমূলের সেকেন্ডম্যান হিসাবে এই ভূমিকাই পালন করতেন মুকুলবাবু। ভোট চলাকালীন বারবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করতেন। বিশেষ করে ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে মুকুলবাবুর সেই ভূমিকা কার্যকরী হয়েছিল, তা তৃণমূলের নেতারাই স্বীকার করেন। এমনকী এ বারও নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে বাম, কংগ্রেসের নেতাদের তুলনায় অনেকটাই সুনির্দিষ্ট ভাবে সমস্যাগুলি তুলে ধরেছিলেন তিনি।

তৃণমূল অবশ্য এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। শনিবার আলিপুরদুয়ারে সভা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি সেখানে কিছু বলেন কিনা তারই অপেক্ষা রয়েছে। তবে ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূল নেতারা বলেন, বাংলায় তৃণমূলের যা বুথ স্তরে সংগঠন রয়েছে তা বিজেপি-র নেই। ফলে এর পরেও বিজেপি বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.