পর্ব ২
সেই বিরাট যোগিকে বাহির হতে চেনা বড় কঠিন ছিল। তাঁর বৈশিষ্ট্য হল শত সহস্র বৎসরের সাধনার ফলে প্রাপ্ত সেই স্তরে অধিষ্ঠান করেও ভর্তি সংসার। এই যে তিনি অবিদ্যা স্বরূপ মায়ার সংসারে ছিলেন , সত্য হল তাঁর প্রকৃত সত্তায় সেই মায়ার সংসার ছিল না। ছিলেন কেবল বিদ্যা স্বরূপ মহামায়া। তাঁর সেই বিদ্যার সেবায় অবিদ্যার সংসার কৃতার্থ হয়েছিল। সাধে কি ত্রৈলঙ্গ স্বামী একদিন তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন – “সাধনার যে স্তরে পৌঁছনোর জন্য সাধককে তাঁর কৌপীন পর্যন্ত ত্যাগ করতে হয় , তুমি গৃহস্থ আশ্রমে থেকেও সেই স্তর লাভ করেছ । এ বড় সহজ কাজ নয়। ”
এরপর আস্তে আস্তে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাধারণ সাধক থেকে আরম্ভ করে সাধু , মুমুক্ষু , শরণার্থীর সংখ্যা বাড়তে লাগল ক্রমশ। তিনি সাধনাহীন শূন্য গর্ভ আলোচনায় একেবারেই উৎসাহী ছিলেন না। আসন , প্রাণায়ম, ধ্যান ইত্যাদি যৌগিক ক্রিয়াদির উপর তিনি গুরুত্ব দিতেন। ” প্রকৃত অনুভূতি ও ঈশ্বর লাভ ই একমাত্র কাম্য ” – এই ছিল তাঁর বাণী। সর্বভূতে যে মহাচৈতন্য বিধৃত , যোগিরাজের অনুভূতি তাতে অন্বিত হয়ে গিয়েছিল। সকলের ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় স্থূল দূরত্ব ব্যবধান সৃষ্টি করতে পারেনি কোনোদিনও। তিনি যেখানেই থাকুন সুদূরবর্তী বিশ্বাসী দুঃখ সুখের দিনে তাঁকে নিকটে পেয়েছেন।
কথিত আছে , চন্দ্রমোহন তখন নতুন ডাক্তার হয়েছেন। মুখে অনেক বিজ্ঞানের কথা । যোগিরাজ একটু কৌতুক করে বুঝিয়ে দিলেন – ” যোগ বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানের নিকট তোমার মৌখিক বিজ্ঞান বিকল।” তারপর লাহিড়ী মহাশয় চন্দ্রমোহনের হাতে তাঁর শরীরটি ছেড়ে বললেন – ” আমি মৃত না জীবিত নির্ণয় করো। ” সুস্থ স্বাভাবিক একটি দেহে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্রাণের অস্তিত্ব না পেয়ে চন্দ্রমোহন কেবল বিস্মিত হলেন না ,শ্রদ্ধায় তাঁর মাথা নত হয়ে গেল।
আরো শোনা যায় , একবার খুব জোরাজুড়ি করায় তিনি ছবি তুলতে রাজী হলেন। কিন্তু তাঁর হঠাৎ মনে হল বাক্স বন্দী হবার পূর্বে একবার বাক্সটি কতটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করে দেখা যাক। উৎসাহের সঙ্গে ক্যামেরার ব্যাপারে তিনি অনেক কিছু জানলেন। তারপর হঠাৎ ভিউফাইন্ডারে তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেল না। সবাই ক্যামেরায় আসছেন কিন্তু যোগিরাজ নেই। অথচ খালি চোখে তাঁর স্থূল শরীর দেখা যাচ্ছে। সাহেব ক্যামেরা ম্যানের চাতুরী শেষ। মিটি মিটি হেঁসে লাহিড়ী মহাশয় বললেন , ” কীগো ? কী হলো তোমাদের বৈদেশিক বিজ্ঞানের ?” সবাই নিরুত্তর । কোনওক্রমে সেদিন যে ছবিটি তোলা হয়েছিল সেটিই আজ সর্বজন পরিচিত।
এসব শুনে কাশীমণি দেবীর ভয়ে মূর্ছা যাওয়ার মতো অবস্থা। যদিও স্বামী সম্পর্কে বহু বহু অলৌকিক কথা তিনি শুনতে পেতেন , তবু সারাদিন স্বাভাবিক জীবনের কথা বার্তায় তাঁকে অন্যভাবে দেখতে কাশীমণি দেবীর একেবারে ইচ্ছে করত না। এসব অতিলৌকিক ব্যাপারে তৈরি ছিলেন না। স্বামীর অলৌকিকত্বের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও তাঁর বিস্ময় ভক্তিতে রূপান্তরিত হতে সময় লেগেছিল।
যোগিরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ীর দুই পুত্র এবং তিন কন্যা ছিল। যে সময়ের কথা বলছি সে সময়ে তিনি সকল যোগ গুণ এবং ফল লাভ করেছেন। পুত্রদের নাম ছিল যথাক্রমে – তিনকড়ি লাহিড়ী ও দুকড়ি লাহিড়ী এবং কন্যাদের নাম ছিল যথাক্রমে – হরিমতী , হরিকামিনী, হরিমোহিনী। একদিন বিবাহিতা মধ্যমা কন্যা হরিকামিনী বাপের গৃহে আসলেন। সহসা কন্যাটি এশিয়াটিক কলেরায় আক্রান্ত হলেন । কাশীমণি দেবী এসে যোগিরাজের পায়ে পড়লেন , ” ওগো, মেয়েটিকে বাঁচাও। যাহোক কিছু করো। তুমি থাকতে অমন মেয়েটা চলে যাবে ?” যোগিরাজ কিছু আয়ুর্বেদিক ঔষধ দিলেন। কিন্তু বিনাশ কালে বিকৃত বুদ্ধি । কাশীমণি ভাবলেন পরের ঘরের বউ এসব ছাইপাঁশ খাইয়ে কি লাভ ? সেই আয়ুর্বেদিক ঔষধ ফেলে দিয়ে বড় ডাক্তার ডেকে আনা হলো। কিন্তু পরের দিন মেয়ে হরির প্রিয় হয়ে গেলেন। এতসব ঘটল যোগিরাজ নিশ্চল, নিরুদ্বিঘ্ন হয়ে রইলেন।
অন্যান্য দিনের ন্যায় সেদিনও বৈকালে তিনি গীতার ব্যাখ্যা করছেন। পন্ডিত পঞ্চানন ভট্টাচার্য গীতার মূল শ্লোক পাঠ করছেন। অনেকে সেই পাঠ শুনতে এসেছেন। এমন সময় উপরের ঘরে থেকে ক্রন্দনের রোল উঠল। কি কারণ এমন মরা কান্নার?
শান্ত কন্ঠে যোগিরাজ বললেন – ” মেয়েটিকে আর ধরে রাখতে পারল না। তাই সকলে কাঁদছেন। বোধয় শ্মশান যাত্রীরা এসেছেন। “
ভট্টাচার্য মহাশয় গীতাখানা বন্ধ করে বললেন , ” আজ তবে থাক।”
যোগিরাজ শান্ত গম্ভীর কন্ঠে বললেন -” ওদের কাজ ওরা করুক, তোমাদের কাজ তোমার করো।”
উপস্থিত জনরা বললেন,” না , আজ আর এই অবস্থায় কোনো ব্যাখ্যা বুঝতে পারব না।”
যোগিরাজ বললেন , ” তবে থাক।”
পরদিন , যোগিরাজের শ্যালক রাজচন্দ্র স্যান্যাল মহাশয় এসে তাঁকে প্রশ্ন করলেন – ” প্রিয়জন বিয়োগে যে দুঃখ সাধারণ মানুষের হয় তা কি তোমার হয় ? হলে কালকে…”
যোগিরাজ স্মিত হাস্যে বললেন ,- ” দুঃখ তো সকলেরই হয়, তবে জ্ঞানী ব্যক্তির কিছু পার্থক্য থাকে। যেমন – শক্ত পাথরে গুলি করলে গুলি ছিটকে যায় কিন্তু নরম মাটিতে তা গেঁথে বসে; তেমন জ্ঞানী মানুষের কাছে দুঃখ, শোক, তাপ এসে আঘাত করতে পারে না , অমন ছিটকে যায়। কারণ মৃত্যু নিত্য ….অজ্ঞানী কেবল সেই আঘাতে হায় হায় করে। “
ওই যে বলেছিলাম অবিদ্যা মায়ার সংসার তাঁকে পাশে বাঁধতে পারেনি। মহামায়ার বিদ্যাই তাঁর সব ছিল। পদ্মপত্রে জলবিন্দুর সংসারে বাস করেও তিনি গৃহীযোগী ছিলেন। অনায়াসে সকল দুঃখ কষ্ট শোকে নির্লিপ্ত থাকতেন।
গীতায় আছে –
যং হি ন ব্যথয়ন্ত্যে পরুষং পুরুষর্ষভ।
সমদুঃখসুখং ধীরং সোহমৃতাত্বায় কল্পতে।।
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে
নাই বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।
সহায় মোর না যদি জুটে
নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি
লভিলে শুধু বঞ্চনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।
যোগিরাজ প্রতিদিন বৈকালে গঙ্গার তীরে রানামহলঘাটে ভ্রমণে যেতেন। সেখানে গঙ্গাতীরে ভক্ত কৃষ্ণারামের আস্তানা ছিল । যোগিরাজ কিছুক্ষণ ভ্রমণ করে কৃষ্ণারামের বারান্দায় বসে গীতা সম্বন্ধে নানা আলোচনা করতেন। তারপর সন্ধ্যার পূর্বে বাড়ি ফিরে বৈঠকখানা ঘরে বসে গীতা সম্পর্কে নানা উপদেশ দিতেন । রাত্রি নটা বাজলে কথা শুনতে আসা জনসাধারণ চলে যেতেন। এভাবে যখন তিনি বৈঠকখানা ঘরে বসে জনগণকে গীতার নানা কথা শোনাতেন তখন কোন কোনো কোনো সময় দেখা যেত, তিনি হঠাৎ হঠাৎ হাত জোড় করে কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করতেন।
বৈঠকখানায় থাকা লোকজন, ভক্তবৃন্দ এক আধবার জিজ্ঞাসা করতেন, ” কেন ? কেন আপনি মাঝে মাঝে এমন করেন? “। উত্তরে যোগিরাজ স্মিত হাঁসতেন। কাকে প্রনাম করতেন তা ঘরে উপস্থিত লোকজন বুঝতে পারতেন না । সবসময় জিজ্ঞাসা করবার সাহস হতো না। তাদের মধ্যে কেবল কৌতূহল জাগত। একদিন যখন তিনি প্রণাম করলেন, সাথে সাথে একজন গিয়ে ঘরের বাইরে দেখলেন কোন এক জনৈক ব্যক্তি যোগীরাজের উদ্দেশ্যে বারান্দায় সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করছেন । আর যোগিরাজ সেই প্রণাম গ্রহণ করছেন ঘরের ভিতরে হতে । কিন্তু অবাক ব্যাপার , ঘরের ভিতর হতে তা দেখবার কিন্তু কোন উপায় ছিল না। এভাবে বাইরে হতে যখনই কেউ তার উদ্দেশ্যে প্রণাম করতেন, তিনিও তাঁর প্রত্যাভিবাদন করতেন। এমনকি বহু দূরে কেউ তাঁকে প্রণাম করলে, তিনি প্রত্যাভিবাদন দিতেন। নিকট ও দূর , ভিতর ও বাহির সকলই তাঁর নিকট স্বচ্ছ হয়ে গিয়েছিল। সকলের মাঝেই তিনি এককেই দেখতেন।
এসব তো গেল বিশ্বাসীদের কথা। একটু অবিশ্বাসীদের কথা বলি। তাঁর জীবনে অনাচারী , অবিশ্বাসী মানুষের আগমনও কিছু কম ছিল নক। তাঁদেরও তিনি উচিৎ শিক্ষা প্রদান করতেন। এমনি একজন অবিশ্বাসীকে তিনি সেবার উচিৎ শিক্ষা দিয়েছিলেন। কালীকুমারের সঙ্গে দুষ্ট লোকটি এসেছিল লাহিড়ীমহাশয়কে পরীক্ষা করতে। ইচ্ছা ছিল ভন্ড প্রতিপন্ন করে তিনি খুব তারিফ অর্জন করবেন । কিন্তু লোকটি যে ছাইচাপা আগুনে হাত দিয়েছিলেন। তাই ভুগতে হয়েছিল ষোলোআনা। তিনি ঘরে ঢুকতেই শ্যামাচরণের নির্দেশে ঘর অন্ধকার করা হলো। সবার সামনে এক তরুণীর আবির্ভাব হলো । শ্যামাচরণ দুষ্ট লোকটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ” দেখুন তো একবার এই মাকে চিনতে পারছেন কিনা? ” ভদ্রলোক লজ্জায় অধোবদন স্বীকার করলেন যে, এই মেয়েটিই তাঁর উপপত্নী। বাড়িতে স্ত্রী-পুত্রকন্যাদিতে ভরা সংসার । তবু তিনি এই মহিলার পিছনে বহু অর্থ দীর্ঘদিন ধরে ব্যয় করে চলেছেন। পরীক্ষা করতে এসে ভদ্রলোক নিজেও মুমুক্ষু হয়ে গেলেন।
পিতা গৌরমোহনের অভিভাবকত্বে কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণীতে শ্যামাচরণের প্রথম পাঠ শুরু হয়। আধ্যাত্মিক পরিবেশ পেয়েছিলেন জন্ম থেকেই।
তাঁর পিতা একটি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করে ধ্যান , জপ ,তপ নিয়েই থাকতেন। মাতা ছিলেন ভক্তিমতী মুক্তকেশী দেবী। ১৮২৮ সালের , আশ্বিন মাসে তাঁদের সংসারে শ্যামাচরণের আবির্ভাব। তার অল্প দিনের মধ্যেই শ্যামাচরণ মাতৃহারা হন। গৌরমোহন পুত্রকে নিয়ে কাশীবাসী হন। সুপ্রাচীন দেবতীর্থ বারাণসীর আবহাওয়ায় শ্যামাচরণ বড় হন। সংস্কৃত ,বাংলা, ইংরেজি ভাষা ছাড়াও তিনি ফার্সি ভাষায় অসম্ভব পন্ডিত ছিলেন। ২৩ বছর বয়সে শ্যামাচরণ সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। পরবর্তীকালে রাণীক্ষেতে সেই অবিস্মরণীয় মুহূর্তের তাঁর আধ্যাত্ম সত্ত্বা প্রকাশিত হয় লোকহিতার্থে।
যে অমর বিজ্ঞানসম্মত সহজ যোগ- সাধন লাহিড়ী মহাশয় আমাদের দিয়েছিলেন তা অল্পস্বল্প কেউ যদি নিষ্ঠা সহকারে পালন করেন, তাতে তাঁর মহান কল্যাণ হয় এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
গীতায় বলা হয়েছে –
নেহাভিক্রমনাশোহস্তি প্রত্যবায়ো ন বিদ্যতে।
স্বল্পমপ্যস্য ধর্ম্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ ||
এই (কর্ম্মযোগে) প্রারম্ভের নাশ নাই; প্রত্যবায় নাই; এ ধর্ম্মের অল্পতেই মহদ্ভয় হইতে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।মানসিক ও শারীরিক এবং সাংসারিক দুঃখ থেকে ত্রাণ প্রাপ্তি ঘটে। লাহিড়ী মহাশয়ের জীবনে এটিই প্রধানতম বিষয়, যে তিনি অপূর্ব স্বাদ পেয়ে কেবল নিজে ধন্য হননি, তাঁর প্রসাদে আরো বহু মানুষ ধন্য হয়েছিলেন ,পরম শান্তি লাভ করেছিলেন।
লাহিড়ী মহাশয় কোন প্রকার কৃপণতা না করে সেই মহান যোগসাধনা পরবর্তী মানুষকে দিয়ে গিয়েছিলেন ।বিজ্ঞানসম্মত এই #ক্রিয়াযোগসাধন তিনি যা জগৎকে দান করেছেন তা যে “জ্ঞান-বিজ্ঞান সহিতং” সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই এবং এর তুলনাও নেই। প্রত্যক্ষ অনুভব ,দর্শন , শ্রবণ ইত্যাদি যা যা তিনি করেছেন কোন প্রকার কৃপণতা না করে তাই তিনি আমাদের দিয়েছেন।
লিখালিখি কা বাত নহি ,দেখাদেখি কি বাত।দুলহা দুলহিন্ মিল গয়ে,ফিকি পড়ি বাত।
লেখালিখির কথা নয়, প্রত্যক্ষ অনুভবের কথা। বিয়ের সময় হাজার আতিশয্য , লোকজন , বাদ্য বাজনা থাকে । কিন্তু বরবউ বিবাহিত হয়ে একাত্মা হয়ে গেলে সকল কিছুই সাঙ্গ হয়। অর্থাৎ, সাধক যখন প্রকৃতি ও পুরুষ বা জীবাত্মা ও পরমাত্মা সহিত মিলিত হতে সমর্থ হন , তখনই ক্রিয়ার পরাবস্থায় পৌঁছান। এই অবস্থা নিজ বোধগম্য ।
গীতার বহু ব্যাখ্যা হয়েছে। দেখা যায় তা সবই বিদ্যাগত, বুদ্ধিগত , দার্শনিক তত্ত্বগত ব্যাখ্যা। কিন্তু অনুভব ব্যাখ্যা কজনই বা দিতে পেরেছেন?
#কুটস্থ_দ্বারা_গীতাকে_অনুভব_করতে_হয়।
কি অপূর্ব ব্যাখ্যা! প্রাণ জুড়িয়ে যায় । মহাভারতের ১৮ দিনের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে রথের উপর সাক্ষাৎ ভাবে উপদেশ দিয়েছিলেন । কিন্তু এই দেহ মাঝে প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তির যুদ্ধ জন্ম জন্মেও শেষ হবার নয়। শ্ৰীকৃষ্ণ তিনি তো এখনো প্রতি দেহে বর্তমান আছেন এবং চিরকাল থাকবেন । কারণ তিনি অবিনাশী। তিনি আছেন বলেই আমরা সবকিছু অনুভব করি । তিনিই এই দেহ রথের উপর বসে উপদেশ দেন ।
ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি।
ভ্রাময়ন্ সর্বভূতাদি যন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া ॥
তাই, হে জগৎবাসী সেই ঈশ্বরের শরণাগত হও। তাঁর প্রসাদে পরম শান্তি এবং শাশ্বত স্থান প্রাপ্ত হবে। কি করে সেই ঈশ্বর যিনি আমাদের মধ্যে বর্তমান রয়েছেন তাঁর শরণাগত হওয়া যায় ,কি প্রকারে মনকে তৈরি করা যায় তারই বিজ্ঞানসম্মত সাধন লাহিড়ী মহাশয় আমাদের দেখিয়েছেন। তিনি সারাজীবন গৃহস্থ আশ্রমে বাস করে আদর্শ গৃহী হয়ে সাধনার যে উচ্চস্বরে পৌঁছেছিলেন এমন আদর্শ হাজার হাজার বছরের মধ্যে দেখা যায় না।
ব্রহ্মানন্দং পরমসুখদং কেবলং জ্ঞান মুর্ত্তিং
দ্বন্দ্বাতীতিং গগনসদৃশং তত্ত্বমস্যাদিলক্ষ্যম।
একং নিত্যং বিমলমচলং সর্ব্বদা সাক্ষীভূতম
ভাবাতীতং ত্রিগুণ – রহিতং সদগুরুং তং নমামি।।
তাঁর জীবনের সকল কথা বলতে গেলে একটি বিশাল বই রচনা হয়ে যাবে। তাঁর জীবন ছিল জীবন্ত ও দীপ্যমান। ” ক্রিয়া কর এবং ক্রিয়ার পরাবস্থায় থাক”। বাহ্যবেশ পরিবর্তন , কোন প্রকার বাহ্যাড়ম্বর তিনি পছন্দ করতেন না।
পরিশেষে বলি আমার যদিও সামান্য ভাষা জ্ঞান বা লেখার অভ্যাস আছে। তবে কিনা, এসব থাকলেও , এমন সব মহাজীবন নিয়ে লেখা যায় না। এর জন্য চাই সাধন লব্ধ অনুভূতি। যা এখনো আমি প্রাপ্ত করি নাই। মা সরস্বতীর কৃপায় যদি তা কোনো দিন করতে পারি তবে এমন সব মহাজীবনকে নিয়ে না হয় গ্রন্থই রচনা করব।
#সমাপ্ত
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ পুরাণ পুরুষ যোগিরাজ শ্ৰী শ্যামাচরণ লাহিড়ী