প্রথম পর্ব
ছুটির গন্ধে গান ছড়াল
মৌমাছি ফুলবনে
শুনছে সে গান পদ্ম, শালুক
শিউলিরা একমনে।
ছুটির গন্ধ অমনি তখন
পুজোর গন্ধে মেশে
গন্ধ ছড়ায় কুমোরপাড়ায়
দুর্গা ওঠে হেসে।
ছুটির গন্ধে, পুজোর গন্ধে
ভাসল শহর-গাঁ
ছুটি -ছুটি পুজোর ছুটি
মণ্ডপে তে পা।। ( শ্যামাচরণ কর্মকার)
পুজোর গন্ধ এসেছে। গাছে গাছে ছাতিম ফুলের গন্ধ, শিউলির গন্ধ বলে দিচ্ছে পুজো আসছে। কুমোর পাড়ায় ঠাকুর গড়ার কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। মাঠে মাঠে কাশবনে, ধানের খেতে, আকাশের সাদা মেঘের ভেলায় শারদ লক্ষ্মী তাঁর আঁচল পেতে বসেছেন। ভ্রমর মধু খেতে চলেছে কিন্তু তার কাজে মন নেই, পাখির কলতানের প্রকৃতি মুখরিত। জলের পদ্ম , শালুক প্রতিদিন সূর্য ও শিশির স্নাত হয়ে হেঁসে উঠছে। ছোট থেকে বড় সবাই পড়তে পড়তে বা কাজ করতে করতে মন কেমন করে শরতের রোদ্দুর হতে চাইছে। মন কেবল বলছে এই বুঝি সিংহ মশায় তার দাড়ি নেড়ে , মহিষাসুরের পেটটা দিল ছিঁড়ে।
মা ব্রহ্মময়ীর চিন্ময়ী মূর্তি কেমন ? কোন হাতে কোন অস্ত্র থাকে? কোন দেবতা কোন অস্ত্র দিয়েছেন ? সেসব তো আমাদের সকলের জানা । যদিও সব অস্ত্রের সঠিক নাম এখনো নামতার মতো মুখস্থ করতে হয়। দেবী সূক্তে উল্লিখিত বাকের রচিত শ্লোক, চণ্ডী , দেবী ভাগবত ,কালিকা পুরাণ ইত্যাদি হতে দেবীর মা দুর্গা বা সিংহবাহিনী বা মহিষাসুরমর্দিনীর আবির্ভাবের কথা আমাদের কারুর অজানা নয়। সেই কোনো শৈশব বেলা হতে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী শুনতে শুনতে মহামায়া দশভূজা রূপটি আমাদের মনের মানুষ পটে চিত্রিত হয়ে থাকে। সেই চিরনিত্যার বিপদতারিণী চিত্রখানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চিরসঙ্গী , তিনি আমাদের স্নায়ুতে বিরাজ করেন, তিনি মাতৃরূপে আমাদের রক্তে মিশে থাকেন। অবশ্য মেকি শহুরে হুল্লোড়ে, আজকালের নানা বিভেদমূলক মানসিকতায় আজকাল সেসব ভাবার অবকাশ কোথায়?
কিন্তু কেউ , হ্যাঁ কেউ , যিনি অবসর যাপন করতে চান ইঁদুর দৌড় থেকে ….সারাদিনের কাজের ব্যস্ততার থেকে একটা মূল্যবান সময় যদি নিজেকে দিতে চান , তবে সন্ধ্যায় ছাদে, বারান্দায়, পুকুর পাড়ে, পার্কে , মাঠে, লেকের ধারে দুর্গাপুজো আসার আগে আকাশটি লক্ষ্য করবেন। দেখবেন আসন্ন পুজোর কথা ভেবে – হৃদয় মাঝে পুলক জাগবে ,চক্ষে ঘোর লাগবে, চমকিত হবেন আপনি। কয়েক মুহূর্তের জন্য আপনার মনে হতে পারে, শূন্য ব্যোমে , অন্তত ব্রহ্মান্ড মাঝে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের দৃশ্য দেখছেন।
সেই মদমত্ত বৃষের রক্ত চক্ষু ,তার মুখোমুখি বিশালাকায় এক সিংহ এবং এক নারী মূর্তি , যাঁর হস্তে রয়েছে নানান অস্ত্র।
অবাক হলেন ? একটু খুলে বলি তবে ..
পুরাণ কথা, কেবল নিছক কথা নয়। তার গভীরে রয়েছে আরো কিছু। বর্তমান Z যুগে তো মানুষ পুরাণ পাঠ তুলেই দিয়েছেন। তাঁদের পুরাণ অপেক্ষা নানা প্রকার মনোরঞ্জনকারী বস্তুতে আগ্রহ অধিক। যাঁরা পুরাণ, রামায়ণ , মহাভারত , শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ করতেন তাঁদের হয়ত কেউ আর নেই। অর্থাৎ , সেই সব কথক শ্রেণীর বংশধরগণ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অন্য বৃত্তিকে আপন করতে গিয়ে নিজের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ভুলে গেছেন।
কথকগণ যে মহান শিক্ষা গাঁ ঘর, গঞ্জে , হাটে ,মাঠে , বাজারে , কিংবা সদর নগরের মহল্লায় বিলিয়ে বেড়াতেন সে শিক্ষা সমাজ হতে লোপ পেয়েছে। কিন্তু তাঁদের স্থান অধিকার করতে পারে এমন বিকল্প ব্যবস্থা উদ্ভাবিত হয় নি। একমাত্র এই কথক শ্রেণীর অভাবে দেশ যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তুলনা নেই।
সাধারণ মানুষের বেশ কয়েকজনের ধারণা পুরাণাদি হল অলীক কাহিনী। বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক মদতপুষ্ট ঐতিহাসিকগণ পাথুরে প্রমাণের সন্ধানে পুরাণ মাত্রই অবজ্ঞা করেছেন। নবীশগণের দুই চোখের বিষ হল পুরানাদি। কিন্তু পুরাণ না পড়লে ভারতকে জানা যায় না , চেনা যায় না , বোঝা যায় না। কেবলমাত্র তাই নয় এরিক দানিকেনের মতো অনেকেই পুরাণাদির চরিত্রগুলিকে একেবারে মহাকাশচারী সভ্যতার সঙ্গে জুড়ে দেন।
“ধর্মে চ অর্থে চ কামে চ মোক্ষে চ ভরতর্ষভ।
যদিহাস্তি তদন্যত্র যন্নেহাস্তি ন তৎ ক্বচিৎ।।”
ভারতের সমাজতত্ত্ব , ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির অর্থ বুঝতে হলে বেদ , পুরান , রামায়ণ ,মহাভারত অবশ্যই অধ্যয়ন করতে হবে। এখন ধুয়া উঠেছে ভারতীয় সুপ্রাচীন যতকিছু বেদ শ্রুতি, পুরান সকলই অর্বাচীন কালে রচিত এবং পুরাণে প্রক্ষেপ ঘটেছে প্রচুর। কিন্তু এটা তাঁদের জানা উচিৎ যে , বেদ , বেদান্ত , উপনিষদ , বেদান্ত জ্যোতিষ , আয়ুর্বেদ, নানা পুরান একে অপরের পরিপূরক । এক পুরাণে যা বর্ণিত হয়েছে অপর পুরাণে তারই অনুশীলিত সুসার্থ ভাষ্য আছে। এক্ষেত্রে কাল বিচারের কোনো রূপ প্রয়োজন নেই। এখানে এটাই অবলোকন করতে হবে যে , এক পুরাণের রহস্য অন্য পুরাণে কি উৎকর্ষের সঙ্গে উদঘাটিত হয়েছে। সনাতনী সমাজের স্তরবিন্যাস ও জাতির মানসিক প্রকর্ষের পর্যালোচনায় এর উপযোগিতা শিক্ষিত সমাজের নিকট অবহেলিত হয়ে থেকে গেল। পুরাণের মধ্যে বিরোধ অপেক্ষা সমন্বয়ের , বৈচিত্র্যের মধ্যে মহান ঐক্যের চিত্রই অধিকতর বিকাশলাভ করেছে।
১৯৬৫ সাল , একটি কথা বলে চমক লাগিয়ে দিলেন এক বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ্ । উইলি হার্টনার তাঁর নাম। তিনি তখন ফ্রাঙ্কর্ফুটের বিজ্ঞানের ইতিহাসের গবেষণা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি সেই বৎসর জার্নাল অব নিয়ার ইস্টার্ন স্টাডিজে এক যুগান্তকারী প্রবন্ধ লিখলেন। সেই প্রবন্ধে মেসোপটেমিয়া , পারস্য হয়ে সম্পূর্ণ প্রাচ্যের এক সুবিশাল অঞ্চলের আকাশে প্রাপ্ত এক অজাগতিক ছবির উল্লেখ করেন। সেই ছবিটি হল একটি সিংহের সঙ্গে এক মহিষের যুদ্ধ। সুমের অঞ্চলে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্ব্বাব্দ নাগাদ নির্মিত বহু সিলমোহর এবং পাত্র প্রাপ্ত হয়েছে , সেসবের অধিকাংশতেই দেখা যায় এমন একটি ছবির চিত্রিত বা খোদিত থাকতে, একটি বিশাল সিংহের নিকট ওকে বিশাল মহিষের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু মেসপাটেমিয়া সভ্যতার নানা লেখায় , বিশেষ করে মেসপাটেমিয়ার মহাকাব্য গিলগামেশে যুদ্ধের দেবীর ইতেস্তার বা ইস্তারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে এবং তাঁর বাহন হলেন সিংহ , একটি নয় দুটি।
একটি সুবিশাল সিংহ একটি বিশাল মহিষ হত্যা করছে, এমন চিত্র কেবল সুমার নয় পারস্যেরও প্রাচীন রাজধানী পার্সিপোলিসের প্রাসাদের প্রাচীর গাত্রে দেখতে পাওয়া যায়। এই প্রাসাদ সুমেরীয়, আক্কাদীয়, ব্যাবিলনীয়, আসিরীয়— একের পর এক সভ্যতা আর সাম্রাজ্যের উত্থান এবং পতনের অনেক পরে, প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব্বাব্দে।
এই বহুল প্রচলিত ছবির উৎস নিয়ে নানান ধরনের ইতিহাসবিদদের মধ্যে অনেক অনেক বছর ধরে প্রচুর জল্পনা কল্পনা চলছিল। কিন্তু কেউই বুঝে উঠতে পারেন নি। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৬৫ সালে , হার্টনারের প্রবন্ধ এক নতুন ধরনের ভাবনার সঞ্চার করে।
সেই প্রবন্ধে হার্টনার বলেন , ছবির সিংহ এবং মহিষ হল আকাশের দুই তারকা মন্ডলী সিংহ এবং বৃষ। সেই কোনো সুপ্রাচীন কালেই আমাদের মুনি ঋষিরা পূর্ণিমার পরদিন থেকে আরেক এক পূর্ণিমা অবধি মাস গণনা করতেন। সৌর হিসাব ও চান্দ্র হিসাব মিলিয়ে সে গণনা। মাস ছিল ৩০ দিনের আর ৩৬০ দিনে হত বৎসর। এজন্য কখনো কখনো এক মাস বেশি ধরে অধিবাসের ব্যবস্থা ছিল । কিন্তু চন্দ্রের পরিক্রমণে অভাব ছিল শৃংখলার । তাই নক্ষত্রে তিথির হিসেবে চন্দ্রের ভোগকালের ২৭ নক্ষত্রের চেয়েও বেশি জরুরি ছিল রাশি গণনা। কেন না সৌর দিবসের হিসেব না রাখলে সবকিছুই গোলমাল । একমাত্র পঞ্জিকা ছাড়া বিশুদ্ধ জ্যোতির্বিজ্ঞানে তিথির কোন গুরুত্ব নেই । তাই প্রাচীন পণ্ডিতগণ আকাশের বুকে কল্পনা করেন ১২ রাশির নিয়ে একটি চক্র । একে আমরা বলি রাশিচক্র।
খালি চোখে আমরা দেখি সূর্যের আকাশ পরিক্রমা। এই চলন কিন্তু কোন সরলরেখা ধরে নয়। সূর্য কখনো দক্ষিণ দিক ঘেঁষে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে পৌঁছানোর পর আবার উত্তরমুখী হয় । তখন দেখা যায় সূর্য চলছে উত্তর দিকে ধরে। উত্তর ও দক্ষিণে নির্দিষ্ট স্থানের মধ্যস্থল বৃত্তাকার ১৬ ডিগ্রি পরিমিত। বলয়াকৃতি এই স্থানকে রাশি দ্বারা চিহ্নিত করা হয় । প্রাচীন ভারতের ঋষিগণ এই বলয়পথের দিয়েছিলেন #বৈশ্বানর_পথ বা #রবিমার্গ ।অর্থাৎ সূর্যের চলন পথ । আর বর্তমান জ্যোতির্বিজ্ঞানে এর নাম #ক্রান্তিবৃত্ত।
এই ক্রান্তিবৃত্ত কে প্রাচীনকাল থেকে ১২ ভাগে ভাগ করা হয়। ১২ ভাগ অর্থাৎ ১২ রাশি। সূর্য প্রতিমাসে একটি রাশি কে অতিক্রম করে । বছরে বারো রাশি অতিক্রম করতে সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা ৯ মিনিট ৯.৫ সেকেন্ড।
১২ রাশি অর্থাৎ ১২ তারকা মন্ডল । সুদূর প্রাচীনকাল থেকে মণ্ডল গুলি কে চিহ্নিত করা হয় কোনো পার্থিব জীব বা বস্তুর নামে । কেন না কোন মন্ডল দেখতে মেষ বা বৃষের মতো হয় । ১২ মন্ডলের নাম তাই যথাক্রমে মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট , সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর , কুম্ভ, মীন।
আকাশের বুকের মধ্যে হিরের মতো জ্বলা তারা গুলির সমষ্টিকে রেখা দ্বারা যুক্ত করে এক একটি জীব বা বস্তু বা অবয়ব পায়। সূর্য এই রাশি বা তারকা পুঞ্জ পেরিয়ে বারো মাস পরে পুনশ্চঃ ফিরে আসে প্রথম পুঞ্জে বা মন্ডলে।
প্রতিটি মন্ডলের উজ্জ্বল নক্ষত্রটির নামে বারোটি মাসের নামও ঠিক করেন প্রাচীন পন্ডিতগণ । এ প্রসঙ্গে একটি কথা খুবই জরুরি। বৈদিক যুগে মাস সব সময় থাকত চান্দ্র বা চন্দ্র কেন্দ্রিক । কিন্তু বছরটি থাকতো সৌর ।পূর্ণিমান্ত মাস গণনাই প্রচলিত ছিল । অর্থাৎ পূর্ণিমা থেকে নতুন মাসের সূচনা হত।
যে নক্ষত্রের অবস্থান কালে চন্দ্রের পূর্ণিমা সেই নক্ষত্রের নাম অনুসারে গড়ে উঠত মাসের নাম । যেমন- বিশাখা নক্ষত্রের পূর্ণিমা হলে বৈশাখ ।সূর্য তখন মেষ রাশিতে অবস্থান করে। তেমনি সূর্যের বৃষ রাশিতে অবস্থান কালে চন্দ্র জ্যেষ্ঠা নক্ষত্র গেলে পূর্ণিমা হবে । তাই জ্যৈষ্ঠা থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের নাম। এইভাবেই পূর্বষাঢ়া থেকে আষাঢ়, শ্রবণা থেকে শ্রাবণ , অশ্বিনী থেকে আশ্বিন, মঘা থেকে মাঘ ইত্যাদি।
কিন্তু সূর্যের উপস্থিত কালে এই নক্ষত্রগুলোকে খালি চোখে দেখা যায় না আকাশে । তাহলে প্রাচীনকালে কিভাবে রাশিচক্র নির্ণীত হল ? আসলে চন্দ্রের ভ্রমণপথে এইসব নক্ষত্রের অবস্থান । তাই চাঁদের পরিক্রমন সূত্রে তাঁদের এই আবিষ্কার। কামিনীকুমার মহাশয় এই নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন । একে তিনি ” মাস , দিন, সময় নির্দেশক চিরস্থায়ী তারা ঘড়ি” নাম দিয়েছেন।
বৃষ তারামন্ডলীর সবথেকে উজ্জ্বল তারার নাম হল রোহিনী। খুব পরিষ্কার আকাশে এই নক্ষত্রকে আমরা লাল রঙের দেখি। দূর থেকে রোহিনীকে যেন উন্মত্ত বৃষের রক্ত চক্ষু বলে মনে হবে।
হার্টনারের এই বক্তব্য অনেকের নিকট নতুন মনে হয়েছিল। অনেকে বিরোধিতাও করে প্রাচীন পন্থী ইত্যাদি বলে। তবে , হার্টনারের পূর্বে প্রায় এমন কথা বলেন একজন। সেই প্রসঙ্গটি একটু ভিন্ন হলেও আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। একটু সংক্ষেপে সেই ঘটনা বলি –
রোমান পুরাণের এক শক্তিশালী দেবতা ” মিথ্র ” । আমাদের ভারতীয় বিভিন্ন ধ্রুপদী ভাষায় যা উচ্চারিত হয় ” মিত্র ” । মিত্র অর্থাৎ ভগবান সূর্য নারায়ণ , মিত্র অর্থাৎ বন্ধু। সুমারীয়াদি বিভিন্ন সভ্যতায় মিথ্র অর্থেও ছিল সূর্য এবং বন্ধু। মিহির শব্দটিও ক্রমে ঐসকল অঞ্চলে অপভ্ৰংশ হয়ে হয়েছিল মেহের। মেহের অর্থাৎ আলো বা সূর্য। ভগবান সূর্য নারায়ণের উপাসনা বহু প্রাচীন এবং সনাতনী প্রথা। সমগ্র পৃথিবীতে তিনি নানাভাবে , নানানামে উপাসিত হতেন এবং এখনো হন। তাঁরই নামে রবিবার সূর্য উপাসনার দিন, ইতু ব্রতে তাই রবিবার করেও ঘটে জল দিয়ে পূজা করতে হয়। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ্ আর্নল্ড টয়েনারের এবিষয়ে একটি সুন্দর প্রবন্ধ আছে। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে সূর্য উপাসনা, সূর্যকে বিশ্বাস করে থাকেন নিজের জান্তে বা অজান্তে।
যাহোক , আপনারা ভাবছেন একি বলছিলাম মা দুর্গার কথা , তাপ্পর কি না বললাম আকাশের রাশি চক্রের কথা , তাও না হয় বুঝলাম , তাপ্পর কিনা বলছি সুয্যি ঠাকুরের কথা ? কি মুশকিল ? আরে মুশকিল কিছু নেই….মহামায়া মহাকালী মহাবিদ্যা মহালক্ষ্মী ব্রহ্মময়ী মা তিনিই তো অনন্ত মহাশূন্যের অধিকারিণী।
সেই জন্যই বেদের বাক সূক্ত বা দেবী সূক্তে বলা হয়েছে –
অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসুনাম চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম।
তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা ভূরিস্থাত্রাং ভূর্য্যাবেশয়ন্তীম্।
অর্থাৎ , আমি জগতের ঈশ্বরী, ধনপ্রদায়িনী। ব্রহ্মকে জ্ঞাতা আমার আমিই যাঁদের জন্য যজ্ঞ করা হয় তাদের মধ্যে প্রথমা। বহুরূপে সর্বভূতে প্রবিষ্টা সেই আমাকে বহুস্থানে বা সর্বদেশে আরাধনা করা হয়।
#ক্রমশঃ
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ ১. আকাশের তারায় মহিষাসুরমর্দিনী
২. লোকায়ত রাঢ় বঙ্গ
৩. বিজ্ঞান চর্চায় প্রাচীন ভারত ও সমকালীন অন্যান্য দেশ
৪. ঋগ্বেদ সংহিতা
৫. শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা
৬. বঙ্গাব্দ