দেশভাগের পঁচাত্তর বছরে কোথায় দাড়িয়ে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ: শ্রুতি এবং সত্য

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের পৃথিবীতে আর্থিক শক্তি একটি দেশের মূল শক্তি l তুলনামূলকভাবে গৌণ সামরিক শক্তি l তাঁর সবচেয়ে বড় প্রমান রেখে গেছে ঠান্ডা লড়াইয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার পরাজয় l সিঙ্গাপুর পাকিস্থানের চেয়ে অনেক ছোট দেশ l কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে প্রতিরক্ষা সবকিছুতেই সিঙ্গাপুরের কথা অনেকবেশী গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয় l মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটকের কথার গুরুত্ব দিল্লিতে অনেক বেশী কারণ তাঁদের হাতে পয়সা আছে l ইহুদিদের কেশগ্র স্পর্শ করার ক্ষমতা এক ডজন মুসলিম দেশের কারো নেই, কারণ তাঁদের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি l আর ঠিক সেই কারণেই আজকের বাংলাদেশ শিল্প, ব্যাবসা এবং অর্থশক্তিতে এমন এক জায়গায় নিজেকে নিয়ে গেছে যে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও এতো বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সংখ্যালঘু হত্যার পরেও, বাংলাদেশকে আজ কোনঠাসা করার আগে দশবার ভাবতে হচ্ছে আমাদের ভারতকে l ভৌগলিকভাবে তিন দিক থেকে ঘিরে রাখার পরেও l সেই ভারত যে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থশক্তি এবং চতুর্থ বৃহত্তম সামরিক শক্তি l এর মূল কারণ তাঁদের অর্থনীতি এবং বাণিজ্যে সাফল্য l বাংলাদেশীরা ডাক্তার দেখাতে হয়তো কলকাতার বেসরকারী হাসপাতালে লাইন দিতে পারে, কিন্তু শিল্প, বাণিজ্য এবং অর্থনীতির ধারণা তাঁদের স্পষ্ট l অমর্ত্য সেন বা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়রা বাংলাদেশের উন্নতিকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে যদিও প্রমান করার চেষ্টা করেন, যে ভারতের অর্থনীতি ভুল পথে চলছে, কিন্তু সত্যটা হল বাংলাদেশ সরকার এবং তাঁদের কর্পোরেট যে অর্থব্যাবস্থাকে অনুসরণ করেন, তা অমর্ত্যবাবু বা অভিজিৎবাবুদের দর্শনের সম্পূর্ণ বিপরীত এবং এককথায় বিশুদ্ধ মুক্তবাজার অর্থনীতি l এমনকি, কোভিড অতিমারীর সময় তারা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা অভিজিৎ বাবুর তত্বের সম্পূর্ণ বিরোধী l বরং তাঁর মিল পাওয়া যায় নির্মলাজি এবং শক্তিদাসের প্যাকেজের সঙ্গে l এবং যে সত্যটা স্বীকার করে নিতে আমাদের কোন দ্বিধা থাকা উচিৎ না, সেটা হল হাসিনা ম্যাডাম এই রাস্তায় আরও কিছু ধাপ এগিয়েই ছিলেন l এককথায়, দক্ষিণপন্থী অর্থনীতিকে হাতিয়ার করে, বাংলাদেশের গত পাঁচ দশকের সাফল্যকে একমাত্র রূপকথার সঙ্গে তুলনা করা যায় l 

দুই বাংলাভাষী ভূখণ্ডের অর্থদর্শনের তুলনা করতে গেলে প্রথমেই একটা ঘটনার উল্লেখ করতেই হয় l আজ থেকে প্রায় আড়াই দশক আগের আনন্দবাজারের একটা খবর l বাংলাদেশের নোবেল লরিয়েট ব্যাংকার এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক ডঃ ইউনিস পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের সঙ্গে দেখা করতে এলেন এবং অসীম বাবু বললেন, তিনি বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংককে কাজ করতে দেবেন যদি সরকারের হাতে  51% শেয়ার থাকে l ডঃ ইউনিস বললেন সরকারের হাতে 1% শেয়ার থাকলেও চলবে না l ডঃ দাশগুপ্ত বললেন 49%, মানলেন না ডঃ ইউনিস l নামতে নামতে 10% এ আসেন ডঃ দাশগুপ্ত l ডঃ ইউনিস রাজি হলেন না l সম্পূর্ণ বেসরকারী না হলে ওই সংস্থার পক্ষে কাজ করা অসম্ভব l পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হল না গ্রামীণ ব্যাংক l 2021 পর্যন্ত অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী কৃষি যোজনার টাকা না পাওয়া পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের মূলধনের জন্য মহাজনের করুনাপ্রার্থী হয়ে থাকতে হত l আমাদের রাজ্যের হাজার হাজার একর জমি চাষ হচ্ছে না মূলধনের অভাব, সেচের জলের অভাব এবং অসংগঠিত বাজারের জন্য l আর বাংলাদেশ আজ কৃষি, পশুপালন, উদ্যানপালন, মৎসচাষ থেকে কোটি কোটি ডলার বিদেশী মুদ্রা আয় করছে l শুধুমাত্র মানসিকতার পার্থক্য আজ দুই ভূখণ্ডের কৃষকদের জীবন ও জীবিকার পার্থক্য এনে দিয়েছে l

আমার এই নিবন্ধ দুটি ভাগে ভাগ করছি বোঝার সুবিধার জন্য l প্রথম ত্রিশ বছর, অর্থাৎ দেশভাগ থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যা বাংলাদেশে এবং জ্যোতিবাবুর ক্ষমতা দখল পশ্চিমবঙ্গে l দ্বিতীয়টি আটের দশক থেকে আজ পর্যন্ত l 

 দেশভাগের সময় কলকাতা নিয়ে প্যাটেল এবং জিন্নার মধ্যে দড়ি টানাটানি চলে বহুদিন l প্যাটেলকে সমর্থন করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীরা l জিন্নার পাশে সুরাবর্দি, ফজলুল হক, মুজিব l কলকাতা তখন দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী l কলকাতা শেষে অন্তর্ভুক্ত হল ভারতে l সেই কলকাতাকে কিভাবে দিল্লি, মুম্বাই তো বটেই ঢাকাও ছাড়িয়ে চলে গেছে গত পচাত্তর বছরে, তা একটা বড় গবেষণার বিষয় l 

  1947 এ হিন্দু অধ্যুসিত পশ্চিমবঙ্গ আসে ভারতবর্ষে এবং পূর্ববঙ্গ যায় পাকিস্তানে l প্রথম তিন দশক ভারতের সব কিছু ভালো জিনিস প্রথমে দেয়া হয় পশ্চিমবঙ্গকে এবং সব রকমের অবহেলা, বঞ্চনা, অত্যাচারের স্বীকার হয় পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তান l ভারত সরকার দেশের প্রথম IIT, প্রথম ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট IISWBM, প্রথম ISI, প্রথম IIM, বেশ কটি বড় নগরী তথা হলদিয়া, সল্টলেক, দুর্গাপুর, কল্যানী, খড়্গপুর এবং শিলিগুড়ি দেয় পশ্চিমবঙ্গকে l এছাড়া দেশের সবুজ বিপ্লব আসার দশ বছর আগে তিনটি বড় সেচ প্রকল্পে খরচ করে ভারত সরকার l দুইবার আন্তর্জাতিক আইন ভাঙে ভারত সরকার, পশ্চিমবঙ্গকে সেচ এবং জলপথ বাঁচানোর জল এনে দেবার জন্য l দুবারই লাভ পশ্চিমবঙ্গের এবং ক্ষতি পূর্ববঙ্গের অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশের l প্রথমটি ফারাক্কা, দ্বিতীয়টি, তিস্তা l 1991 তে দেশে উদার অর্থনীতি এলে গুরগাঁও এবং নভি মুম্বাইএর সংগে নিউটাউন দেয় ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গকে l দেশের প্রথম মেট্রো রেল, প্রথম কেবল ব্রিজ পশ্চিমবঙ্গ l চারটি বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প l একেবারেই জামাই আদর l

অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছিল দুয়োরানীর মত l পূর্বপাকিস্তান থেকে আয় করা টাকা নিয়ে যাওয়া হত পশ্চিম পাকিস্তানে l ইসলামাবাদে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত ব্যাবহার করা হত বাংলাভাষীদের l প্রশাসন, বিচারব্যাবস্থা, সেনাবাহিনী থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা, সব ক্ষেত্রেই তাঁরা ব্রাত্য l তাঁরা কাজ করতো, ফল পেত পশ্চিম পাকিস্তান l তারপর শুরু অত্যাচার l সেই সময় ঠান্ডা লড়াই চলছিল এবং আমেরিকা এই অত্যাচারকে প্রচ্ছন্ন মদত করছিল l হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশের কোন ভবিষ্যৎ নেই l এবার পূর্ব পাকিস্তানের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সোভিয়েত রাশিয়ার সাহায্য নিলেন  l সোভিয়েত সহযোগিতায় ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীন করে দিলেন তাদের দেশ l এরপরেও ওই দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কমেনি l মুজিব হত্যা, জিয়াউল রহমান হত্যা, এরশাদ সাহেবের একনায়কতন্ত্র চলল আরও প্রায় দেড় দশকের বেশী  l

আর ঠিক এই সময় পশ্চিমবঙ্গ নিজের মাতৃভূমিকে মার্ক্সবাদ প্রমানের পরীক্ষাগার আর বাঙালীকে গিনিপিগ বানিয়ে জনগনতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা শুরু করলো জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে l স্বাধীনতার ঠিক পরেই বীমা জাতীয়করণে বাঙালী হারালো তাঁদের মূল ব্যাবস্থা ও পুঁজি l তারপর অতি উৎসাহে বাঙালী ইন্দিরা গান্ধীকে সমর্থন করা শুরু করল  বিদেশী পুঁজি তাড়ানোর জন্য, একেবারে কালিদাসের মত l বিদেশী কোম্পানিগুলি অযোগ্য এবং অসৎ দেশী ব্যবসায়ীদের হাতে পড়তেই কাজের পরিবেশ রাতারাতি খারাপ হল (চৌরঙ্গী)l খারাপ  হল ব্যাবসার পরিবেশ l ব্রিটিশ কোম্পানি চলে যেতেই বাড়লো কর্পোরেট দুর্নীতি ( জন অরণ্য ) এবং ছোট ব্যাবসায়ীদের পেমেন্ট না করে ভিখারী বানিয়ে দেয়া হয়ে গেল রোজের গল্প l বাঙালী ব্যাবসা ছেড়ে চাকরির পিছনে দৌঁড়াতে থাকলো l শুরু হল ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন l কাজের পরিবেশ তলানিতে ঠেকলো l বাঙালী লাখে লাখে রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে যাওয়া শুরু করলো l শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা ভেঙে পড়তে থাকল l সেই ইতিহাস আমরা সবাই জানি l আজকের দিনে 500 টাকার জন্য বাঙালী এভাবে লাইনে দাড়াবে, সম্ভবতঃ সেটা প্যাটেল বা শ্যামাপ্রসাদ ভাবতেই পারেন নি l  যে ভারত সরকার প্রথম IIT এবং প্রথম IIM এই পশ্চিমবঙ্গকে দিয়েছিল এই ভেবে যে দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের মূল গন্তব্য হবে এই রাজ্যে, সেখানে আজ এমন কোন শিল্প বা বাণিজ্য অফিস নেই যা IIT বা IIM থেকে পাশ করা অন্ততঃ 1%  ছেলেমেয়েদেরও চাকরি দিতে পারে l হ্যাঁ l কোন কোন বছর এমন গেছে যখন  IIT খড়্গপুর ও IIM কলকাতার 1% ছেলেমেয়েও এই রাজ্যে চাকরি পায় নি l

আর বাংলাদেশ? প্রথমেই বলেছি, রূপকথার মত সাফল্য l

যে বাংলাদেশকে একসময় পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশ হিসেবে গণ্য করা হত, আজ তা পরিশ্রমী বণিকদের দেশ হিসেবে গন্য হয় l কৃষি, পরিষেবা এবং উৎপাদন সব ক্ষেত্রেই উৎকর্ষ আকাশ ছুঁয়েছে এবং বাংলাদেশ ছুঁয়েছে বিশ্বের প্রায় সব বাজার l পঞ্চাশ বছরে তাদের দেশের আয় বেড়েছে 271 গুন l বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব নীতি (fiscal policy ) এবং মুদ্রা নীতি (Monitory Policy ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি শিক্ষার উৎকৃষ্ট মানের পরিচয় দেয় l সরকার প্রথম থেকেই বেসরকারী এবং বিদেশী বিনিয়োগ বাড়িয়ে রফতানি বাড়িয়ে দেশের দারিদ্র দূরীকরণে জোর দিয়েছে, যে ব্যাপারে এখনো ছুঁৎমার্গ কাটেনি কলকাতা বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের l বাংলাদেশের গড় আয় এখন ভারতের থেকেও বেশী l 1971 এ কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবা থেকে ওই দেশের আয়ের পরিমান ছিল 50%, 13% এবং 37%, যেখানে আজ 13.3%, 51.3% এবং 37% l RMG অর্থাৎ বস্ত্রশিল্প তাদের মূল আয়ের উৎস, যেখানে 45 লক্ষ মানুষ কাজ করেন l এছাড়া ফার্মা, চর্ম, জাহাজ, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরন, কেমিকাল এবং সার সারা পৃথিবীতে রফতানি করে বাংলাদেশ l এর কারণ ব্যাপক আর্থিক সংস্কার, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ও শুল্ক নীতি, শিল্প নীতি, রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রা নীতি l 1971 থেকে আজ রফতানি বেড়েছে 100 গুন l সেচের উন্নতি কৃষি উৎপাদন বাড়িয়েছে বহুগুণ, আর এখানে 1977 এর পর পশ্চিমবঙ্গে প্রায় একটুও এগোয় নি l মোদীজি যে কৃষি নীতি এনে আজ বিরোধীতার সম্মুখীন, আজ থেকে দুই দশক আগেই ওই দেশে লাগু হয়েছে এবং কৃষি রফতানি করে তারা তার ফলও পেয়েছে l বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা থেকে ওদের আয় 1970 এ $339 মিলিয়ান থেকে 2020 তে 21.7 বিলিয়ন হয়েছে l পশ্চিমবঙ্গেরও বহু মানুষ বিদেশে আছেন, কিন্তু তারা আর দেশে ফেরার কথা ভাবেন না এবং অধিকাংশই বাড়িতে টাকা পাঠান না l প্রসঙ্গত, এখানে সামাজিক শিক্ষা একটা বড় কাজ করেছে ওখানে এবং বস্তুবাদ এই বাংলার সামাজিক বন্ধনই ভেঙে দিয়েছে l এই পঞ্চাশ বছরে দারিদ্র 80% থেকে নেমে 22% এ দাঁড়িয়েছে এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার 3% থেকে কমে 1.1% এ দাঁড়িয়েছে l

বন্দর, সড়ক, বিমানবন্দর, মেট্রো রেল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, রেল পথ, জলপথ ইত্যাদি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক, এশিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, AIIB, JICA সেই দেশে এতো বিনিয়োগ করছে, অনেকের মতে বাংলাদেশ 2030 এ জাপান বা সিঙ্গাপুরের সঙ্গে পাল্লা দেবে l 

তাহলে পশ্চিমবঙ্গের জানাবিন্যাসে বাংলাদেশীদের অনুপ্রবেশ কি গ্রহণযোগ্য যুক্তি? না l একেবারেই না l কিছু হয়তো হয় l কিন্তু সেটা জনবিন্যাস পরিবর্তনের যথেষ্ট কারণ নয় l পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার মূল কারণ হিন্দু বাঙালীদের জন্য প্রয়োজনীয় কাজের সুযোগের অভাব l কৃষি এবং পরিষেবা এখানে মূল কর্মসংস্থানের জায়গা হতে পারে এবং উৎপাদনধর্মী শিল্প নয় l সিঙ্গুর থেকে টাটার বিদায় তাই বাঙালীর মনে আজও ছাপ ফেলেনি l ভূমি সংস্কারে জমি হারিয়েছে হিন্দু বাঙালী l সেচের অভাব এবং অসংগঠিত বাজার ভেঙে দিয়েছে কৃষি ব্যাবস্থা l পরিষেবা শিল্পে কাজ করতে শহরের বাঙালী পাড়ি দিচ্ছে ব্যাঙ্গালোর থেকে ক্যালিফর্নিয়া l কিন্তু মুসলিম বাঙালীরা, যারা ভূমি সংস্কারে সবচেয়ে বেশী লাভবান, তাঁরা দাঁত কামড়ে পড়ে আছে l তার উপর লটারি পাওয়ার মত 10% ওবিসি কোটা l

শেষে বলি, বাংলাদেশীরা একসময় যে এই রাজ্যে এসেছেন, তা ঠিক l কিন্তু আজকের দিনে তাঁদের দলে দলে এখানে আসার কোন প্রয়োজন নেই l আমাদের নিজেদের পায়ের মাটি শক্ত করতে হবে l পরিকাঠামো ( রেল, মেট্রো, সড়ক, বন্দর, বিমানবন্দর, উন্নত ইন্টারনেট পরিষেবা ) এবং পরিষেবা শিল্পে জোর দিতে হবে l কিন্তু প্রথম ধাপ হল মাথা থেকে মার্ক্সিয় অর্থনীতির ভূত নামানো এবং আর্থিক সংস্কার l যেটা বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরা থেকে গুজরাট সবাই করেছে l নইলে, লেখাপড়া জানা মধ্যবিত্ত বাঙালী আরও বেশী করে রাজ্য ছাড়বে l দোষ আমাদের সরকারের ভুল দর্শনের অথচ দোষ দেব আমরা প্রতিবেশী দেশকে, এটা হতে পারে না l তার থেকেও বড় সমস্যা, যত এই বৈষম্য বাড়বে তাতো বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা খারাপ হবে l আজ যখন এই নিবন্ধ লিখছি, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিধন দশ  দিনে পড়েছে l কিন্তু ওদের উপর কোন চাপ আন্তর্জাতিক মহল থেকে এখনো আসেনি l অথচ, পাকিস্তান হলে হয়তো ভারতবর্ষ এর মধ্যেই শক্ত পদক্ষেপ নিত l আগামীদিনে, বৈষম্য যদি কমিয়ে কলকাতা বন্দর যদি কাল চট্টগ্রাম বন্দরের সমান ব্যাবসা করতে পারে, আন্তর্জাতিক দুনিয়া হিন্দু বাঙালীর কথাও শুনবে l নইলে অবস্থার পরিবর্তন অসম্ভব l 

সুদীপ্ত গুহ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.