জয় বাংলা স্লোগানের অন্দরমহল @কচ

বাংলাপক্ষ, উর্দূপক্ষ/সুবে রাজ্যে দু’টি পক্ষ/ খুশির সীমা নাই/মন তাই/ আনচান আনচান আনচান করে ভাই……
ইদানীং ‘জয় বাংলা’ একটি পাকা মাথার স্লোগান, ধার করা হয়েছে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে। একটা ধারাবাহিক প্রচেষ্টা হয়েছে মুজিবর রহমানকে সর্বকালের সেরা বাঙালি দেখানোর জন্য। কেন? তার অনুসন্ধান জরুরি। মুজিবর সম্পর্কে যারা খোঁজ খবর রাখেন, তারা বলতে পারবেন, ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের বাংলায় প্রদত্ত অভিভাষণের সময় তিনি কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন। যাইহোক, আমরা শেষটুকুই খালি মনে রাখি। সবটুকুই মনে থাকা উচিত। তবে কোনো কৃতবিদ্য মানুষকে পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে আমার কোনো ছুঁতমার্গ নেই। কিন্তু কাউকে মর্যাদার অতিরিক্ত পরিবেশনের মধ্যে আমি বরাবরই সন্দেহ পোষণ করি। কারণ যুগটা কলিযুগ।

এই মুহূর্তে ‘জয় বাংলা’-র কথা ব্যস্ত-সাব্যস্ত হয়ে বলা মানেই ‘সুবে বাংলা’-র পৃষ্ঠপোষকতা করা, মনে করছেন তথ্যভিজ্ঞ মহল। ‘সুবে বাংলা’ কী; তার সংজ্ঞা-স্বরূপ-বৈশিষ্ট্য এবং তাৎপর্য কী তা অনুভবের বিষয়, সেটাও তথ্যভিজ্ঞ মহলেরই মতামত।

আমি বলবো, ‘মহাভারতের বঙ্গ/ অমৃতসমান’। অর্থাৎ ‘ভারত’ বা সমগ্র ভারত বা মহাভারত বাদ দিয়ে ‘বঙ্গ’ হতেই পারে না, হওয়া সম্ভবও নয়, ‘বাংলা’ তো নয়ই। রূপে-তাৎপর্যে ‘বঙ্গ’ আর ‘বাংলা’ এক ও অভিন্ন নয়। একটি কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস, অপরটি স্বাধীনতাহীনতায় কয়েকশো বছর আগের কথা।

ভারতরাষ্ট্রের অঙ্গ হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ না থাকলে সুবে বাংলাই ভবিতব্য হতো। বাঙ্গালিকে সমগ্র ভারতীয় জাতির সঙ্গে সমন্বিত ভাবে তাই থাকতে হবে।

নিকট অতীতে অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাঙালি তা পারে নি। ভারতীয় হয়ে বাঙালির থাকা উচিত ছিল। তারজন্য কি সিপিএম, কংগ্রেস নিজেরাই দায়ী নয়? দলের প্রসঙ্গ টানলাম এই জন্যে, জয় বাংলার রাজনীতিবেত্তারা বলছে, গুটকাখোর বিজেপি এ রাজ্যের ভাষা ও সংস্কৃতির বিরোধী। তারা বলে, বাঙালিত্বকে প্রতিষ্ঠা দিতে চায় না বিজেপি। কিন্তু বলুন দেখি —

১. জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী না করার প্ল্যান কি বিজেপির?
প্রণব মুখার্জির প্রধানমন্ত্রিত্ব ঠেকিয়েছিল কি বিজেপি?
২. মিছিমিছি কেন্দ্র বিরোধিতা করে, রাজ্যের প্রগতি বন্ধ করার দীর্ঘ বাম জামানা কী ছিলো না?
৩. তৃণমূল শাসনে একই বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটেনি কী রাজ্যের শাসকদল?

এইসব করে কী রাজ্যের উন্নতি হয়েছে? বাংলার নাম করে কেন্দ্রের বিরোধিতা করা একটি বহু পুরাতন ও ক্ষয়িষ্ণু রাজনীতি। যে মানুষটি এটি বুঝতে ব্যর্থ, তার স্কুলে যাওয়াই বৃথা! শাসনপাট দখলে রাখার জন্য কেন্দ্রের বিরোধিতা করা রাজ্যের রাজনীতিবেত্তাদের স্বভাব। ওদের স্বভাবগত ইতিহাস ভুলিয়ে আবার নতুন করে রাষ্ট্রবাদী শাসকদলের বিরুদ্ধে যেতে হবে, তাই এইসব প্রোপাগাণ্ডার আয়োজন।

পাশের রাজ্যগুলি কিন্তু বাস্তবতা বুঝে নিজের নিজের রাজ্যের উন্নতি করে নিয়েছে। আমরা কেন্দ্র-রাজ্য করেছি। আর আঙুল চুষছি। এখন বাংলা-হিন্দির রাজনীতি করছি। নিজেরা অন্য রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হচ্ছি। আর নিউইয়র্ক/লন্ডনে পালিয়ে যাচ্ছি।

এবার রাষ্ট্রবাদী সরকার না এলে বাঙালি হিন্দু কিন্তু শেষ হতে বেশি সময় নেবে না। কখন বাঙালি-আবেগ আমাদের ভর করা কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয়, তার সময় সংকল্প থাকে। দেশ বিরোধী শক্তির পরাক্রম দেখানোর সময়ে যে সেটা নয়, কে বোঝাবে তাকে!
এটাও তো দেখার বাকি আছে, রাজ্যে বিজেপি সরকার এলে বঙ্গবিদ্যাচর্চা নিয়ে কী কী ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়! রাজ্য বিজেপি ও তাদের নানান শাখা বঙ্গবিদ্যা নিয়ে যথেষ্ট অনুরাগ পোষণ করে থাকে, পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়া তা প্রচারে আনে না। কেবল বলে, বিজেপি দলটাই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিরোধী।

মূর্খ মানুষ বলে যাদের ওরা জানে, তারা আজ সিদ্ধান্ত-সবল বলেই জয় বাংলার কথা ধার করতে হচ্ছে। মনে রাখতে হবে ‘জয় বাংলা’ একটা রোগেরও নাম। অসৎ সঙ্গে থেকে সৎ-চোখের ভ্রমদৃষ্টির নাম জয় বাংলা রোগ। ওই রোগ তাড়াতে মহাভারতের পুষ্টিরস ড্রপারে করে দিতে হবে। ইতিহাস আশ্রিত মহাকাব্য পড়তে হবে।

নিরক্ষর মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন কাকে এ রাজ্যে এবার আনতে হবে। ওরাই সভ্যতার পিলসুজ। বাঙালি হিন্দু যেন আত্মহননের পথে এখন না যান। শৃঙ্খলা, বাঙালির শৃঙ্খলার বড্ড অভাব। কথায় বলে “তিনটি বাঙালি দুটি কালীপুজো।” উশৃংখল বলেই ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাঙালি রাজনৈতিক কর্মীরা তার অন্য দলের ভাইদের ধরে ধরে হত্যা করেছিল। ভারতের অন্য কোনো রাজ্যে নির্বাচনে এত সহিংসতার ঘটনা ঘটে না। এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলি কারা করছে?
বাঙালি হিন্দুর ভোট বড় বালাই, তাই যাদবপুরের স্বামীজির মূর্তি বিরোধী বামপন্থী সংগঠনগুলি আজ ‘স্বামীজি’ ‘স্বামীজি’ করছে। এটা কী তাদের অন্তরের কথা! শ্রী চৈতন্যদেব, স্বামীজি যদি এতই বড় প্রেরণা, তো একটি এমন কমিউনিস্ট দল হল না কেন, যার নাম ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (চৈতন্যবাদী/অথবা বিবেকানন্দবাদী)? উনারাই তো বিশ্বের সবচাইতে বড় কমিউনিস্ট ছিলেন!

বাঙালি বহু মনীষার অবস্থান থাকা সত্ত্বেও কেন পার্টি অফিসগুলিতে ঝোলে মার্কস, লেনিন, স্তালিন, হো চি মিন, গুয়েভারার ছবি? দেশের নেতৃত্ব দেওয়া কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের আগে হিন্দু বাঙালির আবেগ পূরণ করতে হবে। হাজার হাজার বছরের বাঙালির সংস্কৃতি/উৎসব/মেলা/আচার/পোষাক/খাদ্য/ধর্ম বাদ দিয়ে কেবল বাংলায় কথা বললে বাঙালি হওয়া যায় না।

এরা চাইছে বাঙালি দুইদিক থেকেই কোনঠাসা হোক। গোটা ভারত থেকে বাঙালি বাঙালি করে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আর ‘সুবে বাংলা’ গঠনের পথ পরিস্কার করে হিন্দু বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতিগুলি বিনষ্ট করায় সংবাদে নিশ্চুপ থেকে। এদের ভণ্ডামি বন্ধ হোক। এই পক্ষের প্রয়াস (আসলে ওটা দুটি পক্ষের মিলিত পক্ষ) সার্থক হলে, সত্যিই একসময় এমন ব্যাপার হবে, যখন এখানকার লোক বাংলায় কথা বললেও, চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হবেন না। সেদিনের কথা কিন্তু একবারও ভাবছেন না এই পক্ষ। তারা কাদের হয়ে কথা বলছেন? পরিবর্তনের পর বাঙালি নিজেদের অস্মিতা প্রদর্শন করুক পাঁচ হাজার বছরের পূর্বেকার। এবং সেটাই হবে। রাজ্যে তৈরি হবে “Indian Institute of Bengal Studies”.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.