নন্দীগ্রামে মমতার বিরুদ্ধে শুভেন্দুতেই সিলমোহর বিজেপির, ভবানীপুরে লড়তে পারেন বাবুল

নন্দীগ্রামে মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারীই প্রার্থী হচ্ছেন। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকের পর দলীয় সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেন, ‘‘শুভেন্দু নন্দীগ্রামে প্রার্থী হতে চান। দলীয় কর্মীরাও তাই চাইছেন।’’ রাজ‌্য দলের আরও এক শীর্ষনেতা বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে শুভেন্দু ছাড়া আবার কে?’’ এখানেই শেষ নয়, মমতার বর্তমান কেন্দ্র ভবানীপুর থেকেও হেভিওয়েট প্রার্থীর নামই ভাবা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সর্বাগ্রে উঠে আসছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র নাম। সূত্রের খবর, ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে বাবুলের নামই ভেবে রেখেছে বিজেপি। দল চাইলে মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে প্রার্থী হতে যে তাঁর আপত্তি নেই, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাবুল (Babul Supriyo) নিজেও।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। গভীর রাত পর্যন্ত চলা এই বৈঠকে প্রথম দু’টি পর্বের প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত হলেও তা ঘোষণা করা হয়নি। রাজ‌্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৈঠকের পর বলেন, ‘‘তালিকা শনিবার প্রকাশ করা হবে কি না তা কেন্দ্রীয় নেতারা ঠিক করবেন। তবে আলোচনা শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না বলে দিলীপবাবু জানান। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে এখনও প্রার্থী হওয়ার ব‌্যাপারে কেউ কিছু বলেননি।’’

এদিন রাতের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা (JP Nadda), কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি, দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ-সহ ১১ জন ছিলেন। রাজ্যের তরফে শিবপ্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, সুভাষ সরকার, দেবশ্রী চৌধুরী, রাহুল সিনহা প্রমুখ ছিলেন। নন্দীগ্রাম থেকে সদ‌্য তৃণমূল ছেড়ে আসা শুভেন্দু অধিকারীকেই (Suvendu Adhikari) প্রার্থী করা হবে কি না সেই বিষয়টিই এদিনের বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসাবে উঠে এসেছিল বলে দলীয় সূত্রে খবর।কারণ, এদিন সকালেই নাড্ডার বাসভবনে শাহর উপস্থিতিতে বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকে শুভেন্দু নিজেই নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। এদিন বেলা বারোটা থেকে পাঁচ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকেও প্রথম দু’দফার প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে রাতেই শহরে ফেরেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা।

বুধবার রাতে প্রার্থী তালিকা নিয়ে চার্টার্ড বিমানে বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটির সদস্যরা দিল্লিতে হাজির হন। এদিন সকাল থেকে নাড্ডার বাড়ির বৈঠকের আগে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশের বাসভবনে প্রার্থী তালিকা নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা হয়। তারপরে সকলে বেলা বারোটা নাগাদ নাড্ডার বাড়িতে হাজির হন তাঁরা। সূত্রের খবর, শাহর উপস্থিতিতে নাড্ডার বাসভবনে বৈঠকে প্রতিটি আসনের জন্য সম্ভাব্য তিনজন প্রার্থীর নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় উঠে আসা সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও সেই তালিকায় ছিল। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মূলত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভোটে জয়ের সম্ভাবনা কতটা সেই বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যে আসন থেকে কাউকে প্রার্থী করা হবে এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা থেকে শুরু করে ভাবমূর্তি কতটা স্বচ্ছ, নজর থাকছে সেদিকেও। বাংলায় ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে বিজেপি যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সে কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই দায়িত্ব নিজেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন শাহ। তাই প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে তিনি এদিনের দীর্ঘ বৈঠকে হাজির ছিলেন। নাড্ডার বাড়ির বৈঠকেই মোটামুটিভাবে প্রার্থীদের নামের প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। রাতে সেই তালিকার উপরেই দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে আলোচনার পরে চূড়ান্ত সিলমোহর দিয়েছেন মোদি-নাড্ডারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.