গান্ধিজি একবার ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়কে বলেছিলেন, “আপনি যুক্ত প্রদেশের (অধুনা উত্তরপ্রদেশ) গভর্নরের পদগ্রহণ করতে রাজি হলেন না। আমি ভেবেছিলাম, আপনাকে ‘ইওর এক্সেলেন্সি’ বলে ডাকার সুযোগ পাব। তা হতে দিলেন না”। মৃদু হেসে বিধানবাবু উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি আপনাকে আরও ভালো বিকল্প দিতে পারি। আমি পদবীতে রায়। তাই আপনি আমাকে রয়্যাল বলতে পারেন। আর যেহেতু অনেকের চেয়ে লম্বা, সেহেতু আপনি আমাকে রয়্যাল হাইনেস বলতে পারেন। সেটা কিন্তু যথার্থই হবে”।
এমনই রসিক মানুষ ছিলেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। রাজনৈতিক জগতে যিনি অনেকেরই ‘আইডল’ হিসেবে থেকে গিয়েছেন। সেদিন যদিও বিধান রায় গভর্নর হতে রাজি হননি। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনিই হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এই রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিলেও আপামর জনসাধারণের মনে তিনি একজন চিকিৎসক হয়েই থেকে যাবেন। বিধানবাবু কিছুটা ভাগ্যবানও বটে! চিকিৎসক হিসেবে তাঁর নানা গল্পগাথা আজও রূপকথার মতো বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তিনিই সেই চিকিৎসক, যিনি কিনা বাংলার ইতিহাসের এক কঠিন সময়ে মাসিক লাখ টাকার প্র্যাকটিস ছেড়ে দিয়ে বিপন্ন বাঙালিদের রক্ষার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
ঠাকুমা নাম রেখেছিলেন ভজন। ডাক্তারি পড়বার যে বিশেষ তাগিদ ছিল, এমন নয়। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ফর্মের জন্য আবেদন করেছিলেন। ডাক্তারির ফর্মটা ঘটনাচক্রে আগে এল। পূরণ করে পাঠিয়ে দিলেন। ভাগ্যিস দিলেন।
১৯১১ সালে ডাক্তার রায় বিদেশ থেকে ফিরলেন কলকাতায়। তাঁর ফি তখন পাঁচ টাকা। বিদেশ যাওয়ার আগে তাঁর ফি ছিল দুই টাকা। আর রোগীর তালিকায় কে না নেই? এমনকি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও আছেন।
এই এতকিছুর মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত করেও তাঁর সংস্কৃতিমনস্কতার কাছে বাঙালি ঋণী। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’ চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার তাঁর সরকার বহন করেছিল। প্রবাদপ্রতিম নৃত্যশিল্পী উদয়শংকরকে তিনি সরকারি তহবিল থেকে অনুদান দেন। এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকীতে রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশের উদ্যোগও নেন।
এহেন মানুষকে দেশ ভুলবে না। এমন কালজয়ীরা বোধহয় জেতার জন্যই আসেন। ঘটনাচক্রে ডাক্তার রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন এক। তাঁর মৃত্যুর পর আজকের দিনটিকেই সারা ভারতে চিকিৎসক দিবস রূপে পালন করা হয়।