বিপদের নাম পরমাণু অস্ত্র, পাক হুমকির সামনে ভারতের নীতি ঠিক কী, রইল ১০ তথ্য

কাশ্মীর থেকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের পরে নতুন করে ভারত পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তাপ দেখা দিয়েছে। এমন উত্তাপ দুই দেশের কাছেই নতুন নয়। অতীতে অনেকবারই শুধু উত্তাপ নয়, যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকবার। তবে এবার বাড়তি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পরমাণু অস্ত্র। দুই দেশে পারমাণবিক শক্তিধর। তাই ভয় রয়েই যাচ্ছে।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের পরে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং যেমন জানিয়ে রেখেছেন পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ভারতের প্রথমে আক্রমণ করার ভারতের যে নীতি তা কখনও বদলাবে না এমন নয়। এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন হুমকি অবশ্যই রয়েছে। অন্য দিকে, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানিয়ে দিয়েছেন সে দেশও প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পক্ষে নয়। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ইমরানের এই ঘোষণার ঠিক পরের দিনই পাক রেলমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ ভারতকে হুমকি দিয়ে বলেন, আমাদের হাতে খুব ছোট আকারের কয়েকটি পরমাণু বোমা আছে। সেগুলি ভারতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে জেনে নেওয়া যাক ভারতের পরমাণু অস্ত্র ও ব্যবহারের নীতি সম্পর্কে কিছু তথ্য–

১। ভারতে প্রথম পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা হয় ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে। ১৯৭৪ সালের সেই পরীক্ষার নাম ছিল– স্মাইলিং বুদ্ধ।

২। দ্বিতীয়বার পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা হয় ১৯৯৮ সালে। তখন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী।

৩। পরমাণু পরীক্ষার মাধ্যমে গোটা বিশ্বে ভারতের নতুন পরিচিতি হয়। ভারতই প্রথম পরমাণু শক্তিধার দেশ হয় যে পরমাণু প্রসার রোধ চুক্তি (নন-প্রলিফেরাশন ট্রিটি) সাক্ষর করেনি।

৪। পরমাণু শক্তিধর হওয়ার পরে অনেক দেশই ভারতের উপরে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। যদিও তৎকালীন সরকার সকলকে বোঝাতে পারে যে, ভারত দায়িত্বশীল দেশ। ভারত কোনও দেশে অধিকার স্থাপনের জন্য নয়, নিজের নিরাপত্তার জন্যই এই অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে।

৫। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে ভারত যে অঙ্গীকার করেছে, সেই অঙ্গীকার মেনে চলছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই লক্ষ্যপূরণের জন্য ভারত চিরকালই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

৬। ১৯৫৪ সালে ভারতই ছিল প্রথম দেশ যে পরমাণু পরীক্ষা নিষিদ্ধ করার আহ্বান করেছিল এবং পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধে অবৈষম্যমূলক চুক্তির বিরোধিতা করেছিল।

৭। ১৯৮৮ সালে সাধারণ সভায় রাজীব গান্ধী অ্যাকশন প্ল্যান পেশ করা হয়েছিল যেখানে নির্ধারিত সময়সমীর মধ্যে সামগ্রিক ভাবে ও সম্পূর্ণ রূপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল।

৮। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বারবার ভারত পরমাণু শক্তির কমানো ও বন্ধের আর্জি জানিয়েছে। বলেছে, পরমাণু অস্ত্রধর দেশগুলি নতুন করে দ্ব্যর্থহীন ভাবে অঙ্গীকার করবে যে তারা সমস্ত পরমাণু অস্ত্র সম্পূ্র্ণ ভাবে ত্যাগ করবে, নিরাপত্তার প্রয়োজনে যে সব পরমাণু অস্ত্র থাকছে তাও হ্রাস করতে হবে।

৯। পরমাণু অস্ত্র ভারত প্রথমে ব্যবহারের বিপক্ষে। একই সঙ্গে ভারত চেয়েছে, পরমাণু অস্ত্রধারী দেশগুলির মধ্যে বিশ্বব্যাপী একটি চুক্তি হোক যেখানে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার প্রসঙ্গে বলা থাকবে যে “প্রথমে ব্যবহার করবে না।”

১০। একই সঙ্গে ভারতের স্পষ্ট নীতি হল– যে সব দেশ পরমাণু অস্ত্রধর নয় সেই সব দেশের উপরে যাতে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করা না হয় সে জন্য সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য সামগ্রিক ও বিধিবদ্ধ চুক্তি করতে করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.