সমগ্র ভারতবর্ষে এক ঐতিহাসিক হিন্দু জাগরণের ফলে 2014 সালে ভারতের মসনদে শ্রী নরেন্দ্র মোদীজির হিন্দুত্ববাদী সরকার গঠন হয়। মোদি সরকারের মন্ত্রী ছিল সবকা সাথ সবকা বিকাশ অর্থাৎ সর্বভূতে হিতে রতা। সমাজের সকল বর্গের উন্নয়ন এবং দেশব্যাপী হিন্দুত্বের জোয়ার ও একতা দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বিরোধীদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠে। বিশেষ করে কমিউনিস্টদের মধ্যে এক হিন্দু ফোবিয়ার সৃষ্টি হয়। তারা আতঙ্কিত হয় অস্তিত্ব সংকটের দুর্ভাবনায়।
সুতরাং এই হিন্দুত্বের উত্থানকে যেনতেন প্রকারে সমাপ্ত করার প্রচেষ্টা তারা নিরন্তর করতে থাকে। বলাবহুল্য এই প্রচেষ্টা আর কিছুই নয় বরং হিন্দু সমাজের মধ্যে যে একত্রিত উত্থানের একতার ভাব জাগ্রত হয়েছিল তাকেই পুনরায় জাতপাত ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজকে খন্ডিত করে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা। কারণ হিন্দু সমাজে যদি একতা আসে তাহলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সমাজের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার প্রথম প্রয়াস তারা করে 2016 সালে হায়দ্রাবাদ ইউনিভার্সিটি থেকে। যেখানে রোহিত ভেমুলা নামে এক তরুণ প্রাণের অপমৃত্যু হয়। যা মিডিয়া ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রদর্শন করে এবং একটি ভাবনা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হয় যে যেহেতু রোহিত ভেমুলা পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর থেকে এসেছেন তাই হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিহিংসায় তাকে আত্মহত্যা করতে হয়। অর্থাৎ এই মোদি সরকার দলিত বিরোধী। কিন্তু আসল সত্য হলো কমিউনিস্টরাই রোহিত ভেমুলার মতো একজন মেধাবী পিছিয়ে পড়া বর্গের ছাত্রকে টার্গেট করে নিয়েছিল এই আন্দোলনকে প্রসারিত করার জন্য। বলাবহুল্য রোহিত ভেমুলার বামপন্থী সহযোগীরাই তাকে ক্রমাগত আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়ে তাকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়। এবং সেই মৃত্যুকেই শিখণ্ডী করে তারা মোদি সরকার কে দলিত বিরোধী বলে প্রমাণিত করার প্রচেষ্টা চালায়। এই সম্পূর্ণ আন্দোলনের মাথারা ছিলেন সেই সব প্রতিষ্ঠিত বামপন্থীরা যারা পর্দার আড়ালে থেকে সরকারবিরোধী এইসকল আন্দোলনকে প্রভাবিত করেন। এরাই আসলে আরবান নকশাল। যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য একটি তরুণ তাজা পিছিয়ে পড়া বর্গের ছেলে রোহিত ভেমুলা কে বলি দিতে পারে।
কিন্তু আরবান নকশালদের এই অপপ্রয়াস মোদিজীর উপর মানুষের বিশ্বাসে ফাটল ধরাতে পারেনি। সুতরাং তারা এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে তারা থেমে নেই, হিন্দু সমাজের মধ্যে যেনতেন প্রকারে পুনরায় জাতি বিভাজনের বিষক্রিয়া ঘটানোর প্রচেষ্টা তারা করতে থাকে। এইবার তারা তাদের হিন্দুত্ব বিরোধী এজেন্ডা কে সফল করার জন্য আরও বৃহত্তর ও নৃশংস প্রয়াস চালায়। আর এই প্রচেষ্টা করা হয় 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে 2018 সালে স্থান মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁও আন্দোলন। মহারাষ্ট্রের পুনের কাছে ভীমা কোরেগাঁও এ প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি পিছিয়ে পড়া তথাকথিত দলিল শ্রেণীর মানুষদের বিরাট বিজয় দিবস সমাবেশ হয়। কিন্তু এবার কেবল সমাবেশই হল না বরং হিন্দু সমাজের মধ্যে দলিত সবর্ণ সংঘর্ষ ঘটে গেল যার ফলে সমগ্র মহারাষ্ট্র জুড়ে আন্দোলন, সংঘর্ষের সাক্ষী থাকলো সমগ্র দেশ ও বিশ্ব। আবারো এটাই প্রচার করার প্রয়াস চলল যে হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার ব্রাহ্মণ্যবাদের বিশ্বাসী ও দলিত বিরোধী। কিন্তু তদন্তে নেমে এনআইএ দেখল এই সমগ্র মহারাষ্ট্র ব্যাপী আন্দোলনের পরিকল্পনা আরবান নকশালদের অনেক আগে থেকেই ছিল। প্রায় দু বছর থেকেই আরবান নকশাল যারা ছদ্মবেশে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দুত্ব বিরোধী কাজ করে যাচ্ছে তাদেরই মস্তিষ্ক প্রসূত।
বলাবাহুল্য এই বামপন্থী আরবান নকশালদের মধ্যে তদন্তে যেগুলো নাম উঠে আসে তাদের মধ্যে অন্যতম ফাদার স্ট্যান্ স্বামী। যিনি গত 5 ই জুলাই 2021 এ পারকিনসন রোগে 84 বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন। ফাদার স্ট্যান্ স্বামী তার জীবনকালের 30 বছর ঝাড়খন্ড ছত্রিশগড়ের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে সেবামূলক কাজ করে এসেছেন বলে তার সঙ্গীরা প্রচার করে আসছেন। আসল সত্যতা কী একটু জানা দরকার। ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় আদিবাসীদের সেবার আড়ালে তাদের মধ্যে সরকারবিরোধী বীজ বপন করে তিনি একাধিক উন্নয়নমূলক প্রজেক্ট বন্ধ করিয়ছেন। আদিবাসীদের সেবার আড়ালে তাদের মধ্যে এটাই প্রচার করেছেন যে আদিবাসী তোমরা হিন্দু না , একমাত্র যীশু তোমাদের গড। সুতরাং সেবার উদ্দেশ্য খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তকরণ। সরল আদিবাসীরা ফাদার স্ট্যান্ স্বামীর কথায় বিশ্বাস করেছেন। ফাদার স্ট্যান্ স্বামী খ্রিস্টান মিশনারির মাধ্যমে আদিবাসী শিশুদের জন্য বিনামূল্যে ফুলের ব্যবস্থা করে তাদের শিক্ষা দেওয়া শুরু করলেন। কিন্তু উদ্দেশ্য শিশুমনে ধর্মান্তকরণের বীজ বপন করা। সুতরাং আদিবাসী বাচ্চারা যখন বাসে করে স্কুলে যায় তখন পূর্বপরিকল্পনা মতো ড্রাইভার ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি স্টার্ট বন্ধ করে দেয় এবং একাধিক বার মিথ্যা প্রচেষ্টা দেখায় গাড়ি স্টার্ট করার কিন্তু গাড়ি স্টার্ট হয় না। এবার গাড়িতে থাকা খ্রিষ্টান সিস্টার বাচ্চাদের বলেন, দেখো গাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে, এবার আমরা সবাই মিলে জিসাস এর কাছে প্রার্থনা করব যে জিসাস গাড়ি স্টার্ট করে দাও। সরল মনের শিশুরা তাই করে এবং ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে। শিশুদের মধ্যে খ্রীষ্টের বীজ বপন করা হয়। আবার আদিবাসী রমনীর শিশু অসুখে আক্রান্ত, কোন পথ্য কাজ করছে না। ফাদার স্ট্যান্ স্বামীর মত পাদ্রীরা পৌছলেন সেবা করতে, ওষুধের বোতলে জল ভরে নিয়ে এসেছেন। দিলেন সেই জল রোগীকে এবং রমণীকে বললেন তোমার ওই ইষ্টদেবতার কাছে প্রার্থনা করো যেন তোমার শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে। দুদিন এরকম জল দেওয়া হল কিন্তু শিশু সুস্থ হয় না। এবার ফাদার বললেন উনার কাছে তো প্রার্থনা করলে কিন্তু উনি শুনলেন না। এবার যীশুর ফটো টা রাখ আর এই ক্রস টাকে রাখ , যীশুর কাছে প্রার্থনা করো উনি নিশ্চয়ই শুনবেন। তবে এবার ফাদার ওষুধের বোতলে জলের বদলে সত্তিকারের ওষুধ দিয়ে গেলেন। এবং পরদিন থেকেই শিশু আস্তে আস্তে সুস্থ হতে শুরু করল। সরল আদিবাসী মা ভাবলেন সবি যীশুর জাদু। ফাদার স্ট্যান্ স্বামীর আদিবাসীদের মধ্যে সমর্পিত 30 বছরের সময়কালের মূল্যায়ন এটাই। এরকমই ফাদার স্ট্যান্ স্বামীর মত আরবান নকশাল ভারতের অন্দরে সরল নিষ্পাপ মানুষদের ধর্মান্তকরণের পাশাপাশি তাদের রাষ্ট্রবিরোধী করে তুলছে যাতে তাদের যেকোনো সময় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং হিন্দুত্বের পতন ঘটানো যায়। ভীমা কোরেগাঁও তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ।
সুতরাং আমাদের সজাগ ও সচেতন হতে হবে। আরবান নকশাল বাদ রাষ্ট্রের পক্ষে ক্ষতিকারক এবং তার থেকেও ক্ষতিকর আরবান নকশাল। তাদের ষড়যন্ত্র কে যদি অসফল করতে হয় তাহলে বনবাসী পিছিয়ে পড়া দলিত সকল মানুষের মধ্যে আমাদের পৌঁছে যেতে হবে। একাত্মতার সূত্রে বাঁচতে হবে ভারতীয় সমাজকে। পরস্পর পরস্পরের সহযোগী হতে হবে। তাহলেই এই রাষ্ট্র বিরোধী আরবান নকশালবাদকে আমরা রুখে দিতে পারব।
শুভ শীল