স্বাস্থ্যবিধি না মানা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সঠিক স্যানিটেশন না হওয়া বা অপরিশোধিত অপরিষ্কার জল করোনার জেরে মৃত্যুর ঘটনা কমিয়ে দেয়। ভারতীয় গবেষকদের এক গবেষণায় উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর), পুণের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সেল সায়েন্স এবং চেন্নাই ম্যাথেমেটিক্যাল ইন্সটিটিউটের গবেষকদের যৌথ উদ্যোগে হওয়া এই গবেষণায় জানা গিয়েছে, যাঁরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকেন সহজাত ভাবে তাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। যার জেরে তাঁদের শরীরে সহজে থাবা বসাতে পারে না করোনাভাইরাস।
এমন অপরিশোধিত জল বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রয়েছে বিহারের বিস্তীর্ণ এলাকায়। অথচ বিহারে কোভিডের জেরে মৃত্যুর হার (সিএফআর) ০.৫ শতাংশ। যেখানে সারা ভারতে গড়ে করোনায় মৃত্যুর হার ১.৫ শতাংশ। সিএফআর হল কোনও রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যার তুলনায় সেই রোগে মৃতের সংখ্যার পরিমাপক।
অন্য রাজ্য যেখানে সিএফআর তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কম, তা হল কেরল ও অসম। সেখানে সিএফআরের পরিমাণ ০.৪ শতাংশ। তেলেঙ্গানায় তা ০.৫ এবং ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড়ে ০.৯ শতাংশ। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশে সিএফআরের পরিমাণ ১ শতাংশের নীচে আনতে চাইছে। ওদিকে, গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং পঞ্জাবের মতো উন্নত রাজ্যগুলিতে সিএফআরের পরিমাণ ২ শতাংশ বা তার অধিক।
গবেষণার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উন্নতিমূলক কার্যক্রমের প্যারামিটারগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে জল এবং স্যানিটেশনের গুণমান এবং কমপক্ষে 100 টি দেশে প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যায় কোভিড -19 মৃত্যুর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রায় ১০০টি দেশে প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে করোনায় কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তাও রাখা হয় গবেষণার মধ্যে। দেখা যায়, যে সব জায়গায় জল এবং স্যানিটেশনের গুণমান কম সেখানে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও কম। কারণ, পরিবেশ যত অস্বাস্থ্যকর হয়, তত মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
দিল্লি এইমস–এর প্রতিস্থাপন, ইমিউনোলজি এবং ইমিউনোজেনটিক্স বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডাঃ এন কে মেহরা বলেন, ‘ভারতে সংক্রমণের তীব্রতা কম বলে মনে হয় কারণ ইউরোপীয় এবং আমেরিকাবাসীর তুলনায় আমাদের রোগ প্রতিরোধের মাত্রা যে কোনও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আরও উন্নত। কোভিডের থেকে অন্য অনেক ভাইরাস বেশি প্রাণঘাতী। তবে এই ভাইরাসের সংক্রমণের হার অনেকটাই বেশি তাই ভবিষ্যতে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। তবে সেই তুলনায় মৃত্যুর হার কম থাকবে।’