সাফল্য ভারতের বিদেশ নীতির, জয় ভারতের কূটনীতির

আন্তর্জাতিক সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক হিসাবে বিভিন্ন রাষ্ট্র পরস্পরের সঙ্গে নানা ধরনের সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই উদ্দেশ্য থাকে অন্য রাষ্ট্রের কার্যকলাপ বা আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করা। আন্তর্জাতিক রাজনীতির এ এক অনিবার্য প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক সমাজ গড়ে ওঠে প্রধানত স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক কিংবা আঞ্চলিক সংগঠনগুলিও আন্তর্জাতিক রাজনীতির গুরত্বপূর্ণ একক এবং কারক (ভূমিকা পালনকারী) হিসাবে স্বীকৃত। কিন্তু স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সম্পর্ক এবং তাদের মধ্যে চলতে থাকা বিরতিহীন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া এখনো আন্তর্জাতিক রাজনীতিরমূখ্য বিষয়। এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় সুবিধাজনক অবস্থায় সেই থাকে সে বহির্বিশ্বকে তার ভাবনা বোঝাতে সক্ষম হয়। নিজের দেশের জাতীয় স্বার্থকে সবচেয়ে ভালোভাবে রক্ষা করতে সক্ষম হয় সেই দেশ।
গত ৫ আগস্ট, ২০১৯ গোটা দেশকে সচকিত করে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিল তাতে কেবল এদেশের মানুষ নয়, অবাক হয়েছিল গোটা বিশ্বের মানুষ যারা বিশ্বরাজনীতির গতিপ্রকৃতির খবর রাখেন। ভারতের উত্তর প্রান্তের জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বিগতশতাব্দীর ৫০-এর দশকের শুরু থেকেই যে বিশেষ সুবিধা সম্বলিত ৩৭০ নম্বর ধারাটি একটি অস্থায়ী এবং ‘পরিবর্তনশীল’বিধিসম্বলিত ব্যবস্থা হয়েও প্রায় ৭ দশক বহাল তবিয়তে বিরাজমান ছিল কেন্দ্রীয় সরকার ভারতের রাষ্ট্রপতির এক নির্দেশের মাধ্যমে তাকে রদ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। একই সঙ্গে ওই রাজ্যকে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ এই দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ভাবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের এনডিএ সরকার কাশ্মীর সমস্যার এক স্থায়ী . সমাধানে উদ্যোগী হন। ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন রাজা হরি সিংহ পাকিস্তান থেকে আগত হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে না পেরে ভারতের সঙ্গে Instrument of Accession of Jammu and Kashmir State to the Union of India নামক দলিলটিতে স্বাক্ষর করেন। আর শেখ আবদুল্লার আবদার মেনে ৫০-এর দশকের শুরু থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বিশেষ অধিকার-সম্পর্কিত ৩৭০ ধারা ভারতীয় সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রায় ৭ দশক ধরে চলে আসা একটি ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয় ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট।
কাশ্মীর একান্তই ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়। কারণ জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে — বিশেষত ১৯৯০-৯১-এর পরবর্তী ঠাণ্ডা যুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাষ্ট্রীয় সীমানা ও তার অলঙ্ঘনীয়তার ভাবনা ক্রমশ গুরুত্ব হারাচ্ছে। রাষ্ট্রের বহু আভ্যন্তরীণ বিষয়ও এখন আন্তর্জাতিক স্তরে গুরুত্ব পেয়ে যায়, আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে। এই ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে রাষ্ট্রকে বিশেষ সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এমনিতে দক্ষিণ এশিয়া হলো আন্তর্জাতিক রাজনীতির ‘উষ্ণশয্যা’। তারপর কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তান একাধিকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজর কাশ্মীরের ঘটনাপ্রবাহের দিকে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর পাকিস্তানের সরকারি নীতিই হলো জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয়টির আন্তর্জাতিকীকরণ। ফলে ৩৭০ ধারাবিলোপের মতো সাহসী এবং যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতকে বিশেষ কূটনৈতিক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাও নিতে হয়েছিল। ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এবং ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য এটাই প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক দুনিয়া ভারতকে এখন যথেষ্ট পরিমাণে সমীহ করে একটি প্রভাবশালী ও শক্তিশালী দেশ হিসাবে।
৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ঘটালে এর প্রভাব পড়বে পাকিস্তানের উপর এবং পাকিস্তান বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক দরবারে নিয়ে হাজির করবে এটা বুঝতে পেরেছিলেন ভারতের বিদেশনীতি নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। তাই ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র যথা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন— এই পাঁচটি দেশকেই ওয়াকিবহাল করে ভারত। এই দেশগুলিকে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেওয়া হয় বিষয়টি একান্তভাবেই ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় এবং ভারতীয় সংসদই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। এখানে আন্তর্জাতিক আইন ভাঙার মতো কোনো ঘটনাও ঘটেনি। ভারতের এই কূটনৈতিক প্রচষ্টো সফল হয়েছিল, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ৩৭০ ধারাবিলোপের পর পাকিস্তান বাদ দিয়ে অন্য কোনো দেশ কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এমনকী আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প যিনি এর আগে একাধিকবার কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তিনিও এ ব্যাপারে কোনো মতামত দেননি। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দু’দেশকেইসংযত হওয়ার আবেদন জানান।
৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়ে পৃথিবীর কোনো দেশ তেমন উচ্চবাচ্য না করলেও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া পরিচিত ছকেই এগিয়েছে। ১৯৪৭-এর ২২ অক্টোবর থেকেই পাকিস্তানের লক্ষ্য কাশ্মীরকে তার অঙ্গীভূত করা। ১৯৪৭-এর ২২ অক্টোবর একদল প্রশিক্ষিত মুজাহিদ তার সঙ্গে কিছু স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা মিলে কাশ্মীর দখলের জন্য হামলা শুরু করে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পর্বত প্রমাণ ভুলের জন্য এখনো কাশ্মীরের এক তৃতীয়াংশের বেশি এলাকা পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে আছে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নামে। তার পর থেকে পাকিস্তানের প্রধান লক্ষ্য কাশ্মীরের বাকি অংশকে নিজের অঙ্গীভূত করা। ফলে ৩৭০ ধারার বিলোপসাধন করে কাশ্মীরকে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের মূল স্রোতে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা পাকিস্তানের পছন্দ হবে না এটাই স্বাভাবিক। স্বভাবতই ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারা খারিজ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের প্রশাসনিক বিভাজনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেই পাকিস্তান তার তীব্র নিন্দা করে। পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়াকে ডেকে পাঠিয়ে কড়া প্রতিবাদ পত্র দেয় পাক সরকার। শুধু তাই নয়, পাক বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দেয় যেভারতের ‘বেআইনি ও ‘একতরফা সিদ্ধান্তের মোকাবিলায় তারা সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহমাহমুদ কুরেশিজানান ভারতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে অভিযোগ জানাবে, অভিযোগ জানাবে মুসলমান দেশগুলির সংগঠন Organisation of Islamic Countries (IOC)-এর কাছেও। এরপর পাকিস্তান কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি পরিচিত পথ ধরেই এগিয়েছে। এগুলি হলো ভারত-পাকিস্তান কুটনৈতিক সম্পর্ককে হাইকমিশনারের নীচের পর্যায়ে নামিয়ে দেওয়া, ভারতীয় হাইকমিশনারকে পাকিস্তান ছেড়ে যেতে বলা, ভারতীয় বিমানের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা আংশিক ভাবে নিষিদ্ধ করা, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ করে দেওয়া, পাকিস্তানে ভারতীয় সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ করা, ভারত-পাকিস্তানের সংযোগ রক্ষাকারী সমঝোতা এক্সপ্রেস বন্ধ করা প্রভৃতি। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জেনিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধি জাতিপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি জোয়ানা রোনেকার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বিশেষত তার নিরাপত্তা পরিষদকে তাদের ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান।
কিন্তু পাকিস্তানের কোনো প্রচেষ্টাই সফল হয়নি। পৃথিবীর কোনো গুরুত্বপূর্ণ দেশই পাকিস্তানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কাশ্মীরে গৃহীত ভারত সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে রাজি হয়নি। সকলেরই মত এটি ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় এবং ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা থাকলে তা দু’ দেশকেই মেটাতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ House Foreign Affairs Committee-র চেয়ারম্যান ইলিয়ট এঞ্জেল এবং সেনেটার বব মেনেনডেজ একটি বিবতিতে পাকিস্তানকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে কোনোরকম আগ্রাসী কার্যকলাপ না করতে বলেন এবং এ ব্যাপারে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের মধ্যে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী কাঠামোর বিরুদ্ধে সে দেশকেই কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে এই দাবিও করেন একাধিক মার্কিন রাজনীতিক। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান যে আন্তর্জাতিক দুনিয়াকে পাশে পায়নি তা স্বীকার করে নিয়েছেন পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। ন আন্তর্জাতিক দুনিয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি স্পষ্টতই ই হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
পাকিস্তানের সান্ত্বনা পুরস্কার ছিল তাদের আন্তর্জাতিকমুরুব্বি চীনের উদ্যোগে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে একটি রুদ্ধদ্বার | বৈঠক। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধে চীন পুর্বতন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখ এলাকার ১৪৩৮০ বর্গমাইল এলাকা বেআইনিভাবেদখল করে নেয় এবং এই আকসাই চীন অঞ্চল এখনাে চীনের বেআইনি ব দখলে আছে। উপরন্তু পাকিস্তান হলাে ভারতের বিরদ্ধে চীনের কার্যকলাপের অন্যতম মদতদাতা। ফলে পাকিস্তানকে খুশি রাখতে এ চীনকে নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের , ব্যবস্থা করতেই হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের র স্থায়ী সদস্য হিসাবে চীন তার প্রভাব বিস্তার করে পাকিস্তানের জন্য এইটুকু করতে পেরেছে। কিন্তু যেখানেও পাক-চীন জুটির জন্য অপেক্ষা করেছিল একরাশ হতাশা। কাশ্মীর নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হলাে ঠিকই, কিন্তু কোনো বিবৃতি জারি করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে যে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীন চেয়েছিল বৈঠকের পর অন্তত একটি বিবৃতি জারি করা হোক। নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য তাতেও রাজি হয়নি। ভারতের চিরাচরিত অবস্থান হলো কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ফলে এখানকার প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে ভারত যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক সমাজ ভারতের এই অবস্থানই মেনে নিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ভারতের একটি বড়ো কূটনৈতিক সাফল্য।
খ্রিস্টের জন্মের প্রায় তিন দশক আগে ভারতীয় রাজনৈতিক দার্শনিক কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে রাষ্ট্রমণ্ডল তত্ত্বে অরি (শত্রু) ও মিত্র বিচার করে কোনো রাষ্ট্রকেতার বিদেশনীতি নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর এর প্রায় দু’হাজার বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরে মার্কিন আন্তর্জাতিক সম্পর্কবি হ্যা জে. 7.165ateri ota Politics Among Nations গ্রন্থে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাস্তবতাকে বিবেচনার মধ্যে আনার সুপারিশ করলেন। তার মত ছিল রাষ্ট্রের কার্যকলাপেরমূল ভিত্তিইহবে ক্ষমতার ভিত্তিতে নির্ধারিত জাতীয় স্বার্থ। স্বাধীনোত্তর ভারতের নেহরু সৃষ্ট বিদেশ নীতিতে ক্ষমতাশালী হওয়া এবং জাতীয় স্বার্থরক্ষা এই বিষয় গুলিই অবহেলিত ছিল। নেহরুর ভুলে ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরের উত্তর পশ্চিম অংশ থেকে পাক হানাদারদের হঠিয়ে দিতে পারেনি। নেহরুই অপ্রয়োজনে কাশ্মীর সমস্যাকে জাতিপুঞ্জের দরবারে নিয়ে গেছেন। নেহরুর ভুলে লাদাখের ১৪০০০ বর্গমাইলেরও বেশি অংশ এখনো চীনের দখলে। নিজেকে শক্তিশালী দেশ না বানিয়ে ভারত তৃতীয় বিশ্বের দেশ হয়েই খুশি থেকেছে। অন্যদিকে বাস্তবমুখী আভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতি অনুসরণ করে চীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হয়ে উঠেছে। এই ঐতিহাসিক ভুল সংশোধনের প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। বর্তমান সরকার সেই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে গেছে আরো দ্রুত। ভারতের এই নতুন নীতি নিঃসন্দেহে ফলদায়ক হয়েছে। এখন আর ভারতকে কেউ দুর্বল দেশ বলে মনে করে না। ভারত বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। ৩৭০ ধারা বিলোপের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এবং আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য তারই ইঙ্গিতবাহী।
বিমল শঙ্কর নন্দ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.