“সাধো গোবিন্দ কে বন্দো গাবাউ।
মনস জনম অমলাকু পৈইও বৃথা কহি গাভাউ। “
অর্থাৎ – হে মানব, গোবিন্দের শ্রেষ্ঠত্বের প্রশংসা করুন আপনার অমূল্যবান মানব জন্ম পেয়ে তা নষ্ট করবেন না।
” জগ রচনা সব ঝুট হ্যায় জানি লেহু রে মিত।
কহি নানক খিরু না রহে জিউ বালু কি ভীত।”
হে মানব , এই পৃথিবী অসত্য, বালি প্রাচীর যেমন দীর্ঘকাল স্থির থাকে না তাই এই পৃথিবীও দীর্ঘকাল স্থির নয়।
???? হ্যাঁ এই কথাগুলোই অন্তিমবারের মতো তাঁর মুখ দিয়ে বেড়িয়েছিল যখন তাঁর সামনে ছিল পাষন্ড মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব এবং মাথার ওপরে ছিল ঔরঙ্গজেবের জল্লাদের তরোয়াল।
তিনি হলেন শিখধর্মের নবম গুরু শ্রী শ্রী তেগবাহাদুর জী এবং আজ তাঁর বলিদান দিবস। যিনি সনাতন ধর্মের জন্যে অসহনীয় নৃশংসতার সাথে নিজের প্রাণ সঁপে দিতে দ্বিধাবোধ করেননি।
যতবার পাষন্ড ঔরঙ্গজেব তাকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে জোর করছিল ততবার তাঁর মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়েছে, “এক ওমকার সৎ নাম” ????
যাইহোক…. সময়টা ছিল ১৬৭৫ সালের ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগের মোঘল আমলের রিলিজিয়াস ফ্যানাটিক ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকাল। তাঁর মনোবৃত্তি ছিল ভারতবর্ষকে যে করেই হোক দার-উল-হারব থেকে দার-উল-ইসলামে পরিণত করতেই হবে।
এবং সেটা করতে হলে আগে দরকার সনাতন হিন্দু ধর্মকে পরিচালিত করা ব্রাহ্মণ সমাজের ধর্মান্তকরণ। তার প্রথম নজর গিয়ে পড়লো কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ওপর। ধরে ধরে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে এসে কলমা পড়িয়ে ধর্মান্তকরণ হতে লাগলো। ধর্ম পরিবর্তন না করতে চাইলে নির্ঘাত নৃশংসতার সাথে মৃত্যু।
এমন ঘোর সংকটকালে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা পঞ্জাবের অমৃতসরে এসে গুরু তেগ বাহাদুরের কাছে এসে ইসলামে ধর্মান্তরের জন্য তাদের উপর যে অত্যাচার চালানো হয় তা বর্ণনা করে।
গুরু তেগ বাহাদুর যখন উদ্বিগ্ন হয়ে এই সমস্যার সমাধানের জন্য চিন্তা-ভাবনা করছিলেন, তখন তাঁর নয় বছরের ছেলে গোবিন্দ তাকে এই উদ্বেগের কারণ জিজ্ঞাসা করেন। বাবা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করলে বলেছিলেন যে তাদের বাঁচাতে তাকে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হবে।
গুরু তেগ বাহাদুর পণ্ডিতদের বলেছিলেন, “আওরঙ্গজেবকে গিয়ে বলুন যে আমাদের গুরু যদি ইসলাম গ্রহণ করে তবে আমরা তাকে অনুসরণ করব। কিন্তু আপনি যদি তাকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করতে ব্যর্থ হন তবে আমরাও তা করব না।”
শুনে অহংকারী পাষণ্ড ঔরঙ্গজেব রাগে বলে ওঠে, ধরে নিয়ে আয় ওই গুরু বাবাকে, দেখি তাঁর কতবড় দর্প যে মৃত্যুভয়কে অগ্রাহ্য করে।
গুরু তেগবাহাদুরকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয় এবং তাঁর ধর্মবিশ্বাসকে ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করতে বলা হয়। গুরুজী তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং উল্টে ঔরঙ্গজেবকে বলে ওঠেন, ????
“সাধো গোবিন্দ কে বন্দো গাবাউ।
মনস জনম অমলাকু পৈইও বৃথা কহি গাভাউ। “
অর্থাৎ – হে মানব, গোবিন্দের শ্রেষ্ঠত্বের প্রশংসা করুন আপনার অমূল্যবান মানব জন্ম পেয়ে তা নষ্ট করবেন না।
“জগ রচনা সব ঝুট হ্যায় জানি লেহু রে মিত।
কহি নানক খিরু না রহে জিউ বালু কি ভীত।”
অর্থাৎ -হে মানব , এই পৃথিবী অসত্য, বালি প্রাচীর যেমন দীর্ঘকাল স্থির থাকে না তাই এই পৃথিবীও দীর্ঘকাল স্থির নয়।
তোমার ইসলাম যদি এই শিক্ষা দেয় তাহলে তুমি প্রকৃত ধর্মজ্ঞানী নও ???? যার দাবী তুমি করে থাকো।
রাগে অপমানে পাষণ্ড ঔরঙ্গজেব তৎক্ষণাৎ গুরুজির শিরচ্ছেদ করবার আদেশ দেন এবং গুরুজির সাথে যে সকল ভক্ত এবং সঙ্গী সাথী মোঘল দরবারে এসেছিলেন তাঁদের প্রত্যেককে নৃশংসতার সাথে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের আদেশে তাঁর ছোট ভাই ভাই সতীদাস ও ভাই দয়ালদাস সহ নবম গুরু শ্রী শ্রী তেগ বাহাদুরের সমস্ত শিষ্যকে গুরুর সাথে দিল্লিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
ইসলামকে অস্বীকার করেছিলেন বলে আওরঙ্গজেবের আদেশে ভাই মতি দাসকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত উল্লম্বভাবে করাত দিয়ে চিড়ে দেওয়া হয়।
যে স্থানে গুরুজিকে শিরচ্ছেদ করা হয় সে স্থানটি বর্তমানে দিল্লির চাঁদনি চকে অবস্থিত শিসগঞ্জ সাহিব গুরুদ্বার।
ইতিহাস থেকে কখনো বিস্মৃত হবেনা এমন যা কিছু বিষয় আছে তার মধ্যে একটি হ’ল শিখ গুরু এবং তাদের অনুসারীদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও ধর্ম রক্ষার্থে আত্মত্যাগ।
বর্তমান খালিস্তানিরা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্ররোচনায় ড্রাগের নেশায় বুঁদ থাকা শিখ যুবকদের পথভ্রষ্ট করে ভারতবর্ষের মানুষকে ভুলিয়ে দিতে চায় সনাতন ধর্মের প্রতি শিখগুরুদের আত্মত্যাগ যা পরবর্তী গুরু তথা তেগবাহাদুর পুত্র গুরু গোবিন্দ সিং আজীবন মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করে চালিয়ে গিয়েছেন।
আজকের এই দিনে সনাতন ধর্মের প্রতি চরম আত্মত্যাগী “হিন্দ কি চাদর” গুরু তেগ বাহাদুরজীর প্রতি থাকলো আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি ????
WaheGuruJiKaKhalsaWaheGuruJiKiFateh
???? অরূপ কান্তি পাল