
সালটা ১৭৫৫। পলাশীর যুদ্ধের দু’বছর আগে ভাগীরথীর তীরে মুর্শিদাবাদে এলেন নাটোরের রানী ভবানী। উদ্দেশ্যে, গঙ্গাতীরে আজিমগঞ্জে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাবেন। ১৭৬০ সাল নাগাদ আজিমগঞ্জের বড়নগরে একের পর এক মন্দির তৈরি করেন রানী। জনশ্রুতি অনুযায়ী, বড়নগরে দ্বিতীয় বারাণসী গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। সেই লক্ষ্যে একের পর এক মন্দির তৈরি করতে থাকেন। শোনা যায়, খুব অল্প সময়ে শুধু বড়নগরে প্রায় ১০৮ টি মন্দির তৈরী করেছিলেন রানী ভবানী। যার বেশিরভাগই এখন নদীগর্ভে বিলীন। ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে, প্রথম দিকে বড়নগরে একের পর এক মন্দির তৈরি করলেও পরে তিন এই কাজ এক প্রকার বন্ধ করে দেন।
কারণ, রানীর একমাত্র বাল্য বিধবা মেয়ে তারাসুন্দরীকে নবাব সিরাজদৌলা বিয়ে করতে চেয়েছিলেন ( বাস্তব হল কুনজরে দেখেছিলেন ) । একদিন গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণের সময় তারাসুন্দরীকে দেখেন নবাব। প্রথম দেখাতেই তারাসুন্দরীকে তাঁর ভালোলেগে যায়। যদিও ধর্মপ্রাণ রানী ভবানী সিরাজের প্রস্তাব মেনে নিতে পারেননি। জানা যায়, জগৎ শেঠের সঙ্গে পরামর্শ করে নবাবের নাগাল থেকে একমাত্র মেয়েকে দূরে রাখতে, তারাসুন্দরীকে কাশী পাঠিয়েছিলেন রানী। ১৭১৬ সালে বগুড়া জেলার ছাতিয়ান নামক এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রানী ভবানী। খুব অল্প বয়েসে নাটোরের জমিদার রাজা রামকান্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৭৪৮ নাগাদ রামকান্তের মৃত্যু হলে, নবাব অলিবর্দীর নির্দেশে জমিদারির দায়িত্ব পান রানী ভবানী। ১৭৪৮ থেকে ১৮০২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৪ বছর সুদক্ষ হাতে জমিদারি পরিচালনা করেন রানী। সেই সময়ের সমাজ ব্যবস্থার নিরিখে যা একটি বিরল ঘটনা। তাঁর আমলেই বাংলার সব থেকে বড় জমিদারিতে রূপান্তরিত হয় নাটোর। জমিদারি বিস্তৃত ছিল এখনকার রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ছাড়িয়ে মালদা পর্যন্ত। তাঁর আমলে জমিদারির এই বিশাল বিস্তৃতির জন্য অবিভক্ত বাংলায় তিনি ‘অর্ধবঙ্গেশ্বরী’ নামে পরিচিত হন।
ইতিহাস বলছে, রানীর আমলে নাটোরের জমিদারির তরফে নবাবকে বছরে ৭০ লক্ষ টাকা রাজস্ব দেওয়া হত। মুর্শিদাবাদ ঘুরতে গিয়ে হাজার দুয়ারী থেকে ৭ কিমি দূরে জিয়াগঞ্জ ঘাট থেকে নৌকো পেরিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন আজিমগঞ্জ। সেখান থেকে টোটো নিয়ে পৌঁছে যান বড়নগর। এছাড়াও হাওড়া থেকে সরাসরি আজিমগঞ্জের ট্রেন রয়েছে। স্টেশন থেকে ২ কিমি দূরেই রয়েছে বড়নগর। রাজরাজেশ্বরী ছাড়াও বড়নগরে রানী ভবানীর তৈরি চার বাংলা বঙ্গেশ্বর মন্দির, ভুবনেশ্বর মন্দির, জোড়া বাংলা মন্দির, তারকেশ্বর শিব মন্দির রয়েছে। দিন দু’য়েকের ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। নবাবের শহরের উপকণ্ঠে ছুঁয়ে দেখুন ২৫০ বছরের এক বিস্মৃত ইতিহাসকে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : Subhajit Ghosh