ভোট প্রচারে নেবে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী কয়েকদিন আগে চমক দিয়ে বলেছিলেন ক্ষমতায় এলে NYAY প্রকল্প চালু করবে কংগ্রেস।

একবার দেখা যাক NYAY প্রকল্পটি আসলে কি?

কংগ্রেসের মতে দেশের দারীদ্রসীমার নীচে থাকা ২০% পরিবার কে মাসিক ৬,০০০ টাকা করে সাহায্য় করবে সরকার। যা প্রায় ৫ কোটি পরিবারের সমান। গড়ে পাঁচ জন করে সদস্যপ্রতি পরিবারে থাকলে প্রায় ২৫ কোটি দরীদ্র মানুষ এতে উপকৃত হবে।

প্রতি পরিবারকে বছরে ৭২,০০০ টাকা সাহায্য দিতে সরকারকে ৫ কোটি পরিবারের জন্য ৩৬০,০০০ কোটি টাকার বন্দোবস্ত করতে হবে। যা দেশের মোট জিডিপির ১.৮% এর সমান। এপ্রসঙ্গে বলা যায় প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজোনার মাধ্যমে ২ হেক্টরের কম জমির মালিক এমন কৃষকের জন্য বাৎসরিক ৬,০০০ টাক প্রদানের এক প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী মোদি কিছু মাস আগে চালু করেছেন।

ভারতের মতো বিশাল দেশে যেখানে দারীদ্রের পরিসংখ্যানগত সঠিক তথ্য নেই শুনতে ভালো লাগলেও এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন একরকম অসম্ভব।

প্রথমত দেশে সেরকম কোনো আয় সংক্রান্ত সার্ভে না থাকার কারণে ২০% পরিবারকে চিহ্নিত করাই প্রধান সমাস্যা হবে। অধিকাংশই প্রকৃত আয়ের তথ্য গোপন করে প্রকল্পটির লাভ নিতে চাইবে। আর যদি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা থেকে আয় সংক্রান্ত সার্টিফিকেট আনার কথা বলা হয় তা হলে অনেকে অর্থের বিনিময়ে ভুয়ো আয় সংক্রান্ত সার্টিফিকেট জোগাড় করতে চাইবে যা এক সমান্তরাল দুর্নিতী ব্যবস্থার জন্ম দেবে। দেশে অনেক পরিযায়ী শ্রেণীর শ্রমজীবি মানুষ আছেন যারা ইট ভাটা বা আখ চাষের সঙ্গে যুক্ত- এদের সঠিক ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। সঠিক তথ্য পেতেই একনাগাড়ে তিন থেকে চার বছর ধরে সার্ভে করতে হবে, সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া যা রাতারাতি সম্ভব নয়।

দ্বিতীয়ত এত বিশাল পরিমান অর্থের যোগান কি ভাবে হবে তা নিয়ে রাহুল গান্ধী কিছু বলেন নি। জিএসটি বাড়িয়ে? তার ফলে আবার মুদ্রাস্ফীতিকে আগবাড়িয়ে ডেকে আনার সমান হবে। কর্পোরেট ট্যাক্স বাড়িয়ে? কিন্তু বর্তমানে বৃহৎ শিল্পগুলিকে সমস্ত রকমের সেস সহ ৩০% এর বেশি কর দিতে হয় আর সরকার কমিয়ে ২৫% করার চিন্তাভাবনা করছে সেটা বাধা পাবে। কারণ এমনিতে মুক্ত অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এশিয়া ও আঞ্চলিক বানিজ্যে সহযোগিতামূলক অংশীদারীত্ব গড়তে হবে নতুবা চীন(যারা তাদের কর্পোরেট ট্যাক্স ১৫-২৫% এর মধ্য রেখেছে) এর সাথে প্রতিযোগিতায় ভারতীয় শিল্প টিকতে পারবে না।

দেশের সংগৃহিত আয়কর হচ্ছ জিডিপির ২% তার যদি আয়কর হার বাড়ানো হয় তা হলে তা কলো অর্থনীতিকে প্রশ্রয় দেবে আখেরে ভালো কিছু হবেনা। ইন্দিরা গান্ধী আয়কর হার প্রায় ৯৭% করেছিলেন তাতে আখেরে অর্থনীতির ক্ষতিই হয়েছে।

ঋণ বাড়ালে দেশের ফিস্কাল ঘাটতি বাড়বে বই কমবে না। সুদের হার বাড়াতে হবে এতে টাকার অবমূল্যায়ণ হবে আর ডলারের ঘাটতি।

যদি ভাব হয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা পরিকাঠামো খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে NYAY প্রকল্পের অর্থের যোগান সম্ভব। তা হলে তা হবে মস্ত ভুল। খাদ্য ও সারের ভর্তুকিও রাজনৈতিক কারণে কমানো যাবে না।

ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে ‘গরীবি হঠাও’ ডাক দিয়ে যে ভাবে ভোটে সফল হয়েছিলেন হয়তো রাহুল গান্ধীও জেনেশুনেই নূন্যতম আয় যোজোনা (NYAY)র ঘোষনা করেছেন এবারের ভোটের গাঙে বান ডেকে কংগ্রেসের পালে যাতে হাওয়া লাগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.