পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় (২০শে ডিসেম্বর, ১৮৬৬ —১৫ই নভেম্বর, ১৯২৩) একজন প্রখ্যাত বাঙালী সাংবাদিক ও সম্পাদক।

পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বিহার রাজ্যের ভাগলপুরে ১৮৬৬ খ্রীস্টাব্দের ২০শে ডিসেম্বর (৬ই পৌষ, ১৭৮৮ শকাব্দ, বৃহস্পতিবার)। তাঁর পিতা বেণীমাধব বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সময়ে ভাগলপুরের কালেক্টরেট অফিসে কর্মরত ছিলেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হালিশহরে। পাঁচকড়ি পিতামাতার একমাত্র সন্তান ছিলেন। তাঁর শিক্ষাদীক্ষা পিতার সান্নিধ্যে ভাগলপুরেই সম্পন্ন হয়। ১৮৮২ খ্রীস্টাব্দে ভাগলপুর জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে পাটনা কলেজ থেকে ১৮৮৫ খ্রীস্টাব্দে দ্বিতীয় বিভাগে এফ.এ এবং ১৮৮৭ খ্রীস্টাব্দে দ্বিতীয় বিভাগে সংস্কৃতে অনার্স সহ বি.এ পাশ করেন। পরে কাশীতে সংস্কৃত সাহিত্য ও সাংখ্য বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। হিন্দি, উর্দু, ফারসি ও ইংরাজী প্রভৃতি ভাষাতেও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তরুণ বয়সে পাঁচকড়ি ধর্মপ্রচারক শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন সেনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভারতীয় আর্যধর্ম্মপ্রচারিণী সভা ও সুনীতিসঞ্চারিণী সভার কাজে লিপ্ত ছিলেন। পরে পণ্ডিত শশধর তর্কচূড়ামণির ঘনিষ্ঠ হন ও হিন্দুধর্ম প্রচারকার্যে তাঁকে সহায়তা করে তিনি বক্তারূপে প্রতিষ্ঠিত হন। ১৮৮৭ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৮৯১ খ্রীস্টাব্দ সময়কালে তিনি কলকাতায় প্রায়শই আসা-যাওয়ার করতেন, সাহিত্যচর্চাও করতেন এবং পত্র পত্রিকায় লিখতেন।

১৮৯২ খ্রীস্টাব্দে তিনি ভাগলপুরের টী. এন. জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। এই স্কুলেই বাংলার কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ছাত্র ছিলেন। কয়েক বৎসর শিক্ষকতা করার পর ১৮৯৬ খ্রীস্টাব্দে সাংবাদিকতার পেশা গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতায় তাঁর শিক্ষানবিশি শুরু হয় “বঙ্গবাসী” পত্রিকায়। পত্রিকার স্বত্বাধিকারী যোগেন্দ্রচন্দ্র বসুর সংস্রবে তিনি আত্মোন্নতির প্রভূত সুযোগ পান। ১৮৯৫ খ্রীস্টাব্দের শেষাশেষি ‘বঙ্গবাসী’র সম্পাদক হন। চার বৎসর বাদে কংগ্রেস-বিরোধী বঙ্গবাসীর সম্পাদনার পর ১৮৯৯ খ্রীস্টাব্দে তিনি কংগ্রেস সমর্থনকারী ‘বসুমতী’র সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরে মতবিরোধের ফলে অমরেন্দ্র দত্ত প্রবর্তিত ‘রঙ্গালয়’ পত্রে যোগ দেন। পাঁচকড়ি স্বদেশী-আন্দোলনের যুগে ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের ‘সন্ধ্যা’ এবং ‘হিতবাদী’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯০৮ খ্রীস্টাব্দে তিনি ‘হিতবাদী’র সম্পাদক হন। তিনি আরো কয়েকটি পত্র-পত্রিকা সম্পাদনা করতেন সেগুলির মধ্যে ‘প্রবাহিণী’ ও দৈনিক ‘নায়ক’ এর নাম উল্লেখযোগ্য। সাংবাদিক হিসাবে তাঁর সর্বাধিক প্রসিদ্ধি ‘নায়ক’ পত্রিকার সম্পাদনায়। মূলত কার্টুন প্রকাশের জন্য প্রভূত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ‘নায়ক’। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মতিলাল ঘোষকে উপলক্ষ্য করে প্রায়ই কার্টুন থাকত। ‘স্বরাজ’, ‘জন্মভূমি’, ‘নারায়ণ’ প্রভৃতি বাংলা পত্রিকা এবং ‘কলিকাতা সমাচার’ (হিন্দি) ও হিন্দি দৈনিক ‘ভারতমিত্র’ এর সঙ্গে সম্পাদনায় বা অন্যভাবে যুক্ত ছিলেন।

★রচিত গ্রন্থাবলী★
•আইন-ই-আকবরী ও আকবরের জীবনী (১৯০০)
•শ্রীশ্রী চৈতন্যচরিতামৃত (১৯০০)
•উমা (১৯০১)
•রূপলহরী বা রূপের কথা (১৯০২)
•সিপাহীযুদ্ধের ইতিহাস (১৯০৯)
•বিংশ শতাব্দীর মহাপ্রলয় (১৯১৫)
•সাধের বউ (১৯১৯)
•দরিয়া (১৯২০)
•সম্রাট ঔরঙ্গজেব
•বাঙলার তন্ত্র

পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘায়ু ছিলেন না। পিতামাতার বর্তমানেই মাত্র ৫৭ বৎসর বয়সে ১৯২৩ খ্রীস্টাব্দের ১৫ই নভেম্বর (২৯শে কার্তিক, ১৩৩০ বঙ্গাব্দ) প্রয়াত হন।
(সৌজন্যেঃ উইকিপিডিয়া)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.