শুধু ইলিশ নয় বাংলাদেশ আমাদের বরফ চাপা মানুষও উপহার দেয় মরশুমে, মরশুমে


একটা অন্য অঙ্ক শিখি চলুন, ১৯৪৬ সাল থেকে ২০২০ মোট কত বছর?
-৭৪ বছর
এক বছরে ৩৬৫ দিন ( লিপ ইয়ারগুলো বাদে)
এবার ৭৪ বছরে মোট কতদিন?
৭৪x৩৬৫ = ২৭০১০।
যদি লিপ ইয়ারগুলো ধরা হয় তাহলে সংখ্যাটা আরও ১৯-২০ দিন মতো বাড়ে৷ চলুন একটা রাউন্ড ফিগার ধরি ২৭০১০+২০ = ২৭০৩০। এবার
২ কোটিকে এই ২৭০৩০ দিয়ে ভাগ করুন তো?

কি বললেন এটা ভাঁটের অঙ্ক? আরে না এটা বাঙালি হিন্দুর লাভ ক্ষতির অঙ্ক। যার মূলধন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর লাভ? বাড়ি, জমি, মন্দির, মেয়ে, পরিবারের প্রিয়জনকে হারিয়ে এসে ভারতে আশ্রয় নেওয়া। মাত্র ২৭ হাজার দিনে ২ কোটির বেশি হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়ে রাতারাতি পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন, এখনও আসছেন? তাহলে গড়ে প্রতিদিন ক’জন হল? শুধু ইলিশ নয় বাংলাদেশ আমাদের বরফ চাপা মানুষও উপহার দেয় মরশুমে, মরশুমে। আমরা উপহারী ইলিশের কথা মনে রাখি কিন্তু কয়েক উপহারী মৃত্যুগুলো ভুলে যাই, আমাদের ভুলিয়ে দেওয়া হয়!

তিন ধরণের আগ্নেয়গিরির কথা আমরা ভূগোল বইয়ে পড়েছি। সুপ্ত, জীবিত, মৃত৷ জীবন্ত আগ্নেয়গিরিগুলো থেকে অনবরত লাভা বেরিয়ে আসছে বছরের পর বছর!
কিন্তু বিশ্বের ইতিহাসে কোথাও ‘জীবন্ত গণহত্যা’র কথা পড়েছেন কি? বা শুনেছেন? হয়ত নয়! বিশ্বের সমস্ত গণহত্যাই অনেকটা মৃত আগ্নেয়গিরির মতো৷ একসময় হয়েছিল। এখন ইতিহাস বই কিংবা পুরনো খবরের কাগজ পড়ে জানা যায়৷ কিন্তু জীবন্ত গণহত্যা? যা রোজ হচ্ছে, হয়ে আসছে, আগামীতেও বন্ধ হওয়ার সুযোগ নেই! এরকম ‘জীবন্ত গণহত্যা’ বোধহয় একটিই আছে! আর সেটি হল বাংলাদেশে। যেখানে প্রতিটা দিন হিন্দুদের জন্য বলির দিন৷ কিন্তু দেখুন এ নিয়ে না এপার বাংলার মানুষ না ওপার বাংলার বুদ্ধিজীবী কারও কোনও মাথাব্যথা নেই!

একবার এক বাংলাদেশের হিন্দু বোনের সঙ্গে কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সে মজার ছলে একটা দারুণ কথা বলেছিল, দাদা বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থা কিরকম জানো,

ধরো পাকিস্তানে ঢুকে আমেরিকা লাদেনকে মেরে গেল। খবর পাওয়ার পরদিন রাতে পিরোজপুরে তিনটে হিন্দুর বাড়িয়ে জালিয়ে দিল বাংলাদেশের শান্তিরদূতরা (এটা ওদের প্রতিশোধ)।

ধরো ইজরায়েল প্যালেস্টাইনের সন্ত্রাসী আক্রমণের জবাবে চার সন্ত্রাসবাদীকে গুলি করে মারল। পরদিন দুপুরে দিনাজপুরে ৫ টা হিন্দুবাড়ি জ্বালিয়ে দিল শান্তির নেক বান্দারা (এটা ওদের প্রতিবাদ)।

ভারতের কাছে ক্রিকেটে হেরে গেল বাংলাদেশ – নারায়ণগঞ্জে চারটে হিন্দুমেয়েকে তুলে রেপ করে দিল শান্তির ভাইরা (এটা ওদের ফ্রাস্ট্রেশন)।

ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচ জিতে গেল- নীলফামারীতে জোর করে বাড়িতে ঢুকে তিনজন হিন্দু গৃহবধূকে ধর্ষণ করল শান্তিবাহিনী (এটা ওদের আনন্দ প্রকাশ)।

এর সঙ্গে আজ আরও একটা অজুহাত জুড়ে নিন,
‘ওরা মন্ডপে কোরান রেখেছিল তাই ওদের মূর্তি ভেঙে আগুন লাগিয়ে মেয়েদের ধর্ষণ করে ছেড়েছি!’

তাই আজ যখন বাংলাদেশে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বাঙ্গরা উপজেলার কোরবানপুর সহ একাধিক জায়গাতে হিন্দুদের আক্রমণ করে বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে বাংলাদেশের হিন্দুদের, ভাঙা হচ্ছে মন্দির, তখন ভয়ঙ্কর ঘৃণা ও রাগ জন্ম নিলেও অবাক হই না।

বাংলাদেশের হিন্দুরা বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে উপেক্ষিত জাতি যাদের জন্য না আছে মানবাধিকার না আছে মানবাধিকার কমিশন৷ না আছে কবিতা, না গদ্য৷ না আছে অ্যাওয়ার্ড ওয়াপসি। না আছে ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে শুয়োর খাওয়া৷ না আছে বাঙালি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদ। না আছে সিপিএমের মহম্মদ সেলিম/বিকাশ/সুজনদের মানবিক প্রতিবাদ৷ শুধু আছে কিছু হ্যাসট্যাগ, আর কিছু একে ওকে চিঠি লেখা!

৩০০ জন শিখ ১০ হাজার আফগানদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। সেই গাথা পড়ে অনেকেই শিহরিত হন৷ আমি শিহরিত হই কয়েক লাখ বাংলাভাষী হিন্দুর ৭৩ বছরের প্রতিদিনের লড়াই দেখে যারা কোটি সংখ্যার নেকড়ের মাঝে পড়ে রয়েছে। এদের লড়াই আমাকে সাহস যোগায়, এদের লড়াই আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়৷ বিশ্বে এরকম লড়াকু জাতি বোধহয় আর দ্বিতীয় নেই। বিশ্বের আপামর হিন্দুরা বাংলাদেশের হিন্দুদের দেখুন, ওদের লড়াইয়ের অংশ হোন, অনুপ্রাণিত হোন ওদের লড়াই থেকে।

১৯৭১ এর পর আবার একবার বাংলাদেশ ভাগ সময়ের দাবী৷ ভবিষ্যতের বিশ্ব মানচিত্রে দুটো বাংলাদেশ থাকবে। একটা ইসলামি আর একটা হিন্দু….

শে খ র ভা র তী য়।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.