ভারতে সাইবার হামলা চালাতে পারে চিন, ওরা প্রযুক্তিতে শান দিচ্ছে: বিপিন রাওয়াত

ভারতে সাইবার হামলা চালানোর জন্য প্রযুক্তি আরও উন্নত করছে চিন, এমনটাই বক্তব্য চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতের। তিনি বললেন, দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত চরমে, তার ওপর আমেরিকার সঙ্গে জোট বেঁধে কোয়াডেরও শক্তিশালী অক্ষ ভারত, এইসব কিছুই চিনের মাথাব্যথার কারণ। প্রতিরক্ষার যে কোনও ক্ষেত্রেই আঘাত হানতে মরিয়া চিন।

বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাওয়াত বলেন, ভারতের সরকারি বেসরকারি সাইবার নেটওয়ার্কে চিনের আড়িপাতার ঘটনা নতুন নয়। এ ব্যাপারে বেজিংয়ে সরকারি মদতপুষ্ট হ্যাকাররা প্রতিনিয়ত সক্রিয় বলে অভিযোগ। সম্প্রতি চিনের ১০০ টির উপর মোবাইল অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ হওয়ার পর সেই বেয়াদপি আরও বেড়েছে বলেই সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। শুধু তা নয়, এ দেশে ব্যাঙ্কিং নেটওয়ার্কের উপরেও সাইবার অ্যাটাকের আশঙ্কা রয়েছে।

চিন যে বড়সড় সাইবার হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন আশঙ্কা আগেও করা হয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাইবার নজরদারি সংস্থা সতর্ক করে বলেছিল, চিনে পিপলস লিবারেশন আর্মির মদতে পুষ্ট অন্তত দু’টি হ্যাকার-গোষ্ঠী ভারতের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে হানা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। তাদের আরও আশঙ্কা ছিল, বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে কোনও সরকারি সংস্থার ভুয়ো পরিচয় দিয়ে গোপনে সাইবার ফাঁদ পাততে পারে চিন। সেইসব ই-মেলে সাড়া দিলে বা ভুয়ো ওয়েবসাইটে ঢোকার চেষ্টা করলে যাবতীয় ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য হ্যাকারদের কাছে চলে যাবে।

সেনাবাহিনীর তিন স্তম্ভের প্রধান বলছেন, প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও অস্ত্রশস্ত্রের গোপন তথ্য জানার জন্য সাইবার হামলা চালাতে পারে চিন। ভারত মহাসাগরে চিনের উপদ্রব বন্ধ করার জন্য চার শক্তির অক্ষ তৈরি হয়েছে। ভারত তার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ভারত মহাসাগরে চিনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা রোখার জন্য সবরকমভাবে কাজ করবে এই চতুর্দেশীয় অক্ষ। রাওয়াত বলছেন, এরই পাল্টা চিন চাইবে সেনাবাহিনীর অন্দরের খবর হাতিয়ে নিতে। ভারত কী রণকৌশল নিতে চলেছে তা জানার জন্যই সাইবার প্রযুক্তিকেই হাতিয়ার করবে চিন, সে জন্য তারা নিজেদের টেকনোলজিকে আরও আধুনিক করার চেষ্টাও শুরু করে দিয়েছে।

গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে সাইবার প্রযুক্তি নিয়ে নতুন করে গবেষণা শুরু করেছিল বেজিং। ‘সাইবার স্পেস ডকট্রিন’-এর কাজ শুরু হয়েছিল সে সময়েই। লাল ফৌজের আধুনিকীকরণের জন্য সে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে জানা যায়, নিজেদের সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি অন্যান্য দেশে সাইবার হামলা চালানোর জন্য দক্ষ হ্যাকার টিম তৈরি করছে চিন। তাদের নজর পড়েছে মহাকাশ প্রযুক্তিতেও। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একাধিকবার মহাকাশ-যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিল চিন। ভারতের একাধিক স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহে সাইবার হামলার চেষ্টা হয়েছে। ম্যালওয়ার ঢুকিয়ে মহাকাশ গবেষণার কেন্দ্রের গ্রাউন্ড স্টেশনের গোপন তথ্য নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টাও করেছে। ফের একবার তারা এই প্রচেষ্টা চালাতে পারে বলেই সতর্ক করছেন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.