#Breaking: ভারতের বড় কূটনৌতিক সাফল্য, মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করল রাষ্ট্রপুঞ্জ

সন্ত্রাস দমনে অবশেষে বড় সড় কূটনৈতিক সাফল্য পেল নয়াদিল্লি। চিন তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বুধবার মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসাবে ঘোষণা করল রাষ্ট্রপুঞ্জ। তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হল।
পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনের প্রধান হল মাসুদ আজহার। অতীতে মাসুদ মুক্ত করতেই কন্দহর বিমান ছিনতাই কাণ্ড ঘটিয়েছিল জইশ। সম্প্রতি পুলওয়ামায় নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয়ের উপর হামলার ঘটনাতেও দায় স্বীকার করেছিল জইশ ই মহম্মদ। বস্তুত তার পর থেকেই মাসুদকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের উপর চাপ বাড়িয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বেজিং।

এ ব্যাপারে বেজিংয়ের বাধা নতুন নয়। মাসুদের ব্যাপারে রাষ্ট্রপুঞ্জে সব মিলিয়ে চার বার আপত্তি জানিয়েছিল চিন। পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক এবং নয়াদিল্লিকে চাপে রাখতে তা ধারাবাহিক ভাবেই করছিল বেজিং। সেই কার্যকারণ গোটা দুনিয়া জানলেও এ ঘটনায় ঘরোয়া রাজনীতিতে চাপে পড়ে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বেজিংয়ের বাধা তাঁর মাথায় যেন বোঝা হয়ে চেপে বসেছিল। রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে বাকি বিরোধীরা খোঁচা দিতে শুরু করেছিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনফিংকে গুজরাতে নিমন্ত্রণ করে এনে মোদী দোলনায় দুলতে পারেন। কিন্তু সন্ত্রাস দমনের ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে ভয় পান। দিল্লিতে শি-এর সঙ্গে আলিঙ্গন করেন মোদী। বেজিংয়ে গিয়ে সেই শি-র কাছেই মাথা নত করে কথা বলেন।

সে দিক থেকে বুধবার রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘোষণা শুধু নয়াদিল্লির কূটনৈতিক জয় নয়, রাজনৈতিক ভাবেও তা মোদীকে কিছুটা স্বস্তি দিল বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। কূটনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, নয়াদিল্লির কৌশল ষোল আনাই কাজ দিয়েছে। বেজিং যখন মাসুদের ব্যাপারে আপত্তি তুলছিল তখন ওয়াশিংটন, ব্রিটেন, প্যারিস, মস্কোকে দিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে ধারাবাহিক চাপ তৈরি করেছে নয়াদিল্লি। তার ফলে বেজিংয়ের উপায়ন্তর ছিল না। চিনের যুক্তিও ছিল দুর্বল। সাউথ ব্লক সূত্র জানাচ্ছে, বেজিংয়ে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিশ্রির ভূমিকাও ছিল এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

রাষ্ট্রপুঞ্জের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে,  জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের চলাফেরার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে।কেউ যাতে তাকে অস্ত্র বিক্রি করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখা হবে।

কূটনীতিকরা জানাচ্ছেন, বেজিংয়ের বরফ গলানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল দেড় মাস আগে থেকে। তার পর সম্প্রতি ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছিল যে মাসুদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে ঘোষণার পথে আর বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না চিন। খুব জলদিই রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে মাসুদকে ব্ল্যাকলিস্টেড করা হবে। এ ব্যাপারে কূটনীতিকরা সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করছেন। গত ১৭ মার্চ নিজের বাসভবনে আগাম হোলি উৎসব পালনে মেতেছিলেন ভারতে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত লুয়ো ঝাওহুই (Luo Zhaohui)। সেখানেই তিনি বলেন, “কিছু পদ্ধতিগত কারণে মাসুদের আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত হওয়া আটকে রয়েছে। বিশ্বাস রাখুন। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।” এই আশ্বাসের পাশাপাশি লুয়ো আরও বলেন, “মাসুদ প্রসঙ্গে ভারতের উদ্বেগ আমরা সম্পূর্ণ ভাবে বুঝি।” তবে লুয়ো-র এই বক্তব্যের পরেও বেশ কয়েকবার মাসুদ প্রসঙ্গে টালবাহানা করে চিন। তারা জানায়, মাসুদ প্রসঙ্গে ১৫ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করা হোক। কিন্তু এ বিষয়ে আফ্রিকার তরফে চিনকে সাফ জানানো হয় খুব জলদিই বেজিং ও তার ‘অল ওয়েদার ফ্রেন্ড’ পাকিস্তানকে মাসুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, পুলওয়ামা হামলার কয়েকদিনের মধ্যেই ফ্রান্স রাষ্ট্রপুঞ্জের ১২৬৭ স্যাংশন কমিটিতে মাসুদের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনে। নিরাপত্তা পরিষদে যে ১৫ টি দেশ সদস্য, তারা ওই স্যাংশন কমিটিরও সদস্য। ফ্রান্স ওই কমিটিতে মাসুদের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পেশ করার পর আপত্তি তোলার জন্য ১০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়সীমা যে দিন শেষ হচ্ছে, ঠিক সেইদিন, অর্থাৎ ১৩ মার্চ চিন আচমকাই বলে, তাড়াহুড়ো করে কারও বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করানো ঠিক নয়। ব্যাপারটা নিয়ে আরও আলোচনা হোক। চিনের এই আচরণে অসন্তুষ্ট হয় সারা বিশ্ব। অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানকে বাঁচানোর জন্যই মাসুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধা দিচ্ছে চিন। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কোনও প্রস্তাব পেশের পরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও দেশ আপত্তি তুলতে পারে। মাসুদের বিরুদ্ধে প্রস্তাবের ক্ষেত্রে সেই সময়সীমা পেরনোর কয়েক ঘণ্টা আগেই আপত্তি তোলে চিন। তবে সে সময় বিবৃতি দিয়ে প্যারিস প্রশাসন জানিয়ে দেয় সন্ত্রাসদমনে সবরকম ভাবে ভারতের পাশে থাকবে ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ-র সরকার।

এর আগে ২০০১ সালে কাশ্মীরের বিধানসভায় জঙ্গি হামলার পিছনেও ছিলেন মাসুদ। এই হামলায় ৩০ জন নিহত হয়েছিলেন। ভারতের সংসদেও হামলা চালায় জইশ জঙ্গিরা। ২০১৬ সালে পাঠানকোট বায়ুসেনা শিবির এবং ২০১৮ সালে উরির সেনা ছাউনিতেও হামলা চালিয়েছিল মাসুদ আজহারের জঙ্গি দল জইশ ই মহম্মদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.