ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলা ঠিক নয়, এর জন্য আইন সংশোধনের দরকার নেই: দীপক মিশ্র

 স্বামীর বিরুদ্ধে কি ধর্ষণের অভিযোগ আনতে পারবেন স্ত্রী?

স্বামী-স্ত্রী-র সম্পর্কে ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। বৈবাহিক ধর্ষণকে ফৌজদারি আইনের আওতায় আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই সরব বিভিন্ন শিবির। নরেন্দ্র মোদী সরকারও জানিয়েছে, আইন সংশোধন করে সেই ব্যবস্থার বিরোধী নয় তারা। তবে এ বিষয়ে আইনের পর্যালোচনা প্রয়োজন। আইন সংশোধনের দরকার আছে না নেই এই নিয়ে জলঘোলার মাঝেই সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি দীপক মিশ্র জানালেন, তাঁর মতে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের তালিকায় আনা যায় না।

কেএলই সোসাইটির আইন কলেজের একটি অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায় না। তাই এর জন্য আইন সংশোধনেরও প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তবে পুরোটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত।’’ নিজের মন্তব্যের যথাযোগ্য ব্যাখ্যা দিয়ে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমার এই মতের কারণ হলো ভারত পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করে। জানি, অনেক দেশেই বৈবাহিক ধর্ষণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতিতে তেমনটা হলে এর আলাদা প্রভাব পড়তে পারে।’’ দীপক মিশ্রের কথায়, এখনও দেশের মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে ভালোবাসে। তাই আইনের বদল সেখানে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।

বিবাহিত সম্পর্কে স্বামী যদি জোর করে বা ভয় দেখিয়ে স্ত্রীয়ের অসম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন সেটাই বৈবাহিক ধর্ষণ। যা গার্হস্থ্য হিংসারই অঙ্গ। তবে কোনও মহিলা গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হলে তার জন্য আইন আছে। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এমনকি পরিবারের মধ্যেই তাঁকে স্বামী ছাড়া অন্য কোনও পুরুষ ধর্ষণ করলে তারও শাস্তি আছে। তবে স্বামী তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক করলে সেটা ধর্ষণ বলছে না ভারতীয় আইন। তার কোনও বিচারও নেই।

দিল্লিতে নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন কড়া করতে প্রয়াত বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বে কমিটি তৈরি হয়েছিল। বর্মা কমিটিরও সুপারিশ ছিল, বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনি অপরাধের তালিকায় ফেলা হোক। কিন্তু মনমোহন সরকার সেই সুপারিশ মানেনি। সেই আর্জি নিয়েই আরআইটি ফাউন্ডেশন ও গণতান্ত্রিক মহিলা সংগঠন দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করে। তাদের দাবি ছিল, ভারতীয় দণ্ডবিধিতের ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের যে সংজ্ঞা রয়েছে, সেখানে বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সেই ছাড় তুলে দেওয়া হোক। সাধারণত ১৮ বছরের কমবয়সি মহিলার সঙ্গে সহবাসকে ধর্ষণ বলা হয়। কিন্তু বৈবাহিক সম্পর্কে ১৮ বছরের কমবয়সি স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসকেও ধর্ষণ বলা হয় না। অথচ আইনে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ে নিষিদ্ধ।

এই মামলার রায়ে দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিল, বিবাহিত হলেই স্ত্রীকে সহবাসে রাজি হতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। বৈবাহিক ধর্ষণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে আইনি সংস্কার প্রয়োজন, বলে জানিয়েছিল গুজরাত হাইকোর্টও।

দীপক মিশ্রের কথায়, ‘‘আইনে অঙ্কের হিসেব খাটে না। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত ও অধিকার অক্ষুণ্ণ রেখেই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এটাই সংবিধানের মূল লক্ষ্য।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.