কাশ্মীর প্রশ্নে চিনকে স্পষ্ট বার্তা ভারতের, ‘মতান্তর যেন বিবাদে পরিণত না হয়’

কাশ্মীর প্রশ্নে বেজিংকে স্পষ্ট বার্তা দিল নয়াদিল্লি। সাউথ ব্লকের তরফে বেজিংকে আরও একবার বুঝিয়ে দেওয়া হল, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তা নিয়ে যদি কারও মতান্তর থাকে তা আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু সেই মতান্তরকে যেন দ্বন্দ্ব বা ঝগড়ায় পরিণত না করা হয়। কেন না তা দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্কের পক্ষে সুখকর হবে না।

কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং তা ভাগ করে দুটি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করার পর এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল বেজিং। ভারতীয় সংসদে পাশ হওয়ার ওই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সুর তুলে পাক বিদেশ মন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বেজিংয়ে গিয়ে বৈঠকও করে এসেছিলেন। কিন্তু সোমবার বেজিং সফরে গিয়ে এ ব্যাপারে, চিনকে প্রশমিত করার চেষ্টা করল নয়াদিল্লি।

বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর তিন’দিনের সফরে সোমবার বেজিং পৌঁছেছেন। চিনা ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং কিসানের সঙ্গে এ দিন দেখা করেন তিনি। সেই সঙ্গে চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই –র সঙ্গে তাঁর প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক হয়। সংবাদসংস্থা এএনআই জানাচ্ছে, এ দিন বেজিংয়ে ওয়াং ই- সঙ্গে ওই বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, “দু দেশকেই বোঝা উচিত যে আমাদের মধ্যে যাই মতান্তর থাক তা যেন বিবাদে পরিণত না হয়”।

বৈঠকে জয়শঙ্কর আরও বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটা ‘অনন্য জায়গা’ রয়েছে। বিশ্বজনীন অস্থিরতার বাতাবরণে ভারত-চিনের সম্পর্ক যে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরিতে অনুঘটকের ভূমিকা নিতে পারে তা নিয়ে দু’বছর আগে দু’দেশের রাষ্ট্রনেতারা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনাও করেছিলেন। সে কথা ভুলে গেলে চলবে না।

প্রসঙ্গত, কাশ্মীর নিয়ে মোদী সরকার পদক্ষেপ করার পর পরই ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছিল চিন। এমনকী এও বলেছিল, এক তরফা ভাবে কেউ কোনও পদক্ষেপ করে যেন স্থিতাবস্থা নষ্ট না করে। উত্তেজনা না বাড়িয়ে ভারত-পাকিস্তান দু’জনকেই সংযত থাকতে হবে।

ভারতের কূটনীতিকদের মতে, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এ নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু এ ব্যাপারে বেজিং যে ধরনের নাক গলানো শুরু করেছিল তা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ না করে কৌশলে পা ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। মূল উদ্দেশ্য হল, বেজিংকে প্রশমিত করা। এ ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে ঝগড়া করা নয়।

পোড় খাওয়া প্রাক্তন বিদেশ সচিব তথা বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর এ দিন তাই করেছেন। এক সময়ে বেজিংয়ে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন জয়শঙ্কর। তাঁর সময়েই ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতা পেয়েছিল। এমনকি মোদী সরকারের প্রথম জমানায় যখন ডোকালাম নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়, তখন পারদ নামাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল জয়শঙ্করেরই।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে এ দিন বেজিং কাশ্মীরে রাষ্ট্রপুঞ্জের নজরদারির প্রশ্ন নিয়ে খুব সরব ছিল না। বরং চিনা বিদেশমন্ত্রী বলেন, পঞ্চশীল নীতির ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই ভারত-চিন এর লক্ষ্য। সেই উদ্দেশে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে এমন ভাবে এগোনো উচিত যা দুজনেরই জন্য ইতিবাচক হয়। ওয়াং ই এও বলেন, কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তার উপর নজর রেখে চলছে বেজিং। আমরা আশা করি ভারত এমন গঠনমূলক পদক্ষেপ করবে যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীল পরিবেশের জন্য ইতিবাচক হবে।

সন্দেহ নেই কাশ্মীর নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ থেকে বেজিংয়ের এ দিনের মন্তব্য লঘুতর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.