বার্ন স্যালো
অনেকেই মনে করেন, বেশিরভাগ পরিযায়ী পাখি সাইবেরিয়া থেকে বাংলায় আসে। আকাশ জুড়ে ইংরেজি ‘ভি’ অক্ষরের আকারে ওড়ে এই পাখিরা। যদিও এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। বেশ কিছু পাখি আসে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি থেকেও।
মাঠ জুড়ে ব্যাডমিন্টন ম্যাচ আর তরকারিতে কড়াইশুঁটির উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, কলকাতায় শীত এসেছে। আর কিছুদিন পরেই বাড়িতে বাড়িতে হাজির হয়ে যাবে কমলালেবু-নলেন গুড়। হিড়িক পড়বে দল বেঁধে পিকনিকে যাওয়ার। ধীরে ধীরে দিন ছোটো হচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে রাতের সময়সীমা। তবে এরই মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল গোটা বাংলা জুড়ে পরিযায়ী পাখিদের আগমন। পরিযায়ী পাখিরা সাধারণত শীতপ্রধান দেশগুলোয় বসবাস করে। কাঁপুনি দিয়ে শীতকাল পড়লে, সামান্য উষ্ণতার আশায় এসে জড়ো হয় অপেক্ষাকৃত গরম অঞ্চলে।
দশক শতক ধরে, হিমালয় পর্বতের দিক থেকে পরিযায়ী পাখিরা হাজারে হাজারে এসে ভিড় জমিয়েছে বাংলায়। যাদের মধ্যে রয়েছে বড়িহাঁস, মেঠো আবাবিল, খঞ্জনি, বাদামী কসাই, শাহ বুলবুল, গায়ক পাখি, থ্রাশ এবং র্যাপ্টর-এর মতো বেশ কিছু নাম। এর মধ্যে কিছু পরিযায়ী পাখিকে বলা হয় প্যাসেজ মাইগ্রেন্ট বা ঋতুবিহারী পাখি। এদের মূল গন্তব্য অন্য কোথাও হয়। কেবলমাত্র শীতের শুরু ও শেষের কয়েকটা দিন এদের দেখতে পাওয়া যায় বাংলায়। এই গোত্রের অন্যতম পাখি গোলাপি কাঠশালিখ। এদের মাথা, ডানা আর লেজ কালো হলেও বুকের কাছটা অদ্ভুত লালচে কমলা রঙের।
দশক শতক ধরে, হিমালয় পর্বতের দিক থেকে পরিযায়ী পাখিরা হাজারে হাজারে এসে ভিড় জমিয়েছে বাংলায়। যাদের মধ্যে রয়েছে বড়িহাঁস, মেঠো আবাবিল, খঞ্জনি, বাদামী কসাই, শাহ বুলবুল, গায়ক পাখি, থ্রাশ এবং র্যাপ্টর-এর মতো বেশ কিছু নাম। এর মধ্যে কিছু পরিযায়ী পাখিকে বলা হয় প্যাসেজ মাইগ্রেন্ট বা ঋতুবিহারী পাখি।
ইন্ডিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার
পরিযায়ী পাখিরা পরিবেশের তাপমাত্রার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নিজেদের বাসস্থান সাময়িকভাবে বদলে ফেলে। এক এলাকা থেকে দল বেঁধে তারা উড়ে যায় সম্পূর্ণ অন্য কোনো এলাকায়। অনেকেই মনে করেন, বেশিরভাগ পরিযায়ী পাখি সাইবেরিয়া থেকে বাংলায় আসে। আকাশ জুড়ে ইংরেজি ‘ভি’ অক্ষরের আকারে ওড়ে এই পাখিরা। যদিও এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। পরিযায়ী পাখিরা দলবদ্ধভাবে ‘ভি’ অক্ষরের আকৃতি ধারণ করে ঠিকই, তবে ‘ভি’ আকারে ওড়া সব পাখিই যে পরিযায়ী, তা কিন্তু নয়। এছাড়া, বাংলায় আসা সমস্ত পরিযায়ী পাখির আসল বাসস্থান যে সাইবেরিয়া, এ কথাও ভুল। বেশ কিছু পাখি আসে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি থেকেও।
বাংলায় শীতকালই হল পক্ষীপ্রেমীদের জন্য সবথেকে উপযুক্ত সময়। তাই জন্য এ সময় রবীন্দ্র সরোবর, সাঁতরাগাছি ঝিল, চিন্তামণি কর বার্ড স্যাঞ্চুয়ারি (নরেন্দ্রপুর পক্ষী অভয়ারণ্য)–তে বাড়ে মানুষের জমায়েত। আইব্রোড থ্রাশ, আগুনেগলা ফিদ্দা, হাঁড়িচাচা ছাড়াও বেশ কিছু প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায় এসব জায়গায়। এই তালিকায় জুড়ে যায় ইকোপার্কের পক্ষীবিতানের নাম। গলফ কোর্সের ঠিক উল্টোদিকে অবস্থিত পক্ষীবিতান; এখানে প্রবেশ করা যায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
যাওয়া যেতে পারে কলকাতা থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত বাসিপোতায়। হাওড়া থেকে উত্তরপাড়াগামী যে কোনো ট্রেন আপনাকে নিয়ে যাবে বাসিপোতায়। বেনেবৌ, ছাতারে পাখি, ব্ল্যাক-থ্রোটেড থ্রাশ-এর মতো পাখিরা প্রতি শীতে আসবেই এখানে। বর্ধমানের চুপির চর-ও পরিযায়ী পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য জায়গা। গঙ্গার বুকে কয়েকটা দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে চুপির চর, যার সবথেকে কাছের শহর পূর্বস্থলী- কলকাতা থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। এখান থেকে ছোটো নৌকা ভাড়া নিয়ে যাওয়া যেতে পারে চুপির চরের দিকে। কথা রইল, এখানেই আপনার ক্যামেরায় ধরা পড়বে পাখিদের সেরা কিছু ছবি।
ওয়ার্বলার
পক্ষীপ্রেমীদের জন্য পুরুলিয়াও হয়ে উঠতে পারে পাখি পর্যবেক্ষণের অন্যতম সেরা জায়গা। এখানকার অযোধ্যা পাহাড়, বরন্তী, গড়পঞ্চকোট, মার্বেল লেক, রানিবাঁধ, মুরগুমা ড্যাম, দুয়ারসিনি-তে প্রতি বছর ভিড় জমায় অগুন্তি পরিযায়ী পাখি। দেখতে পাওয়া যায় ব্রাউন চিকড ফুলেভট্টা, পায়েড থ্রাশ কিংবা হোয়াইট-ব্রায়োড শর্টউইং।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স সারা বছরই তার অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মাতিয়ে রাখে আমাদের। যে কারণে এ জায়গা হয়ে উঠেছে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পরিযায়ী পাখিদের অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। গরুমারা, চাপরামারি, জলদাপাড়া, মূর্তি নদী, লাটাগুড়ি, চিলাপাতার জঙ্গল, জয়ন্তী নদী – পরিযায়ী পাখিদের কাছে অতি পছন্দের। একেবারে বিরল প্রজাতির বেশ কিছু পাখি খুঁজে পাওয়া যায় এইখানে। যেমন ব্ল্যাক ব্রেস্টেড থ্রাশ, গৌল্ড’স শর্টউইং, সাইবেরিয়ান ও হোয়াইট-টেইল্ড রুবিথ্রোট, সাইবেরিয়ান ব্লু রবিন, নীলমাথা লালগিরডি ও নীলকণ্ঠ।