পাক-অধিকৃত কাশ্মীর পুনর্দখলই আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে

তৎকালীন বৃদ্ধ কংগ্রেসী নেতাদের যেমন তেমন স্বাধীনতা পেয়ে তাড়াতাড়ি ক্ষমতা লাভের বাসনার সুযোগ নিয়ে ধূর্ত ব্রিটিশ ক্ষমতা হস্তান্তরের শর্ত রূপে করদ রাজ্যগুলিকে ভারত বা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অথবা স্বাধীন থাকার সুযোগ দিয়েছিল। কাশ্মীরের রাজা এ ব্যাপারে দোলাচলে থাকায় কাশ্মীর পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে যায় না। কারণ, ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের আগে সম্পূর্ণ পাকিস্তানই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। তা সত্ত্বেও, আমরা দেখলাম যে ধারে ও ভারে অনেক অনেক শক্তিশালী দেশ ভারত ও এমনকি আন্তর্জাতিক মহলকে একটুও পাত্তা না দিয়ে পাকিস্তান কোনও পরিণতির কথা চিন্তা না করে অবলীলায় ১৯৪৮-এ কাশ্মীর আক্রমণ করল এবং একটা অংশ ছিনিয়ে নিল। রোমান্টিক ও কল্পনাবিলাসী নেহরু যিনি কষ্ট ও ত্যাগের মাধ্যমে অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করে নয় বরং পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, কাশ্মীর সমস্যাকে রাষ্ট্রসঙ্ঘে নিয়ে গেলেন। নেহরু আন্তর্জাতিক মহলকে অগ্রাহ্য করে, তখনই পাকিস্তানকে দুরমুশ করে কাশ্মীর সমস্যার চিরতরে সমাধান করার দৃঢ়তা দেখাতে পারলেন না। ভারতের এই দুর্বলতায় পাকিস্তানের সাহস আরও বেড়ে গেল। ১৯৬৫-তে তারা আবার ভারত আক্রমণ করে। বাংলাদেশ যুদ্ধে তারা আবার পরাজিত হয়। কিন্তু ২০০১-এ তারা আবার কারগিলে অতিক্রমণ করে। এছাড়াও, তাদের আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে এবং প্রত্যক্ষ মদতে জঙ্গী হানা তো গুনে শেষ করা যাবে না। ৪৮ কিংবা ৬৫-র যুদ্ধ তো ছেড়েই দিন পাকিস্তান যদি বিশ্বের অন্য কোনও খ্রিশ্চান বহুল দেশে (যেমন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ইত্যাদি) অথবা কম্যুনিস্ট দেশে (যেমন, রাশিয়া, চিন) জেহাদি হানায় মদত দিত তবে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বা সেনা প্রধানের পরিণতি সাদ্দাম হুসেন বা গদ্দাফির মতো হতো। ইরান, ইরাক উত্তর কোরিয়া পরমাণু শক্তিধর হলে আমেরিকার ঘোরতর আপত্তি। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আমেরিকা বা রাশিয়া কেউই আপত্তি করেনি। আসলে বিশ্ব শক্তি শান্তির পূজারী, নির্জোট (নির্বোধ?) আন্দোলনের হোতা ভারত এবং সন্ত্রাসবাদী ও দুর্বৃত্ত পাকিস্তানকে দুটি সমমর্যাদার দেশ মনে করে। তাই তাদের কাছে ব্যাপারটা এ রকম যে, ভারত যদি পরমাণু শক্তিধর হয় তবে পাকিস্তানও হতে পারে। কারণ, বিশ্ব শক্তি দেখেছে যে নিজের ক্ষমতায় ভারত কাশ্মীর সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা দাউদ বা মাসুদকে-ও নিকেশ করতে পারেনি। তাই তারা পাকিস্তানকে সামনে রেখে ভারতকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে। চিনের ক্ষেত্রে বিশ্ব শক্তির দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা। নিচের আলোচনা থেকে তা স্পষ্ট হবে।
১৯৪৮-এ যখন লাল-চিন গঠিত হয় তখন ভারত ও চিনের অবস্থা প্রায় একই রকম ছিল। বরং ব্রিটিশের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এক শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর জন্য সে দিক থেকে ভারত ধারে ও ভারে অনেকটাই এগিয়ে ছিল। ভারত প্রথম অকম্যুনিস্ট রাষ্ট্র রূপে লাল-চিনকে স্বীকৃতি দেয়। এর আগে ১৯১৩-তে তিব্বত ‘প্রজাতন্ত্রী চিন’ থেকে বেরিয়ে নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করেছিল। সে দিক থেকে দেখলে বিশ্ব শক্তির কাছে তিব্বতের অবস্থান একদম স্পষ্ট ছিল। অথচ লাল-চিন সৌজন্য দেখিয়ে তিব্বত নিয়ে ভারতের মনোভাব কী তা জানতে কোনও আলোচনার ধারই ধারল না। এমনকি বিশ্ব শক্তিকেও সামান্যতম পাত্তা না দিয়ে ১৯৪৯-এ তিব্বত দখল করে লাল-চিন তার সাম্রাজ্যবাদী লিপ্সা প্রতিষ্ঠা করল। ভারত যদি তিব্বতের কিছু অংশেও নিজের প্রভাব বজায় রেখে সেখানেই তাইপেই চিনের মতো নির্বাসিত সরকার গড়ে দিতে পারত (হিমাচল প্রদেশে যাকে এখন রাজকোষের কোটি কোটি টাকা খরচ করে পুষতে হয়) তবে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থান গণতন্ত্র ও মানবতার রক্ষাকর্তা রূপে দৃঢ় হতো। ভারত নিজেই তখন স্বাভাবিক ভাবে বিশ্ব শক্তির স্বীকৃতি পেত। ভারত তা না করায় চিনের সাহস ও আগ্রাসী মনোভাব বেড়ে গেল। তারা দেখল, দুর্বল নেতৃত্বের কারণে যে দেশের জমি পাকিস্তানের মতো পুঁচকে দেশ দখল করে নিতে পারে এবং তারা তা পুনর্দখলও করতে পারে না, তাদের জমি তো আমরা যখন-তখন দখল করতে পারি। নেহরুর অত্যধিক চিন-প্রীতির পিঠে ছোরা মেরে তারা ১৯৬২-তে ভারত আক্রমণ করে অনেকটা জমি দখল করে নেয়। সেই সাম্রাজ্যবাদী লিপ্সা বজায় রেখে তারা এখনও অরুণাচলকে তাদের নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। এমনকি ভুটানেও তারা হানা দিচ্ছে। আর সীমান্তে সেনা অতিক্রমণ তো জলভাত। তারপর ১৯৬৪-তে চিন পরমাণু শক্তিধর হয়। গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে বিভীষিকা চিন তিব্বত ও ভারতের জমি দখল করে যে আধিপত্য দেখায় তার পুরস্কার স্বরূপ বিশ্ব শক্তি ১৯৭১-এ তাইপেই চিনের জাতীয়তাবাদী সরকারকে ব্রাত্য করে মূল ভুখণ্ডের লাল-চিনকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করে। যদি অহিংসা, শান্তি, মানবতা, গণতন্ত্র ও নেহরুর উর্বর মস্তিষ্কের ‘বাই-প্রোডাক্ট’ নির্জোট (নির্বোধ ?) বিশ্ব শক্তি হওয়ার মাপকাঠি হতো তাহলে ওই স্থায়ী সদস্য তো ভারতেরই হওয়ার কথা। রূঢ় বাস্তব তো এই যে বিগ ফোরের প্রত্যেকেই (আমেরিকা, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স) সাম্রাজ্যবাদী ও শক্তির পূজারী। তাই তারা ‘রতনে রতন চেনে’ এই আপ্তবাক্যের মতো পঞ্চম শরিক রূপে ভারতের পরিবর্তে চিনকে বেছে নিয়েছে। বীর্যবানের পক্ষেই ব্রহ্মচর্যের কথা শোভা পায়, নপুংসকের পক্ষে নয়। ভারত তো বিগত ৫০-৬০ বছরে শক্তি ও আধিপত্য দেখিয়ে বিগ ফোরের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ভিটো ক্ষমতা অর্জন করত তবে আজ বিশ্ব শান্তি বা অন্য যে কোনও আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারত। সেই বেদের সময়কাল থেকে যে ‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ’ বা ‘সর্বেমঙ্গলম ভবতু’-র ভাবধারাকে বুকে লালন করে আসছে তা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারত। তিব্বত, ইরান, উত্তর কোরিয়া সব ক্ষেত্রেই ভারত পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে কাজে লাগাতে পারত। তা না হয়ে ভারত আজ স্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে ঘুরছে। সামান্য এক মাসুদের নাম নিষিদ্ধ তালিকায় তুলতে আজ চিনের দিকে তাকিয়ে। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে করিডর বানিয়ে আজ চিন আর্থিক ভাবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। সেই অর্থের একটা অংশ তারা শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মায়ানমার থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিয়ে সেখানে সামরিক ঘাঁটি বানাবে (অবশ্য ইতিমধ্যে কয়েকটা বানিয়েছেও)। আর একটা অংশ ভারতের মধ্যে ‘পঞ্চম বাহিনী’ তৈরি করতে ব্যবহার করবে যারা ‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি’, ‘অরুণাচল মাঙ্গে আজাদি’ ইত্যাদি বা মিডিয়ায় ভারতই ডোকলামে দাদাগিরি করেছে, চিনের সঙ্গে ভারতের সমঝে চলা উচিত কিংবা কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার অবর্ণনীয় অত্যাচারেই ঘরে ঘরে জঙ্গী তৈরি হচ্ছে- এ সব বলে বা লিখে ভারতকে বিশ্বের কাছে অপদস্থ করবে। ভারতকে চিনের এই ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের কাছে মার খেতে হবে।
তাই ভারতকে আজ না হোক কাল শক্তি ও আধিপত্যের প্রদর্শন করে বিশ্ব শক্তির মর্যাদা লাভ করতেই হবে। এবং সেটা করার সংক্ষিপ্ত উপায় হচ্ছে বিগ ফাইভ-কে দাঁড় করিয়ে রেখে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর পুনর্দখল করা। এর ফলে-(১)‘না রহেগা বাঁশ, না রহেগা বাঁশরি’-র মতো কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে বিগ ফাইভ আর ভারতকে ল্যাজে খেলাতে পারবে না।
(২) ভূ-রাজনৈতিক সুবিধার কারণে চিনের স্বপ্নের করিডরের ভবিষ্যৎ ভারতের হাতে চলে আসবে। ভারত তখন নিজের সর্বাধিক আর্থিক লাভ ও চিনে শ্রদ্ধেয় দলাই লামার সম্মানজনক পুনর্বাসনের বিনিময়ে করিডর তৈরির শর্ত দিতে পারে। নির্বাসিত সরকারের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে, যা থেকে চিনের ধারাবাহিক শত্রুতা ছাড়া আমরা এত দিন ধরে আর কিছুই পাইনি।
(৩) নির্ণায়ক বিশ্ব শক্তি রূপে ভারতের উত্থান পাখতুনিস্তান, বালুচিস্তানবাসীর মনে সাহস যোগাবে। ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে তারা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে স্বাধীন হতে পারে। বিশ্ব শক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভাঙতে আমেরিকাকে যুদ্ধ করতে হয়নি। আর পাকিস্তান তো নস্যি।
অবশ্য ‘পঞ্চম বাহিনী’ ও নপুংসকেরা বলবে যে পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর দেশ। একবার পাক-অধিকৃত কাশ্মীর দখল হলে বল তখন পাকিস্তানের কোর্টে যাবে। তাকে তখন ভাবতে হবে যে সে ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে যাবে কি না। যে কোনও বাস্তব বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি বুঝবেন যে, মোল্লা-মৌলবি, সেনা ও কিছু সামন্ততান্ত্রিক ভূস্বামী যারা সাধারণ পাকিস্তানবাসীর দৃষ্টি চূড়ান্ত অশিক্ষা, দারিদ্র ও শোষণ থেকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে শুধু ভারত বিরোধিতার জিগির তোলে, তারা ছাড়া বাকি সকলে ভারতের সঙ্গে সার্বিক যুদ্ধের ঘোরতর বিরোধী, কারণ এ থেকে তাদের দেশের কোনও লাভ নেই। ফলে পাক সেনা কোনও হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে সে দেশেই বিক্ষোভ শুরু হতে বাধ্য।
দুরাত্মারা আবার বলবে বিগ ফাইভ বিশেষ ভাবে চিন বাধা দেবে। এ ব্যাপারে ভারতের বক্তব্য ও যুক্তি জোরদার। তিব্বত দখল নিয়ে যখন রাষ্ট্রসঙ্ঘ বা বিগ ফোর কিছু বলেনি, কাশ্মীর নিয়েও তার কোনও বক্তব্য থাকতে পারে না। যদি সেখানে গণভোট করাতে হয় তবে তিব্বতেও করাতে হবে।
আর চিন যদি যুক্তির ধার না ধরে পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের কথা ভাবে তবে সেটাই হবে কম্যুনিস্ট শাসকদের পতনের শুরু। কারণ, কম্যুনিস্ট পার্টির সুবিধাভোগী ক্যাডার ছাড়া তিব্বতি ও সাধারণ চিনারা ভারত বিরোধী তো নয়ই বরং ভারতের সাথে তারা সাংস্কৃতিক একাত্মতা অনুভব করে। কমুনিস্ট শাসকদের অগণতান্ত্রিক, অমানবিক ও মধ্যযুগীয় স্বৈরাচারের পাশাপাশি ভারতের গণতন্ত্র, মানবিকতা ও বহুত্ববাদ তাদেরকে আকৃষ্ট করে। গণতন্ত্রপ্রিয় সাধারণ চিনাদের ক্ষোভ বারুদের স্তূপ হয়ে আছে। তাই কম্যুনিস্ট শাসক যদি অযথা চিনাদের উপর ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের বোঝা চাপাতে চায় তবে সেই বারুদের স্তূপে যে বিস্ফোরণ হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
বর্তমান সরকার কিছু আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অর্থ ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট কৌশল এবং রণনীতির বিষয়ে অভিজ্ঞতা তাদের কম। সত্যি কথা বলতে কি যে নতুন দিশা ও আঙ্গিক নিয়ে তারা চলছে, বিশ্ব মহলে তার সার্বিক স্বীকৃতি বা লিগ্যাসি অর্জনের জন্য মাত্র পাঁচ বছর খুবই কম। আশা করা যায় জনগণের আশীর্বাদ নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে এই সদর্থক ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে তারা এমন এক নির্ণায়ক ও ফলদায়ী পদক্ষেপ নেবে যার ফলে বিশ্ব রাজনীতি ও কূটনীতির চালচিত্রই পাল্টে যাবে এবং ভারত হবে তার অন্যতম চালিকা শক্তি।
কিন্তু এর জন্য দুটি বিষয়ে অগ্রগতি প্রয়োজন। প্রথমত যুদ্ধাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো উদ্ভাবন করতে হবে। সারা বিশ্বে কত ভারতীয় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়র, নাসায় কত ভারতীয় বিজ্ঞানী, আই আই টিয়ানরা বিদেশি কোম্পানিতে কত বেশি টাকার চাকরি পেয়ে বিবাহযোগ্য ভাল পাত্রে পরিণত হচ্ছেন ও সব ঢম্পাই বলে ও শুনে লাভ নেই। বাস্তবে তো কামান কিনতে সুইজারল্যান্ড আর যুদ্ধবিমান কিনতে আমেরিকা, রাশিয়া বা ফ্রান্সের কাছে হাত পাততে হয়। যাদের কাছে হাত পাতব তাদের সঙ্গে তো আর চোখে চোখ রেখে কথা বলা যায় না।
দ্বিতীয়ত, শুধু সরকার কিছু করতে পারে না, আসল হল জাতির মানসিকতা। এমনিতে আমরা সব সময় জ্ঞানের কথা বলি যে আমাদের যুগোপযোগী হতে হবে। তা আমরা যখন ‘বসুধৈব কুটুম্বকমের’ কথা বলেছিলাম, বিশ্বের অবস্থা কি এখন সে রকম আছে? বিভিন্ন দেশ যখন শত্রুভাব নিয়ে হায়নার মতো আমাদের ক্রমাগত উৎপাত করছে তখন আমাদেরও যুগোপযোগী হতে হবে। এছাড়াও, দীর্ঘ পরাধীনতার ফলে, আমরা যারা পরিশীলিত, শিক্ষিত, তেলে-জলে ও রসেবশে থাকা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠিত মানুষ, তাদের গড়পরতা মানসিকতা এরকম যে, আগে তো সম্পূর্ণ পরাধীন ছিলাম; এখন তো তবুও স্বাধীন; কাজেই আবার ও সব ঝামেলা কেন; কাশ্মীর যদি চিন-পাকিস্তান নিয়েই নেয় নিক, কীইবা আর ক্ষতি হবে; সারা জীবনে একবার হয়ত বেড়াতে যাই, তা প্রয়োজনে নয় ভিসা নিয়ে যাব। আর এই সব আরামপ্রিয়তা ও কাপুরুষতাকে ঢাকতে উদারতা, শান্তিপ্রিয়তার আশ্রয় নিই এবং যাঁরা কঠোর ব্যবস্থার পক্ষপাতী তাদের যুদ্ধবাজ বলে গালিগালাজ করে তাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলি। একটি ইংরেজি কবিতায় কবি বলছেন “It is the gun that fights” তারপর কবি সংশোধন করে বলছেন “No, it is not the gun that fights; It is the hand behind the gun that fights.” তারপর কবি আবার সংশোধন করে বলছেন– “No, it is not the hand that fights; It is the tiny little heart behind the hand that fights.”
আক্ষরিক অর্থের পরিবর্তে বন্দুকের স্থানে সেনাবাহিনী, হাতের স্থানে সরকার বা তার কর্ণধার এবং হৃদয়ের স্থানে জাতি বসালে আমরা বুঝতে পারি যে, জাতির সিংহহৃদয় যদি সরকার নামক হাতের পিছনে থাকে তবেই সেই হাত সেনা নামক বন্দুক দিয়ে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তৃতীয়ত, যাঁরা ‘যুদ্ধ নয় শান্তি চাই’, পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র; চিন ভারত থেকে বহুগুণ শক্তিশালী; চিন-পাকিস্তান একসাথে যুদ্ধ করে আমাদের গুঁড়িয়ে দেবে–ইত্যাদি বলে জাতির মনোবল নষ্ট করে; জনসাধারণকে আতঙ্কিত করে আসলে চিনের দালালি করতে চায় সেই ‘পঞ্চম বাহিনী’-কে শুধু বিচ্ছিন্নই নয় সমূলে উৎপাটিত করতে হবে।

সুব্রত ভৌমিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.